পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ভাঁড়ে মা ভবানী

  • 29 August, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 2483 view(s)
  • লিখেছেন : অমিত দাশগুপ্ত
দেশের অর্থনীতির হালচাল ভালো নয় সেটা ভক্তজন ছাড়া সকলেই বলছে। তবে অর্থনীতির নাভিশ্বাস উঠেছে এমনটা বলা যাবে না। নেহরুকে যতই গালাগাল মোদি-শাহেররা দিয়ে যাক না কেন, ওই সময়ের সরকারি নীতির ফলে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের যে সম্পদ তৈরি হয়েছিল তার জোরেই দেশের অর্থনীতির দুরবস্থাকে সামাল দেওয়া যাচ্ছে। তবে কতদিন তা যাবে সেটাই চিন্তার বিষয়।

সরকারগুলির অবস্থা এখন অনেকটা পুরোনো বনেদি জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকারীদেরর মত। বাপ-ঠাকুরদাকে গাল হয়তো পাড়ছেন, কিন্তু রোজ তাদের প্রজাদের ঠকিয়ে তৈরি সম্পত্তি বেঁচে ঠাটবাট বজায় রাখছেন। স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস সরকারের আমল থেকেই মন্ত্রী-শান্ত্রীরা রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সরকারি সম্পত্তি বাড়িয়েছিলেন, সাথে সাথে টাটা-বিড়লা-মফতলাল-আমবানিদেরও কৃষক-মজুরদের ঠকিয়ে, তাঁদের গরিব রেখে বড়লোক হতে সাহায্য করেছিলেন। দেশে গরিবি ছিল, আস্তে আস্তে কমছিলও। তবে বিপুল এক রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্র ছিল, তাতে কাজ করা অনেক শ্রমিক ছিল। তার দোষ গুণ নিয়ে অন্যত্র আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তেমন একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্র সমস্ত খামতি নিয়েও বিপুল সম্পদ তৈরি করেছিল, আর দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল সেটা টের পাওয়া গেছে ২০০৮ সালের বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে। যদিও তার দু'দশক আগে থেকেই নয়া উদারবাদী অর্থনীতি রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের ভূমিকাকে দুর্বল করেছে ও বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিয়েছে। তবুও বিশাল রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ও যথেষ্ট পরিমাণ রাষ্ট্রায়ত্ব উৎপাদন সংস্থা ভারতীয় অর্থনীতিকে ওই বিকট মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু বর্তমান মোদি সরকারের কেন জানি না সরকারি সংস্থার উপরে ভারি রাগ। পারলে বোধহয় সরকারটাকেও বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেন। অবশ্য তা প্রায় দেওয়াই হয়েছে। যারা নির্বাচনে ২৭ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করেছে, তারা তো সেই বিনিয়োগকৃত মূলধনের জন্য লভ্যাংশ চাইবেনই। ওদিকে সরকারেরও খারাপ অবস্থা। তাদের আবার বিদেশীদের কাছে মুখ রক্ষা করার জন্য রাজকোষ ঘাটতিকে (ফিসক্যাল ডেফিসিট) মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে ৩%-এর নিচে নামাতে হবে। তাই নেহরুকে গাল দাও কিন্তু তাঁর আমলের অর্থনৈতিক নীতির উপরে তৈরি সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানিগুলিকে বেচে দাও, পুরোপুরি বা আংশিক। গত ৫ বছরে এই সরকার কেবল রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশী রোজগার করেছে, মনমোহন সিংএর ইউপিএ সরকারের আমলের ১০ বছরে তা ছিল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার মত২০১৯-২০ আর্থিক বছরে আরো ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকার বিক্রি বাজেটে ধরা হয়েছে। মোদি সরকার অতীতের কংগ্রেসী সরকারের তৈরি সম্পদের উপরে দাঁড়িয়ে ফুটানি মারছে।

ফিসক্যাল ডেফিসিট বলতে কি বোঝায়?

সরকারের মোট আয়ের সঙ্গে মোট ব্যয়ের তফাৎকে বোঝায়। সাধারণভাবে ওই মোট আয়ে সরকারের নিয়মিত আয়, কর বাবদ প্রাপ্য আয় বা যদি কোন সরকারি আমানত থেকে থাকে তার উপর সুদ ইত্যাদিকে বোঝায়। ফলে সরকারি রাজস্ব থেকে যে আয় হয় তার থেকে সরকারের সমস্ত খরচকে বাদ দিয়ে ফিসক্যাল ডেফিসিটের হিসেব করা হয়। যেহেতু সাধারণত সরকারগুলি বাণিজ্যিক বিনিয়োগ করে না তাই শেয়ার বিক্রি করে অর্থ পাওয়ার কোন কথা নেই। ফলে নিয়মমাফিক অর্থনীতিতে মোট আয়ের মধ্যে সরকারি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থকে ধরে ফিসক্যাল ডেফিসিট হিসেব করা উচিত নয়। কিন্তু ভারত সরকার সেই ১৯৯৩ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি বিক্রি শুরু করেছে ও সেই পূর্বপুরুষের তৈরি সম্পদ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থকে ব্যবহার করে ফিসক্যাল ডেফিসিটের পরিমাণ কম দেখাচ্ছে। এরকম হিসেবের অনবরত কারিকুরি চলছে, যে কারচুপির বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোদি সরকার। কম্প্ট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল বলেছেন যে, আদতে সরকারের ফিসক্যাল ডেফিসিট ও জিডিপির অনুপাত ২০১৮-১৯ এ ৫.৫%, ও ২০১৯-২০ তে তা ৫% ছাড়াবে। যদিও সরকারি বাজেটে তার থেকে ১.৫% থেকে ২% কম দেখানো হচ্ছে। যদি পরের ধনে পোদ্দারি অর্থাৎ কংগ্রেসী আমলের তৈরি সম্পদ বিক্রি করে পাওযা অর্থকে বাদ দেওয়া হয় তাহলে ওই অনুপাত আরো ০.৫% বাড়বে।

ওই রাজকোষ ঘাটতি: জিডিপি অনুপাত কমানোর আরেক ফন্দি হল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)র ভাঁড়ারে হাত মারা। অনেকদিন ধরেই মোদি সরকার সেই চেষ্টা চালাচ্ছিল। কংগ্রেস সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানাগুলো বেচলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বশাসনে তেমন হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। সুব্বারাও গভর্নর থাকাকালিন তৎকালিন অর্থমন্ত্রী চিদাম্বরমের শত আকাঙ্খা সত্বেও তিনি সুদের হার কমান নি। তাছাড়া, দেশের আর্থিক সঙ্কটের সময় যে তহবিলকে ব্যবহার করা যাবে সেই তহবিলে হাত দেওয়ার কথাও হযতো তারা ভাবেননি। সেই 'দূরদৃষ্টি' ও অতটা কপটতা তাদের ছিল না বোধহয় যে, অসময়ের ভান্ডারকে ভেঙে দেশের রাজকোষ ঘাটতির সমস্যাকে মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হবে। তদর্থে যদি মনমোহন সিং সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানিগুলি বেচে বছরে গড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে গড়ে বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা (যা মোদি সরকার পেয়েছে, এবছরের টা ধরলে আরো বেশী হবে, ৭৪ হাজার কোটি টাকা হবে।) রাজকোষে নিয়ে আসত, তাহলে রাজকোষ ঘাটতি গড়ে বছরে ১ লক্ষ টাকা কমত। ফলে রাজকোষ: জিডিপির অনুপাত গড়ে ১% মত কম থাকত। মনমোহন সিং সোনিয়া গান্ধিরা এখন নিশ্চয়ই হাত কামড়াচ্ছেন।

ওই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিলে থাবা মারা নিয়ে দ্বন্দ্বে অর্থনীতিবিদ গভর্ণর, ডেপুটি গভর্নররা আরবিআই ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অবশ্য এই সরকার ও তার নেতাদের কাছে অমর্ত্য সেনের থেকে শক্তিশেলের আঘাতে প্রায় মৃত লক্ষণকে বাঁচানোর ওষুধ বাতলানো বৈদ্য সুষেন বড় অর্থনীতিবিদ। তাই তাঁরা আদেশানুসারে চলা অমাত্য শক্তিকান্ত দাসকে আরবিআই-এর সর্বেসর্বা হিসেবে নিয়োগ করলেন। ব্যাঙ্কের পরিচালনা পর্ষদকেও তাঁবেদারদের দিয়ে ভারি করা হল। পাওয়া গেল এক লপ্তে কিঞ্চদধিক লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ সালের বাজেটে ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরাই ছিল। ফলে প্রায় দ্বিগুণ দিলেন শক্তিবাবু। অন্য আমলারা অবসর নিলেও উনি থেকেই যাবেন, অজিত দোভালের মত, এমিরেটাস হয়ে।

দেশের আর্থিক অবস্থা খারাপ শুরুতেই বলেছি। মোটর গাড়ির বিক্রি কমছে, বিস্কুটেরও। নোট বাতিল ও জিএসটির ঘা এখনো দগদগে হয়ে রয়েছে। শুকোবে না কর্কট রোগে পরিণত হবে তা সময়ই বলবে। তবে কর্মহীনতার হার বেড়েছে। জনরোষ সামাল দেওযার জন্য অবশ্য কাশ্মির, পাকিস্তান ও মুসলমান আছে। তবুও এই সময়ে সরকারের আর্থিক দুরবস্থা কাটাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিল ব্যবহার নিয়ে সাধারণের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এবার দেখার প্রয়োজন সরকার কিভাবে সেগুলো সামলান!

১. রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সরকার কোনো অর্থ নেয় কি?-

হ্যাঁ, নেয়। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) সম্পূর্ণ ভাবেই সরকারের মালিকানাধীন, কিন্তু কোনো রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক সংস্থা নয়। রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক সংস্থা তাদের মুনাফা থেকে সরকার বা অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। আরবিআই উদ্বৃত্তের থেকে বিভিন্ন তহবিল, মূলত ঝুঁকির জন্য তহবিল সরিয়ে রেখে বাদ বাকি সমস্ত উদ্বৃত্তই সরকারকে দিয়ে দেয়। সাধারণত আরবিআই-এর আয় আসে বিদেশী মুদ্রায় থাকা সম্পদ-এর থেকে পাওয়া আয় থেকে, যে সব সম্পদ বন্ডে বা অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ট্রেজারি বিল বা অন্য কিছু দামি ঋণপত্রে বা অন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আমানত হিসেবে থাকে। আরবিআই দেশীয় টাকায় নামাঙ্কিত সরকারি বন্ড বা ঋণপত্র বা অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে স্বল্পকালিন ঋণের উপর সুদও আয় করে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণের কাজকর্ম করার জন্য কমিশনও পায়। ব্যয় হিসেবে রয়েছে নোট ছাপার খরচা, কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধের জন্য ব্যয় প্রভৃতি। এই আয ও ব্যয়ের তফাৎকে উদ্বৃত্ত বলা হয়। ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত ওই উদ্বৃত্তের একটা বড় অংশ বিভিন্ন তহবিলে সরানোর পরে যে টাকা থাকত তা সরকারকে দেওয়া হয়েছিল। যেমন ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ তে অনুরূপ উদ্বৃত্তের যথাক্রমে ৩৭.২% ও ৫৩.৪% সরকারকে দেওযা হয়েছিল। ফলে যথাক্রমে ৬২.৮% ও ৪৬.৬% উদ্বৃত্ত তহবিলে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। মালেগাম কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ২০১৩-১৪ সাল থেকে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত ৩ বছর প্রায় কোনো অর্থই তহবিলে সরানো হয় নি। ফলে ওই উদ্বৃত্তের ৯৯.৯%ই ওই ৩ বছর সরকারকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ সালে ওই উদ্বৃত্তের থেকে যথাক্রমে ১৩,১৪০ কোটি ও ১৪,১৯০ কোটি টাকা তহবিলে সরানো হয়েছিল।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাজকর্ম থেকে প্রাপ্ত উদ্বৃত্তের থেকে সরকারকে প্রদত্ত অর্থ (শত কোটি টাকায়)

বৎসর

২০১১-১২

২০১২-১৩

২০১৩-১৪

২০১৪-১৫

২০১৫-১৬

২০১৬-১৭

২০১৭-১৮

২০১৮-১৯

আয়-ব্যয়

৪৩,০০০

৬১,৮০০

৫২,৭০০

৬৫,৯০০

৬৫,৯০০

৪৪,৩০০

৬৪,২০০

১,২৩,৪০০

প্রদত্ত অর্থ

১৬,০০০

৩৩,০০০

৫২,৭০০

৬৫,৯০০

৬৫,৯০০

৩০,৭০০

৫০,০০০

১,২৩,৪০০

২. তাহলে এখন নেওয়াতে সমালোচনা কেন? -

উপরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে, মোট উদ্বৃত্তের থেকে বেশ কিছু পরিমাণ টাকা আরবিআই ঝুঁকি মেটানোর তহবিলে রেখে দিত। এই তহবিল ব্যাঙ্কের এবং তার দ্বারা ভারতীয় অর্থনীতির ঝুঁকি অনেকটাই কমাতো। বিশ্ব বাজারে তেমন কোন ঘটনা ঘটলে আরবিআই ভারতীয় আর্থিক ব্যবস্থাকে অনেকটাই স্থিতিশীল রাখতে সমর্থ হত। যেমনটা গত ২০০৮ সালের সাব-প্রাইম সঙ্কটে সময়ে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই ঝুঁকির তহবিল রাখা বন্ধ হযে গেল বললেই চলে। মোদি সরকার এর পরে ঝুঁকির তহবিল আর রাখবে বলে মনে হয় না।আরবিআই-এর ২.৩ লক্ষ কোটি টাকার মত ঝুঁকির তহবিল ছিলযেভাবে বিমাল জালান কমিটিকে দিয়ে আরবিআইএর মূলধনী অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের কথা বলিয়ে তহবিল নিয়ে নেওয়া হল, সেই ভাবেই সরকার নিজেদের তরফে কোনো অদক্ষতা ঘটলেই আরবিআই-এর তহবিলে হাত দেবে। প্রয়োজনে ওই রকম একটি কমিটি বানিয়ে তার মত নিয়ে নিলেই হবে।

৩. কিন্তু সরকারতো ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা নিচ্ছে, বাকি ৫৩ হাজার কোটি টাকার হিসেব কী?


আরবিআই-এর উদ্বৃত্ত বন্টন নিয়ে গঠিত জালান কমিটি বলেছে যে, প্রকৃত মূলধন ও পুনর্মূল্যায়নের তহবিলের মধ্যে তফাৎ করতে হবে। কমিটি বলেছিল যে, প্রকৃত মূলধন ব্যালান্স শিটের মোট সম্পদের অন্তত ৫.৫% এবং উর্ধস্তরে ৬.৫% রাকতে হবে। আরবিআই বোর্ড বলছে যে, ওই নিরিখে ঝুঁকির জন্য যে তহবিল তা অতিরিক্ত আছে। যদি ৬.৫% ধরা যায় তাহলে ১১,৬০৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত আছে। আর যদি নীচের স্তর ৫.৫% ধরা যায় তাহলে অতিরিক্ত আছে ৫২,৬৩৭ কোটি টাকা। স্বভাবতই তাঁবেদার পরিচালন পর্ষদ সরকারের যেটাতে সুবিধা হয় সেটাই ধরেছে ও সরকারকে ঝুঁকি তহবিল থেকে ৫২, ৬৩৭ কোটি টাকা দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলেওই ঝুঁকির তহবিল ২.৩ লক্ষ টাকা থেকে কমে ১.৮ লক্ষ টাকায় নেমে আসবে।

৪. গচ্ছিত ধনেই পোদ্দারি মোদি সরকারের:

মোদি সরকারের আমলে গত দু বছরই কেবল ঝুঁকি তহবিলে টাকা গচ্ছিত রাখা হয়েছিল। তার মোট পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাকি যে ২৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নেওয়া হল, তা পূর্বতন সরকারগুলির সময়ে অর্জিত টাকা। এ ছাড়া যে ১. ৮ লক্ষ টাকার তহবিল থাকল তাও সঞ্চিত হয়েছে আগের সরকারগুলির আমলে।

৫. রাজকোষ ঘাটতিকে কম করে দেখানোই উদ্দেশ্য:

ঘাটতিকে কম করে দেখানোর জন্যই এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। নতুবা নোট ছাপিয়ে ঘাটতি মেটানোর সঙ্গে তেমন কোনো তাত্বিক তফাৎ খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেহেতু হয়তো বা বহিবির্শ্বের লোকেরা এই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে থেকে তহবিল সংগ্রহ করার বিষয়টিতে খেয়াল করবে না তাই এই প্রক্রিয়ায় জিডিপির অনুপাত হিসেবে রাজকোষ ঘাটতিকে কম দেখানোর চালাকিটা করা যাবে।

৬. এরপরে হয়তো রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও বেসরকারিকরণ করা হবে:

শুনতে আশ্চর্য লাগলেও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে সরকারের মালিকানাধীন থাকতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও ১৯৩৫ সালের ১ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ১৯৩৪ আইনে বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাঙ্ক হিসেবে স্থাপিত হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ১ জানুয়ারি ১৯৪৯ রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে জাতীয়করণ করা হয়। ফলে মোদি সরকার চলতে থাকলে ও সরকারের খুব টাকার দরকার পড়লে আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বেচে দেওয়া যেতেই পারে। তাছাড়া, মোদি সরকার উদাহরণ হিসেবে জাপান, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, গ্রীস, তুরস্ক বা দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ দিয়ে বলবে যে ওদের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কও তো বেসরকারি মালিকানাধীন।

0 Comments

Post Comment