স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় আনুমানিক ২.৭২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বেশি। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধিই এই ব্যাপক ব্যয়ের প্রধান কারণ। এর ফলে বিশ্বের শতাধিক দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ব্যয় অনেকটাই বেড়েছে। দেশগুলো এই বিপুল অর্থের বড় অংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে খরচ করে। বিশ্বের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাবেচার বাজারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষস্থানে থাকলেও ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি এবং চীনের মতো দেশগুলোও এই বৃহৎ বাজারে পিছিয়ে নেই। বড় বড় প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর (লকহিড মার্টিন, বোয়িং, রেথিওন টেকনোলজিস, নর্থরপ গ্রুম্যান এবং বিএই সিস্টেমস) সম্মিলিত বার্ষিক আয়ও শত শত বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
২০২৪ আর্থিক বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফরেন মিলিটারি সেলস (এফএমএস)-এর মাধ্যমে ১১৭.৯ বিলিয়ন এবং ডিরেক্ট কমার্শিয়াল সেলস (ডিসিস)-এর মাধ্যমে ২০০.৮ বিলিয়ন মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও পরিষেবা বিক্রি করেছে। রাশিয়া, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে, ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট ৭.৮% অস্ত্রের চাহিদা পূরণ করেছে। ফ্রান্স ও জার্মানি ইউরোপের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ; ২০২৪ সালে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৮ বিলিয়ন ইউরো ও ১৩.৩ বিলিয়ন ইউরো। চীন ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১.৫ বিলিয়ন টিআইভি (ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর ভ্যালু) মূল্যের অস্ত্র রপ্তানি করেছে। এখানে টিআইভি হলো সিপ্রি-এর একটি বিশেষ পরিমাপ পদ্ধতি, যা অস্ত্রের প্রকৃত আর্থিক মূল্য নয়, বরং এর সামরিক সক্ষমতা নির্দেশ করে।
সামরিক খাতে এই বিপুল ব্যয় এটাই প্রমাণ করে যে সংঘাত শুধু অস্ত্রের ঝনঝনানি বা জীবনহানির কারণ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে বিশাল আর্থিক লেনদেন। সংঘাত ও ধ্বংসলীলার সুযোগ নিয়ে বিশ্বের কিছু দেশ ও কোম্পানি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। সংঘাতের জন্য অথবা সংঘাতকে কেন্দ্র করে যে বিশেষ অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্ম হয়, সেটাই যুদ্ধের অর্থনীতি।
যুদ্ধের অর্থনীতি: সংঘাতের অদৃশ্য প্রভাব
যুদ্ধের অর্থনীতিতে, একটি দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ প্রধানত যুদ্ধ পরিচালনা এবং সামরিক চাহিদা পূরণের জন্য পরিচালিত হয়। সংঘাতের সময় রাষ্ট্র তার সিংহভাগ সম্পদ সামরিক উৎপাদন, সৈন্যদের ভরণপোষণ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় করে। তবে, যুদ্ধের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব প্রায়শই নেতিবাচক হয়। প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে কৃষি ও শিল্পসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পায়। বাণিজ্য ব্যাহত হয়, সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মূলত শিল্প ও কৃষিনির্ভর ছিল। কিন্তু ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে হামলার পর দেশটি সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়। কারখানাগুলো রাতারাতি সামরিক সরঞ্জাম, যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ উৎপাদনে মন দেয়। সরকার "ওয়ার প্রোডাকশন বোর্ড" গঠন করে সম্পদের বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে সামরিক উৎপাদনে উৎসাহিত করে। হিটলারের অধীনে জার্মানিও আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণার আগেই যুদ্ধের অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছিল। ১৯৩৩ সালে হিটলারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই জার্মানিতে দ্রুতগতিতে সামরিকীকরণ শুরু হয়।
এই যুদ্ধকেন্দ্রিক অর্থনীতি সাধারণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যে দেশগুলো দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের শিকার, তাদের বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধি ২ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে। সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হয়। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক খাতে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে, যার ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। এই যুদ্ধকেন্দ্রিক অর্থনীতি উৎপাদনশীল খাতকে অবহেলা করে, ফলে সার্বিক উৎপাদনশীলতা কমে যায়। পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি ক'রে - সমাজে অস্থিরতা ও বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে। ইউক্রেন ও ইয়েমেনের মতো সংঘাত কবলিত দেশগুলো এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
অর্থনীতির যুদ্ধ: সামরিক শক্তির বিকল্প
অন্যদিকে, রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি দেশ যখন অন্য দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করে, তখন তাকে অর্থনীতির যুদ্ধ বলা হয়। এটি এমন একটি কৌশল যেখানে রাষ্ট্রগুলো সামরিক শক্তির পরিবর্তে অর্থনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। এর প্রধান অস্ত্রগুলো হলো অবরোধ (sanctions), বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা (trade embargoes), শুল্ক আরোপ (tariffs), আর্থিক চাপ (financial pressure) এবং প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ (technological restrictions)। অর্থনীতির যুদ্ধের লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া, যাতে প্রতিপক্ষ আক্রমণকারীর রাজনৈতিক বা সামরিক লক্ষ্যের সঙ্গে সহমত হয়। এখানে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, আক্রমণকারী তার নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিপক্ষকে বাধ্য করছে। এটি প্রায়শই সরাসরি সামরিক সংঘাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি কম রক্তক্ষয়ী।
উনিশ শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চীনের সাথে আফিম বাণিজ্যের মাধ্যমে এক প্রকার অর্থনৈতিক যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। কিউবার বিপ্লবের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার উপর দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের উপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার অধিগ্রহণের পর এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশ রাশিয়ার উপর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৮ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে; ২০২৫-এ সেই যুদ্ধ মারাত্মক চেহারা নিয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়াও, ২০২৩-২০২৪ সালে লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বাণিজ্যিক জাহাজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার দাবিতে এই হামলা হয়েছিল। ফলে জাহাজগুলো সুয়েজ খালের পরিবর্তে আফ্রিকার দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে বাধ্য হয়। এতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এটি অর্থনৈতিক চাপের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
যুদ্ধের অর্থনীতি' ও 'অর্থনীতির যুদ্ধ' : পারস্পরিক সম্পর্ক
'যুদ্ধের অর্থনীতি' এবং 'অর্থনীতির যুদ্ধ' একে অপরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। যখন একটি দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। অবরোধ আরোপ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক চাপের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের যুদ্ধ করার ক্ষমতাকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়। ইউক্রেনকে আক্রমণ করার পর রাশিয়ার উপর পশ্চিমী দেশগুলোর ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ - অর্থনৈতিক যুদ্ধের অন্যতম উদাহরণ।
একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে তোলে, যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় তার অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো প্রায়শই বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যেহেতু যুদ্ধ উভয় পক্ষের জন্যই অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই অর্থনৈতিকভাবে আন্তঃসংযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা সবসময় কম থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাত: অর্থনৈতিক যুদ্ধের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দু'দশকেরও বেশি সময় পর আমেরিকা সরাসরি সামরিক যুদ্ধে জড়িয়েছে। জুন ২২, ২০২৫, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, আমেরিকা সফলভাবে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র - ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানে হামলা চালিয়েছে। এই হামলার ঘটনা, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। এই সংঘাতের ফলে তেলের বাজারে অস্থিরতা, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি এবং হরমুজ প্রণালী ও লোহিত সাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটে বিঘ্ন ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরিণতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার ঝুঁকি বাড়বে। ভারতের মতো তেল আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য এটি জ্বালানি নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্বের শেয়ার বাজারে এরই মধ্যে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাসের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইরানের অর্থনীতিতে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ইরানে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে এবং রিয়ালের দাম কমে গেছে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর মতো সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিচ্ছে যে, এই যুদ্ধ বিশ্বের সার্বিক বৃদ্ধির হার কমিয়ে দিতে পারে এবং বিশ্বকে স্ট্যাগফ্লেশনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি, সাইবার যুদ্ধের মাধ্যমেও অর্থনীতিতে শত শত বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে এই অর্থনৈতিক সংঘাত যদি আরও তীব্র হয়, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করবে।
অর্থনীতির যুদ্ধ: ভারতের জন্য কতটা কাম্য?
ভারতের প্রেক্ষাপটে, অর্থনৈতিক যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিকল্প হতে পারে, বিশেষ করে যখন সরাসরি সামরিক সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজন হয়। এর বেশ কিছু সম্ভাব্য সুবিধা রয়েছে: এটি কম রক্তক্ষয়ী, আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের সুযোগ থাকে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে, সীমান্ত বিরোধ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক আধিপত্য অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক যুদ্ধকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে, "অর্থনীতির যুদ্ধ" ভারতের জন্য "যুদ্ধের অর্থনীতি"র চেয়ে বেশি উপযোগী হতে পারে। তবে, এই কৌশলের নিজস্ব ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেটা হ'ল প্রতিপক্ষের পাল্টা আঘাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে
‘যুদ্ধের অর্থনীতি’ ও ‘অর্থনীতির যুদ্ধ’ - এই দুটি ধারণা একে অপরের সাথে এক জটিল জালে আবদ্ধ। যুদ্ধ একটি বিশেষ ধরনের অর্থনীতির (যুদ্ধের অর্থনীতি) জন্ম দেয়। সেই অর্থনীতি যে কোনো দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর - এটা প্রমাণিত সত্য। অন্যদিকে, অর্থনীতির যুদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, এর প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর মারাত্মক হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের জন্য, এই দুটি ধারণার আন্তঃসম্পর্ক সঠিকভাবে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সামরিক সংঘাত পরিহার করা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া অপরিহার্য। মনে রাখা প্রয়োজন, অর্থনীতির যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধি ও শান্তির জন্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা অপরিহার্য।