খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর লেখক দিওদেরাস তাঁর একটি লেখায় আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়কার (খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দ) জনৈক লেখকের একটি অংশ উদ্ধৃত করেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে আলেকজান্ডারকে রাজা পুরু জানাচ্ছেন যে গঙ্গারিডাই-এর রাজার বিরুদ্ধে প্রজাদের অনেক ক্ষোভ এবং প্রজারা তাঁকে সম্মানও করে না, কারণ তিনি ‘চামারের সন্তান’। এই উল্লেখটি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে সে সময় চামারবৃত্তিকে যথেষ্ট নীচু চোখে দেখা শুরু হয়েছিল। এই উদ্ধৃতির সঙ্গে ঋগ্বেদের অষ্টম মণ্ডলের পঞ্চম সূক্তের ৩৮নং ঋকটির যদি তুলনা করে দেখি, তাহলে দেখব সেখানে মুচির পেশাটিকে মর্যাদার চোখেই দেখা হচ্ছে। ঋগ্বৈদিক পরিস্থিতি থেকে সরে এসে আলেকজান্ডারের সময়কালের মাঝের হাজার বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন কবে কীভাবে হতে থাকল, সেটি একটি জরুরী অনুসন্ধানের বিষয়।
অথর্ববেদ পর্বের শেষ দিক থেকেই কর্ম বিভাজন ক্রমে সামাজিক স্তর বিভাজন হয়ে উঠতে থাকল, জনগোষ্ঠী ও পরিবারগোষ্ঠী ক্রমশ সামাজিক শ্রেণিতে বিভাজিত হয়ে গেল, এমন অনুমানের সঙ্গত কারণ রয়েছে। অথর্ববেদের উনিশতম কাণ্ডের ৬নং সূক্তের ৬নং ঋকটি সেই পুরুষসূক্ত, যা সম্ভবত পরে ঋগ্বেদে প্রক্ষিপ্ত হয়। অথর্ববেদের ঊনিশ সংখ্যক কাণ্ডেই আরো দু’জায়গায় চতুর্বণের উল্লেখ রয়েছে। ৩২নং সূক্তের ৮নং ঋক’এ ঘাসের কাছে প্রার্থণা জানানো হয়েছে যে তিনি যেন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, আর্য (বৈশ্য?) ও শূদ্রদের কাছে প্রিয় করে তোলেন। যদি মনে রাখি যে অথর্ববেদের উনিশ ও বিশ কাণ্ড দুটি মূল অথর্ববেদে পরে প্রক্ষিপ্ত, তবে এটিকে বৈদিক সংহিতা যুগের শেষতম পর্বর, খ্রীষ্টপূর্ব দশম থেকে খ্রীষ্টপূর্ব অষ্টম শতকের মধ্যবর্তী সময়কালের রচনা বলে ধরে নেওয়া যায়।
অধ্যাপক রামশরণ শর্মা তাঁর ‘প্রাচীন ভারতে শূদ্র’ বইতে বিভিন্ন প্রমাণ সহযোগে অনুমান করেছেন সামাজিক শ্রেণি হিসেবে অথর্ববেদের আদি পর্বটিতেও শূদ্রদের উপস্থিতি ছিল না। যেমন অথর্ববেদের পঞ্চম কাণ্ডের ১৭নং সূক্তের ৯নং ঋক’এ ব্রাহ্মণ, রাজন্য ও বৈশ্যের কথা আছে কিন্তু শূদ্রের উল্লেখ নেই।
শূদ্ররা কি আর্যভাষী সমাজের ভেতর থেকে উদ্ভূত না তারা এই সমাজের বাইরের কোনও গোষ্ঠী? খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে শূদ্র নামে যে একটি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। দিওদেরাস লিখেছেন আলেকজান্ডার সোদ্রাই নামের এক জনগোষ্ঠীকে আক্রমণ করেছিলেন। মহাভারতেও আভীরদের সঙ্গে যুক্তভাবে শূদ্রদের এক জনগোষ্ঠী হিসেবে বারবার অভিহিত করা হয়েছে। এতে শূদ্রকুল ও শূদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্যও করা হয়েছে। ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের কুলের সঙ্গে শূদ্রকুলের উল্লেখ করা হয়েছে আবার আভীর, দরদ, তুখার, পল্লব এইসব জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি শূদ্র জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। ভেবার তাঁর বইতে মনে করেছিলেন যে শূদ্ররা আর্যভাষীদেরই বেদবাহী তরঙ্গের আগেকার এক তরঙ্গ। পরবর্তীকালে এই মতটি পরিত্যক্ত হয়েছে। ফিক, কিথ, লাসেন, প্রমুখের গবেষণা (দ্রষ্টব্য রামশরণ শর্মার ‘প্রাচীন ভারতে শূদ্র’, পৃষ্ঠা–৩৫) প্রমাণ করেছে শূদ্ররা প্রাক-আর্য জনগষ্ঠীরই এক শাখা। তবে শূদ্ররা প্রায় সর্বত্র আভীরীদের সঙ্গে একযোগে উল্লিখিত হয়েছেন, যে আভীরীরা একটি আর্য উপভাষাতে কথা বলতেন। ভরতের নাট্যশাস্ত্রে আভীরোক্তির উল্লেখ আছে। ব্রাহ্মণের যুগের বিভিন্ন সাহিত্য থেকে অনুমান করা যায় শূদ্ররা আর্যদের ভাষা বুঝতে পারতেন। সম্ভবত ভারতে শূদ্ররা আসেন খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দের শেষদিকে। পরবর্তীকালে বৈদিক আর্যভাষীদের কাছে তারা পরাজিত হয়ে বর্ণে বিভক্ত বৈদিক সমাজের নিম্নতম অংশ হিসেবে আর্যভাষী সমাজে অন্তর্ভুক্ত হন। (দ্রষ্টব্য রামশরণ শর্মার ‘প্রাচীন ভারতে শূদ্র’, পৃষ্ঠা–৩৭)
ডক্টর বি আর আম্বেদকর অবশ্য এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁর মতে দীর্ঘকাল ধরে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে সংঘাতের ফলে ক্ষত্রিয়দের অবনমিত করা হয় শূদ্রদের পর্যায়ে। এমনকি ব্রাহ্মণেরা তাঁদের প্রতিপক্ষদের উপনয়নের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেন। আম্বেদকর এক্ষেত্রে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থিত করেছেন মহাভারতের শান্তিপর্বে উল্লিখিত রাজা পৈজিবনের কাহিনী। সেখানে তাঁকে শূদ্ররাজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁকে ভারত জনগোষ্ঠীর প্রধান সুদাসের সঙ্গে অভিন্ন মনে করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে ঋগ্বেদে উল্লিখিত দশরাজার যুদ্ধের এই বিখ্যাত নায়ক ছিলেন শূদ্র। (দ্রষ্টব্য আম্বেদকরের ‘হু ওয়্যার দ্য শূদ্রস’) রামশরণ শর্মা অবশ্য মনে করেছেন বিভিন্ন আর্য জনগোষ্ঠীর মতো সূর্য জনগোষ্ঠীর অনেকে সামরিক ভূমিকা পালন করতেন। মহাভারতে অম্বষ্ঠ, শিবি, সূরসেন ইত্যাদিদের সঙ্গে শূদ্র সেনাবাহিনীরও উল্লেখ আছে। (মহাভারত ৭/৬/৬) শূদ্ররা উৎসগতভাবে বৈদিক সমাজের ভেতরের মানুষই হোন বা বাইরের, রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই থেকেই যে ভারতীয় সমাজের ভেতরের বর্ণবাদের উদ্ভব ও তাদের নিম্নতম বর্ণে রূপান্তরিত হওয়া, সেকথা আমরা বলতে পারি।
ঋগ্বেদীয় সমাজে পরিচয়ভিত্তিক কোনও শূদ্র বর্গ ছিল না। এই সমাজ ছিল মুখ্যত পশুপালক ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক। বৈদিক সমাজের পুরোহিত ও সমরনায়কদের পক্ষে একারণেই নিজেদের সমাজের ভেতর থেকে এত বেশি সম্ভব উদ্বৃত্ত উৎপন্ন ও শ্রম আদায় সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না, যাতে কোনও অংশের অবস্থান্তর ঘটিয়ে দাসের পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়। অবৈদিক জনগোষ্ঠীদের থেকে যুদ্ধ ও লুন্ঠনের মধ্যে দিয়ে যা কিছু সম্পদ আদায় করা হতো, বৈদিক সমাজের জ্ঞাতিদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হতো। সমাজপতিরা যে অশ্ব, রথ এবং দাসদের অধিকারী হতেন, তা তাঁদের পদমর্যাদার সঙ্গে যুক্ত ছিল, সামাজিক শ্রেণির সঙ্গে নয়। পরবর্তী বৈদিক যুগে, খ্রীষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের মধ্যবর্তী পর্বে, পশুপালন থেকে যখন চাষবাসের ও আধা যাযাবর বৃত্তির জায়গায় স্থায়ী বসতি স্থাপণের পর্ব এল, তখনই বৈদিক সমাজের ভেতরে সামাজিক শ্রেণি ভিত্তিক বর্ণ ব্যবস্থার আবির্ভাব হল।
বেদোত্তর কালে শূদ্র জাতিকে মূলত সেবক হিসেবেই দেখা যায়। কিন্তু ঋগ্বেদ পরবর্তী বৈদিক যুগে শূদ্রেরা যে স্বাধীনভাবে গো-ধনের অধিকারী ছিলেন, তেমন অনেক উল্লেখ আছে। মৈত্রয়ণী সংহিতাতে বলা হয়েছে (৪/২/৭ ও ৪/২/১০) শূদ্রদের গবাদি পশু ছিল এবং উচ্চবর্ণের লোকেরা যজ্ঞের জন্য সেগুলো নিয়ে যেতে পারতেন। পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে শূদ্ররা কোনও দেবতা বা যজ্ঞ ছাড়াই জন্মেছেন, কিন্তু তাঁদের অনেক পশু সম্পত্তি আছে (৬/১১/১১)। কিন্তু সম্পত্তি থাকলেও তাদের অধস্থন ভূমিকা ও অবমানিত অবস্থানটি বেশ স্পষ্ট। জৈমিনি ব্রাহ্মণে বলা হচ্ছে (১/৬৮) কোনওরকম দেবতা ছাড়াই শূদ্রদের উৎপত্তি হয়েছিল প্রজাপতির পা থেকে, তাই গৃহস্বামীই তাদের দেবতা ও তাঁর পা ধুয়েই তাঁদের জীবিকা অর্জন করতে হবে। শ্রৌতসূত্রে বলা হয়েছে (২৬/১-৭) উচ্চবর্ণের শুশ্রূষা করেই তাঁদের বাঁচতে হবে। জৈমিনি ব্রাহ্মণ আমাদের জানিয়েছে অশ্বমেধের মধ্যে দিয়ে বৈশ্যদের ধনী হয়ে ওঠার কথা।
শূদ্ররা প্রভুর জমিতে ভূমিদাস হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁরা প্রভুর খেতে কাজ করে দিতেন। তবে তার নিজের জন্যও একটুকরো জমি থাকত। যতদিন তিনি ভূস্বামীর জমিতে কাজ করে দিতেন, ততদিন তিনি সেই জমি রাখতে পারতেন। পরবর্তী বৈদিক যুগ পর্যন্ত করযোগ্য ছোট ভূমি সম্পত্তি শূদ্রদের ছিল কিন্তু বেদোত্তর কালে তারা করপ্রদান ও সম্পত্তির আওতার বাইরে চলে যান।
শূদ্রদের সেবক ভূমিকার পাশাপাশি বিভিন্ন সূত্র শূদ্রদের শ্রমজীবী শক্তি হিসেবেও উল্লেখ করেছে। বাজসনেয়ি সংহিতা (৩০/৬/২১) ও তৈত্তরীয় ব্রাহ্মণে (৩/৪/২/১৭) নানারকম বৃত্তির উল্লেখ আছে, যেমন – রথকার, সূত্রধর, কুম্ভকার, কর্মকার, মণিকার, পশুপালক, পশুচারক, শৌণ্ডিক, ধীবর ও ব্যাধ। কৃষিতে কাজের কথাও রয়েছে। মনে করা হতো শূদ্ররা হলেন কঠোর শ্রমের প্রতিভূ। নিষাদ, কিরাত, পর্ণক, পৌল্কস, বৈন্দ ইত্যাদি অবৈদিক অন আর্য মানবগোষ্ঠীর কথাও এই প্রসঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে। বেদিক ইনডেক্স নামক বিখ্যাত আকরগ্রন্থ ইঙ্গিৎ করেছে যে শূদ্র গোত্রের মধ্যে এরাও অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন। হস্তশিল্পের সংখ্যা পরবর্তী বৈদিক যুগে অনেক বাড়ে কিন্তু বৈদিক সমাজের বিশ্-এর সদস্যরা সেইসব শ্রমসাধ্য কাজ যে আর করতেন না, তেমন ইঙ্গিৎ এখানে রয়েছে। সেই কাজ শূদ্ররা করতেন।
বর্ণ ব্যবস্থা থেকে জীবিকানির্ভর হাজারো বিভাজনভিত্তিক জটিল ভারতীয় জাত ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ আরো পরের ঘটনা, যে জাত ব্যবস্থার কাঠামো ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে আবার অনেকখানি স্থানীয় পরিচিতি ও চরিত্র লাভ করল। সেই সংক্রান্ত কথাবার্তা এক পৃথক পর্যালোচনা দাবি করে। কিন্তু এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি ভারত ইতিহাসের প্রথম দিকে মেহেরগড় বা হরপ্পা সভ্যতার আমলে তো বটেই, এমনকি বৈদিক সভ্যতার প্রথম দিকে ঋক বৈদিক যুগেও বর্ণভেদের অস্তিত্ব ছিল না। তা ভারতীয় সংস্কৃতি ইতিহাসের কোনও মৌলিক দিকই নয়। ব্রাহ্মণ্যবাদের উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণিস্বার্থ ও বর্ণস্বার্থ জাতপাতের জন্ম দিয়েছে এবং তাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লালন করেছে।
জিনভিত্তিক গবেষণার সাহায্যে সাম্প্রতিককালে ভারতে জাতের অন্তর্গত বিবাহ ও জাতের শুদ্ধতা রক্ষার সময়ক্রম সম্পর্কে কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মিলেছে। তা জানাচ্ছে কবে থেকে বিভিন্ন বর্ণগুলির মধ্যে সামাজিক সংমিশ্রণ বন্ধ হয়ে গেল। ২০১৩ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিশ্বখ্যাত জিনতত্ত্ববিদ ডেভিড রাইখের তত্ত্বাবধানে প্রিয়া মুরজানী, কুমারস্বামী থঙ্গরাজ সহ অনেক বিজ্ঞানী এক যৌথ গবেষণা করেন। লক্ষ্য ছিল দেশীয় বিভিন্ন জাতের উৎস সন্ধানে।
এই গবেষণায় উপমহাদেশের ৭৩টি (৭১ ভারতীয় ও ২টি পাকিস্তানী) জাতিগত ও ভাষাগত ভিন্ন গোষ্ঠীর ৫৭১ জন মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতির মানুষ, আদিবাসী মানুষ, আন্দামানের বিভিন্ন আদিবাসী মানুষকে এই পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জাতি ও ভাষা গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে মিশ্রণগুলির সময়কাল নির্ণয় করা। দেখা গেছে, এই ৭৩টি গোষ্ঠীর মিশ্রণের সময়কাল আজ থেকে ৪২০০ থেকে ১৯০০ বছরের মধ্যে হয়েছে। এমনকি ভিল, চামার ও কল্লারের মতো প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীও এই মিশ্রণ থেকে রেহাই পায়নি। এদের সকলের মধ্যে পাওয়া গেছে ইন্দো-ইউরোপীয় জিন। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে এই মিশ্রণটি এতটাই বিস্তৃত ছিল যে ভারতের প্রায় প্রতিটি গোষ্ঠীই এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
এই গবেষণা বলছে, আজ থেকে ৪,২০০ বছর আগে থেকে ১,৯০০ বছর আগে পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয় পূর্ব পুরুষদের মধ্যে মিশ্রণ হয়েছে। কিন্তু তারপর এই মিশ্রণ আর সেভাবে দেখা যায় না।
১০০ সাধারণ অব্দর পর থেকে অন্তর্বিবাহ বা একই বর্ণের মধ্যে বিবাহ নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।
মনুস্মৃতির রচনাকাল আনুমানিক ৩০০ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ১০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে। মনুস্মৃতি আন্তঃবর্ণ বিবাহের পক্ষে জোরালো নিদান দিয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও দেখা যাচ্ছে এই সময় থেকেই বহির্বিবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মৌর্য শাসনের অবসানে শুঙ্গ শাসনের যুগে ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির ক্ষমতা দখলের সময়ের সঙ্গে এই সময়কাল মিলে যায়। অর্থাৎ তখন থেকে নিজের বর্ণের মধ্যে বিবাহ বাধ্যতামূলক হয়। কর্মভিত্তিক বর্ণপ্রথার উদ্ভব খ্রীষ্ট পূর্ব দশম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে হয়ে থাকলেও বংশানুক্রমিক কঠোর বর্ণব্যবস্থা যে মৌর্যোত্তর যুগে গড়ে ওঠে তা বলাই যেতে পারে। মৌর্য সমাজ ব্যবস্থাটি শুঙ্গ যুগে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে ভেঙে যায় এবং কঠোর বর্ণব্যবস্থার জন্ম দেয়, এই অনুমানকে আধুনিক জিনভিত্তিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাও মান্যতা দিচ্ছে।
আকর
১) প্রাচীন ভারতে শূদ্র – রামশরণ শর্মা
২) ভারত ইতিহাস চর্চার ভূমিকা – ডি ডি কোসাম্বী
৩) ভারতবর্ষের ইতিহাস – রোমিলা থাপার
৪) ভারতের ইতিহাসের আদিপর্ব – রণবীর চক্রবর্তী
৫) প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথা – দেব রাজ চানানা
৬) ইতিহাসের আলোকে বৈদিক সাহিত্য – সুকুমারী ভট্টাচার্য
৭) ভারতীয় আর্য সাহিত্যের ইতিহাস – সুকুমার সেন
৮) নির্বাচিত রচনা সংকলন – বি আর আম্বেদকর
৯) ভারতবর্ষের মানুষের ইতিহাস - ইরফান হাবিব (১ - প্রাক ইতিহাস, ২ - সিন্ধু সভ্যতা)
১০) হরপ্পা সভ্যতার সন্ধানে – শিরিন রত্নাগর
১১) ভারতবর্ষের প্রাগিতিহাস – দিলীপকুমার চক্রবর্তী
১২) The History and Culture of Indian People (Vol 1) Ed by R C Majumder
১৩) History of Caste in India – S V Ketkar
১৪) Early Indians – Tony Joseph
১৫) A History of Ancient and Early Medieval India – Upinder Singh