পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বেকার সমস্যা মিটবে কিসে?

  • 18 February, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1068 view(s)
  • লিখেছেন : সৌমিত্র বসু
আজ ব্যাপার বদলেছে , বাংলায় এখন চাষ এর খরচ বেশি , উৎপাদনের থেকে উদ্বৃত্ত এতটাই কম যে প্রচুর পরিমানে উৎপাদন না হলে উদ্বৃত্ত ঘরে তোলার মতো হবে না। অর্থাৎ উৎপাদনের লভ্যাংশ বিদেশি কীটনাশক, এবং সার কোম্পানির কাছে চলে যায় আর খুব বড় চাষি না হলে টিকে থাকা যাবে না , তাই যা পাঞ্জাবে বা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সম্ভব তা এখানে নয় , কারণ জমির ঊর্ধ্বসীমা আছে।

এ রাজ্যে বেকার কে ? উত্তরটা নির্ভর করে প্রশ্নের ওপরে। বেকার কাকে বলে ? শহরে নগরে দেখুন বেকার নেই (!?) সবাই কিছু না কিছু করছে , ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে না। তাই বুঝি ? কী করছে তাহলে ? ব্যাস এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে শাসক দলগুলোর নেতাঁরা কতরকমের বাহানায় তার উত্তর দেবে। মাঝে মাঝে কিছু অকাজের কাজ, এখান থেকে ওখান থেকে কিছু সুপ্পলয়ের কাজ এই সব চলছে , কাজ মানুষ তো করবেই , পেটের আগুন নেভাতেই হবে। কিন্তু কী করছে ? ব্যাপারটা আরো ভয়ঙ্কর। সত্তরে বেকার দেখেছে মাথা কুটে মরলেও কাজ নেই , "উন্নয়ন " নামক গোল আলুটাও ছিল না ছিঁটে ফোঁটা, নগরায়ন ছিল না , আবাসন ইন্ডাস্ট্রি ছিল না , মানুষের যাপনক্রিয়াতে বৈচিত্র বা বিভিন্নতা ছিল না। কিন্তু তখন কৃষি উৎপাদন ছিল , যদিও উৎপাদন সম্পর্ক খুব ভয়ঙ্কর ছিল, মজুতদারি ছিল কিন্তু মজুত করার মতো সম্পদ উৎপাদিত হতো। চাষের খরচ বেশি ছিল না , মজুতদাররা মুনিশ খাটানোর থেকে অনেক বেশি ভাগচাষের নাম তীব্র শোষণ করতো কারণ তার একটাদিক হচ্ছে কম খরচের চাষে উৎপাদনকে মজুত করা যেত। ৮০ থেকে ৯০ এর দশকে ভূমি সংস্কারের ভয় ঢুকলো [কাজের যে খুব একটা হয়েছে তা নয় -মামলা প্রচুর বেড়ে গিয়ে প্রকৃত সংস্কার হতেই পারলো না ] খাস জমি বাড়লো , দল ধরে খাস জমি চাষ বাড়লো। তৎকালীন সরকার নিরঙ্কুশ হলো। কিন্তু এই সব কিছু "সম্ভব হওয়ার "পেছনে কম খরচের উৎপাদন হওয়া সম্ভব হতো , সামন্তবাদ কিন্তু বেঁচেই থাকে কম খরচের যথেষ্ট উৎপাদনের ওপর যেখানে আঞ্চলিক উৎপাদন আঞ্চলিক চাহিদা কে ছাপিয়ে সামন্তিদের অনেককে আঞ্চলিক স্তরে ধনী করতে পারার ক্ষমতার ওপর। পুঁজি তখন সামন্তিদের হাতে আর তারাই এই উদ্বৃত্ত কে এদিক সেদিক চাষ-অতিরিক্ত ক্ষেত্রে কাজে লাগতো - আধা সামন্তবাদ।
আজ ব্যাপার বদলেছে , বাংলায় এখন চাষ এর খরচ বেশি , উৎপাদনের থেকে উদ্বৃত্ত এতটাই কম যে প্রচুর পরিমানে উৎপাদন না হলে উদ্বৃত্ত ঘরে তোলার মতো হবে না। অর্থাৎ উৎপাদনের লভ্যাংশ বিদেশি কীটনাশক, এবং সার কোম্পানির কাছে চলে যায় আর খুব বড় চাষি না হলে টিকে থাকা যাবে না , তাই যা পাঞ্জাবে বা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সম্ভব তা এখানে নয় , কারণ জমির ঊর্ধ্বসীমা আছে। পশ্চিমবাংলার চাষের জমির পরিমান কম কারণ রাজ্যটাই ছোট আর অনেক শহর. নগরায়ন বাড়ছে তাই বড় জমি পাওয়া দুস্কর। ফল খুব পরিষ্কার, গ্রামের যুবকরা অন্য কোনো শহরে চলে যায় , আগে উত্তর ভারতে খুব যেত , খুব সম্প্রতি পরিযায়ীদের ওপরে তীব্র নির্যাতন নেমে আসায় সেটা কমেছে , কারণ ওই সব রাজ্যেও প্রচুর গ্রামীণ গরিব যুবকরা কাজে নেমেছে , কাজের চাহিদা বেড়েছে। এখন কেরালায় যায়, ওই ছোট্ট রাজ্যটাতে যায় , কাজ পেতে কারণ সেই রাজ্যের যুবকরা মধ্যপ্রাচ্যে যায়। আগে উত্তরভারতের যুবকরা ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান এ যেত এখন বর্তমান সরকারের উগ্র হিন্দুত্বের নীতিতে সেই দেশগুলো ভারতীয় শ্রমিক নিচ্ছে না তারা দেশেই গুঁতোচ্ছে তাই আর মালদা মুর্শিদাবাদ, এবং তরাই অঞ্চলের নিচের জেলা গুলো থেকে আর উত্তর ভারতে যেতে পারছে না সবাই কেরল ছুটছে। অর্থাৎ কাজের ক্ষেত্র দেশে নয়, কোথায় কে জানে , এত দূরে যে সেখানে অধিকারের অর্জন একেবারেই সম্ভব নয়. পরিযায়ীই হলে টাকা পাবে কিন্তু দাস হয়েই থাকতে হবে। তাই আখলাকরা পয়সা চাইলে মরতে হয়, যারা মারে তারা ন্যাতা বোনে যায়। এই সামন্তবাদ ফ্যাসিবাদ এর জন্ম দিয়েছে , কখনো মুসলমান, কখনো দলিত, কখনো নারী , কখনো আদিবাসী এই সব হাজারো রকমের বিভাজন বানিয়ে শ্রমিক কে মজুরি না দিয়ে দাস বানিয়ে রাখাটাই ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিবাদ এখানে দেশ চালানোর ক্ষেত্রে শুধু নয় , গ্রাম স্তরে নেমে আসে , এতদিন তা খাপ পঞ্চায়েত এর রূপ নিয়ে চলতো। বাংলায় ও চলতো, অন্য নামে, অন্য রূপে , কিন্তু পরিযায়ী প্রথায় সেগুলো ভেঙে ছত্রখান হয়ে পড়েছে , কিন্তু উৎপাদন সম্পর্ক বা উৎপাদনের পদ্ধতি বদলায় নি , সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ঢুকে পড়েছে উৎপাদনের উপকরণের এর দাম চড় চড় করে বেড়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে , আর এই ঢুকে পড়া মানেই উদ্বৃত্তর বড়ো অংশ সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি টেনে নিচ্ছে , তাই চাষ আজকে অলাভজনক ক্ষেত্র। পরিযায়ী শ্রমিক দেশে ফিরে এসে একটু আধটু ঘর সারাতে সরাতেই ফতুর হয়ে যাচ্ছে , নতুন করে দেশে কোনো চাষাবাদ বাড়াতে পারছে না।
শহরে আরো ভয়ঙ্কর অবস্থা , যে কোনো বাঁধা কাজের সময় এখন ১২ ঘন্টা , মাহিনা বাড়ার কোনো ব্যাপারই নেই। জিনিসের দাম চূড়ান্ত ভাবে বাড়ছে [পটল নাকি ৩০০ টাকা কিলো অর্থাৎ ১০ গুন্ দাম বৃদ্ধি ] অর্থাৎ প্রকৃত উপার্জন বা প্রকৃত আয় একেবারে তলানিতে। কাজের কোনো স্থিরতা নেই, কোনো ইউনিয়ন নেই বলে একেবারে অধিকারের প্রশ্নে কোনো সংগঠনের অবকাশ নেই। রাস্তায় নামা মানে তো একেবারে লোকাল স্তরে কিছু সমাবেশ। শক্তিক্ষয়ী যুদ্ধ। এটাই ফ্যাসিবাদের কার্যকরী কায়দা। বাংলায় স্বৈরাচার আর শুধু একেবারে শীর্ষে অবস্থিত নয় , শুধুমাত্র সুযোগের অভাবে সে পূর্ণ ফ্যাসিবাদের রূপ দেখতে পারছে না কিন্তু কার্যপ্রণালী একেবারে ফ্যাসিবাদী। শহরের যুবক আজ এটা কাল সেটা করার অর্থ সে বেকার। সে প্রতিদিন সকালে বেরোয় কাজ খুঁজতে , একেবারে যেন সুন্দরবনের বাঘ। সেখানে বাঘেদের খাবারের অভাব এখানে যুবকদের কাজের অভাব এরা বেকার , অনেক বেশি বেকার কারণ কাজ খুঁজতে যাওয়ার পেছনে টাকা খরচ হয়, কর্ম লাভ যে হবে তার নিশ্চয়তা নেই। স্বল্প কর্মসংস্থান, ছদ্মবেশি বেকারত্ব এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। শিক্ষিত বেকার বলে একটা বিষয় ছিল এককালে, এখন তা একেবারে ভূত হয়ে যাওয়া অতীত। যেখানে শৈলীর বিকাশ নেই সেখানে শিক্ষার কোনো কর্মমূল্য নেই . গত শতাব্দী তে কর্মমুখি শিক্ষা না থাকলেও তার একটা মূল্য ছিল প্রকাশনা ইন্ডাস্ট্রি এবং শিক্ষার অপ্রাতিষ্ঠানিক রূপের মাধ্যমে এখন সেটা নেই। শিক্ষা আজকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে , আর কোনো বাজারি মূল্যই নেই। যে বিদ্যানিকেতন গুলো আছে সেখানে বেতন দেওয়া যাচ্ছে না বলে নতুন নিয়োগ নেই , তাই সে পথে আর কে ই বা যাবে। শিক্ষা না হলেও শংসা আছে , শংসামূল্য নেই। এগুলোই বেকার তৈরির কারখানা। বেকার এই সমাজে এখন প্রস্রবণের মতো উৎসারিত হয়, বেচুবাবু বেচুবিবিরা বেকার। বেচতে গেলে সাজতে লাগে, ঘুরতে লাগে, পয়সা ওঠে না। বেকারের থেকেও খারাপ। ইনপুট খরচ বাড়ছে আউটপুট কম অর্থাৎ আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। বেকার থাকার সেখানে খরচ কম অর্থাৎ এক অর্থে লাভজনক(!).
বিরাট আবাসন কিস্সু করতে পারলো না , এক একটা হর্ম্যরাজি পরে রয়েছে ভূতব্যাংলোর মতো , মানুষ থাকার জায়গায় ভূতেরা থাকে হয়তো। কারখানা নেই , এক বামপন্থিদলের মতো বলা, নির্বুদ্ধিতা নয় বরং শয়তানি যে বেসরকারি লগ্নি আসছে না বলে এই অবস্থা নাকি হয়েছে। এই "বামেরা”ও ফ্যাসিবাদী দলটির মতো সম্পদকে ব্যক্তি বৃহৎ পুঁজির হাতে তুলে দেওয়ার ওকালতি করছে , কিছুটা গুপ্ত পথে। বাজার সংকুচিত , মানুষের হাতে উদ্বৃত্ত নেই , জিনিস কেনার । কিনবে কে? কিছু বিলাসদ্রব্য কেনার অতি ক্ষুদ্র উচ্চমধ্যবিত্ত অংশের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যবসা, দেশ কোনোটাই চলে না। এই সহজ সত্যটা এই বামপন্থীরা মানুষকে বলে না। খুব একটা অলীক কারণে এদের সোশ্যাল ফ্যাসিবাদী বলা হতো না - স্তালিন এই ধরণের মানসিকতাকে ফ্যাসিবাদের আঁতুর ঘর বলেছিলেন ]

কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধি দেশ বাঁচায়। কৃষির খরচ সাম্রাজ্যবাদীরা বাড়িয়ে দিয়ে তার উদ্বৃত্ত ছিনিয়ে নিচ্ছে , তার বিরোধিতা মানুষকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচাবে। কোনো প্যারাসাইট শিল্প(!) মানুষকে বাঁচাবে না , খাওয়াবে কে ?

0 Comments

Post Comment