পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

মাননীয় প্রধান বিচারপতি কি দেখতে পাচ্ছেন ?

  • 22 January, 2021
  • 2 Comment(s)
  • 2363 view(s)
  • লিখেছেন : শতাব্দী দাশ
প্রধান বিচারপতি বোবদের নিষেধকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে নারী আন্দোলনকারীরা কৃষক আন্দোলনের সামনের সারিতে সদম্ভে থেকে গেলেন। কৃষি আইনে মহিলা কৃষকদের ন্যায্য মজুরি, স্বীকৃতি বা কর্মক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার কোনও উল্লেখ নেই। বরং কর্পোরেটের হাতে কৃষিক্ষেত্র তুলে দিয়ে কৃষক নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ বৃদ্ধির চক্রান্ত, তা বুঝতে নারী-কৃষকেরা ভুল করেননি।

১৮ জানুয়ারি দেশজুড়ে পালিত হল 'মহিলা কৃষক দিবস'। যদিও ১৫ অক্টোবর 'জাতীয় নারী কৃষক দিবস' হিসেবে আগেও পালিত হত, তবু বর্তমান কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে মহিলা কৃষকদের প্রতি উৎসর্গিত একটি দিবস পালন বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। প্রধান বিচারপতি বোবদে কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ দেওয়ার সময় নারীদের আন্দোলনে 'রাখা' নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।

যে মহিলা কৃষকরা আন্দোলনে ছিলেন, তাঁদের আন্দোলনে 'রাখা' হয়নি, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছায়, নিজেদের দায় ও দায়িত্ব অনুসারে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু মাননীয় প্রধান বিচারপতির বক্তব্য শুনে বোঝা গেল, একবিংশ শতকেও দেশের সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ স্বীকার করে না।

কিন্তু প্রধান বিচারপতি বোবদের নিষেধকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে নারী আন্দোলনকারীরা লড়াইয়ের সামনের সারিতে সদম্ভে থেকে গেলেন। নারী কৃষক দিবস উদযাপিত হল দিল্লি-সীমান্ত সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কলকাতায় অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটি আয়োজিত 'অন্নদাতাদের সাথে বাংলা' নামক ধর্না মঞ্চে জঙ্গী মিছিল ক'রে সমবেত হলেন বহু মহিলা, যাঁরা শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী।

***

এই সুযোগে আমরা দেখে নেব ভারতে মহিলা কৃষকদের সামগ্রিক অবস্থা ও অবস্থান। মহিলা কৃষকেরা কৃষিকার্যে চিরকালই ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। সারা পৃথিবীতে ৯০টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি নারী কৃষিতে যুক্ত। অথচ চাষী বলতে আমাদের মানসচক্ষে এখনও ফুটে ওঠে এক পুরুষের ছবি। তেভাগা আন্দোলনে বঁটি-কাটারি হাতে মেয়েরা যতই ঝাঁপিয়ে পড়ুক, গান বাঁধা হয় 'চাষীভাই'-দের নিয়ে। বর্তমান আন্দোলনের ক্ষেত্রেও, কৃষক ছেলের বিরাট লাফের 'পুরুষোচিত' ছবি খুবই নায়কসুলভ, কিন্তু তা সবটা নয়।

এই যে চাষীরা ফসলের সময় ক্ষেত ফেলে চলে এলেন, এখন ঘর আর ক্ষেত একসঙ্গে সামলাচ্ছে কে? মেয়েরা। পুরুষ চাষীরা আত্মহত্যা করছেন বছরের পর বছর, কে সামলাচ্ছে পরিবার তারপর? মেয়েরা। এই মেয়েরা অনেকে হাজার মাইল হেঁটে দিল্লি এসেছেন৷ তিন লাখ কৃষক এসেছেন দিল্লীতে ও দিল্লীর সীমানায়, যার মধ্যে সত্তর হাজার মহিলা কৃষক। জমায়েতে ছেলেদের ছবি তুলছে ক্যামেরা, আর তাদের বউরা তখন হয়ত ট্রাকের পিছনে ছাউনি খাটিয়ে রুটি সেঁকছেন। আলোচনায় এসে আন্দোলনের নেতারা সরকারি খাবার প্রত্যাখ্যান করে মাটিতে বসে নিজেদের সঙ্গে আনা খাবার খাচ্ছেন, তাতেও অদৃশ্য হাতগুলির শ্রম মিশে আছে।

এই মেয়েরা কিন্তু শুধু রুটি সেঁকে না, কৃষির বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ভূমিকা রয়েছে। জমিকে চাষের যোগ্য করে তোলা, বপণ, রোপণ, সার ও কীটনাশক ছড়ানো, শস্য কাটা, ঝাড়াই মাড়াই, সবেতেই তাঁরা যোগদান করেন। উপরন্তু কৃষি ও গেরস্তালি কাজ সামলাতে তাঁদের উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হয়। পুরুষেরা অবসরে হয়ত হুকা টানতে পারেন, মহিলারা সেই সময়েও গবাদি পশুর যত্ন নেন, বা ঘুঁটে দেন। অথচ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে তাঁদের স্বর ছিল অশ্রুত।

দেখা যাক পরিসংখ্যান। ভারতের উৎপাদনশীল যাবতীয় কর্মকাণ্ডে যত মেয়ে কাজ করেন, তার ৮০% কৃষিক্ষেত্রে। ৩৩% ক্ষেতমজুর নারী। ৪৮% মেয়ে কাজ করেন পারিবারিক জমিতে। এই সবই অক্সফ্যামের ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান।

কিন্তু জমির মালিকানা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের নয়। একই রিপোর্ট অনুসারে, জমির মালিকানা আছে মাত্র ১৩% মহিলার। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিহারে, সেখানে মাত্র ৭% মহিলার নিজস্ব জমি আছে। ২০১১ সেন্সাস দেখাচ্ছে ৩.৬০ কোটি মহিলা কৃষিকর্মী। কিন্তু তাঁদের 'চাষী' বলা হচ্ছে না। সেখানে রয়েছে কৃষি-জমির মালিকানার শর্ত। অথচ কৃষি ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের বেশিরভাগই ভূমিহীন দলিত ও আদিবাসী মহিলা, যাঁদের মধ্যে আবার অশিক্ষিতর সংখ্যাও ৭৫% এর বেশি। ২০১৭-১৮ সালের সমীক্ষা বলছে, কৃষিকার্যের সার্বিক অবনতির জন্য দায়ী ছেলেদের শহরে পরিযান। এবং মহিলাদের কৃষিক্ষেত্রে যোগদানও বেড়েছে। বিহারে এই মুহূর্তে কৃষিকাজে নিযুক্ত মানুষের ৫০%-ই নাকি মহিলা। ভারতের যাবতীয় খাদ্যশস্যের ৬০-৮০% মহিলাদের উৎপাদিত। আবার ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড আর ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃষিশ্রমিকের ৪২% হলেন মহিলা আর নিজস্ব জমি আছে মাত্র দু শতাংশের।

হিন্দু ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী মেয়েরা পিতার সম্পত্তির অধিকারী, কিন্তু সামাজিক রীতি মেনে অধিকাংশই সেই অধিকার ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। মুসলমান আইন অনুসারে, কয়েকটি রাজ্য বাদে, মেয়েদের কৃষিজমিতে অধিকার স্বীকৃত নয়। উত্তর-পশ্চিম ভারতে মেয়েরা বিয়ের পরেই পিতার বাড়ি ও জমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিধবারা তাঁদেরই ভায়ের বা শ্বশুরবাড়ির জমিতে জমিহীন কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন মহারাষ্ট্র বা রাজস্থানে। জমির মালিকানা না-থাকায় তাঁরা বীমা বা ঋণও পান না। ব্যাঙ্ক বা কো-অপারেটিভের সাহায্যও পান না একই কারণে। অথচ কৃষিক্ষেত্রের সার্বিক উন্নতির জন্যই এই মহিলাদের কৃষকের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। রাষ্ট্রসংঘ বলে, মেয়েরা যদি নিজেদের জমির অধিকার পায় পূর্ণরূপে, তাহলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। খাদ্য ও কৃষি সংগঠন (FAO) ২০১১ সালে বলেছিল, মেয়েরা জমির অধিকার পেলে ফলন ২.৫-৪% বাড়বে। পৃথিবীজুড়ে ক্ষুধা কমবে ১২-১৭%।

এই মেয়েরা যেভাবে নুয়ে কাজ করেন, তাতে কম বয়সেই পায়ের, ঘাড়ের, হাতের নানা ধরণের সমস্যায় ভোগেন। অনেকের গর্ভপাত হয়ে যায়, অনেকের সময়ের আগে শিশু ভূমিষ্ঠ হয়ে যায় অতিপরিশ্রমে। অজ্ঞতার কারণে এমন কিছু কীটনাশকও তাঁরা ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে বিষবৎ। উচ্চমানের চাষের যন্ত্রপাতি যা কিছু আছে, তা কিন্তু মূলত ছেলেদের কথা ভেবেই বানানো। তাই সেগুলি ব্যবহার করতেও মেয়েদের বেগ পেতে হয়। বীণা অগরওয়াল 'Who Sows Who Reaps' বইতে ১৯৯৩ সালেই বলেন, মেয়েদের ভূমি-অধিকারের পথে অনেক বাধা। বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ির দূরত্ব, স্বাধীন যাতায়াতে বাধা, বাপের বাড়ির চাপে জমি ভাইকে দিতে বাধ্য হওয়া, সামাজিক লিঙ্গভূমিকা পালন করতে গিয়ে নিজের জমির অধিকার হারানো, অশিক্ষা, অজ্ঞতা, আইনি দরবারে পুরুষের প্রতিপত্তি ইত্যাদি সেইসব বাধার কয়েকটি। মেয়েরা পুরুষ অভিভাবকদের অবাধ্য হতে চায় না৷ দলিলপত্রও সঠিক ভাবে সংরক্ষিতও হয় না যে তা সম্বল করে আইনি লড়াই করবে। আবার খাতায় কলমে মালিকানা থাকলেও অনেক সময় জমির নিয়ন্ত্রণ মেয়েদের হাতে থাকে না।

চাষীদের আত্মহত্যার কথা বলা হয়, কিন্তু ২০১৪-১৫ সালের NCRB ডেটা অনুসারে যে ৮০০৭ জন আত্মহননকারীদের মধ্যে নিজস্ব জমিওয়ালা ৪৪১ জন মেয়েও ছিলেন, আর ৫৭৭ জন মহিলা কৃষিশ্রমিক ছিলেন, তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। 'মহিলা কিষাণ অধিকার মঞ্চ' বা 'মকাম' ২০১৮ সালে দেখায়, ২০১২-২০১৮ পর্যন্ত বিদর্ভ ও মারাঠাওয়াড়ার যে সব কৃষকরা আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের বিধবা স্ত্রীদের ৪০% এখনও জমির অধিকার পাননি। মাত্র ৩৫% নিজেদের বাড়িতে থাকার জায়গা পেয়েছেন। ৩৩% বিধবা জানেনই না যে তাঁদের পেনশন পাওয়ার অধিকার আছে।

এই মহিলারা কিন্তু নিজেদের বেশ কিছু দাবিদাওয়াকে এই মুহূর্তে পাঠিয়েছেন পিছনের সারিতে। যেমন, যাঁদের স্বামী আত্মহত্যা করেছেন, তিনিও এখন ক্ষতিপূরণের বদলে চাইছেন বিল প্রত্যাহার। দিল্লির আন্দোলনে তাঁদের যোগদান প্রথমবারের জন্য ভারতে মহিলা-কৃষকদের জনসমক্ষে উগ্রভাবে দৃশ্যমান করে তুলল। কিছু কৃষক সংগঠন বলছে, তারা ২০০০ সাল থেকেই একটু একটু করে সংগঠিত করছে মেয়েদের। এখন স্বতন্ত্র মহিলা শাখা আছে তাদের। পিতা বা স্বামীর আত্মহত্যার পর অনেক বাড়িই এখন পুরুষশূন্য। দরিদ্র ও ঋণগ্রস্ত সেই সব পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন মেয়েরা৷ সংগঠনে তাঁরা যুক্ত হয়েছেন নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে। যেমন ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (একতা উগ্রাহণ)-এর ৪০% সদস্যই মহিলা।

সত্তর বছরের সখবিন্দর কৌর এসেছেন জমি ফেলে। এসেছেন বাহাত্তুরে লাভ কৌরও, পুত্র-পুত্রবধূদের সাথে। সকলেই বলছেন, কাফন বেঁধে এসেছেন, দাবি না মানা হলে মরতেও তাঁরা তৈরি। পরমজিৎ কৌর বলেন, গ্রামে থাকার সময়েও কৃষক ইউনিয়নের কাজে গ্রামের মেয়েদের একত্রিত করতে ঘুরে বেড়াতে হত তাঁকে। স্বামী প্রান্তিক কৃষক,তিনি ঘর ও ছেলে সামলাতেন। তাঁর মৃত্যুর পরও হকের লড়াই চালাচ্ছেন পরমজিৎ। পাঞ্জাব কিষাণ ইউনিয়নের জসবীর কৌর ষাট বছরেও ইউনিয়নে হিসেব রাখা, শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত। হরিন্দর কৌর বিন্দু ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (একটা উগ্রাহণ)-এর দুঁদে নেত্রী। একাশির বলবিন্দর কৌর একাই এসেছেন। তিনিও প্রভাবশালী সংগঠক।

উত্তরপ্রদেশের ফৈজারপুর থেকে ছ’মাসের শিশু কোলে এসেছেন সাঁইত্রিশের মমতা। বলছেন, 'এই শিশুর ভবিষ্যতের জন্যই এই আন্দোলন।' সপরিবারে এসেছেন রাধা। স্বামী ও তিন সন্তান সহ। তাঁরা টয়লেট পাচ্ছেন না৷ পাচ্ছেন না জামা বদলের জায়গা। শীতে কাঁপছেন। প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আসা অচেনা চাষী কম্বল এগিয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয় দোকান, হোটেল ও বাড়িগুলি তাঁদের বাথরুম ব্যবহার করতে দিচ্ছে। এঁরা অনেকেই এর আগে শহরে আসেননি। কেউ কেউ এর আগে শহরের হাসপাতালে গেছেন শুধু বাচ্চা বিয়োতে।

***

এত কিছুর পরেও যখন প্রধান বিচারপতি নারী কৃষকদের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা দেখতে পান না, তখন তার জবাবে 'মহিলা কৃষক দিবস-পালন' অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেদিন সারা ভারতের মতো কলকাতাতেও জড়ো হন কৃষিজীবী-শ্রমজীবী মেয়েরা। 'ওয়ার্ল্ড উইমেন কনফারেন্সের' পক্ষ থেকে জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের মহিলা কমরেডরা ভারতের কৃষক-নারীদের সংগ্রামের প্রতি যে সংহতি বার্তা পাঠিয়েছেন, তা পাঠ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রায় চল্লিশটি কৃষক, মজুর ও নারী/নারীবাদী সংগঠনের নেতৃত্ব। শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, ভারতীয় মহিলাদের জাতীয় ফেডারেশন, প্রগতিশীল মহিলা সংগঠন এবং বিভিন্ন নারী সংগঠনের ডাকে রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায় 'কিসান-শ্রমিক বিধানসভা' তৈরি করে পাস করা হয় মহিলা কৃষকদের নয়টি রেজোলিউশন। তাঁরা দাবি তোলেন 'কৃষিকাজে রত নারী কৃষকের স্বীকৃতি চাই। পারিবারিক শ্রমের স্বীকৃতি চাই। লিঙ্গ নির্বিশেষে, সমকাজে সমমজুরি চাই।'

তিনটি কৃষি আইন দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় ও আপামর জনগণের খাদ্য-সুরক্ষার ওপর কেমন বিরূপ প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে সতর্ক করেন তাঁরা। চাইলেন সর্বজনীন রেশন বিতরণ ব্যবস্থা। কর্মরত জমির পাট্টায় সমান হকের দাবিও পাশ হয় প্রস্তাবনা হিসাবে। দাবি ওঠে, সমস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক মহিলাদের নেওয়া লোন মকুব করতে হবে। কাটমানি, কমিশন নিয়ে লোন নিশ্চিত করা চলবে না।

***
বিজেপি সরকারের তিনটি কৃষি আইনে মহিলা কৃষকদের ন্যায্য মজুরি, স্বীকৃতি বা কর্মক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার কোনও উল্লেখ নেই। বরং বদলে এ যে কর্পোরেটদের হাতে কৃষিক্ষেত্র তুলে দিয়ে কৃষক নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ আরও বৃদ্ধি করার চক্রান্ত, তা বুঝতে নারী-কৃষকরা ভুল করেননি। অন্যদিকে সর্বোচ্চ আদালত নাকি আশা করেছিল, এই শোষিত নারীদের অভিব্যক্তির লাগাম থাকবে পুরুষের হাতে! নারীর প্রতিবাদ করার, সংগঠিত হওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করে তারা যে আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে, তা প্রমাণ করল কলকাতার বুকে, ধর্মতলা থেকে মৌলালি পর্যন্ত, প্রায় পাঁচশ কৃষক মহিলার মশাল মিছিল। লিঙ্গসাম্যের এক শিক্ষাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে আজকের কৃষক আন্দোলন। প্রধান বিচারপতি বোবদের পিতৃতান্ত্রিক ঘোলাটে দৃষ্টির চিকিৎসা আছে এই সব প্রতিবাদস্থলেই। প্রধান বিচারপতিকে দেশ জুড়ে নারী-কৃষকদের নানা মঞ্চে আমরা স্বাগত জানাই— তাঁর বোধোদয় হোক।

2 Comments

কল্যাণ সেন।

23 January, 2021

আমি সহমন পত্রিকার গ্রাহক হতে চাই।

কল্যাণ সেন।

23 January, 2021

আমি সহমন পত্রিকার গ্রাহক হতে চাই।

Post Comment