স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই এর ডাক দিয়েছিলেন। ঘোষণা করেছিলেন শক্তিশালী ভারত গড়তে প্রতিটি নাগরিকের (বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর)পুষ্টিকর খাবার জরুরি । জনগণের সামগ্রিক পুষ্টি নিশ্চিত ক’রে অপুষ্টিমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে, মোদি-৩ সরকার, নতুন ক’রে বিনামূল্যে সুরক্ষিত চাল (ফোর্টিফাইড রাইস) বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয় দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা সহ বিভিন্ন সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পের (ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, পিএম পোশন ইত্যাদি) মাধ্যমে এই চাল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। সুরক্ষিত চালে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি- ১২ এর মতো অত্যাবশ্যকীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট মেশানো থাকে যা উন্নত পুষ্টির যোগান দেয়। ঠিক হয়েছে ডিসেম্বর ২০২৮ পর্যন্ত এই কর্মসূচী চালু থাকবে । এর আর্থিক দায়ভার পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকারের। এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যুক্ত সুরক্ষিত চাল সরবরাহের পিছনে যুক্তি হল - ভারতের ৬৫% মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। তাই চালের মধ্যে দিয়ে ভারতীয়দের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করা অনেক সহজ।
এর আগেও এপ্রিল -২০২২ থেকে মার্চ -২০২৪ পর্য্যন্ত তিনটি পর্যায়ে সুরক্ষিত চাল সরবরাহ করা হয় । তারপরও দেখা গেছে রক্তাল্পতা, ভারতে একটি বড় সমস্যা হিসাবে রয়ে গেছে (২০১৯ - ২০২১ সালের জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুসারে)৷ শিশু, বিভিন্ন বয়সের মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে আয়রন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি অব্যাহত। যা জনগণের সার্বিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সুরক্ষিত চাল কিভাবে তৈরী হয়?
চালের পুষ্টিগুণ বাড়াতে, সাধারণ চালের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি (মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস) বাইরে থেকে মেশানো হয়। এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস মিশ্রিত চালই সুরক্ষিত চাল। তবে সেই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসকে অবশ্যই ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এফ এস এস এ আই দ্বারা নির্ধারিত মানের হতে হবে। বৃহদায়তনে, মেশানোর কাজটি রাইস মিলগুলিই করে থাকে। সাধারন মানুষ চাইলে নিজের বাড়িতেও সুরক্ষিত চাল তৈরি করে নিতে পারেন। বাজার থেকে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস কিনে প্রতি কেজি চালে ১/২ চামচ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস ভালো ক’রে মিশিয়ে নিলেই চলবে। তবে এই চাল নিয়ে বিতর্ক অনেক । যা সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়িয়েছে। কেউ কেউ দাবী করেছেন থ্যালাসেমিয়া ও সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগীদের পক্ষে সুরক্ষিত চাল বিপদজনক। আগে সুরক্ষিত চালের প্যাকেটের গায়ে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হিসেবে এই কথাটি লেখাও থাকতো। এফ এস এস এ আই নতুন নিদের্শ জারি করে জানিয়েছে এখন থেকে সতর্কীকরণ বার্তা আর থাকবে না। অতঃপর, এই চাল সর্বজনীন । এর বিরূদ্ধে অ্যাক্টিভিস্টরা বিভিন্ন ফোরামে প্রতিবাদ করছেন, দেশ জুড়ে সই সংগ্রহ চলছে। তবে সরকার জানিয়েছেন সুরক্ষিত চাল থ্যালাসেমিয়া ও সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগীদের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়।
অনেকটা ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া হ’ল । তবে বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক বলে উড়িয়ে দেওয়ারও উপায় নেই। সরকার অপুষ্টি রুখতে বিনা পয়সায় সুরক্ষিত চাল বিতরণের সময়সীমা বাড়িয়েছেন। তখনই প্রশ্ন উঠেছে এই চাল পুষ্টি বাড়ানোর তুলনায় বেশ কিছু মানুষের শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে তাঁদের বিপদে ফেলবে। এইরকম এক চাপান উতরের মধ্যে গত ১০ অক্টোবর, ২০২৪ সালের ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের’ রিপোর্ট জনসমক্ষে এসেছে। ক্ষুধা সূচকের মান অনুযায়ী বিশ্বের ১২৭ টি দেশের যে তালিকা তৈরি হয়েছে তাতে ভারতের নাম রয়েছে ১০৫ নম্বরে। অর্থাৎ ভারত তালিকার একেবারে শেষের দিকে।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের তালিকা কিভাবে তৈরি হয় ?
আয়ারল্যান্ডের কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, জার্মান বেসরকারী সংস্থা ‘ওয়েলথাঙ্গারহিলফ (ডব্লিউ এইচ এইচ)’ এবং জার্মানির রূঢ় ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ল অফ পিস অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট (আই এফ এইচ ভি)’ যৌথভাবে প্রতিবছর ‘গোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্স বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ এর তালিকা তৈরি করে। পাশাপাশি এবিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও প্রকাশ করে। যাতে উল্লেখ থাকে পৃখিবীর কত সংখ্যক মানুষের এখনও পর্যাপ্ত দুবেলা আহার জোটে না, কত মানুষ অনাহারে থাকেন, খাদ্যের অধিকার থেকে কত মানুষ বঞ্চিত, কতজনের শরীরে সঠিক পুষ্টি যাচ্ছে না - এইসব। এছাড়াও ক্ষুধা দূরীকরণে কী কী পদক্ষেপ করা উচিত। একাজে ঠিক কোথায় ফাঁক রয়ে যাচ্ছে, তারও বিশদ বর্ণনা থাকে রিপোর্টে।
এখন দেখা যাক, কোন কোন বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে ক্ষুধার তীব্রতা মূল্যায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে চারটি সূচককে ব্যবহার করা হয় –
- : জনসংখ্যার কত শতাংশ জনগণ পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণে অক্ষম।
- শিশু অপচয়: পুষ্টির অভাবে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের কত শতাংশের ওজন উচ্চতার তুলনায় কম।
- শিশু স্টান্টিং : পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কত শতাংশ জন্মের প্রথম ১০০০ দিন পর্য্যন্ত সঠিক পুষ্টি না পেয়ে বয়সের তুলনায় উচ্চতায় ছোটো হয়ে রয়েছে।
- শিশুমৃত্যুর হার : পাঁচ বছরের আগে কত শিশু মারা যায় তার শতকরা অনুপাত।
এই বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ এর যে মান নির্ধারিত হয় তা শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত বিস্তৃত। কোনো দেশের মান শূন্য হলে বলা হয় সেই দেশে কোন ক্ষুধা নেই। যদি সেটা একশ ছুঁয়ে ফেলে তাহলে বুঝতে হবে দেশটির মানুষ চরম ক্ষুধার্ত। এই মানকে ভাগ করা হয়:-
০ - ৯.৯ : ন্যূনতম ক্ষুধা।
১০ - ১৯.৯ : লক্ষণীয় ক্ষুধা।
২০ - ৩৪.৯ : উদ্বেগজনক ক্ষুধা।
৩৫ - ৪৯.৯ : তীব্র ক্ষুধা।
৫০ - ১০০ : চরম ক্ষুধা।
২০২৪ সালে ভারতের ক্ষুধা সূচকের মান ২৭.৩ যা কপালে ভাঁজ ফেলার মত । ভারতে এখনও প্রায় ১৩.৭ % মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে, উচ্চতা অনুযায়ী শিশুদের ওজন কম প্রায় ১৮.৭ % এর। বয়সের তুলনায় খর্বাকৃতি হয়ে রয়েছে ৩৫.৫ % ভারতীয় শিশু এবং পাঁচ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের মৃত্যুর হার ২.৯ % । এথেকেই পরিষ্কার শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে ভারতকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। আর সূচক সংখ্যার বিভাজন থেকেও পরিষ্কার ভারতের ক্ষুধা উদ্বেগজনক । ক্ষুধা নিবারণে ভারতকে এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও বিশ্ব ক্ষুধা সূচক
ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, এবং মায়ানমার ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ তালিকায় ভারতের চেয়ে অনেকটাই উপরে। তাই তাদের ক্ষুধার স্কোর তুলনায় কম। যা উন্নত পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে চিহ্নিত করে। দেশগুলিতে শিশুমৃত্যুর হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে । স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় এই দেশগুলির সরকার ক্ষুধা ও অপুষ্টি মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন ক’রে তা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে :-
-
বাংলাদেশ: শর্তসাপেক্ষে গরিব জনগণকে আর্থিক সাহায্য করেছে এবং খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কা: শক্তিশালী স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে জনগণকে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করেছে।
মায়ানমার: গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি ও কৃষি সংস্কারে জোর দিয়েছে।
নেপাল: সম্প্রদায়-ভিত্তিক পুষ্টি কর্মসূচি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নতির দিক থেকে ভারত তার এই প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যে কোন দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ক্ষুধা সূচকের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এখন প্রশ্ন হ’ল, অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভারত এগিয়ে থেকেও ক্ষুধা সূচকের তালিকায় পিছনে কেন? ভারতে ক্ষুধা নিরসনের সমস্যাই বা কোথায়? আপাত দৃষ্টিতে যে সমস্যাগুলি প্রকট তা হল:-
- ভারতে অত্যধিক জনসংখ্যার চাপ ক্ষুধা নিবারণকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
- অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুফল সমভাবে বণ্টিত না হওয়ার মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণের জন্যদরিদ্রদের লড়াই অনেক বেশি।
- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, গ্রামীণ দারিদ্র্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে যা পুষ্টিকর খাবারের অ্যাক্সেসকে সীমিত করে দিচ্ছে।
- শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের সুষম খাদ্যে সীমিত অধিকার তাদের অপুষ্টি বাড়াচ্ছে । এছাড়া স্বাস্থ্যসেবাতেও মহিলাদের সুযোগের অভাব চোখে পড়েছে।
- পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসলের উৎপাদনশীলতা কম, এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্যমূল্যের ওঠানামা। এটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে প্রাপ্য পুষ্টিযুক্ত খাদ্য থেকে বঞ্চিত করেছে।
ক্ষুধা মেটাতে আশু করণীয়
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই এবং তা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি । এবং সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য -২ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ‘ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’ গড়ার যে স্বপ্ন তা পূরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা । কিন্তু বর্তমানে ক্ষুধার তীব্রতা যে জায়গায় রয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন কার্যত অধরাই থেকে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন । রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ১২৭টি দেশের মধ্যে ৪২টি দেশে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা এখনও উদ্বেগজনক। এর জন্য লিঙ্গ বৈষম্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। এর বাইরেও আরো অনেক কারণ রয়েছে সেগুলিরও আশু সমাধান প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার উন্নতির জন্য খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি বৃদ্ধির পাশাপাশি দারিদ্র্য এবং বৈষম্য দূরীকরণে একাধিক কর্মসূচি প্রয়োজন। দরকার কৃষির উন্নতি। একনজরে:-
• খাদ্য সহায়তা , স্কুলে খাবার সরবরাহ, নগদ অর্থ হস্তান্তর কর্মসূচীগুলির সঠিক বাস্তবায়ন এবং সম্প্রসারণ । পেনশন এবং শিশু সুবিধার মতন সামাজিক সুরক্ষাকে শক্তিশালী করা।
• ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি পূরণে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ। স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামোর উন্নতি, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের জন্য।
• শিক্ষা এবং দক্ষতা বাড়িয়ে কর্মসংস্থান এবং আয় বৃদ্ধি। অর্থনৈতিক সুযোগ এবং সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন।
• ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচারের মাধ্যমে খরা-সহনশীল কৃষিতে জোর, কৃষির ফলন বাড়াতে জৈব চাষে গুরুত্ব এবং ফসলের অপচয় রুখতে শস্য সংরক্ষণ ক্ষমতার বৃদ্ধি ।
• ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ঋণদান এবং বাজারে অ্যাক্সেস প্রদান করা। লক্ষ্যযুক্ত দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচীর সফল রূপায়ণ।
ভারতসহ বিশ্বের যে সমস্ত দেশে ক্ষুধার তীব্রতা বেশি সেখানে খিদে মেটানোর সম্ভাব্য ‘এই’ উপায়গুলিকে দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, জিডিপির ১% বৃদ্ধি ঘটলে ক্ষুধা হ্রাস পাওয়ার কথা ১.৩৮ %। সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটছে দ্রুত হারে – তেমনটাই প্রচার। ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার লক্ষ্যে দৌড়চ্ছে। জোর দিয়েছে ডিজিটাল ইন্ডিয়াতে। অথচ সেই ভারতেই গ্রামীন জনগণের ৪৫% এবং শহরে মানুষের ২৪% প্রতিদিন দুবেলা খাবার জোটাতে অক্ষম। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন গ্রামীন মহিলাদের ৫৫%। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ৪০% অপুষ্টিতে ভুগছে। কোনোও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যদি সেই দেশের জনগণের মুখে পর্যাপ্ত খাবার তুলে দিতে না পারে, জনগণের পুষ্টির জোগানে অপারগ হয় কিংবা শিশু মৃত্যুর হার কমাতে ব্যর্থ হয় তাহলে বুঝতে হবে তা ‘প্রকৃত’ অগ্রগতি নয় ! এ চর্চা থাক । তবে ক্ষুধা নিবারণের প্রশ্নে সরকারকে অনেক বেশি আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষা নিতে হবে সেইসব দেশগুলি থেকে যারা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যাকে লক্ষণীয় ভাবে কমিয়ে ফেলতে পেরেছে। এ ব্যাপারে ব্রাজিল, ভিয়েতনাম শিক্ষণীয়। যারা জিডিপির বৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি গ্রহণ করে তাদের দেশের ‘ক্ষুধা ও অপুষ্টিকে’ কমিয়েছে । এখন দেখার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিঞ্জতা নিয়ে ক্ষুধার প্রকোপ কমাতে ভারত কতটা সফল হয়। এবং আরও দেখার বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে তাদের নাম উপরে তুলে আনতে পারে কিনা । তবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী?