পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

দোসর পুজির কিস্যা –শেষ পর্ব

  • 09 July, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 2106 view(s)
  • লিখেছেন : শুভাশিস মুখোপাধ্যায়
মোদি সরকার সারা দেশের জন্য “গুজরাট মডেল” চালুর চেষ্টা করেই চলেছে। কিন্তু গুজরাটের বাস্তবতা আর সারা দেশের বাস্তবতা এক নয়। গুজরাটে সম্পদের অসম বন্টন, বাণিজ্যের বাতাবরণ, গণতান্ত্রিক বোধ ইত্যাদির সঙ্গে দেশ হিসেবে ভারতে ঐক্যের চেয়ে বিভেদই বেশি। সারা দেশের কোণে কোণে যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদের স্মৃতিচিহ্ন আবৃত, সেখানে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের আঁচ পর্যন্ত লাগেনি সেই গুজরাট রাজ্যে।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার নিরঙ্কুস সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মসনদ দখল করে। এনআরসি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দেশের অর্থনীতির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি—এই সব “কেজো” বিষয় আপাতদৃষ্টিতে ভারতের আপামর জনতাকে স্পর্শ করে নি। দেশপ্রেম, স্বচ্ছ ভারত, কাশ্মীর, “পাকিস্তানি হামলার যোগ্য জবাব” ইত্যাদি বিষয়গুলো মানুষকে বেশি প্রভাবিত করেছিল বলে হতাশ বিরোধী দলগুলি নির্বাচন-উত্তর অবস্থার মূল্যায়ন করেন।

কিন্তু মোদির এই “ভারত বিজয়”-এর পেছনে একশ্রেণির তাঁবেদার সংবাদমাধ্যমের যেমন ভূমিকা ছিল, তেমনি ভূমিকা ছিল দেশের ছোটো-মাঝারি-বড়ো দোসর পুঁজির টাকার থলির।

মোদি সরকারের প্রথম দফায় কর্পোরেটদের এই মোদি-প্রেম দেখা যায় ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনী তহবিলে তাদের দরাজ হস্তে দানের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলিকে “নৈতিক সাহায্যদান”-এর রূপায়ণে আর্থিক অনুদান দেওয়ার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় সত্য/প্রুডেন্ট ট্রাস্ট। ট্রাস্ট-এর মাধ্যমে অনুদান কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি দেওয়ার এবং একই সঙ্গে “কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি” নামক সোনার পাথরবাটিকে কুমিরের ছানার মত বারে বারে জনসমক্ষে তুলে ধরে তাদের দস্যুতা ঢেকে রাখার ফিকিরটিও চরিতার্থ হয়। এই সত্য/প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ফান্ড-এর দুটি মুখ্য দাতা কে পি সিং-এর ডিএলএফ লিমিটেড এবং সুনীল ভারতী মিত্তাল-এর ভারতী এন্টারপ্রাইস লিমিটেড। আবার এই ট্রাস্টটি তাদের কাছে গচ্ছিত অর্থের সবচেয়ে বেশি অংশটিই দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনী তহবিলে। সময়কাল ২০১৪, লোকসভা নির্বাচনের আগের দু মাসে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবর্ষের হিসেব অনুসারে এই ট্রাস্ট-এর মাধ্যমে এই দুই সংস্থা ছয় বছরে সর্বমোট ৬০০ কোটি টাকা বিজেপি-র নির্বাচনী তহবিলে জমা করেছে।

এর আগে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর জেনারেল ইলেকশান ফান্ড মোদির প্রথম দফার রাজত্বকালে নির্বাচনি তহবিলে অনুদানের ক্ষেত্রে তালিকায় এক নম্বর স্থান দখল করে রেখেছিল বহু বছর। মজার বিষয় হলো, নাকি তা মোটেই মজার নয় যে, এই সত্য ট্রাস্ট, যার পরে পরিবর্তিত নাম হয় প্রুডেন্ট ট্রাস্ট, সেই একই ট্রাস্ট মনমোহন সিং পরিচালিত ইউপিএ বা বকলমে কংগ্রেস সরকারকে ২০১২-২০১৩ থেকে ২০১৭-২০১৮ সাল পর্যন্ত একটানা অনুদান দিয়ে গেছে। কর্পোরেট-বান্ধব বনে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় দূরবর্তী দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেসও দোসর পুঁজির পৃষ্ঠপোষকতা থেকে একেবারে বঞ্চিত হয় নি। ভবিষ্যতের বোড়ের চাল হিসেবে বর্তমানে তাদের মৃদু “অক্সিজেন-সার্পোট”-এ রাখা হয়েছে!

ভারতীয় ব্যবসা-বিধি মতে এইসব নির্বাচনী ট্রাস্ট সমূহ “মুনাফা-রহিত কোম্পানি” বা “নন-প্রফিট কোম্পানি”। এই ট্রাস্ট-এ অনেক দাতা কর্পোরেট কোম্পানি তাদের অনুদান জড়ো করে, তারপর সেই টাকা ট্রাস্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে “সাহায্য” হিসেবে পাঠিয়ে দেয়। নিয়ম হলো এই জাতীয় নির্বাচনী ট্রাস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলি যে পরিমাণে আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকে, সেই পরিমাণ টাকার উৎস সহ যাবতীয় লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য বছরের শেষে অডিট করা রিপোর্ট সহ নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। বাস্তবে কী হয়, তা এই হবুচন্দ্র রাজার দেশে দেবা না জানন্তি! রাজনৈতিক দলগুলি তাদের নির্বাচন যজ্ঞ পরিচালনার জন্য এই একটি ক্ষেত্র থেকে সরকারিভাবে যে পরিমাণ অনুদান পায়, অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া অর্থ তা ধারে কাছেও পৌঁছতে পারে না।

ভারতের সাধারণ রোজগেরে করদাতাদের থেকে রাজনৈতিক দলগুলি “দেশ সেবা ও দেশপ্রেম”-এর কারণে একটা ছোটো সুবিধা ভোগ করে। কুড়ি হাজার টাকার মধ্যে যদি একটি রাজনৈতিক দল অনুদান পায়, তবে সেই অনুদানের সূত্র দলটিকে ঘোষণা করতে হবে না! চোখ বুঝিয়ে একবার ভাবুন তো একটা রাফেল বিমান কেনার “কাট-মানি” কত এবং তার ২৫ শতাংশ কত, আর কতগুলি কুড়ি হাজার টাকার বান্ডিল করলে সেই টাকা উশুল হবে!

ভাবতে থাকুন, সেই অবসরে আমরা ঘটনার পঞ্চমাংকে পৌঁছনর চেষ্টা করি। মোদি সরকার, বা তার আগের এনডিএ সরকার প্রথম থেকেই ভারতের সাংবিধানিক পদ্ধতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বে-আইন-কে আইনে রূপান্তরিত করার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব অনৈতিক লেনদেনকে “আইনি” করার অভিপ্রায়ে ২০১৭ সালে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত বিল সরকার সংসদে আনে। এই বন্ড-এর মূল বিষয় হলো বড়ো বড়ো ব্যবসায়িক সংস্থা এখন “নির্বাচনি বন্ড” কিনবে এবং সেই বন্ডগুলি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে দিয়ে দেবে। অতঃপর, রাজনৈতিক দলগুলি একটি নির্দিষ্ট সময় পর সেই বন্ড ভাঙিয়ে বন্ডের অর্থমূল্য নিজেদের তহবিলে জমা করবে। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, দেশের আইনে অনুদান গ্রহণ বেআইনি নয়। কিন্তু এই বিলের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয় হলো যে রাজনৈতিক দলগুলি কোন সূত্র থেকে এই বন্ড পেয়েছে, কে তাদের হয়ে কিনেছে, মোট কত টাকার বন্ড এই ভাবে লেনদেন হলো, এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য রাজনৈতিক দল বা বন্ড-এর ক্রেতা সরকারকে জানাতে বাধ্য নয়। অর্থাৎ, মোদির বারেবারে উচ্চারিত “কালধন” বা কালোটাকা লেনদেন ও পাচার, যা ভারতের আইনে অপরাধের বিষয়, তাকে এখন “আইনি সুরক্ষা” দেওয়ার ব্যবস্থা পাকা হলো। এইভাবে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র তহবিলে বিপুল “—ধন” ঢুকেছে সন্দেহ নেই!

এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা হয়, যেখানে বলা হয় যে এই নির্বাচনি বন্ড ব্যবস্থা ভারতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিরাট মাপের দুর্নীতির জন্ম দেবে। কিন্তু ভারতের প্রধান বিচারপতি শারদ বোবদে ( এই নামটি আমাদের অনেকের কাছেই আইনের “ব্যাখ্যা” দেওয়ার “উৎকর্ষ”-র জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে) ২৬ মার্চ ২০২১ এই মামলার রায় দানের সময় বলেন যে, “ এই প্রকল্পটি ২০১৮ থেকেই চালু আছে, ২০১৯-এর নির্বাচনে এই প্রকল্প ব্যবহৃত হয়েছে এবং এই প্রকল্পের কারণে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই। তাই এই প্রকল্প চালু থাকবে।“

কিন্তু যাঁরা এই নির্বাচনি বন্ড ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন, তাঁদের যুক্তির ও তথ্যের বিরুদ্ধে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল এবং মাননীয় ন্যায়াধীশবর্গের “যুক্তি”, খুব নরমভাবে বললে বলা যায় যে সেগুলি খুবই পলকা। যেমন, মামলাকারীদের দুটি যুক্তি ছিলো ১) এই প্রকল্পে ক্রেতার নামধাম সহ যাবতীয় তথ্য গোপন, এবং ২) কর্পোরেট সংস্থাগুলি এখন রাজনৈতিক দলগুলিকে দেদার “অনুদান” দিতে পারবে, যেগুলি আমাদের দেশে এবং সমাজে দুর্নীতির মুখ্য উৎস। সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেলের এই দুই বিষয়ে “প্রতিযুক্তি”, ১) এটা ঠিকই যে বন্ড-এর ক্রেতা এবং যিনি বন্ড ভাঙাচ্ছেন, এঁদের দুই তরফের নামধাম সহ যাবতীয় তথ্য গোপন থাকছে, কিন্তু যাবতীয় আর্থিক “লেনদেন” হচ্ছে ব্যাঙ্ক-এর মারফৎ। এটাই নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা। আমাদের দেশে কোন আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি ব্যাঙ্ক লেনদেন ব্যাতিরেকে হয়েছে? পরপর নাম করা যায়— হরিদাস মুন্দ্রা, হর্ষদ মেহতা, কেতন পারেখ, বিজয় মালিয়া, মেহুল চোকসি, নীরব মোদি, তালিকাটা দীর্ঘ। ব্যাঙ্ক লেনদেনের মাধ্যমে কি দুর্নীতি আটকানো গেছে বা এই অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়া গেছে? ২) এখানেও সেই ব্যাঙ্ক-এর ঘাড়েই বন্দুক রেখে বলা হয়েছে যিনি ব্যাঙ্ক-এর মাধ্যমে বন্ড কিনছেন ও যিনি ভাঙাচ্ছেন, ব্যাঙ্কে তো তাঁর কেওয়াইসি জমা আছে, সেখান থেকেই সব জানা যাবে! সব শুনে মনে হচ্ছে যে জাল কেওয়াইসি দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, ব্যাঙ্কের তা নিয়ে সন্দেহ হলে ওজনদার রাজনৈতিক নেতার ফোনে হুমকি, যার কোনও রেকর্ড কেওয়াইসি কেন, কোনভাবেই থাকে না, এই সহজ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট কি নিষ্পাপ শিশুর সরলতায় ঘোষণা করেছেন। মনে করিয়ে দিই যে কেতন পারেখ মামলায় দেখা যায় যে কিছু ব্যাঙ্ক আধিকারিক পারেখের অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি করলে অন্তত চারজন সাংসদ সেই সব আধিকারিকদের হুমকি দেন, একজন তাঁর ব্যক্তিগত রক্ষীকে বন্দুকসহ ব্যাঙ্কে প্রেরণ করেন! এইসব যুক্তি শুনলে ঢাকার কুট্টি বলতেন তাঁর ঘোড়ার হাসি দিল্লি পার্লামেন্ট স্ট্রিট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে!

এখন কর্পোরেট সংস্থাগুলি আর পর্দার আড়ালে থেকে দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের আবরণটুকুও ঘুচিয়ে দিয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান, মুকেশ আম্বানি প্রকাশ্যে এবং সরাসরি মুম্বই দক্ষিণের লোকসভার কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী মিলিন্দ দেওরাকে শিবসেনার প্রার্থীর বিরুদ্ধে সমর্থন করেন। কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক-এর চেয়ারম্যান, উদয় কোটাক-ও শিবসেনার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সেই একই প্রার্থীকে সমর্থন করেন। একথা মনে করার কোনও কারণ নেই যে আম্বানি বা কোটাক সংস্থা বিজেপিকে আর্থিক সাহায্য দেয় নি।

এই সব দেখে আমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট-এর প্রাক্তন অধ্যাপক, জগদীপ চোক্কার মন্তব্য করেছেন, “ যদি নির্বাচনের ফলাফল কর্পোরেটেদের প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে এই নির্বাচনে ( ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন) যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সেই দলের অধীনের সরকার কর্পোরেটদের অগ্রাধিকার বিচার করে তাদের নীতি নির্ধারণ করবে।“ তিনি এই কথা বলেছিলেন ২০১৯ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার দিন বিকেলে, এই পূর্বানুমান আজকে প্রায় “দৈববাণী”-র মতো শোনাচ্ছে! শিল্পের ক্ষেত্রে তথাকথিত “এক-জানালা পদ্ধতি”, “কাঠামোগত পুনর্গঠন”, “উদারিকরণ” ইত্যাদি “নিরামিষ” নামের আড়ালে কী ভাবে ভারতে সংসদীয় রাজনীতিতে কর্পোরেটদের নাক গলানো বেড়েছে, তার একটা চিত্র পাওয়া যায় এই হিসেব থেকেঃ ২০০৪-০৫ অর্থবর্ষ থেকে ২০১১-১২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত নির্বাচনে কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিভিন্ন সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলিকে যে পরিমাণে আর্থিক অনুদান দিয়েছে, আর ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৭-২০১৮, এই দুই আর্থিক বর্ষে আগের চেয়ে সেই অনুদান বেড়েছে ১৬০ শতাংশ; এই তথ্য জানিয়েছেন এডিআর সংস্থা, যারা নির্বাচনে দুর্নীতি ও স্বচ্ছতা নিয়ে লাগাতার গবেষণা চালায়। কেন্দ্রে যে রাজনৈতিক দল সেই মুহূর্তে ক্ষমতা আসীন, কর্পোরেট সংস্থাগুলি সর্বদাই সেই দলটিকে অনুদানে ভরিয়ে দেয়। তার অর্থ এই নয় যে অন্যান্য দল যারা ক্ষমতায় আসতে উৎসুক, তাদের এরা বাতিলের দলে ফেলে দেয়। যেমন সত্য/প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট ২০০৯-১০ অর্থ বর্ষে কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকারের দুই শরিক, কংগ্রেস ও এনসিপি-কে যথাক্রমে ৩ কোটি ও ১ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। কিন্তু ২০১৩ থেকেই এই ফান্ডটি ইউপিএ-র পরিবর্তে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে পড়ে, কেননা তখনই বোঝা যাচ্ছিল যে আগামী নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে চলেছে।

শুধু যে বড়ো কর্পোরেট সংস্থাগুলিই দোসর বনেছে এমনটা মোটেই নয়। মেজো, সেজো, কনে, ন-মামারাও এই দৌড়ে খুব পেছিয়ে নেই। হিরো মোটরকর্প, ডিসিএম শ্রীরাম এবং জুবিলিয়েন্ট ফুড ওয়ার্কস লিমিটেড ( এরা ডোমিনো পিৎজা এবং ডানকিন ডোনাটস-এর ভারতে মূল ফ্রানচাইসির ব্যবসাটি চালায়, অর্থাৎ সারা দেশে যেখানে যত এই দুই সংস্থার খাবার বিক্রি হয়, সেইগুলি শেষ পর্যন্ত এরাই সরবরাহ করে), এই তিন সংস্থা সত্য/প্রুডেন্ট অর্থকোষে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করেছে। অন্য দিকে, বিড়লা পরিবারের কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্যে চিড় ধলেও তা নিঃশেষ হয়ে যায় নি আজও। আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর জেনারেল ইলেক্টোরাল ফান্ড বিজেপি ক্ষমতায় আসার আঁচ পেয়েই তার অনুদানের চেহারায় পরিবর্তন আনে। ইউপিএ-২-এর রাজত্বের শেষ দিকে, সেই ২০১৪-২০১৫ এই সংস্থা ৫৪.১ কোটি টাকা অনুদান দেয় কংগ্রেসকে, আর বিজেপিকে দেয় ৭০.৭ কোটি টাকা।

ভারতে “আর্থিক উদারিকরণ নীতি” গ্রহণের আগে, সেই ১৯৯০ সালের গোড়ায় রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার জন্য মোটে গুটিকয় ট্রাস্ট ছিল। তারপর “আর্থিক উদারিকরণ”-এর হাত ধরে, দুটি ইউপিএ সরকার এবং দুটি এনডিএ সরকার এসেছে। ইউপিএ-২ সরকারের শেষ দিকে কংগ্রেস পার্টি ২০১৩ সালে এই ইলক্টোরাল ট্রাস্ট প্রকল্পটি চালু করে, হয়তো তাদের আশা ছিল এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের পার্টি প্রভূত অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। এই স্কিমটি চালু হওয়ার পর এই জাতীয় ট্রাস্ট্রের সংখ্য হু হু করে বাড়লেও সেগুলি তেমনভাবে সক্রিয় ছিল না। মোদি সরকারের প্রথম দফায় এই ট্রাস্টগুলির বেশির ভাগই অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। বস্তুত, ২০১৬ থেকে ২০১৮-র শেষ পর্যন্ত, যে প্রথম দশটি এই জাতীয় সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে মুখ্য অনুদানকারী হিসেবে সামনে এসেছে, তার প্রত্যেকটিই এই নতুন সংস্থা। অবশ্য এই সংস্থাগুলি সম্মিলিতভাবে সবচেয়ে বেশি আর্থিক অনুদান দিয়েছে বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটিকে।

এই জাতীয় কয়েকটি নতুন ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের পরিচয় দেওয়া যেতে পারে। আমাদের মনে পড়বে ২০১৮ সালের স্টারলাইট সংস্থার ( ভেদান্ত গোষ্ঠীর)তামিলনাড়ুর তুত্থুকোড়ি-র তামার কারখানার কথা, যেখানে পুলিশ গুলি চালিয়ে ১০ জন নিরস্ত্র পরিবেশ কর্মীকে গুলি করে মারে। সেই স্টারলাইট সংস্থা বকলমে একটি ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট গঠন করেছে, যার নাম “ভদ্রম জনহিত শালিকা” ট্রাস্ট। এই স্টারলাইট সংস্থাটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পরিবেশ দূষণের দায়ে তার বন্ধ থাকা কয়েকটি সংস্থার “শর্তাধীনে ছাড়পত্র” পাওয়ার পর এই “ভদ্রম”-এর পক্ষ থেকে ২০১৬-১৭ সালে ৪১ কোটি এবং এবং ২০১৭-১৮ সালে ৩৯ কোটি টাকা বিজেপিকে অনুদান দেয়। শোনা যায় যে ইউপিএ-২-এর সময়ে পরিবেশ মন্ত্রী শ্রী জয়রাম রমেশ স্টারলাইট-এর জন্য যে সব অভিযোগ এনেছিলেন তাতে অনেক ফাঁকফোকর ছিল, যেগুলি ব্যবহার করেই নাকি মোদি সরকার স্টারলাইটকে শর্তাধীনে ছাড়পত্র দিতে সক্ষম হয়। অতএব, এই সংস্থা থেকে কংগ্রেসের ভাগ্যে জোটে ২ কোটি টাকা।

কোনও কোনও ব্যাঙ্কিং সংস্থা তাদের জোগাড় করা পুরো টাকাই দিয়েছে বিজেপিকে। এই রকম একটি সংস্থার নাম “জনতা নির্বাচক ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট”, যেটি তৈরি করেছেন কোটাক পরিবার, যার মধ্যে রয়েছেন কোটাক ব্যাঙ্কের মালিক উদয় কোটাক, বস্ত্র ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া সুরেশ কোটাক। এই সংস্থা বিজেপিকে দিয়েছে মোট ২৫ কোটি টাকা, তাও আবার একটিমাত্র লেনদেন মারফৎ! মাহিন্দ্রা গোষ্ঠীও এই দৌড়ে খুব পেছিয়ে নেই, তাদের গড়া সংস্থা, “নিউ ডেমোক্রাটিক ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট” মারফৎ তারা বিজেপিকে ১১ কোটি টাকা দিয়েছে।

মোদির কর্পোরেট ভাবমূর্তি এতটাই প্রবলভাবে জনমানসে উঠে এসেছিল যে ক্ষমতা পাওয়ার পর মোদিকে জনমোহিনী নানান যোজনার কথা ঘোষণা করতেই হয়। স্বভাবতই, এই সব “জনমোহিনী” যোজনা গুলিতে কর্পোরেট দুনিয়ার ভরপুর সায় ছিল, কেননা তারা এই যোজনাগুলি থেকে লাভের গন্ধ পায়। এই রকম দু একটি যোজনা এবং কোন কোন পিঁপড়ে, মৌমাছি, বোলতা, ভ্রমর এবং বড়ো বড়ো জীবেরা জুটে যায় গুড়ের অন্বেষণে, তার খোঁজ নেয়া যেতে পারে।

গান্ধী থেকে মোদি, সবাইয়েরই প্রিয় স্থান গ্রামীণ ভারত, গ্রামের উন্নতি, গ্রামের স্বাবলম্বন, গ্রামের...। এই লক্ষ্যে মোদি সরকারের একটি যোজনা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সিঞ্চাই যোজনা যা আদতে একটি গ্রামীন ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প। এই যোজনার শুরুর কাল জুলাই ১, ২০১৫, সেটি আর এক মাস পর ছয় বছরের বালকে উন্নীত হবে। ২৬ মে, ২০২১ এর “স্ট্যাটাস রিপোর্ট” বলছে যে ১০ শতাংশের কম কাজ হয়েছে ৮ টি রাজ্যে, ৫ শতাংশের কম কাজ হয়েছে ৫ টি রাজ্যে, ৪ টি রাজ্যে কাজ শুরুই হয় নি, যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বাকি ১১টি রাজ্যের কথা নিয়ে এই রিপোর্টি নীরব। সরকার এই খাতে ২০২০ পর্যন্ত ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সরকারের এই ঘোষণার ফলে লুটের টাকা ভাগাভাগির কাড়াকাড়িতে কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অনেক সংস্থার শেয়ারের দাম বেড়েছ উচ্চ হারে। যেমন শক্তি পাম্প, যাদের উত্থান পাঞ্জাবের “সবুজ বিপ্লব”-এর হাত ধরে। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে ন্যাশন্যাল স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের স্টকের মুল্য বৃদ্ধি হয় ১৮৬ শতাংশ। এর আগে এই স্টকগুলি গত বেশ কয়েক বছর ধরে ১৯৬-এর আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। ঠিক তেমনি বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে জৈন ইরিগেশন সংস্থার স্টকের মুল্য ছিল ৭০ টাকা, যা মার্চ ২০১৫ থেকে আর মোটেই বাড়ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর পাঁচ দিনের মধ্যেই বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে সেই একই স্টক-এর মূল্য দাঁড়ায় ৯৮ টাকা।

বিশ্বভারতীর উপাচার্যর কল্যাণে আমরা সবাই এখন জানতে পেরেছি যে কবিগুরুর চেয়েও উচ্চমার্গের বৌদ্ধিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মহাপুরুষের নাম দীন দয়াল উপাধ্যায়। মোদি সরকার তাঁর স্মৃতিকে অমর করে রাখার প্রয়াসে রেলের কামরার নামকরণ করেছেন দীনদয়ালু কোচ, আর গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণের জন্য একটি যোজনার নাম রেখেছেন দীন দয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা। এই যোজনার শুরুর তারিখ জুলাই ২৫, ২০১৫। এই যোজনার মাধ্যমে গ্রামে বসতবাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ এবং কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুতের লাইনগুলিকে আলাদা করে দুই ক্ষেত্রেই মসৃণ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই হল উদ্দেশ্য। এই কাজ করার জন্য সরকার তার নিজের রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশনকে অর্থ যোগানের দায়িত্ব দিলেও সরকারি ও বেসরকারি এমন এক জটিল ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, লাভের অংশ পাবে বেসরকারি ব্যবস্থাপক, আর ক্ষতির দায় বইবে অর্থ যোগানদার সরকারি সংস্থা, মানে সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের সাবেকি ব্যবস্থা আর কি! ফল কী দাঁড়িয়েছে? এই প্রকল্প ঘোষণার আগে রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন কর্পোরেশনের শেয়ারের দাম ছিল ১৪২ টাকার কিছু বেশি, আর ঘোষণার এক মাসের মধ্যে সেই দাম প্রায় ২১ শতাংশ কমে যায়! কার লাভ আর কার ক্ষতি, বুঝতে গেলে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই।

গ্রামের পর ফিরে আসি শহরের দিকে। গ্রামে যেমন দীন দয়াল, শহরে তেমনি অটল বিহারী। মার্চ ৯, ২০১৫। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে অটল মিশন ফর রিজুভিনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশান প্রকল্প চালু হল, খরচ করা হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি এই যোজনাটিকে ২০২২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকারি রিপোর্ট মতে সারা দেশে ৯৭ লক্ষ জলের কল এবং ৫৭ লক্ষ বস্তির নর্দমা শহরের মুখ্য নর্দমা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, ৭২ শতাংশ অর্থ এতেই ব্যয়িত হয়েছে। এর আগে যে জৈন ইরিগেশন সংস্থার নাম করেছি, তারা এই যোজনা থেকে লাভবান হয়েছে, তারা সরকারকে একচেটিয়াভাবে তাদের পিভিসি পাইপ বিক্রি করেছে।

মোদি সরকারের আর একটি পেয়ারের যোজনা হলো “ স্মার্ট সিটি”, যদিও সরকারের মতেই তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু তাতে টাকা খরচা করতে আপত্তি কোথায়, বিশেষত যারা নির্বাচনের সময় অনুদান দিয়েছে, তাদের টাকা তো অনেকগুণ করে ফিরিয়ে দিতেই হবে। জরুরি অবস্থা জারির দিন অর্থাৎ ২৫ জুন, ২০১৫ এই যোজনাটি ঘোষিত হয়। লক্ষ ছিল ভারতের ১০০টি শহরকে নাগরিক-বান্ধব করা, পাশাপাশি তাদের উন্নতিকে টেকসই করা। এই যোজনার মুখ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা স্টারলাইট টেকনোলজি, যারা একলপ্তে বিজেপি-র নির্বাচনী তহবিলে তাদের ইলেক্টোরাল ফান্ড মারফৎ অনেক টাকা ঢেলেছিল। এই সংস্থা প্রথম দফায় গান্ধীনগর এবং জয়পুর শহরকে “স্মার্ট” করার দায়িত্ব পেয়েছে। এরা ইন্টারনেটের জন্য দ্রুতগতি নেটওয়ার্ক তৈরি করবে, ব্যবসার জন্য যাকে বলে “অপারেশন সাপোর্ট সিসটেম”, ও “ বিজনেস সাপোর্ট সিসটেম”-ও নির্মাণ করবে। এদের স্টক মূল্য বেড়েছে খুব সামান্যই, ৭০ টাকা থেকে মাত্র ২১ হাজার টাকা!

এর সঙ্গে যোগ করতে হবে সরকারি মদতে দোসর পুঁজিকে দেউলিয়া হওয়ার থেকে মোদি সরকারের বুক দিয়ে আগলে রাখার বিষয়টিও। আমাদের দেশে যখন কয়লা ব্লক কেলেঙ্কারি ঘটে, তখন মোদি সরকার টাটা, এসার ও আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাকে দ্রুত দেউলিয়া হওয়ার থেকে উদ্ধার করার জন্য বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাবের সঙ্গে ঠিক এনরন কোম্পানির আদলে এই তিন কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য “পারচেস পাওয়ার এগ্রিমেন্ট” সই করায়। এর ফলে এই রাজ্য সরকারগুলি টাটা, এসার ও আদানি পরিচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি থেকে বাজারের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনবে, চাহিদা না থাকলেও রাজ্য গুলিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতেই হবে, যদি রাজ্য সরকারগুলি তাদের কোটার বিদ্যুৎ না কেনে, তবে রাজ্যগুলি এই কোম্পানিগুলিকে বিপুলহারে “ক্ষতিপূরণ” দেবে। এর পর আদানি সংস্থা বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ কেনার দামে কারচুপি করে যন্ত্রের দাম বেশি দেখায় ও সরকারের কাছ থেকে আমদানি করার জন্য করে ছাড় দাবি করে। সরকার ঘোষণা করে যে এই সব বিষয় নিয়ে তারা একটি কমিটি গড়বে, যে কমিটি বিদ্যুতের ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সবকটি সংস্থার জন্য একটি সুষম নীতি তৈরি করবে। যদিও বিদ্যুৎ ক্ষেত্র ভিত্তিক আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এই কমিটি শেষ পর্যন্ত তিনটি কোম্পানিকে কী ভাবে দেউলিয়া হওয়ার থেকে বাঁচানো যায়, কেবল সেই বিষয়েই তাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখে। ঠিকই ধরেছেন, এই কোম্পানি তিনটির নাম আদানি মুন্দ্রা, এসার সালায়া এবং টাটা মুন্দ্রা!

এই কমিটি বিদ্যুতের মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব করে এবং গুজরাট সরকারের প্রতিনিধি সঙ্গে সঙ্গেই বলে যে কয়লার বর্ধিত দামের পুরোটাই উপভোক্তাদের ঘাড়ে চালান করতে তাদের রাজ্য রাজি আছে। এরপর ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে ইন্দোনেশিয়ার কয়লার দাম কমে, কিন্তু গুজরাট সরকার বিদ্যুৎ উপভোক্তাদের সেই কম দামের সুযোগ নিতে দেয় নি, তারা ইউনিট পিছু সেই একই উচ্চ মূল্য বজায় রেখেছে।

মোদি সরকার সারা দেশের জন্য “গুজরাট মডেল” চালুর চেষ্টা করেই চলেছে। কিন্তু গুজরাটের বাস্তবতা আর সারা দেশের বাস্তবতা এক নয়। গুজরাটে সম্পদের অসম বন্টন, বাণিজ্যের বাতাবরণ, গণতান্ত্রিক বোধ ইত্যাদির সঙ্গে দেশ হিসেবে ভারতে ঐক্যের চেয়ে বিভেদই বেশি। সারা দেশের কোণে কোণে যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদের স্মৃতিচিহ্ন আবৃত, সেখানে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের আঁচ পর্যন্ত লাগেনি সেই গুজরাট রাজ্যে। সারা দেশের জনতার মানসিক বোধ মোদির গুজরাতের অভিজ্ঞতার বিপ্রতীপে অবস্থান করে। বাস্তবের পরিবর্তে মনোজগতের নির্মিত বোধ চালিত রাজনীতি অর্থনীতি দেশের মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে দোসরদের জন্য স্বর্গরাজ্যের পরিণতি লাভ করাই ভবিতব্য। মাটিতে গড়ানো একটা চাকার মাঝের একটা বিন্দু প্রথমে উঁচুতেই ওঠে, তবে সেটা কেবল অবধারিতভাবে নীচুতে নামার জন্যই। দোসর পূঁজি আর তাদের দোসর দেশ চালকরা যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত ইতিহাসের এই মূল্যবান শিক্ষাটা ক্ষমতার মত্ততায় ভুলে যায়, তাদের দোসররাও ভোলে। তবে কেউ কেউ ভোলে না সেই অতীতের স্মৃতি।

এই বিষয়ে লেখকের আগের লেখাগুলি ---

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/finance-capital-and-environment-part-9-rafale-aircraft

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/finance-capital-and-environment-part-8-highways

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/finance-capital-and-environment-part-7-railways

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/finance-capital-and-environment-part-6-sea-harbours-and-ports

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/the-story-of-finance-capital-part-5

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/finance-capital-and-environment-part-4

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/finance-capital-and-environment-part-3

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/environment-neighbourhood-and-finance-capital-part-ii

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/environment-neighbourhood-and-finance-capital

0 Comments

Post Comment