পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে এবার মুখোমুখি ফ্রান্স-ইংল্যান্ড

  • 05 December, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 839 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস মজুমদার
ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এই দুটি দলই কাতার বিশ্বকাপে দলবদ্ধ ও ব্যক্তিগত প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। পাশাপাশি এই দুই দেশের দীর্ঘ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস তো আছেই। তাই কোয়ার্টার ফাইনালে যে কেউ কাউকে জমি ছেড়ে দেবে না তা বলাই বাহুল্য। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ব্রিটনির কোন দেশ সেমিফাইনালে অগ্রবর্তী হয় আর কোন দেশকে খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে হয় তা ১০ ডিসেম্বর তারিখে আল-খোর শহরেই নির্ধারিত হবে।

কাতারের মাটিতে ১০ ডিসেম্বর আল-খোর শহরে আবার সংঘটিত হচ্ছে চলেছে চিরাচরিত ইউরোপীয় সংঘাত আবার ব্রিটনির যুদ্ধ, তবে এবারের এই যুদ্ধ শুধুই নিয়ন্ত্রিত থাকবে ফুটবল মাঠে বিশ্বকাপ ফুটবলের আঙিনায়। ৪ ডিসেম্বর দুই দোহার আল-থুমানা স্টেডিয়ামে ফ্রান্স এবং আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড যথাক্রমে পোল্যান্ড ও সেনেগালকে গারিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের শেষ আটে নিজেদের স্থান সুনিশ্চিত করল।

ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরনো। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংঘাত চলে আসছে সেই অষ্টাদশ শতক থেকেই। উনিশ শতকে নেপোলিয়নের সময়কাল হোক বা তার পরবর্তী শিল্প বিপ্লবের সময়কাল, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড একে অন্যের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল। সাম্রাজ্যবাদী লড়াইয়েও অন্যান্য মহাদেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের প্রধান প্রতিপক্ষ ও প্রতিযোগী হয়ে উঠেছিল ফ্রান্সই যাকে রাজনৈতিক ইতিহাসের ভাষায় বলা হয় ব্রিটনির সংঘাত। এবারে কাতারের মাটিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে সেই ব্রিটনির সংঘাত প্রত্যক্ষ করা যাবে ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

দোহায় শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ফ্রান্স পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে ফুটবলটা খেলল তাকে এককথায় চ্যাম্পিয়নস ফুটবলই বলা যায়। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে উপুর্যপুরি কয়েকটি গোল লাইন সেভ ছাড়া পোল্যান্ড সেভাবে ফরাসি রক্ষণে আর দানা ফোটাত পারেনি। কিন্তু ফরাসি আক্রমণের দাপটে পোলিশ রক্ষণভাগ ছিল থরহরি কম্প। ১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপে ফ্রান্স আর পোল্যান্ড যথাক্রমে সেমিফাইনালে পরাজিত হয়েছিল জার্মানি আর ইটালির কাছে। জার্মানি গোলরক্ষক শুমাখার মারাত্মক ফাউল করেছিলেন ফ্রান্সের বাত্তিনসনকে। তার ফলে তৃতীয় স্থান নিরণায়ক ম্যাচে শুরু থেকেই একটা মানসিক চাপে ছিল প্লাতিনির ফ্রান্স। পোল্যান্ডের কাছে হেরে যেতে হয় ফ্রান্সকে। তবে ৪০ বছর আগের পোল্যান্ড আর এই কাতার বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা পোল্যান্ডের মধ্যে যে অনেক পার্থক্য রয়েছে তা প্রমাণ করে দিল দিদিয়ের দেশঁ-র ছেলেরা। প্রথমার্ধেই ছন্দবদ্ধ আক্রমণের মাধ্যমে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন অলিভার জিরোউ। করিম বেঞ্জিমার অনুপস্থিতি এখনও সেভাবে টের পাচ্ছে না ফ্রান্স। গোলের বলটি অবশ্য তৈরি করে দিয়েছিলেন সেই কিলিয়ান এমবাপে। রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকেই নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন এমবাপে। কাতারে যদি আর্জেন্টিনার প্রবীণ মেসি তার মেসি ম্যাজিকে ফুটবল্প্রেমী বিশ্বের মনজয় করে নিয়ে থাকেন তাহলে পাশাপাশি ফুটবলভক্তদের নিজের খেলার জাদুতে একইভাবে মাতিয়ে চলছেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। দ্বিতীয়ার্ধে পোল্যান্ডকে সেভাবে দাঁড়ানোর সুযোগই দেয়নি ফ্রান্স, বলা ভালো এমবাপে। অশাধারণ খেললেন, খেলালেন গটা টিমকে এবং সর্বোপরি দুটো অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন গোল করলেন ম্যাচের ৭৪ আর ইওজুরি টাইম ৯১ মিনিটে। খেলার একেবারে শেষ লগ্নে পেনাল্টি পেয়ে সেটাকে কাজে লাগিয়ে একটা সান্ত্বনা গোল অবশ্য পেলেন পোল্যান্ডের লেওয়ানডস্কি।

অন্যদিকে আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেনেগাল ম্যাচ শুরু করেছিল দুর্দান্তভাবে ঝড়ের গতিতে। কিন্তু ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট আগেভাগেই সেনেগালকে মেপে নিয়েছিলেন। তিনি গতিতে আফ্রিকান নেশনস কাপ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে পাল্লা দিতে যাননি, শুরুতে ধীরে খেলে আস্তে আস্তে ইংল্যান্ডে নিজেদেরকে গুছিয়ে নিচ্ছিল একই সাথে তারা সেনেগালের দ্রুত গতির আক্রমণের ছন্দও নষ্ট করে দিচ্ছিল। প্রতি-আক্রমণ ভিত্তিক পরিকল্পিত আক্রমণে এবং বিশেষত মাটিতে বল নিয়ে এগিয়ে সেনেগালকে বিভ্রান্ত করে দিচ্ছিল ইংল্যান্ডের মাঝমাঠ। ১৯৬৬ সালে দেশের মাটিতে যেবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতেছিল সেবার এলফ র‍্যামসের ইংল্যান্ডের ফুটবল ছিল উইংলেস ওয়ান্ডার এবং বল তুলে খেলাই ছিল সেসময় ইংল্যান্ডের ফুটবল নীতি যা কিক এন্ড রান নামে পরিচিত। কিন্তু একুশ শতকে কাতারে দেখা যাচ্ছে ইংল্যান্ড তার বিশ শতকীয় ফুটবল নীতিকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেছে। মাঝমাঠ থেকে খেলা ছড়িয়ে উইং দিয়ে এবং জমি ঘেঁষা পাসেই এই ইংল্যান্ড দল অনেক স্বচ্ছন্দ এবং সংঘবদ্ধ। সেই ছান্দিক সংঘবদ্ধ আক্রমণেই এল ইংল্যান্ডের গোলগুলি। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে বেলিংঘামের পাস থেকে জর্ডান হেনডারসনের প্রথম গোল। প্রথমার্ধেরই অতিরিক্ত সময়ে বেলিংঘাম, ফোডেন আর অধিনায়ক হ্যারি কেনের যুগলবন্দীতে হ্যারি কেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় গোলটি করেন। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭ মিনিটে ফিল ফোডেনের করা গ্রাউন্ড সেন্টার থেকে ম্যাচের তৃতীয় ও শেষ গোলটি করেন বুয়াকো সাকা। সাকা ২০২১ ইউরো কাপের ফাইনালে ইতালির বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে পেনাল্টি নষ্ট করেছিলেন কিন্তু এবারে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের জার্সিতে দারুণ উপযোগী ফুটবলার হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। অন্যদিকে বছর পাঁচেক আগে অনুর্দ্ধ-১৭ ছেলেদের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে কলকাতা বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়াম মাতিয়ে যাওয়া ফিল ফোডেন এখন ইংল্যান্ডের সিনিয়র পুরুষ দলের সম্পদ। কাতার বিশ্বকাপে দারুণ ফুটবল খেলছেন এই ইংরেজ তরুণ ফুটবলার। আলিউ সিসের ছেলেরা চেষ্টা করেও ইংল্যান্ডের জালে বল ঢোকাতে ব্যর্থ হয়।

ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এই দুটি দলই কাতার বিশ্বকাপে দলবদ্ধ ও ব্যক্তিগত প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। পাশাপাশি এই দুই দেশের দীর্ঘ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস তো আছেই। তাই কোয়ার্টার ফাইনালে যে কেউ কাউকে জমি ছেড়ে দেবে না তা বলাই বাহুল্য। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ব্রিটনির কোন দেশ সেমিফাইনালে অগ্রবর্তী হয় আর কোন দেশকে খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে হয় তা ১০ ডিসেম্বর তারিখে আল-খোর শহরেই নির্ধারিত হবে।   

0 Comments

Post Comment