পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

লালগোলায় দুর্গাপূজা

  • 20 October, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 804 view(s)
  • লিখেছেন : নীহারুল ইসলাম
ঘনঘোর বর্ষা বিদায় নিলে আসে শরৎ। আকাশে পেজা তুলার মতো মেঘ ভেসে বেড়ায়। মাটিতে কাশফুল ফোটে। তারই মাঝে মা উমার আগমন ঘটে আমাদের ঘরে ঘরে। কারও কাছে তিনি দেবী হয়ে আসেন। কারও কাছে মা হয়ে আসেন। তো কারও কাছে আসেন কন্যা হয়ে।

সেই উপলক্ষে যে উৎসবের আয়োজন হয় তাই আমাদের শারদোৎসব। যা আজ পর্যন্ত বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব নামেই পরিচিত। স্বভাবতই তা নিয়ে প্রস্তুতি থাকে বাঙালির ঘরে ঘরে। প্রান্তিক বাংলা অর্থাৎ সীমান্ত শহর এই লালগোলাও তা থেকে বিরত থাকে না। বরং অনেক বেশি আন্তরিক ভাবে এই উৎসবে শরীক হয়। আমি নিজেও শরীক হয়েছি। আমাদের যুগাগ্নি ক্লাব থেকে পত্রিকা প্রকাশ করতাম আমরা। বছরে চারটি সংখ্যা প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ করতাম অবশ্যই। তখন আমাদের কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেওয়ার সময়। উৎসাহ ছিল আগুনের মতো দীপোজ্জ্বল।   

গত বছরের হিসাব অনুযায়ী শুধু লালগোলা শহর নয়, পুরো লালগোলা ব্লকে প্রায় ৮০ টি পূজার আয়োজন হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল লালগোলা রাজ, মিত্রবাড়ি, বাঁশগাড়া কাছারি, সাহাবাদ সার্বজনীন, কদমতলা সার্বজনীন, ইউনাইটেড ক্লাব, পাহাড়পুর মাতৃমন্দির, কৃষ্ণপুর উত্তরপাড়া মহিলা মহল- তালিকায় এরকম আরও অনেক নাম যুক্ত করা যায়। কিন্তু এই ছোট নিবন্ধে সেটা না করে লালগোলার সবচেয়ে প্রাচীন পাহাড়পুরের মিত্রবাড়ির পূজার সম্পর্কে একটুখানি তথ্য দেওয়া যাক। শ্রীশ চন্দ্র মিত্র, যিনি লালগোলার রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়ের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন, তাঁর সময় শারদীয়া পূজার আয়োজন হত মহা ধূমধামে। ১৯২০ সালের পূজার খরচ হয়েছিল এরকমঃ

তন্ত্রধারক দক্ষিণা (প্রণামী সহ) = ৫ টাকা

পূজক দক্ষিণা = ১০ টাকা

চণ্ডীপাঠক =  ২ টাকা

প্রতিমা = ২১ টাকা

ফল = ৯ টাকা ১০ পয়সা

সব্জী = ৯ টাকা

মিষ্টি (৮৫ সের) = ৩২ টাকা

ডালার সরঞ্জাম = ১ টাকা

মাছ (ইলিশ ৩০ সের, রিঠা ১৫ সের, চিংড়ি ৬ সের) মোট = ১১ টাকা

পদ্মফুল = ২ টাকা

পূজার বাসন ও দশকর্মা = ৩৮ টাকা

প্রতিমার অলংকরণ = ৫০ টাকা

ফুলঝুরি ও পটকা =  ১৩ টাকা ১৫ আনা

বস্ত্র = ১৮ টাকা

আনুসাঙ্গিক খরচ = ১৫ টাকা।

হিসাব করলাম না মোট খরচের। তথ্য থেকে পাঠক বুঝে নেবেন সেই সময়ের রাজকীয় পূজার বাজেট। তবে ১৯৫১ সালে সেই চণ্ডীমণ্ডপে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। মৃত্যু হয় সেই মিত্র পরিবারের এক সদস্যের। ফলে সেই পূজা বন্ধ হয়ে যায়। শুধুমাত্র নবমীর পুজা নিয়ম রক্ষার্থে দীর্ঘদিন পালন হয়ে আসছিল। অবশেষে ২০০০ সাল থেকে পুনরায় মিত্র পরিবারের বর্তমান সদস্যদের দ্বারা সেই পূজা আবার প্রচলিত হয়েছে। যা আজ লালগোলার মানুষের কাছে অনেক বড় পাওয়া। অনেক আনন্দের।      

এই সুযোগে কয়েকটি গ্রামীণ পূজা কমিটির আয়োজনের কথা উল্লেখ করা যাক। না হলে এই লেখাটি হয়ত সম্পূর্ণতা পাবে না।  

যেমন, পাইকপাড়া দুর্গামন্দিরের আয়োজন। সেটা শুধু পাইকপাড়া গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বহুদূর দূর থেকে মানুষ আসেন। তাঁরা সেখানকার মা দুর্গাকে  জাগ্রত দেবী হিসাবে বিশ্বাস করেন। যাবতীয় উপাচার পালন করেন। তাঁদের সেই বিশ্বাসের মান রেখে উদ্যোক্তারা সকলের প্রসাদের ব্যবস্থা তো করেনই, সেই সঙ্গে তাঁদের বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থাও করেন।

তারপর, ওড়হার দুর্গাপূজা। এই পূজার প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রবীণ মানুষেরা যে কথার উল্লেখ করেন তা হল, প্রায় ৭০ বছর আগে কোনও এক সালিশী সভায় জরিমানা স্বরূপ আদায়কৃত ৫০০ টাকায় শুরু হয়েছিল সেখানকার ওই আয়োজন।

গর্ব তো হবারই কথা! মানুষগুলো নেই। কিন্তু তাঁদের গল্পগুলি আজও বেঁচে আছে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। আগামীতেও বেঁচে থাকবে ...।

 

        

      

0 Comments

Post Comment