পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

দুই মহামানব স্মরণে

  • 08 May, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1313 view(s)
  • লিখেছেন : মধুছন্দা মজুমদার
কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা আর আগামী কাল বিশ্বকবির আবির্ভাব তিথি। এই প্রথম বার আমরা দুই মহামানবের জন্মতিথি ঘরে বসে পালন করছি, নিজেদের মতন করে। বর্তমান বিষম পরিস্থিতিতে এঁদের দেখানো পথের প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে এই প্রবন্ধ টি।

অদ্ভুত সমাপতন, আজ করুনাঘন তথাগতের আবির্ভাব তিথি এবং কাল আমাদের প্রাণের মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস। একজন বিশ্বকে দিয়ে গেছেন বুদ্ধত্ব লাভের পথ আর অপরজন আমাদের সর্বকালীন আশ্রয়।

একজন রাজকুমার কিসের তাগিদে হাতে ভিক্ষাপাত্র নিয়েছিলেন? সব জাগতিক সুখ স্বাচ্ছন্দ কে দূরে সরিয়ে পথে নেমেছেন, অবিশ্বাসীর আঘাত সয়েছেন, যন্ত্রণাকে আলিঙ্গন করেছেন। কিসের তাগিদে?

আজ সভ্যতার কঠিনতম সময়ে এই ত্যাগ ও তিতিক্ষা স্মরণ করার অন্তরের তাগিদ অনুভব করছি। একদিকে আমাদের অহঙ্কারের মানব সভ্যতার ভিত টলে গেছে আর অন্য দিকে পৃথিবী কিছুটা হলেও দূষণ মুক্ত …ওজোন স্তর ও নাকি নিজের ক্ষত সারিয়ে উঠেছে , মানুষের পো রা ঘরে খিল দিয়েছে বলেই না এটা সম্ভব হল , তাহলে কি এই মহামারির যুদ্ধ কোন বার্তা বহন করে আনল? পরম পিতার সাবধান বানী ? সেই কর্মফল? যা হাজার বছর আগে বুদ্ধ শাক্য মুনি আমাদের বুঝিয়ে গেছেন।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমাদের দুঃখের প্রকৃত কারণ আমাদের লোভ, আকাঙ্খা, অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ এবং অহং বোধ । এগুলো যদি কারণ হয় তাহলে যন্ত্রণা আর ভোগান্তি তার ফল । মুশকিল হচ্ছে কাজ গুলো করার সময় আমরা একবার ও এগুলো ভেবে দেখি না, কিন্তু যেই মুহূর্তে ফল গুলি একের পর এক এসে আঘাত করে তখন কেঁদে মরি । আত্মসমালচনার সুযোগ দিয়েছে লক ডাউন । একদিন না একদিন পৃথিবী আবার আগের মত হবেই । তখন যেন এই শিক্ষার দিন গুলো ভুলে না যাই । আমরা তো কালের নিয়মে নিশ্চিহ্ন হবো । আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রতি মুহূর্তে এর ফল ভোগ করবে এবং আমাদের শাপ শাপান্ত করবে, ভেবে দেখি চলুন, আর একটা গাছ কাটার আগে এটা যেন আমাদের সকলের মাথায় থাকে।

এবার স্মরণ করি আমাদের প্রাণের মানুষ রবি ঠাকুর কে। কাল গুরুদেবের জন্মতিথি। এই প্রথম শান্তিনিকেতনে কাঁচঘর উপাসনা গৃহে সমবেত প্রার্থনা ছাড়া পালন হবে গুরুদেবের জন্মতিথি পালন। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করা এই মহামানব আমাদের সব কিছুর আশ্রয় , আমাদের প্রাণের আরাম , মনের আনন্দ এবং আত্মার শান্তি। সাহিত্য ও শিল্পকলা শুধু নয়, গুরুদেব পরিবেশ নিয়ে যে কত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা শান্তিনিকেতনের পরিকল্পনা এবং গঠনশৈলী দেখলেই বোঝা যায়। কৃষি বিপ্লবের হাত ধরেই যে বাংলার জীবনযাত্রার উন্নতি সম্ভব সেটা বুঝেই তিনি রথি ঠাকুরকে আমেরিকা থেকে কৃষি বিজ্ঞান পারদর্শী করে আনেন, জন হিতার্থে ।

মহামারীর প্রকোপে আজ মানব সভ্যতা চরম সঙ্কটের মুখে। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখাই দুস্কর । গুরুদেবের জন্মদিন উজ্জাপন গৃহবন্দী মানুষ যে যার ঘরে বসেই করবে । চতুর্দিকে এই হাহাকারের মাঝে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আমাদের একমাত্র আশ্রয় । ওনার গান প্রতিদিন বেঁচে থাকার রসদ যোগাচ্ছে , পদ্য আর গদ্য গুলি অভয় দিচ্ছে , আপনার দেখানো পথ আভাস দিচ্ছে নতুন ভোরের … বাংলার মানুষকে আপনি এক সুত্রে গেঁথে রেখেছেন আমাদের পরম প্রিয় … রবীন্দ্রনাথ এর সৃষ্টি এক বট বৃক্ষ যার শীতল ছায়ায় বসে আমরা বলতে পারি “ তিনি আমার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ , আত্মার শান্তি”

যখন যেথায় কঠোর হানায়, ছিন্ন হয়েছে শরীর মন,

তোমারে করেছি আশ্রয় প্রভু, তুমিই হয়েছ আপনজন

0 Comments

Post Comment