দীর্ঘ ১৩ বছর চলতে থাকা হাঁসদেও অরণ্য রক্ষার আন্দোলনের কথা আপনারা সকলেই জানেন। প্রভাব খাটিয়ে ২০১৮ সালে পারসা কোলমাইন এর সংলগ্ন গ্রামসভাগুলির নামে ছাড়পত্র আদায় করা হয়েছিল। এই মিথ্যা বে-আইনি ছাড়পত্রের বলে পারসা কোলমাইনের জন্য বন-ছাড়পত্র আদায় করে আদানি গোষ্ঠী। ‘রাজস্থান বিদ্যুৎ নিগম’ এর তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা উত্তোলন করতে ছত্তিশগড়ের হাসদেও অরণ্য যা মধ্যভারতের ফুসফুস বলে পরিচিত, তা ধ্বংস করতে চায় আদানি গোষ্ঠী এবং বর্তমান ছত্তিশগড় সরকার। ২০২১ সালে এই গ্রামগুলির হাজার হাজার মানুষ প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা করে রায়পুরে ছত্তিশগড় রাজ্যপালের কাছে পৌঁছান। আশ্বাস পান আইনানুগ অধিকার রক্ষা ও অরণ্য রক্ষার। তবু লাগাতার চলেছে অরণ্য ধ্বংসের আয়োজন। চলছে লাগাতার প্রতিরোধ আন্দোলনও।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সর্ব আদিবাসী সমাজ, ছত্তিশগড় বাঁচাও আন্দোলন ও আদিবাসী ছাত্র সংগঠন ST কমিশনের চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করে সাজানো গ্রামসভার তদন্ত রিপোর্ট এই মুহুর্তেই প্রকাশ করবার দাবি জানিয়েছেন। ছত্তিশগড় বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় সমিতি ও মনিষ কুঞ্জম, সঞ্জয় পারাটে, শালিনী গেরা, অলোক শুক্লা, সুদেশ টিকাম, নন্দ কুমার কাশ্যপ, রমাকান্ত বাঞ্জারে-র একটি বিবৃতি সমাজ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন (১৬ অক্টোবর) সমস্ত পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক ও কর্মীদের জন্য।
সর্বস্তরের জনগণের বিক্ষোভ প্রতিবাদ প্রতিরোধ সত্বেও হাঁসদেও অরণ্যে পারসা কোল ব্লকে কয়লা খনির জমি অধিগ্রহণের জন্য জঙ্গল সাফ করতে বদ্ধপরিকর আদানি গোষ্ঠী। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কেন হাঁসদেও জঙ্গলকে বাঁচাতেই হবে? ছত্রিশগড়ের হাঁসদেও জঙ্গলে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ একর জায়গা জুড়ে সবুজ বৃহৎ বনানী ছড়িয়ে আছে। আছে ঝোপঝাড়, লতাগুল্ম। ১৬৭ রকমের উদ্ভিদকূল ছড়িয়ে আছে এই জঙ্গলে, যার মধ্যে ১৮টি প্রজাতির উদ্ভিদ পৃথিবী থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছে। এখানে আছে প্রায় ২০০ রকমের দুষ্প্রাপ্য ওষধি গাছ। মূলত এইসব গাছের ওপরই স্থানীয় মানুষের সেবা শ্রুশুশা হয়। এখানে বাস বহু প্রজাতির জীবজন্তুর। কয়েকশ হাতির ঘরবাড়ি এই জঙ্গল। বাঘেদেরও আশ্রয়স্থল এই মনোরম জঙ্গল। আছে ৮২ প্রজাতির পাখি, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রজাপতি।
এই জঙ্গল দিয়ে বয়ে চলেছে হাঁসদেও নদী, যা মহানদীর একটি বিস্তৃত অংশ। এই জঙ্গলেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের বহু প্রজন্মের বাস। বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার আদিবাসী মানুষ বাস করেন এই অঞ্চলে। জঙ্গল ও নদীর ওপর নির্ভরশীল তাঁদের জীবন। হাসদেও জঙ্গলে প্রাণের বিপুল সম্ভার থাকলেও আদিবাসী জনগণের দুর্ভাগ্য এই যে, জঙ্গলের মাটির নিচে যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে বিপুল কয়লার ভান্ডার। স্বভাবতই এই লোভনীয় সম্পদের ওপর চোখ পড়েছে আদানি কোম্পানির। এখানে ২৩টি ব্লক জুড়ে কয়েকশো কোটি টন ওজনের কয়লার স্তর থরে থরে সাজানো আছে। তার মধ্যে চারটি ব্লক থেকে কয়লা তোলার ছাড়পত্র পেয়ে গেছে দেশের পয়লা নম্বর ধনকুবের আদানি এন্ড কোম্পানি। তাই বিগত কয়েক বছর ধরেই এই বনাঞ্চল সাফ করার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী আর তাদের সেবাদাস ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এর ঘোষণাকারী কেন্দ্রীয় সরকার। যোগ্য সংগত দিয়ে চলেছে চত্তিশগড় সরকার। এর মধ্যেই একটি সাইটে কাজ শুরু হয়ে গেছে।
এই মহা মূল্যবান জঙ্গল, প্রকৃতি ও মানুষের জীবন যাপন বাঁচানোর তাগিদে বিগত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় আদিবাসীরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকল্পের বিরোধিতা করে। এমতাবস্থায় পারসা অঞ্চলে আদানি বাবুর দ্বিতীয় প্রকল্প শুরুর জন্য লক্ষ লক্ষ গাছ কেটে ধ্বংস করে ফেলার লক্ষ্যে উন্নত যন্ত্রপাতি সহ কন্ট্রাক্টর ও বিশাল পুলিশবাহিনী হাজির হয়ে যায় ১৬ অক্টোবর, ২০২৪। গাছ কাটা রুখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলে দলে আদিবাসী মানুষজনও হাজির হয়ে যান। সারা রাত পাহারা দিয়ে জঙ্গল ধ্বংস রুখতে পারলেও ১৭ অক্টোবর সকালে পুলিশ বাহিনী সমস্ত নখ দাঁত নিয়ে জমায়েতের ওপর হামলা নামিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এবং তারপর প্রতিবাদীদের ব্যারিকেডের মধ্যে আটকে রেখে প্রশাসন ও আদানি কোম্পানির লোকজন পুরো উদ্যমে গাছ কাটা শুরু করে দেয়।
ছত্রিশগড়ের 'আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ' সহ সমস্ত পরিবেশ-প্রেমী সংগঠন এই হামলার তীব্র বিরোধিতা করে লড়াইয়ের সাথে থাকার বার্তা দিয়েছে।
সমস্ত আইন-কানুন, নিয়ম এবং পরিবেশ আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। জঙ্গল সংলগ্ন একটা জায়গা যেখানে পেসা লাগু আছে, অঞ্চলটি ‘পঞ্চম তফশিল’ ভুক্ত এবং গ্রামসভা দ্বারা পরিচালিত। সেখানে প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্য তথা আদিবাসী মানুষের জীবন জীবিকা ধ্বংসের প্রক্রিয়া সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে পুলিশ প্রশাসন সশরীরে হাজির থেকে করিয়ে নিচ্ছে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে, মেরে অরণ্য থেকে দূরে সরিয়ে রেখে গাছ কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এই রাষ্ট্রশক্তি আর তার সাকরেদ আদানি গ্রুপ।
http://(https://youtu.be/AeS5sqwwfcA?si=5XssCwl386tnorfb)
এটাই কি উন্নয়ন? সভ্যতার অগ্রগতির নমুনা এটাই? এ কোন বর্বর দেশে বাস করছি আমরা ভারতীয় নাগরিক? প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ, মানুষের যাপন, সংস্কৃতি ভাষা সব কিছুর উর্দ্ধে কতিপয় কর্পোরেটের মুনাফার স্বার্থ? জঙ্গল তথা পরিবেশ রক্ষার চলমান এই আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে এবং অর্থ-পুঁজির মুনাফার স্বার্থে নির্বিচারে প্রকৃতি লুঠের ও কর্পোরেটের সেবাদাস কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হল কলেজ স্ট্রীটে বিকেল পাঁচটা থেকে (১৮ অক্টোবর)। আসুন সকলে যৌথভাবে পথে নামি প্রাণ প্রকৃতি তথা সভ্যতা রক্ষার স্বার্থে, বাঁচার ও বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে।
বাস্তবে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন নাগরিক সমাজ।
এ বছর মার্চ-এপ্রিলের উষ্ণতা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। অক্টোবর শেষ হতে চলল, এখনো বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরম। শোনা যাচ্ছে, আবার নাকি আসছে ঘূর্ণিঝড়! পশ্চিমের মরুরাজ্যে বৃষ্টি বেড়েছে সত্তর শতাংশ, আর গাঙ্গেয় অববাহিকায় মরসুমী বর্ষায় ঘাটতি ছিল ৩৫-৪০ শতাংশ। আগামী বছর কি হতে চলেছে? ভাবতে গেলেও ভয় হয়!
আর এ সবের মাঝে আমাদের মহামান্য ভারত সরকারের ভূমিকা? প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় বন্ধু গৌতম আদানিকে খনিজ কয়লা উত্তোলনের জন্য জঙ্গল ধ্বংসে ছাড় দিয়েছেন ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ প্রাচীন অরণ্যাঞ্চল (মধ্যভারতের ফুসফুস বলে পরিচিত) ছত্তিশগড়ের হাসদেও-তে। নিদান দেওয়া হয়েছে ৬০০০ গাছ কাটার। ওই অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীসহ আরও যে মানুষরা আছেন, তাঁরা কিন্তু চান মাতৃসমা প্রকৃতিকে রক্ষা করতে। কারণ, নদী-জঙ্গল-পাহাড়কে তাঁরা ভালোবাসেন, দেবতাজ্ঞানে পূজা করেন। টাকা দিয়ে বিচার করেন না। কারণ জঙ্গলের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁদের যাপন, ভাষা সংস্কৃতি। গত ১৩ বছর ধ'রে নানান মুনাফাখোর হানাদারের বিরুদ্ধে জমি-জঙ্গল রক্ষায় তাঁরা লড়ে যাচ্ছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে জঙ্গল সহ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ কোন সরকার, কোম্পানি বা রাষ্ট্রের অধিকারে পড়তে পারে না। সমস্ত প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারের দুনিয়াদারি রয়েছে জঙ্গল পাহাড় নদী সংলগ্ন মানুষ সহ তামাম দেশবাসীর।
আসলে ব্যাংক ঋণ, এমনকি জনগণের টাকা লুঠ করে আর সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে অর্থ-পুঁজি আজ ফুলেফেঁপে উঠেছে। অথচ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগের জায়গা সংকুচিত। এই বিপুল পুঁজিকে আজ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে কৃত্রিমভাবে চাহিদা তৈরি করা ভোগ্যপণ্যের বাজারে। জনগণের প্রকৃত চাহিদার ওপর নির্ভর করে নয়, বরং বাজার নির্ভর এই অর্থ ব্যবস্থায় পুঁজির নতুন নতুন বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন আরও আরও জমি, জঙ্গল, পাহাড়, নদী, জলাভূমি। তাই প্রকৃতির সব সম্পদ নির্বিচারে লুঠ করে, প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে কর্পোরেট বাহিনীকে টিকে থাকতে হচ্ছে। তাই পুঁজির নিজস্ব জগতের সংকট কাটানোর মরীয়া প্রচেষ্টায় সব দায় গিয়ে পড়ছে প্রকৃতির ঘাড়ে। অর্থ-পুঁজির করাল গ্রাসে আজ প্রকৃতি লাঞ্ছিত ধর্ষিত। একই কারণে নারীরা ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রকটভাবে বিজ্ঞাপিত। সমাজ জুড়েই বেড়ে চলেছে নারী নিগ্রহ, নারী নির্যাতন। বেড়ে চলেছে লিঙ্গ বৈষম্য। তাই প্রকৃতি ও নারীর মুক্তির লক্ষ্যে এই অর্থ-পুঁজির প্রবল বিরোধিতা করতে হবে প্রতিটি গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ, অধিকার আন্দোলনের কর্মী সহ বিজ্ঞান ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের।
এই সর্বগ্রাসী প্রক্রিয়ায় মানুষ মরুক, বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা বেড়েই চলুক, মেরুপ্রদেশ ও হিমালয়ের বরফের চাদর দ্রুত গতিতে গলে যায় যাক, সমুদ্র জলের উচ্চতা ও উষ্ণতা বেড়েই চলুক: কোন কিছুতেই ওদের কোন হেলদোল নেই। ওদের একটাই লক্ষ্য ফুলেফেঁপে ওঠা পুঁজির বিনিয়োগ ও মুনাফা বৃদ্ধির হারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাই দেশ জুড়ে চলমান পরিবেশ আন্দোলনগুলোর ওপর নেমে আসছে সরকার প্রশাসনের চরম সন্ত্রাস।
ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিগত দিনের থেকেও যেনবা বেশিই আগ্রাসী হয়ে উঠেছে নদী-জঙ্গল-পাহাড় ধ্বংসের কারবারিরা। আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত। জীববৈচিত্র্য তথা প্রাণ-প্রকৃতি লুঠের এই প্রক্রিয়ায় আমাদের অস্তিত্বই আজ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। একদিকে মধ্যভারতের ফুসফুস ছত্তিশগড়ের হাসদেওতে চলছে অরণ্য ধ্বংস। ওখানকার আদিবাসী মানুষের হাজার প্রতিরোধ, সাংবিধানিক সমস্ত অধিকারকে নস্যাৎ করেই। অপর দিকে দেশের উত্তরভাগ লাদাখে হিমালয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য বাঁচানোর দাবিতে সোনম ওয়াংচুকদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই লাদাখবাসীরা লড়াই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দিল্লীতে লাদাখ ভবনে সোনম ওয়াংচুকসহ লাদাখবাসীরা তাঁদের দাবীগুলি যাতে পূরণ করা হয় সেই লক্ষ্যে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সোনমজী সারা দেশের প্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে যাঁরা কাজ করে চলেছেন এবং সকল সাধারণ মানুষদের ২০ অক্টোবর, রবিবার, পরিবেশের জন্য অনশন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। উনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই অনশন শুধু লাদাখবাসীদের নয়। বরং এই অনশন সকল ভারতবাসী এবং ছোট ছোট শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, বয়স্কসহ সকলের পানীয় জলের জন্য, শ্বাস নেওয়া যাবে এমন বাতাসের জন্য, আলোর জন্য, বিষমুক্ত খাবারের জন্য। তিনি এও জানিয়েছেন –হিমালয়কে তার প্রাকৃতিক অবস্থানে থাকতে দেওয়া শুধু লাদাখাবাসীর জন্য নয়, তা আসলে সারা দেশের মানুষের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এমতাবস্থায় অরুণাচলপ্রদেশে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নদীর উপরে ১৩টি বড় বাঁধ নির্মাণের হাইড্রেল পাওয়ার প্রজেক্টের জন্য। নদীর গতিপথ আটকে, নদী সংলগ্ন সবুজকে, মানব জীবনকে বিধ্বস্ত করে আবারও একটি ধ্বংসের রূপরেখা তৈরি করেছে সরকার ও পুঁজির মালিকেরা। দেশের দক্ষিণে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রায় ৮.৫ লক্ষ গাছ কেটে তৈরি হতে চলেছে মেগা প্রজেক্ট।
এই সমস্ত প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে: হাসদেও, লাদাখ, অরুণাচল, আন্দামান সহ সকল প্রাণ-প্রকৃতির উপর আঘাতের প্রতিবাদে, লাদাখবাসী ও সোনম ওয়াংচুকের অনশন আন্দোলন এবং হাসদেও অরণ্য রক্ষার আন্দোলনের সংহতিতে ২০ অক্টোবর কলকাতার কলেজস্ট্রিট চত্বরে সকাল ৯টা থেকে রাত্রি ৯টা প্রতিকী অনশন পালন করলেন ২৫ জন সাথী। পাশাপাশি পাহাড়-নদী-অরণ্য সহ প্রাণ-প্রকৃতির ধ্বংসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনের প্রচার কর্মসূচি পালন করা হল নদীকর্মী, প্রকৃতিকর্মী তথা পরিবেশকর্মীদের উদ্যোগে। শুধু কলকাতা নয়, আমাদের রাজ্য সহ দেশের নানান অঞ্চলে প্রতিবাদ আন্দোলন ও অনশন কর্মসূচি পালিত হল। আন্দোলনের সমর্থনে অনেক সাথী বাড়ি থেকেও ১২ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি পালন করলেন।
পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে, কর্পোরেট বাহিনীর জল জঙ্গল নদী পাহাড় লুঠের বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ুক দ্রুত গতিতে। চলমান আন্দোলনগুলোকে সংঘবদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ লড়াই আন্দোলন গড়ে তোলাটাই আজ প্রতিটি পরিবেশ কর্মী ও পরিবেশ প্রেমীদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত। এটাই সময়ের দাবি। নিজেদের বেঁচে থাকা ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা সুস্থ সুন্দর বিষহীন দূষণমুক্ত পৃথিবী রেখে যেতে চাইলে, এছাড়া তো অন্য কোন পথ দেখিনা।
পুনশ্চ:
১৬ দিন পর লাদাখ- কার্গিলবাসীর
অনশন শেষ হল ২১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠি পেয়ে। আগামী ৩রা ডিসেম্বর থেকে লেহ এপেক্স বডি, কার্গিল ডেমোক্রাটিক এলায়েন্স এবং কেন্দ্র সরকারের মধ্যে বন্ধ থাকা আলোচনা পুনরায় শুরু হবে এই আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় সরকার। লেহ লাদাখ থেকে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ১৫০ জন সাথী এবং দিল্লিতে ছাত্র যুবা সহ অনশনকারী সকল নাগরিককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালেন সোনমজী ও এপেক্স বডির চেয়ারপার্সন। দীর্ঘ কঠিন লড়াইয়ে এক ঝলক আলোকবর্তিকা হয়ে দেখা দিল এই ঘোষণা। বাকি কথা ভবিষ্যতের গর্ভে।
লেখক পরিচিতি:
সন্তোষ সেন: বিজ্ঞান শিক্ষক, বিজ্ঞান ও পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক, প্রাবন্ধিক।
সুরজিৎ চক্রবর্তী: ছাত্র আন্দোলন ও পরিবেশ আন্দোলনের নিরলস কর্মী।