সৌন্দর্য চাঁদ ছেড়ে যেতে পারে, হিমালয়ে তুষারপাত হতে পারে, মহাসাগর তার তীরে অতিক্রম করতে পারে, কিন্তু আমি আমার পিতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করব না। এই কঠিন প্রতিজ্ঞা করে অযোধ্যার রাজসিংহাসন ছেড়ে ১৪ বছরের বনবাসে গিয়েছিলেন রামচন্দ্র। ভাই ভরত অনেক চেষ্টা করেছিলেন দাদাকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু প্রতিজ্ঞায় অটল রামচন্দ্র এই বলে ভরত কে ফেরত পাঠিয়েছিলেন যে, "যেমন একজন ভাইয়ের কর্তব্য ধার্মিকতা মেনে চলা এবং একজন পিতার দায়িত্ব সত্যকে সমর্থন করা, তেমনি ভরত, তুমিও সন্দেহ ছাড়াই সেই অনুযায়ী কাজ করবে।" অর্থাৎ অযোধ্যার রাজসিংহাসন সামলাও। সেই ছোটবেলা থেকে অগ্রজদের কাছে এই পৌরাণিক কাহিনী এবং সঙ্গে হিতোপদেশ শুনেছি। কি সেই হিতোপদেশ ? ধর্মের পথে চলো, ক্ষমতার জন্য লালায়িত হয়োনা। আধুনিক ভারতে '৯০ এর দশকে পৌরাণিক কাহিনী 'রামায়ণ' সত্য কাহিনীতে পরিণত হতে শুরু করলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপির তৎপরতায়। কিন্তু বাল্মীকি রচিত রামায়ণের হিতোপদেশ অস্বীকার করে নব্য রাম ভক্তরা যেন-তেন-প্রকারেন ক্ষমতা দখলের খেলায় মেতে উঠলো। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণ এবং সেখানে 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির অন্যতম প্রধান নির্বাচনী ইস্যু। এবং রামচন্দ্রকে সামনে রেখে লোকসভার অধিকাংশ আসন দখলের জন্য বিরোধীদলগুলোর মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর অনৈতিক,আদর্শহীন খেলা চলছে 'গণতন্ত্রের বিশ্বজননী' ভারতবর্ষে। বিজেপির ৩০৩ জন সাংসদের মধ্যে শুধুমাত্র ১৩৪ জন মূল আরএসএস/বিজেপি পটভূমির। বাকিরা সবাই কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল থেকে আমদানীকৃত নেতা।
এই ধর্মীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সংসদীয় নির্বাচনের দৌড়ে, সবচেয়ে বড় প্রশ্নটাই হলো বহু চর্চিত বিরোধী ঐক্য সম্ভব কিনা ! পুরস্কার অথবা কারাবাস, বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে এটাই যখন 'নিউ নর্ম্যাল' এক দেশ, এক দল, এক নেতা তত্ব কে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে, তখন বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করবে এই ভাবনা অবান্তর নয় কি ? যদিও দেশটাকে শাসকদলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল স্তরের নেতা পর্যন্ত গণতন্ত্রের মাতৃভূমি হিসেবে প্রচার করে থাকেন। সেই গণতন্ত্রের নিউ নর্ম্যালে নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে বিরোধীদের। বিরোধীদের 'ইন্ডিয়া'জোট পাটনায় তার প্রথম বৈঠকের সময় বেশ সাড়া জাগিয়ে শুরু হয়েছিল। প্রথম বৈঠকের আহ্বায়ক ছিলেন নীতিশ কুমার এবং অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন যে যদি বিরোধীরা একত্রিত হতে পারে তবে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির কঠিন সময় হবে। পাটনা বৈঠকের পরে আরও দুটি সভা হয়েছিল, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বাইতে। মনে হচ্ছিল বিরোধী দল গতি পাচ্ছে এবং বিজেপি রক্ষণাত্মক। ইন্ডিয়া জোটের শরিক হয় ২৮ টি দল।
বিজেপি সম্ভবত আশা করেনি যে বিরোধী দলগুলি এত দ্রুত জোট গঠন করতে পারবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত ময়দানে নেমে পরে বিজেপি। ৩৮টি রাজনৈতিক দলের একটি বৈঠকের আয়োজন করে তারা। জাতীয় রাজধানীর রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট আত্মবিশ্বাসী ছিল না এবং তারা বিচলিত হয়ে তড়িঘড়ি ঐ বৈঠক ডেকেছিল। এইসব প্রক্রিয়া চলছিল এমন একটা সময়ে যখন কংগ্রেস কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রচারঝড় প্রতিহত করে বিজেপিকে পরাজিত করেছিল। কর্নাটকে কংগ্রেসের জয় বিরোধীজোটের ভাবনার পালে হাওয়া তুলেছিল। ইতিমধ্যে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের সাথে মিজোরাম ও তেলেঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, এমনকি যারা বিজেপি ও মোদীর প্রতি সহানুভূতিশীল, তাদের অভিমত ছিল যে কংগ্রেস স্বাচ্ছন্দ্যে এমপি এবং ছত্তিশগড়ে জিতবে। রাজস্থানে বিজেপির ধার আছে বলে মনে হচ্ছে, আর তেলেঙ্গানায় কঠিন লড়াই হয়েছে। নির্বাচন যতই গতি পেয়েছে, সকলকে অবাক করে দিয়ে, তেলেঙ্গানায় জোয়ার কংগ্রেসের পক্ষে হয়ে গেল। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, কংগ্রেস তিনটি হিন্দিভাষী রাজ্যই হারিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে পরাজয় ছিল ভয়ঙ্কর। ছত্তিশগড়ের পরাজয়ে কংগ্রেস হতবাক হয়ে গিয়েছিল কারণ এই রাজ্যে কংগ্রেসের সম্ভাব্য জয়কে সবাই মেনে নিয়েছিল। ডিসেম্বরের পরাজয় পুরো বিরোধীদের জন্য ওয়াটারলু প্রমাণিত হয়েছিল। এবং বিরোধীদের পক্ষে যে গতিবেগ তৈরি হয়েছিল তা রাতারাতি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। আসলে, মুম্বাই বৈঠকের পর বিরোধী ঐক্যের নেতারা কোনো উদ্যোগ নেননি। এর জন্য আংশিকভাবে দায়ী কংগ্রেস। তবে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও দোষের অংশীদারিত্ব নেওয়া উচিত। কংগ্রেস তিনটি রাজ্যে জয়ের ব্যাপারে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী ছিল - মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানা। নিঃসন্দেহে, এই রাজ্যগুলিতে জয় সমগ্র বিরোধীদের জন্য একটি দুর্দান্ত মনোবল-উদ্দীপক হতো, এটি একটি বিজয়ী আখ্যান তৈরি করত, ক্যাডার উত্সাহিত হত এবং ইন্ডিয়া জোট জনগণের আস্থা অর্জন করত যে মোদীকে পরাজিত করা যেতে পারে। বিরোধীরা প্ল্যান বি না থাকায় ভুল করেছে।
কংগ্রেস যদি নির্বাচনে ব্যস্ত থাকে, তবে জোটের অন্যান্য সিনিয়র সদস্যদের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত ছিল এবং গতি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তিতে কাজ করা উচিত ছিল। কিছুই করা হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শারদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উদ্ধব ঠাকরের মতো নেতারা সবাই অলস বসেছিলেন। এবং কংগ্রেস একবার খারাপ ভাবে হেরে গেলে, বিরোধী দলগুলির নোংরা মন্তব্য পরাজয়ের চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। এবং বিজেপির অনুগামী 'গোদি মিডিয়া' ব্যাপকভাবে ইন্ডিয়া জোটের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খবর ছেপে বা প্রকাশ করে জনমানসে এমন একটা ধারণা তৈরী করলো যে ইন্ডিয়া জোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে। বড় দাবি সত্ত্বেও, একটি বিকল্প ভিশন ডকুমেন্ট তৈরি করার জন্য কোন প্রচেষ্টা করা হয়নি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির মতাদর্শ এবং এর বর্ণনার মোকাবিলা করতে তাদের কী আর্থ-সামাজিক-অর্থনৈতিক নীতির বিকল্প রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। এটি দুটি সাধারণ কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মোদির নেতৃত্বে বিজেপি, সরকার গঠন করার পর থেকে, আক্রমণাত্মকভাবে হিন্দুত্বকে অনুসরণ করেছে, যা আরএসএস আদর্শের মূল। একটি আদর্শকে শুধুমাত্র একটি আদর্শ দ্বারা চ্যালেঞ্জ করা যায়। হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, ইন্ডিয়া জোটের উচিত ছিল একটি সমন্বিত চিন্তা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা। তা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটি এমন একটি ধারণা তৈরি করেছে যে ইন্ডিয়া জোট কোনো ধারণা বা আদর্শ থেকে বঞ্চিত। বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে - সমস্ত বিরোধী নেতারা একই মতাদর্শিক ভাষায় কথা বলছেন - এটি ভারতের জনগণের কাছে সংহতি এবং উদ্দেশ্যের অনুভূতি উপস্থাপন করবে। মোদি সাধারণ নেতা নন। তাকে হারাতে হলে জাতীয়ভাবে একটি সমান শক্তিশালী ও শক্তিশালী বিকল্প উপস্থাপন করতে হবে। মোদীকে মোকাবিলা করার জন্য একটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ থাকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কিন্তু একটি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত বিকল্প এবং সমন্বিত চিন্তা প্রক্রিয়া অবশ্যই তাদের সকলকে আকৃষ্ট করবে যারা মোদী এবং তার ব্র্যান্ডের রাজনীতিতে সাবস্ক্রাইব করেন না। এই ব্যর্থতা বিজেপি শিবিরে ইন্ডিয়া নেতাদের চলে যাওয়ার চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক। ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়কের নির্বাচন না করা, সেটাও ছিল একটা বড় ভুল। প্রশাসনিক প্রধানের অভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানই কার্যকরভাবে চলতে পারে না। আজ পর্যন্ত কেউ জানে না কেন আহ্বায়ক নির্বাচন করা হয়নি। এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়েছিল যে নীতিশ কুমারই হবেন এই পদের জন্য আদর্শ প্রার্থী। কিন্তু ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তার নাম নিয়ে দুটি মতামত ছিল তা স্পষ্ট। মমতা তার পূর্ব প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে মল্লিকার্জুন খার্গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন যা তিনি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু এটি নীতীশের কাছে স্পষ্ট সংকেত ছিল যে তিনি আহ্বায়ক হিসাবে গ্রহণযোগ্য নন। খড়গেকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু বার্তাটি স্পষ্ট ছিল যে ইন্ডিয়া জোট আর একটি সমন্বিত ইউনিট ছিল না, এর নেতারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছেন এবং মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোন তাগিদ ও গুরুত্বের অনুভূতি ছিল না। ইন্ডিয়া জোট ত্যাগ করা নীতিশ কুমার বিরোধী ঐক্যের প্রচেষ্টায় মারাত্মক আঘাত। এটা ছিল মোদির সত্যিকার অর্থে মাস্টারস্ট্রোক। নীতীশের প্রস্থানের পর বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মধ্যে বিষাক্ত বক্তব্য চালাচালি । অখিলেশ যাদব এবং আপ নেতারাও কংগ্রেসের সাথে আসন সমন্বয় ইস্যুতে তাদের বক্তব্যে ব্যঙ্গাত্মক ছিলেন। এবং সবশেষে রাষ্ট্রীয় লোক দলের জয়ন্ত চৌধুরীও জোট পরিবর্তন করে বিরোধী ঐক্যে ফাটল আরো চওড়া করে দিয়েছেন।
এবার আসা যাক পুরস্কার অথবা কারাবাস তত্বে। যেহেতু বিজেপি তিনটি হিন্দিভাষী রাজ্য জিতেছে এবং রামমন্দির অভিষেকের এক মাসের অনুষ্ঠানের সাথে তা অনুসরণ করেছে। বিজেপি নীতীশ কুমার এবং ওবিসি ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়গুলিকে প্রলুব্ধ করার জন্য কর্পুরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন প্রদান করে। যে কর্পুরী ঠাকুর জীবদ্দশায় আরএসএস-এর চক্ষুশূল ছিলেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে কর্পুরী ঠাকুর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যখন প্রথম সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য সংরক্ষণ নীতি ঘোষণা করেছিলেন, তখন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ক্যাডাররা - বেশিরভাগই 'উচ্চ' বর্ণের - স্লোগান দিয়েছিল, "ইয়ে সংরক্ষণ কাহাঁ সে আই, কর্পুরী কে মাই বিয়াই।" অর্থাৎ, 'এই সংরক্ষণ কোথা থেকে এসেছে? কর্পুরীর মা এর জন্ম দিয়েছেন।" শুধু তাই নয়, সঙ্ঘ পরিবার ক্যাডাররা প্রায়শই হিংস্র হয়ে ওঠে এবং অনেক জায়গায় পিছিয়ে পড়া জাতিদের বিরুদ্ধে 'উচ্চ' জাতিকে উস্কে দেয়, যার ফলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ১৯৭৯ সালে ঠাকুরের সরকার পতন ঘটে, সংরক্ষণের বাস্তবায়নের পরেই। সেই কর্পুরী ঠাকুর কে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দিয়ে নীতীশ কুমার কে এনডিএ জোটে ফায়ার যাওয়ার রাস্তা ও অজুহাত দুটোই তৈরী করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি দলের মধ্যে ক্ষোভ প্রশমন ও হিন্দুত্ব ভোটকে আরও সুসংহত করার জন্য এল কে আডবাণীকে ভারতরত্ন প্রদান করেছে । উত্তরপ্রদেশে ইন্ডিয়া জোট যাতে কোনোভাবেই দানা বাঁধতে না পারে, সেজন্য প্রয়াত চৌধুরী চরণ সিংকে ভারতরত্নে সম্মানিত করে তাঁর নাতি জয়ন্ত চৌধুরীকে এনডিএ তে নিয়ে আসা হয়েছে। ভারতরত্ন-এর জন্য নরসিমহা রাও এবং এম এস স্বামীনাথন এর নাম ঘোষণারও লক্ষ্য ছিল তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর ভোটার। এই সব পুরস্কারের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে দেওয়া হচ্ছে কারাবাসের হুমকি। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসে নির্বাচন কমিশনের উপর যেমন কাজের চাপ বাড়ছে, তেমনই কাজের চাপ বাড়ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), সিবিআই, আয়কর দপ্তরের। আর এদের ভয়ে তটস্থ বিরোধী নেতারা সোজা চলে যাচ্ছেন দিল্লির দীনদয়াল মার্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্যালেসে 'দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ নেতা'র সার্টিফিকেট নিতে। আবার বিরোধীদলগুলোর কিছু নেতাকে বলা হয়েছে , এখনই শাসকদলে আসার দরকার নেই, নিজ দলে থেকেই আমাদের সাহায্য করুন। এই প্রেক্ষাপটে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিরোধী জোট বিচ্ছিন্ন দেখাচ্ছে। মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ঊর্ধ্বমুখী। বিরোধী জোট মোদীকে গুরুতরভাবে চ্যালেঞ্জ করার অবস্থানে থাকবে এমন ধারণা করা অনেক দূরের স্বপ্ন। এটা গণতন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। গণতন্ত্রে শুধু শক্তিশালী সরকারই নয়, শক্তিশালী বিরোধী দলও দরকার। একটি দুর্বল বিরোধী দল এবং চূড়ান্ত আদর্শ-নৈতিকতাহীন রাজনীতি ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।