পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বেঙ্গালুরু জমজমাট

  • 25 July, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 725 view(s)
  • লিখেছেন : শোভনলাল চক্রবর্তী
দেশের স্বার্থে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ২৬টি দল একজোট হয়েছে। বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সকলের তরফে। ইন্ডিয়া নামটিতে সকলেই মান্যতা দিয়েছেন। আগামী বৈঠক হবে মুম্বইতে। ১১ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা হবে নির্বাচন সম্বন্ধিত প্রক্রিয়ার জন্য। যদি এই বোঝাপড়া চালিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে আশার আলো দেখা যায় বই কি!


বেঙ্গালুরুতে জমজমাট বিরোধী শিবিবের জোট।জোটের ভবিষ্যত নিয়ে ইতিধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা। এ কথা ঠিক যে জোটের নামকরনের মধ্যে চমক রয়েছে। এতদিন এই ধরনের নামকরনে বিজেপি ছিল রাজা,এবার বিরোধী জোট তাঁদের দশ গোল দিয়েছেন,সেটা বিলক্ষণ টের পেয়েছে বিজেপি। তাই তাঁরা শুরুতেই একটা ভারত বনাম ইন্ডিয়া বিভাজন তৈরিতে তৎপর হয়েছিলেন,কিন্তু সেই পালে জোরালো হাওয়া লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা। তবে এ কথা মানতেই হবে যে আপাতদৃষ্টিতে যতটা সংহত দেখাচ্ছে বিরোধী ঐক্য, তলে তলে কিন্তু এই বিরোধী জোটের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি চোরা ফাটল।

যেমন ধরা যাক অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। তিনি পাটনা বৈঠকে যোগদানের আগে প্রায় ব্ল্যাকমেল করার কায়দায় কংগ্রেসকে বাধ্য করেন দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে আনা অর্ডিন্যান্স - এর বিরুদ্ধে সংসদে তাঁর দলের পাশে থাকতে।ভবিষ্যতে তিনি যে আরও অন্য বিষয়ে জোটের বাধ্যবাধকতার সুবিধা নেবেন না তা নিশ্চিত করে বলা শক্ত। আবার বাংলায় যেখানে যৌথভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরোধিতা করছে সিপিআইএম, সেখানে তারাই কী করে বেঙ্গালুরুতে একই নৈশভোজে অংশ নিতে পারেন,এটাও একটা সঙ্গত প্রশ্ন।


এ ব্যাপারে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন পার্টি প্রধান সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন ঠিক কী কারণে মোদী বিরোধী জোটে মমতা-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকা সত্ত্বেও যোগ দিয়েছেন তিনি।পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে সিপিআইএম সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটে  যে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে,যে ভাবে মার খেয়েছেন নিচুতলার কর্মীরা,তাতে বৃহত্তর স্বার্থে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যেতে হচ্ছে এটা বোঝাতেও অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে বাম দলকে।

মোট ২৬টি অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলের জোট হয়েছে বিরোধীদের, সেখানে যেমন রয়েছেন সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী। তেমনই রয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার সীতারাম ইয়েচুরী। রয়েছেন স্টালিন, লালুপ্রসাদ, শারদ পাওয়ারের মত প্রবীণ নেতারা।তবে এটা একটা  ভালো দিক যে জোটের প্রায় সবাই বলেছেন জোট বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাঁরা সবাই বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের হাত থেকে ভারতকে বাঁচাতে চান। দেশ তাঁদের কাছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা বুঝেছেন যে নানা ভাবে, নানা দিক থেকে এই দেশ আজ বিপন্ন।এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্যে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন। সিপিআইএম তরফে জানানো হয়েছে যে বাংলায় যেভাবে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস জোট লড়াই করছে, তেমনটাই করবে। অর্থাৎ ফের কেন্দ্র-রাজ্য রাজনৈতিক সমীকরণ আলাদা ভাবেই চলবে।প্রশ্ন উঠছে যে এই সমীকরণ শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হবে কি। অন্যদিকে জোট বৈঠক নিয়ে মুখ খুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে জোট বৈঠক অত্যন্ত সন্তোষজনক হয়েছে।এবং এর ফলাফলও ভালো হবে। তিনি ২১ জুলাই মঞ্চ থেকে বলেছেন যে কোনও পদ নয়,তিনি দেশ বাঁচাতে চান।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন যে দেশের স্বার্থে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ২৬টি দল একজোট হয়েছে। বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সকলের তরফে। ইন্ডিয়া নামটিতে সকলেই মান্যতা দিয়েছেন। আগামী বৈঠক হবে মুম্বইতে। ১১ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা হবে নির্বাচন সম্বন্ধিত প্রক্রিয়ার জন্য। তবে বিরোধী বৈঠকের স্থান নির্বাচন থেকে নামকরণ, কার্যত বিরোধী জোটের রণকৌশল পুরোটাই ঠিক করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
মুম্বইয়ে এই বিরোধী জোটের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে ১১ জন সদস্যের একটি কোঅর্ডিনেশন কমিটি ঠিক করা হবে। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত হবে মোদী বিরোধী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নামও। আপাতত সকলেই বলছেন নেতা বেছে নেওয়া একটি সামান্য বিষয়। সকলেই যখন একজোট হয়ে সমস্ত বিষয়গুলিতে মান্যতা দিচ্ছেন, তখন আগামীদিনে নেতা বাছাইও করে ফেলা হবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এতটাই কি মসৃন হবে ব্যাপারটা? আর এখানেই এনডিএ শিবিরের তরফে উড়ে এসেছে কটাক্ষ। সমালোচনার সুরে বলা হয়েছে, এতগুলি ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের মধ্যে থেকে একজন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুখ বেছে নেওয়ার আগেই অশান্তি শুরু হবে। জোট বৈঠকের শুরুতেই, প্রায় ঠাকুর ঘরে কে,আমি তো কলা খাইনি - ভঙ্গিতে মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কংগ্রেস ক্ষমতার জন্য লালায়িত নয়। কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি চায় না। ফলে একটি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাহুল গান্ধী কি তবে প্রধানমন্ত্রীর দৌড় থেকে বেরিয়ে গেলেন? সে ক্ষেত্রে কোন দলের কোন যোগ্য নেতার উপর দেওয়া হবে ইন্ডিয়ার দায়িত্ব? সেটাই এখন দেখার।আলাদা আলাদা রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণ। অথচ সেই সমস্ত সমীকরণের ঊর্ধ্বে উঠেই বিরোধী জোটের বৈঠক সফল করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।সে কথা স্বীকার করে নিয়ে রাহুল গান্ধী, স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে  বিজেপি-র বিরুদ্ধে  কারুরই লড়াইটা যে আর আলাদা আলাদা নয় তা সেটা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিরোধী জোটের প্রথম দুটি সভায়।

জোট বৈঠকে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে ঠিক কী কী রণকৌশল নেওয়া হয়েছে, তার একটা সারমর্ম যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের আদর্শ আলাদা হতে পারে, কিন্তু, বিরোধী শিবিরের দ্বিতীয় বৈঠকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে যে বিরোধীরা সকলেই লড়াইটা বিজেপির বিরুদ্ধে করতে চায়। সামগ্রিকভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজনে রাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন টানাপোড়েনকে সরিয়ে রেখেও ময়দানে নামা যায়। কারণ  লড়াইটা বিজেপির চিন্তাধারার বিরুদ্ধে। লড়াইটা ভারত ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে।সব বিরোধী পক্ষের নেতা নেত্রীরা যদি ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে এই জোটের সঙ্গে থাকেন তবে এনডিএ কঠিন চ্যালঞ্জের মধ্য পড়ে যাবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। এনডিএ তাঁদের জোটসঙ্গীদের নিয়ে ওই একই দিনে দিল্লিতে যে বৈঠক করেছেন, তা বেঙ্গালুরুর বৈঠকের কাছে ছিল নেহাতই সাদামাটা। তবে বৈঠকের চাকচিক্য দিয়ে নয়,আসল লড়াই হবে রাজনৈতিক রণকৌশলের ও রাজনৈতিক মতাদর্শের।ভুলে গেলে চলবে না যে বিজেপির এত ঘটা করে এবং অবশ্যই বেশ কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে হিন্দুত্ববাদী প্রচারের পরেও তাঁদের ঘরে ভোটের শতাংশ মাত্র ৪০, গোটা এনডিএ মিলিয়ে সেটা ৪২ শতাংশ। এদিকে বিরোধী জোটের মোট ভোটের শতাংশ ৩৯। সুতরাং ৪ শতাংশ ভোট এদিক ওদিক হলেই পা পিছলে যাবে এনডিএ -এর। এখন তেলেঙ্গানার কেআরএস ও চন্দ্রবাবু নাইডু, ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক এরা শেষমেষ কোনদিকে ঝোঁকেন সেটাই দেখার।

 দুটো খুব গুরত্বপূর্ণ বিষয় আছে যেটা ইন্ডিয়া জোটের সপক্ষে আছে এবং যেটা শেষ পর্যন্ত সাফল্য আনতে সহায়ক হতে পারে। প্রথমত, ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে যে সব রাজ্যের নেতা নেত্রীরা রয়েছেন সেই অবিজেপি রাজ্যগুলো বড়,সেখানে আসন সংখ্যা বেশি। নিজেদের গড় সামলে যদি কিছু বেশি আসন তাঁরা তুলে আনতে পারেন,তাহলে তাঁদের জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা । যেমন ধরা যাক পশ্চিমবঙ্গের কথা । এখানে যদি বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ে, যেটার সম্ভবনা প্রচুর,তাহলে ইন্ডিয়া জোট লাভবান হবে । প্রসঙ্গত,জানিয়ে রাখা ভাল বিজেপির মতে লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গে নাকি তাঁদের আসন সংখ্যা হবে ৩৫! এই হিসেবের কোনও মাথামুন্ডু আছে বলে মনে হয়না। যাঁরা ৩৫ আসনের খোয়াব দেখছেন তাঁরা ৩৫৫,৩৫৬ কেন চাইবেন? দ্বিতীয় যে কারণটি আছে সেটি হল এই যে এনডিএ জোট এখন মৃতপ্রায়। সিবিআই, ইডি-র হাত থেকে বাঁচতে সেখানে কিছু নেতা ভিড় করেছেন।তবে লোকসভায় তাঁরা আদৌ প্রার্থী হবেন কিনা এই নিয়েই রয়েছে বিরাট প্রশ্ন চিন্হ।এছাড়াও এনডিএর জোট সঙ্গীদের রাজ্যগুলি ছোট ফলে লোকসভার আসন সংখ্যা সীমিত। তাই আপাতত অ্যাডভান্টেজ ইন্ডিয়া। বাকিটা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে স্টেটসম্যান হওয়ার প্রশ্ন। কে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন, হতে পারবেন একজন নাগরিক প্রধানমন্ত্রী তার উত্তর আপাতত  সময়ের গর্ভে।

0 Comments

Post Comment