পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বাঙালী, ক্যাট ফ্যামিলি খতরে মে হ্যায়

  • 18 October, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1305 view(s)
  • লিখেছেন : হুতোম প্যাঁচা
কেউ দুর্গাপুজোয় কোরোনাকে পরোয়া করছেন না, আবার কেউ জলকামানেও কোরোনা ভাইরাস মেশানো আছে বলে অভিযোগ করছে মানবাধিকার কমিশনে। এদিকে বাঘ, সিংহের অধিকার নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। হুতোমকে আর মাথা খাটিয়ে নকশা লিখতে হচ্ছে না, স্রেফ যা হচ্ছে টুকে দিলেই চলে যাচ্ছে

কোরোনা দেবীর বিসর্জনের নাম নেই, এদিকে দুর্গোৎসব এসে পড়লো। সকলে ‘মা মা’ ডাক ছেড়ে বারোইয়ারি পূজার আয়োজন আরম্ভ কল্লে। এ বচ্ছর জাঁক কিছু কম পড়বে ভাবা হয়েচিল, তা দ্যাখা গেল শখ কম পড়ে নাই। দেবীপক্ষে আবার তৃতীয়ায় ছটপূজা পড়েচে। দিদির দেশের ম্যাপের মতন ইয়াব্বড় মন। বল্লেন বেহারী মোচ্ছবের দিন হতেই বাঙালীর মোচ্ছব চলুক। হুতোম ভেবে দেকলেন কতার ওজন আচে। কোরোনা দেবীর কাচে বাংলা বেহার ভেদ নাই। তিনি সেকেন্ড ওয়েভে সকলি বুকে টেনে নেবেন, ডাক্তার আর নার্সদের প্রাণটি মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়বে।

বাংলার লোকগুলি হ্যাংলা, বাংলার গবর্নমেন্ট কোরোনা সামলাতে হিমশিম, এ হতভাগাদের জ্বালায় বাতি জ্বেলে থালা বাজিয়েও কোরোনা দেবীকে তুষ্ট করা যাচ্চে না --- এসব বলে কজন বাবু বিবি বেজায় হল্লা কচ্ছিলেন। শেষে প্রধান সেবক পুজোর ফিতে কাটতে কলকেতায় আসচেন শুনে বীরের মতন বাজার কত্তে গেলেন। বাম ডান মধ্য সব দিকের বাবুরো বল্লেন, এ বচ্ছর পুজোর বাজার করা ডিউটির মধ্যে পড়চে। নইলে মাজা ভাঙা ইকোনমির আয়োডেক্স ডলে উঠে দাঁড়াবার কী উপায়? ইকোনমিস্ট, ডাক্তার, সাইন্টিস্ট বাবুরো খবর কাগচে গলবস্ত্র হয়ে পাবলিকের হাতে পায়ে ধল্লেন ‘এবারটি ক্ষ্যামা দিন, ফুর্তি নয় একটু কম কল্লেন।’ বারোইয়ারি পুজো অল্পে সারতে বল্লেন। তেনারা ভেবেচেন বাঙালী একুনো লেকাপড়া করে, নিদেন এনারা করেন বলে ভক্তি ছেদ্দা করে। সন্তোষ মিত্তিরের পাড়ার লোক ভিন্ন কেউ কান দিলেন না। গবর্নমেন্ট ডেকে ডেকে পুজো কত্তে টাকা দিচ্চেন, সে পুজো অল্পে সারতে হবে এ বা কী কতা? দু চার বাবু বিবি বলতে গিয়েছিলেন ঘরে বসে মুর্গি মটন খেলেই হয়, মণ্ডপে মেলা ভিড় বাড়িয়ে কোরোনা পুজো কেন? তেনারা নাস্তিক, বেশি পাকা ইত্যাদি নাম পেয়ে একঘরে হলেন।

তবে সকল বাবু এম্নি ডেয়ার ডেভিল নন, কেউ কেউ বিলক্ষণ কোরোনা দেবীকে সমঝে চলেন। বলতে কি শয়নে স্বপনে কোরোনা দেবীর দর্শন পান। তেনারা ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশের মধ্যে কোরোনা মাতার স্যাঙাতদের দেকতে পান, জলকামানে খালি চোকেই মায়ের দয়া প্রত্যক্ষ করেন। পাঠক খামোকা হাসবেন না। ঘোষজা, বোসজা খালি আপিসে অভিযান কত্তে পারেন, খালি চোকে কোরোনা দেকতে পাবেন না? আপনাদের দয়ামায়া কমে গ্যাচে জানতে পেরেই ঘোষবাবু পাঁচো ইয়ার মিলে হিউম্যান রাইটস কমিশনে বলেচেন জলকামানের কেমিক্যাল হতে তেনাদের অনেকের কোরোনা হয়েচে। কলকেতায় এসে তদন্ত কত্তে বলায় কমিশন বেজায় ফাঁপরে পড়েচেন, ভাবচেন ভাবিজির পাঁপড় খাইয়ে ঘোষবাবুদের ঠান্ডা করবেন। কমিশনের আপিসের দেয়ালে একটি অ্যান্টিন্যাশনাল টিকটিকি আচে, সেটি টিকটিক করে কেবলি শুধোচ্চে ‘মানবাধিকার কমিশনে নীলবর্ণ শৃগালের কমপ্লেন নেয়া হচ্চে কেন?”

ওদিকে অসমের চিড়িয়াখানার বাঘেরা ব্যাঘ্রাধিকার কমিশনের আপিস খুঁজে হয়রান হয়ে পড়লেন। তেনাদের কেমন উচ্চ বংশ সে কতা ভুলে তিনটি সিংহও অ্যালায়েন্স করেচেন, মায় ছাব্বিশটি চিতাকেও আদর করে ডেকে এনে বিফপন্থী জোট গড়া হয়েচে। বনবেড়াল, লেপার্ড ক্যাটেরাও বাঘ, সিংহের মহাজোটে যোগ দিয়েচেন বলে হুতোম খবর পাচ্চেন। তেনাদের স্লোগান ‘ক্যাট ফ্যামিলি খতরে মে হ্যায়।’ খতরাটি কী? খতরা কতকগুলি গোরু। তারা চিড়িয়াখানার সুমুখে গোমাংসের গাড়ী আটকে দিয়েচিল। ডিমান্ড করেচে বাঘ সিংহদের কেবল রাজমা, পনীর, সাম্বর ইত্যাদি খাইয়ে রাখতে হবে। অনেক হ্যাঙ্গামের পর তাদের বাবা বাছা করে গোয়ালে ফেরত পাঠানো হলো, কিন্তু গোরুকে ভরসা কত্তে নেই। তেনাদের গবর্নমেন্টে হোল্ড আচে। আবার কবে গেট আটকে ডিমনস্ট্রেশন করবে তার ঠিক কী? রোজ রোজ পেটে ক্ষিদে নিয়ে বসে থাকা বড় কষ্ট।

তাই গভীর রাতে সভা ডাকা হয়েচিল। প্রেসিডেন্ট বাঘ বল্লেন গ্রহের ফেরে মানুষের অতিথ হয়ে থাকতে হচ্চে। তা বলে ঘাস খেয়ে থাকা হয় না। এর প্রতিবাদ না কল্লে বাঘ জন্ম কেন? সাদা বাঘ হল্লা মোটে পছন্দ করেন না। বল্লেন, সাম্বরে আপত্তি নেই। হাতের কাচেই মেলা রয়েচে, বাইরে থেকে আনাতে হবে না। কিন্তু রাজমা কি পনীর দিলে ক্যানাল টপকে রেলিং টপকে পিঠটান দেবেন। এম্নি সময় সিনিয়র মোস্ট সিংহী মশাই হুঙ্কার দিলেন ‘ব্যাটার রক্তের দোষ যাবে কোতায়! সাধে কি জম্মে হলদে কালো ডোরা হল না? হতভাগা ওরা সাম্বর দেবে বলচে রে, সম্বর হরিণ নয়। এসব কতা একানে বলেচিস, আবার যে ব্যাটা খাবার দিতে আসে তাকে বলতে যাসনি। হোয়াটস্যাপে চাউর করে দেবে, ব্রকোদ গোঁসাই হ্যাশট্যাগ চালাবে #BigCatsWantSambar।’ সাদা বাঘ গতিক ভাল নয় দেকে বসে পড়লেন।

প্রাইম টাইমে এ খবর পাওয়া যাবে না, কেবল হুতোমের পাঠকদের জন্যে বলচি, সভায় রেজোলিউশন পাশ হয়েচে ফের চিড়িয়াখানার গেটে ডিমনস্ট্রেশন হলে সুপ্রিম কোর্টে মামেলা রুজু করা হবে। জজসায়েবরা তো বলেই দিয়েচেন, হেথা হোথা প্রোটেস্ট কত্তে বসে পড়া রীতিমতো ক্রাইম।

Cartoon Satish Acharya
0 Comments

Post Comment