পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ফুটবল মহানায়ককে অভিনব শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিল সেনেগাল                                              

  • 30 November, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 704 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস মজুমদার
সেনেগালের অধিনায়কের আর্মব্যান্ডে আজ লেখা ছিল ১৯ নম্বর। গ্যালারিতে বর্ণময় সেনেগালের সমর্থক পারফরমার, দর্শকদের গায়ে, টুপিতে, জামায় আজ লেখা ছিল ১৯ নম্বর। এই ১৯ নম্বর জার্সিকেই যে অমর করে রেখে গেছেন সেনেগাল ফুটবলের মহানায়ক পাপা বউবা দিউপ। ২০২০ সালের নভেম্বর মাস শুধু কেড়ে নেয়নি আর্জেন্টিনা তথা বিশ্বফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনাকে। ২৫ নভেম্বর মারাদোনার মৃত্যুর ঠিক চারদিন পরে ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন সেনেগাল ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় পৌছে দেওয়া সৈনিক পাপা দিউপ।

 

কাতার বিশ্বকাপের মূলপর্বে গ্রুপ-এ থেকে আগেই বিদায় নিয়েছিল আয়োজক দেশ কাতার। এদিন তারা তাদের শেষ ম্যাচে প্রত্যাশিতভাবেই কমলা বাহিনীর কাছে ০-২ গোলে পরাজিত হয়ে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করল। নেদারল্যান্ডস গ্রুপ-এ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষে ষোলোয় উঠলেও গ্র্যপের তিনটি ম্যাচের একটিতেও তাদের থেকে সেই শৈল্পিক ফুটবলের পরশ পাওয়া যায়নি। এই নেদারল্যান্ডসকে দেখে যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তিনবারের বিশ্বকাপ (১৯৭৪, ১৯৭৮, ২০১০) রানার্স এই দেশেই টোটাল ফুটবল বা শৈল্পিক প্রেসিং ফুটবলের জন্ম দিয়েছিলেন রাইনাস মিশেল। নিসকেনস, ক্রুয়েফ, খুলিট, বাস্তেন, বার্গক্যাম্প, নিস্তেলরুই, আর্জেন রবেনের উত্তরাধিকারীদের খেলা দেখে তাই মন ভরছে না। তবে নিসকেনস, বার্গক্যাম্প আর নিস্তেলরুইয়ের উদাহরণ অনুসরণ করে নেদারল্যান্ডসের তরুণ তুর্কি গাকপো বিশ্বকাপের মঞ্চে পরপর তিন ম্যাচেই গোল পেলেন তিন ভিন্ন বিপক্ষের বিরুদ্ধে। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে এখনও পর্যন্ত এইটাই একমাত্র পজিটিভ ব্যাপার।

তবে এবার এশিয়ার মাটিতে আবার গর্জে উঠলেন আফ্রিকান সিংহরা। লায়নস অফ তেরাঙ্গা নামে পরিচিত সেনেগালের বিশ্বকাপে আবির্ভাব ঘটেছিল এশিয়ার মাটিতেই। ২০০২ সালের দক্ষিণ কোরিয়া/জাপান বিশ্বকাপে। আবির্ভাবেই কোয়ার্টার ফাইনালে পর্যন্ত পৌছে আফ্রিকান ফুটবলে নতুন রূপকথা সৃষ্টি করেছিল সেনেগাল। কোয়ার্টার ফাইনালে সেবার তারা পরাজিত হয়েছিল ০-১ গোলে তুরস্কের কাছে যারা সেই বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর এশিয়ার মাটিতেই আবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে প্রথম রাউন্ডের গন্ডি অতিক্রম করে তারা প্রবেশ করল শেষ ষোলোয়। আর যার হাত ধরে সেনেগালের এই পুনরুত্থান তিনি বিশ বছর আগের সেই রূপকথার দৌড়ের অন্যতম সৈনিক ছিলেন। তিনি হলেন সেনেগালের প্রাক্তন ফুটবল তারকা ও বর্তমান কোচ আলিউ সিসে যিনি ২০০২ সালে সেনেগালের মাঝমাঠের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ছিলেন ৬ নম্বর জার্সিতে।

কিন্তু আরও একজন আছেন যাকে স্মরণ করেই আজকের খেলায় ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল আফ্রিকার সিংহরা। তিনি সশরীরে বিশ্বকাপে না থেকেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন সেনেগালের প্রতিটা ফুটবল সমর্থকের হৃদয়ের সঙ্গে। না, সালিও মানের কথা বলছি না। বায়ার্ন মিউনিখের ১৭ নম্বর জার্সি আর সেনেগালের জাতীয় দলে ১০ নম্বর জার্সির মালিক সালিও মানে নিঃসন্দেহে সেনেগালের অন্যতম প্রিয় ফুটবল নায়ক, কিন্তু আজ যাকে স্মরণ করে সেনেগালের ফুটবলাররা সিংহ বিক্রম ফুটবল খেললেন কাতারের মাঠে তিনি হলেন সেনেগাল ফুটবলের কিংবদন্তী মহানায়ক পাপা বউবা দিউপ।

সেনেগালের অধিনায়কের আর্মব্যান্ডে আজ লেখা ছিল ১৯ নম্বর। গ্যালারিতে বর্ণময় সেনেগালের সমর্থক পারফরমার, দর্শকদের গায়ে, টুপিতে, জামায় আজ লেখা ছিল ১৯ নম্বর। এই ১৯ নম্বর জার্সিকেই যে অমর করে রেখে গেছেন সেনেগাল ফুটবলের মহানায়ক পাপা বউবা দিউপ। ২০২০ সালের নভেম্বর মাস শুধু কেড়ে নেয়নি আর্জেন্টিনা তথা বিশ্বফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনাকে। ২৫ নভেম্বর মারাদোনার মৃত্যুর ঠিক চারদিন পরে ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন সেনেগাল ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় পৌছে দেওয়া সৈনিক পাপা দিউপ। ২০০২ সালে সেনেগালের প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করার ব্যাপারে যার অবদান অনস্বীকার্য। এই পাপা বউবা দিউপই ছিলেন বিশ্বকাপের মূলপর্বে সেনেগালের প্রথম গোলদাতা। ২০০২ সালে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তাঁর গোলেই তৎকালীন (১৯৯৮ বিশ্বকাপ ও ২০০০ ইউরো কাপ) বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে পরাজিত করে ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সেনেগাল। পরে গ্রুপে তাদের তৃতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে চিত্তাকর্ষক ৩-৩ গোলের অমীমাংসিত ম্যাচেও দুটি অসাধারণ গোল করেছিলেন পাপা দিউপ। যে যুদ্ধে তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন সেনেগালের বর্তমান কোচ আলিউ সিসে। সেই পাপা বউবা দিউপ দীর্ঘ রোগভোগের পর চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ফ্রান্সে যে দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে তার গোল আজও স্বপ্ন দেখায় সেনাগালি ফুটবলারদের। তাই পাপা বউবা দিউপের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে নিজেদের উজার করে দেওয়া সেরা ফুটবল খেলে, জয় ছিনিয়ে নিয়ে শেষ ষোলোয় উত্তীর্ণ হয়ে গোটা দল, গোটা দেশ অভিনব শ্রদ্ধা জানালো তাদের প্রয়াত ফুটবল মহানায়ক পাপা বউবা দিউপকে। প্রথমার্ধে পেনাল্টিতে এগিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ইকুয়েডর গোল করে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনার অব্যবহিত পরেই নিজেদের জয়সূচক গোল করে নিজেদের অগ্রগমন সুনিশ্চিত করে সেনেগাল। সেনেগালের গোটা ফুটবল দল ছিল যেন পাপা দিউপের এক একজন প্রতিচ্ছবি। পাপা দিউপের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে আবেগমোথিত এর চেয়ে ভালো কোনও শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে পারত না সেনেগালের মানুষ।

কিন্তু সেনেগাল পারলেও বহু মানুষের আবেগমোথিত সমর্থন সাথে করেও পরের রাউন্ডে যেতে পারল না ইরান। গ্রুপ-বি তে শেষ পর্বের খেলায় তারা হেরে গেল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ০-১ ব্যবধানে। তাদের দেশের মেয়েদের স্বাধীনতার প্রশ্নে কাতারের বিশ্বকাপ মঞ্চে সাহসী ও দৃপ্ত প্রতিবাদ জানিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের হৃদয় জয় করেছেন ইরানের ফুটবলাররা। মৌলবাদী রক্ষণশীল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েও ওয়েলসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ২-০ গোলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ০-১ গোলের পরাজয় আবারও তাদের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিল প্রথম রাউন্ডেই। ১৯৭৮-এ প্রথম বিশ্বকাপে আবির্ভাবের পর থেকে এই নিয়ে ছয়বার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও ইরান এবারেও আগেরবারগুলির মত প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে পারল না। মার্কিন দলের সেরা খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ান পোলিসিচই জয়সূচক গোল করলেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের সিংহদের লড়াইয়ে ইংরেজ ট্রিপল লায়ন হারিয়ে দিল ওয়েলসের রেড লায়নকে। ৩-০ গোলে জয়ী হয়ে ইংরেজরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে উঠে সম্মুখীন হল উজ্জীবিত আফ্রিকান সিংহ সেনেগালের। এদিন মার্কাস রাশফোর্ডের জোড়া গোলের পাশে ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করলেন ২০১৭ সালের অনুর্দ্ধ ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে স্পেনকে ৫-২ গোলে হারানো ইংল্যান্ড ফুটবল দলের তরুণ খেলোয়াড় ফিল ফোডেন। ইংল্যান্ডের লড়াই দ্বিতীয় রাউন্ডে আরও কঠিন হয়ে গেল কারণ তাদের সামনে সেনেগাল। যদিও ধারে ও ভারে ইংল্যান্ডই এগিয়ে থাকবে তবে গ্যারেথ সাউথগেটের ছেলেদের অঘটন ঘটিয়ে বিদায় গেটের দর্শন করাতে যথেষ্ঠ সক্ষম আলিউ সিসের সিংহরা। তবে নেদারল্যান্ডস এখনও পর্যন্ত যতই হতাশাজনক কাঠখোট্টা ফুটবল খেলে থাকুক না কেন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর রাউন্ডে ফেভারিট হিসাবে অএঙ্কটাই এগিয়ে থাকবে কমলা জার্সির খেলোয়াড়রা। গাকপোর গোলক্ষুধা অবশ্যই তাদেরকে এক্ষেত্রে যথেষ্ঠই এগিয়ে রাখবে। তবে ফুটবল মাঠে অনেক হিসেবেই ওলট পালট হয়ে যেতে পারে তা কাতারের বিশ্বকাপ মঞ্চ কিন্তু বারবার প্রমাণ করছে।       

0 Comments

Post Comment