পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ভাষার মাস: একটি আত্মসমীক্ষা

  • 21 February, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 375 view(s)
  • লিখেছেন : অশোক অধিকারী
বাংলাভাষা তো মরতেই বসেছে! তাই শামসুর রহমান চিৎকার করে যেন বলে যান, ‘হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মীলিত সর্বক্ষণ জাগরণে/তোমাকে উপড়ে নিলে বলো তবে কী থাকে আমার?’ তাই একুশে ফেব্রুয়ারি একটি আত্মসমীক্ষার দিন। আত্মআবিষ্কারের দিন।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নিবেদিতার সখ্যতা যখন পাকাপোক্ত হয়েছে তখন কবি একদিন নিবেদিতাকে তাঁর কন্যাদের কোনো একজনকে ইংরেজি ও মিশনারি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। নিবেদিতা কবির অনুরোধ সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে কবিকে লিখলেন, “বাহির হইতে অন্য কোন একটি শিক্ষা গিলাইয়া দিয়া লাভ কী? জাতিগত নৈপুণ্য ও ব্যক্তিগত বিশেষ ক্ষমতারূপে মানুষের যে জিনিসটি আছে তাহাকে জাগাইয়া তোলাই যথার্থ শিক্ষা বলে আমি মনে করি। বাঁধা নিয়মের বিদেশি শিক্ষার দ্বারা সেটাকে চাপা দেওয়া আমার কাছে ভালো মনে হয় না।” রবীন্দ্রনাথ নিবেদিতার এই কথায় কোনো রাগ করেন নি। বরঞ্চ নিবেদিতার ভাষা শিক্ষার উপর এই বিজ্ঞানভিত্তিক মূল্যায়ণে বিশেষ আনন্দিত হয়ে ছিলেন। ‘জাতিগত নৈপুণ্য ’ও ‘ব্যক্তিগত বিশেষ ক্ষমতা’ এই দুই শৈলী সংহতির ওপর নির্ভর করেই ভাষার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা যায়। আজ আরও একটি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা যখন ফুল মালা আর বক্তৃতায় আমাদের ভাষা দিবসকে নবীকরণ করতে ভোর থেকে আল্পনা দিই তখন একটি অন্তর্গত মার্জনা ও দুখিনী বাংলা ভাষার কাছে চেয়ে নিতে হয়! পারঙ্গমতার এই দ্রোহের অপারগতার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কী গাইতে পারছি, ‘মোদের গরব, মোদের আশা আ-মরি বাংলাভাষা।’ বাংলাভাষা তো মরতেই বসেছে! তাই শামসুর রহমান চিৎকার করে যেন বলে যান, ‘হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মীলিত সর্বক্ষণ জাগরণে/তোমাকে উপড়ে নিলে বলো তবে কী থাকে আমার?’ তাই একুশে ফেব্রুয়ারি একটি আত্মসমীক্ষার দিন। আত্মআবিষ্কারের দিন।

   ১৯১৩। বিশ্বের দরবারে বাংলাভাষার কোমরের জোর চিনিয়ে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেলেন। নোবেল সম্মান বাংলাভাষার কাছে মাথা নোয়াল। অতুলপ্রসাদ সেন বিমোহিত হয়ে শুধু কবির প্রতি নয় বাংলাভাষার প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখলেন তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা সংগীত-“বাজিয়ে রবি তোমার বীণে/আনল মালা জগত্ জিনে!/তোমার চরণ তীর্থে আজি জগৎ করে যাওয়া আসা/…ওই ভাষাতেই প্রথম বোলে ডাকনু মায়ে মা মা ব’লে।” সেই আত্মপরিচয়ের কবচকুণ্ডল মাতৃভাষা। তার উদযাপনের ভোরে খন্ডহর বাংলাদেশে এবার কি গীত হবে আব্দুল গফফার চৌধুরীর জীবন জয়ের গান, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি।”প্রসঙ্গত আমরা যেন বিস্মৃত না হই ১৯মে আসামের কাছাড়ের কথা। যেখানে মাতৃভাষার স্বাধিকার রক্ষায় প্রাণ দিয়েছিলেন ১১জন। শহীদ হয়েছিলেন কমলা ভট্টাচার্য বিশ্বের ভাষা আন্দোলনে প্রথম মহিলা শহীদ। কমলার জন্মের আসাম প্রদেশে সেখানকার সরকার রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিন কাজের দিন হিসাবে ঘোষণা করে।নাগরিকত্ব আইনের নামে বাংলাভাষীদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠায়। ১৯৫২র একুশে ফেব্রুয়ারি ধরলে এবারের ভাষাদিবস তিয়াত্তর বছরে পা দিল। তার আন্তর্জাতিকতার স্বীকৃতির বছর (১৯৯৯র ১৭ নভেম্বর) ধরলে এবারের উদযাপন ছাব্বিশ বছর ছুঁলো। একটি মাত্র ‘না’ এর দ্যোতনা যে এত জলদগম্ভীর ও পরিবর্তনকামী হুঙ্কারের জন্ম দিতে পারে তা সেদিন দেখা গিয়েছিল ঢাকার ঐতিহাসিক রমনা-র প্রান্তরে। “উর্দু,কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”-এই আধিপত্যকামী ঘোষণার ঘোষক পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান মহম্মদ আলি জিন্নাহ। মাত্র পাঁচ বছর আগে যুক্তবাংলার স্বাধীনতার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া একটি জাতি জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়ার পরেও তার এই সাহসের সৌন্দর্য দেখে পথে নেমে এসেছিল আত্মসচেতনতার পাঠ বুকে নিয়ে। ভাষা আন্দোলনের অনু পরমাণুর মধ্যে যুক্ত বাংলার লড়াইয়ের ঐক্যবোধ গ্রথিত ছিল শিরা উপশিরায়। জয় এসেছিল আবুল-বরকত-সালাম-জব্বারদের তাজা রক্তের বিনিময়ে। জয় এসেছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের। আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে জয় হয়েছিল গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষের।আজ এই সময়ের বুকে দাঁড়িয়ে যার অনেকটাই আজ খর্বিত। আরও এক নোবেল পুরস্কার প্রাপক মোহ.ইউনুসের হাতে পড়ে একুশের বাংলাদেশের যে হা-হতিশ্যি দশা হয়েছে ও হচ্ছে তা দেখলে আমাদের শিউরে উঠতে হয়। মৌলবাদ আজ সেখানে তাদের দাঁত নখ বের করে গ্রাস করতে চাইছে গোটা দেশটাকে। রক্ত, বারুদ আর জিঘাংসার বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে একুশের সকালে কি আত্মঘাতীর সুর বাজবে? সংখ্যালঘুর নিপীড়ন ও বিতাড়নের মাঝে যে বার্তা এপারে এসে পৌঁচচ্ছে তাতে লালনের বহুত্ববাদী সুর,“ সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে/লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবর্ষ আমরা পেরিয়ে এসেছি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় বক্তৃতা করে বিশ্বসভায় বাংলাভাষাকে তুলে ধরেন। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের জন্য সরকারি নির্দেশ জারি করেন। আজ তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ি মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষ তাকিয়ে দেখছে ভাষার মরণ। এ লেখা যখন লিখছি শিরোনামে আসছে ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে ‘অমর একুশে’বইমেলায় স্টল ভাঙচুর হয়েছে তসলিমা নাসরিনের বই রাখার অপরাধে। রংপুরে নারী আন্দোলনের পুরোধা বেগম রোকেয়া নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়ার নাম বদলের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দল। ইতিহাস বদলে দেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক সত্যকে মিথ্যে করে দেওয়ার যে নৈরাজ্য বাংলাদেশের বুকে ঘটে চলেছে তাতে সামূহিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি সভ্যতা সর্বোপরি কথা বলার গণতান্ত্রিক অধিকার। এত পরিমাণ অসংস্কৃত ভাষা ও পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে তাতে দেশের সর্বাঙ্গীন বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সন্দেহ নেই যা বড়ো বেদনার মতো বাজছে একুশের মাসে।

    তাহলে কেমন আছে আমার বাংলা ভাষা। সে ঠিক তেমনই আছে, যখন দেখি রাষ্ট্র তার শিশু শিক্ষার অধিকার আইনে(২০০৯) নম নম করে বলে দেয়, “শিক্ষার মাধ্যম হবে যথাসম্ভব (as far as practicable) মাতৃভাষা।” শিকেয় উঠে গেল আবশ্যিক করার কথা। যেখানে প্যাণ্ডেমিক পরিস্থিতিকে আমল না দিয়ে একক ক্ষমতায় রাষ্ট্র জাতীয় শিক্ষানীতিতে সিলমোহর দিয়ে জানিয়ে দেয়, প্রাথমিক স্তরে একটি শিশুকে তিনটি ভাষা রপ্ত করতে হবে। মাতৃভাষা,ইংরেজি ও হিন্দি অথবা অন্য কোনও ভারতীয় ভাষা। তখন এই তো তোমার আনন্দ বলে উদ্বাহু নৃত্য করার কোনও সুযোগ কি রাখল রাষ্ট্রের সিলমোহর দেওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি!তাই ঊনসত্তর বছর পরে এই লকডাউনে পাশাপাশি দুই ছাদের দুই মায়ের যখন কথোপকথন শুনি এই বলে যে আমার ছেলে বা মেয়ের অনলাইনে ইংরেজিটা ওর স্যার ঠিক ওভারকাম করে দিচ্ছেন কিন্তু বেঙ্গলি আর ম্যাথসটা ঠিক হচ্ছে না। তখন আশঙ্কিত হই, এই হয়ত মিছিল বেরলো বলে, বাংলাটা ইংরেজিতে ‘পড়াতে হবে,পড়াতে হবে’। আবার সংস্কৃতকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি। মেডিকেল শিক্ষার সমস্ত পাঠ্যবইকে হিন্দিতে অনুবাদ করে বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্দের ভালো, গেল বছর বাংলা ভাষাকে তার প্রাচীনত্ব ও বৈশিষ্ট্যের গুণমানে সিলমোহর দিয়ে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে কী! বাংরেজি ভাষা ব্যবহারের যে বাহুল্য তাতে চাপা পড়ে যাচ্ছে ভাষার গরিমা। তাহলে ইতিহাস কেন দুশো বছর আগে অক্ষয় কুমার দত্তকে এই অধিকার দিল যে, তিনি সমক্ষে সভা সমিতিতে বলে বেড়াচ্ছেন,অফিস আদালত ও উচ্চশিক্ষা সহ সব স্তরে বাংলাভাষা প্রচলন করতে হবে।বাংলাভাষায় ‘ভূগোল’ও ‘পদার্থবিদ্যা’-র বই লিখছেন। যা, বাংলাভাষায় লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ গদ্যগ্রন্থ। বাংলাভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা ভারতে দ্বিতীয় আর বিশ্বে চতুর্থ। ভারতে জাতীয় ভাষা হিসাবে ২২টি ভাষার স্বীকৃতি থাকলেও আজও হিন্দি ছাড়া অন্যকোনও ভাষার কদর রাষ্ট্রের কাছে নেই। যে জন্যই কারণে অকারণে ‘হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান’-র  স্লোগানের প্রতুল ব্যবহার। হিন্দিকে সামনের সারিতে আনার চেষ্টাও কম নয়। ভাষাশুমারি যে সবসময় সমীক্ষকের স্বাধীনতায় মান্যতা দেয় তা নয়। রাষ্ট্রের মর্জির ওপর দাঁড়িয়ে তাকে কাজ করতে হয়। তাই জল মিশে যাওয়া স্বাভাবিক। আদিখ্যেতা যখন একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গীকে বাস্তবায়িত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে তখন উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক তা জনসমষ্টির কল্যাণ চিন্তায় কাজে লাগে না।

     ভাষাবিদ ড.শহীদুল্লাহ্ বলেছেন,“বাহন উপযুক্ত না হলে কেউ তার উপযুক্ত স্থানে পৌঁছাতে পারেনা। লক্ষ্য লাভ করতে হলে সাহিত্যের বাহন উপযুক্ত হওয়া চাই।”বাহন-র জায়গায় ব্যাগ বহনের শকতি্ অর্জনের জন্যই আমরা অভিভাবকরা বিশ্বকর্মার কাছে প্রার্থনা করে চলেছি। অন্যদিকে কোন দৈববাণী আমাদের কানে এমনভাবে এল যে বাংলা নয় ইংরেজি বলো।আবার ইংরেজি শিখতে তো মানা নেই।অমর্ত্য সেন সেই কবেই বলে দিয়েছেন, ইংরেজি শিক্ষায় চিন্তার প্রসার ঘটে,কূপমণ্ডূক হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। তবে,‘আমি তো স্কুলে বাংলায় পড়েছি, কোনও ক্ষতি হয়নি তো।” আসলে বাজার আমাদের তুর্কি নাচন নাচাচ্ছে। তাহলে দোষটা কার। অভিভাবকের, রাষ্ট্রের না বাজারের। আমি অভিভাবকদের দোষ দিই না একটা কারণে। তাঁরা যখন দেখেন বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে যথেষ্ট পরিকাঠামোর ঘাটতি। শিক্ষকের অপ্রতুলতার কারনে নিত্য ক্লাস বন্ধ যায়। আবার সরকারের খামখেয়ালিপনায় কখনও ইংরেজি তুলে নেওয়া আবার ফিরিয়ে দেওয়া। তাতেও আপত্তি নেই, বদলালেই তো হলো না। তার সঙ্গে তাল রেখে গুরুত্ব দিয়ে পঠনপাঠন চালুর আর সবগুলো দাও। সেটা আর হচ্ছে কোথায়! আর তাতেই অণু পরিবারগুলিতে বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর অনীহা তৈরি হচ্ছে। তাহলে দায়টা এসে পড়ছে সরকারের ওপর। তার চালু শিক্ষা নীতির ওপর।

   কেন্দ্রের সরকার ও রাজ্যের সরকার ডিজিটাল মাধ্যমে বা অনলাইনে পঠনপাঠনের ওপর গুরুত্ব দিতে চাইছেন। তাতে বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে একেবারে প্রারম্ভিক স্তরে শিশুশিক্ষার যাবতীয় বিষয়কে সিডিতে বানানোই যায়। গল্পের ছলে বর্ণপরিচয়, সহজপাঠের বিষয়গুলিকে আনা যায়। বর্ণপরিচয় দ্বিতীয় ভাগে যে ছোট ছোট অণুগল্প আছে তাকে শর্টফিল্ম(৫-৭ মিনিট) বানিয়ে ক্লাসে ছোটদের দেখানো যায়। এছাড়া ভিডিও নির্মাণ করে পরিবেশ পরিচিতির পাঠ্য বিষয়গুলিকে তাদের সামনে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।আবার প্রদেশের ভাষাকে প্রথম ভাষা রেখে রাষ্ট্রের ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষার সিলমোহর দিয়ে আইন আনাই যায়। এখনতো রাজ্যের ভাষা না জেনেই আমাদের রাজ্যে বহালতবিয়তে চাকরি করা যায়। মোদ্দা কথা বাংলাভাষার মরণদশা রোধ করতে শিক্ষানীতিতেই বদল আনা দরকার। তার পর না হয় প্রতিযোগিতার প্রশ্ন।নইলে একটা দিনের গীতবাদ্য আর বক্তৃতার মাঝে হারিয়েযায় আমাদের আত্মপরিচয়। আমাদের পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে বাংলা দ্বিতীয় ভাষা। কর্ণাটকেও তাই। লন্ডনেও বাংলাভাষা দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। বিশ্বের ত্রিশটি দেশের একশোটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো হয়।গবেষণাও চলে। পৃথিবীর মধুরতম ভাষার স্বীকৃতি রয়েছে বাংলার ঝুলিতে। তবুও আমাদের বাংলাভাষা প্রীতি আটকে আছে স্মার্টফোনে। ই-বুক, ডিজিটাল পাঠ প্রক্রিয়া আমাদের প্রীতি অপেক্ষা প্রভেদকে বাড়িয়ে তুলেছে।বাংলা ভাষাকে এখন হিন্দি, ইংরেজি ও কম্পিউটারের ভাষার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কেন্দ্রের বাজেটে ‘ভারতীয় ভাষা প্রকল্প’রূপায়নের কথা বলা হলেও বাজেটে তার বরাদ্দ নেই। ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে সমস্ত স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগের কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। সমস্ত সরকারী কাজে বাংলার ব্যবহার আজও অবহেলিত। আমাদের অহেতুক ইংরেজি প্রীতি একটা আশংকা থেকেই জন্ম নিচ্ছে। ইংরেজি না শিখলে ছেলে বা মেয়ে বিদেশে পড়তে যেতে পারবে না।ইংরেজি শিখতে হবে কারণ তা কাজের ভাষা। কিন্তু বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। মনে রাখতে হবে অন্য ভাষা শিখবার পাসওয়ার্ড কিন্তু মাতৃভাষা।

0 Comments

Post Comment