২৪শে নভেম্বর, ২০১৯,রানিহাটির হাকোলা ইউ সি(উচ্চমাধ্যমিক) বিদ্যালয়ে 'আশাকর্মী'রা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও NRC বিরোধী বিষয়ে একটি সভার আয়োজন করেছিলেন।
মানুষের আস্তিত্ব আজ প্রবল অনিশ্চয়তার দোরগোড়ায়। এই কয়বছরে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় তারা দাঙ্গা সংঘটিত করেছে। নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের। হত্যাকারীদের শাস্তি তো দূরের কথা; উল্টে হত্যাকারীদের মালা পরিয়ে বরণ করেছে এই দলটি থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। আমরা এখনো ভুলে যাইনি আসিফার কথা। আমরা ভুলে যাইনি আসিফার ধর্ষকদের সমর্থনে কিভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় মিছিল বেরিয়েছিল। আমরা ভুলে যাইনি JNU-র নাজিবকে - গৌরি লঙ্কেশের পরিণতি, রোহিত ভেমুলার পরিণতি এখনো রাতেরবেলা আমাদের ঘুমতে দেয়না। আসামে NRC-র মাধ্যমে ১৯ লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের ধরে ধরে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। ডিটেনশন ক্যাম্পের ভেতর প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাদের মৃত্যু ঘটে চলেছে অনবরত। ইতোমধ্যে ২৬জন মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা।
২৪শে নভেম্বর, তেমনি একটি সভার আয়োজন করেছিলেন রানিহাটির আশাকর্মীরা। এই সভার সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল মহিলাদের উপস্থিতি। তাঁরাই ছিলেন প্রধান। তাঁরাই দেখিয়ে দিলেন মানুষে মানুষে ভালবাসা এখনো কেমন অটুট রয়েছে। রাষ্ট্র যতই বিভেদ তৈরির চেষ্টা করুক না কেন, পরস্পরের প্রতি এই ভালবাসা, এই বিশ্বাস কখনো মিথ্যে হতে পারেনা। তাঁরা নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। রানিহাটি একটি মিশ্র এলাকা। হিন্দু-মুসলমান জনবসতি প্রায় সমান সমান। এখানেও কৌশলে বিভেদ তৈরি চেষ্টা চলছে। কিন্তু শত সমস্যা সত্বেহ তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে অবিচল। তাঁদের এই এগিয়ে যাবার কাহিনি আমাদের পথ চলার পাথেয় হতে পারে।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক কর্মী মলয় তিওয়ারি। তিনি NRC কী ও কেন তা এত ভয়ংকর তা সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ননা করলেন। অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক অমিত দাশগুপ্ত মানুষের চিরন্তন লড়াইয়ের প্রতি আস্থা রাখতে বললেন। তিনি জানালেন, পরস্পরের প্রতি আস্থাই আমাদের এক ও একমাত্র সম্পদ। এই সম্পদকে যেকোন মূল্যে রক্ষা করতেই হবে। কবি অতনু চট্টোপাধ্যায় তাঁর সদ্য লেখা NRC বিরোধী কবিতাটি পাঠ করলেন। সভার সমাপ্তি হল নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে।
স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে এত অন্ধকার কোনদিন নেমে আসেনি। এই সময় এইরকম সভাগুলি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখায়।