পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে

  • 01 May, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 4886 view(s)
  • লিখেছেন : মলয় তেওয়ারি
মসজিদ আল নূর বা আলোর মসজিদ। ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড। জুম্মার নামাজে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে পঞ্চাশ জনকে হত্যা করে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল স্বেত প্রভুত্ববাদী যুবক। নিউজিল্যান্ডের মানুষ ভালোবাসার আদরে মুছে দিতে চেয়েছে সেই বিদ্বেষ-সন্ত্রাস। লিখেছেন মলয় তেওয়ারি।

জেগে উঠেছে যেন একটা দেশ, একটা রাষ্ট্র। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আরদার্ন কালো সালোয়ার কামিজে, কালো দুপাট্টা হিজাব মাথায়, জড়িয়ে ধরলেন আক্রান্তদের, জড়িয়ে ধরলেন গোটা দুনিয়ার মুসলমানদের। বললেন, ‘মুসিলিমস আর আস’মুসলমানরা আমরা। রিফুজিদের আগলে দাঁড়ালেন তিনি। জেসিন্দা একজন মেয়ে বলেই হয়তো পারলেন ভালোবাসাকে এভাবে রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোনে সাহায্য করতে চাইলে জবাবে তিনি "মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা ও ভালোবাসা" চেয়েছেন। প্রেস মিট করে সেকথা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেনতাঁর এই সত্যবদ্ধ আবেগ মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। জাগিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের রাস্তায়, মসজিদে, টিভি চ্যানেলে সর্বত্র সে অভূতপূর্ব মানব-বন্ধন দেখেছি আমরা। সংসদের অধিবেশন শুরু হয়েছে কোরান থেকে শান্তির কবিতা পাঠ করে।

‘তুমি কি কখনও...’, সামনের দিকে আরেকটু ঝুঁকে পড়ে গলা নামিয়ে বলল শার্লক হোমস—"তুমি কখনও 'কু ক্লুক্স ক্লান'-এর নাম শোনোনি?" 'কমলালেবুর পাঁচটি বিচি' গল্পে সাদা চামড়ার মানুষের প্রভুত্ববাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে ১৮৯১ সালে এভাবেই ইউরোপে পরিচিত করেছিলেন আর্থার কোনান ডয়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৬১ সালে তৈরী হওয়া এই "টেরিবল" শ্বেত-সন্ত্রাসী সংগঠন সম্পর্কে সেখানে জানানো হয়েছিল যে এটা একটা রাজনৈতিক সংগঠন যা কালো মানুষদের ভোটাধিকার বা অন্য যে কোনও প্রতিবাদকে সন্ত্রাস, হত্যা, হুমকি দিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন-ইউরোপীয় ও মুসলমান পরিচিতির প্রতি আতঙ্কিত বিদ্বেষ বহু পুরনো। অন্যদিকে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ডীপ-এজেন্ট হিসেবে ডয়েলের শার্লক বড় বড় অপরাধ বা হীনতার উৎস মূলত ইউরোপের বাইরেই খুঁজে পেতেন বটে, কিন্তু দুএক দশকের মধ্যেই ইউরোপে নাৎসিবাদ-ফ্যাসিবাদ কদর্য চেহারা নিয়ে সামনে এসেছে।

গত বছর বিবিসির লেটেস্ট শার্লক সিরিজের দ্যা এবমিনেবল ব্রাইডমুভিতে ডয়েলের সেই শ্বেত-সন্ত্রাসী সংগঠনটির কথা ভুলিয়ে দিয়ে হাজির করা হয়েছে মহিলাদের ভোটাধিকারের দাবিতে চলা এক গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের গল্প। অথচ, শ্বেত জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা কালো মানুষ ও বামপন্থীদের ওপর অনেকগুলি হামলার ঘটনা ইউরোপেই ঘটেছে বিগত আট দশ বছরে। ২০১১-র জুলাই মাসে নরওয়েতে বামপন্থী লেবার পার্টির ইয়ুথ ওয়ার্কশপে বোম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করা হয়। ২০১২ অগাষ্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকিনসনে শিখ মন্দিরে গুলি চালিয়ে ৬ জনকে হত্যা করেছিল যে যুবক তার মিউজিকব্যান্ড-এর ভিডিও এলবামে দেখা যাচ্ছে একটি সাদা হাত একটি কালো মানুষের মুখে কেবল ঘুষি মেরে চলেছে, সাদা হাতের উল্কিতেও আঁকা একই শ্লোগান। ক্রাইস্টচার্চের শ্বেত-সন্ত্রাসীর বন্দুকগুলিতেও সাদা অক্ষরে লেখা ছিল একই রকম বার্তা। ভৌগোলিকভাবে ইউরোপের উল্টোপ্রান্তের দেশ নিউজীল্যান্ডের আল নূর মসজিদের হামলা দেখিয়ে দিয়েছে যে স্বেত-সন্ত্রাসীদের এক আন্তর্জাতিক গুপ্তচক্র কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে।

ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ হামলার কিছু দিনের মধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে তারা সমস্ত রকম শ্বেত জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রশংসা, সমর্থন ও প্রদর্শনকে নিষিদ্ধ করছে। ফেসবুক জানিয়েছে যে হামলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তারা ওই ভিডিওটি অন্তত পনের লক্ষ বার ডিলিট করেছে বা আপলোড আটকেছে। গুগল এবং টুইটারও অনুরূপ কিছু দাবি করে। কিন্তু একথাও তারা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিয়েছে যে এই স্বেত জাতীয়তাবাদী সন্ত্রাসের প্রচারকে আলাদা করে চিহ্নিত করাই কঠিন কাজ, কারন প্রায়শই তা মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে বিশ্বের তথাকথিত উন্নত দেশগুলির অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান বা নেতাদের ভাষণ এমনকি সংসদের চর্চা বা সিদ্ধান্তের সাথে।

তিন বছরের শিশু ৬৫ বছরের বৃদ্ধা, ১৩ বছর বয়সী কিশোর ও ৪৭ বছরের প্রৌঢ়া —বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পেশার মানুষ আছেন নিউজিল্যান্ডে নিহত ওই পঞ্চাশ জনের মধ্যে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে কাজের সন্ধানে নিউজিল্যান্ডে গেছেন অথবা কয়েক প্রজন্ম ধরে আছেন। দুগ্ধ চাষী থেকে হবু পাইলট, টেকনিশিয়ান থেকে ফুটবলার। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, কুয়েত, সোমালিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে। ভারত থেকে যাওয়া পাঁচজন। লজ্জার বিষয় হল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে দুটো সহমর্মীতার কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করেননি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হিন্দু মুসলমান শিখ ঈশাই নির্বিশেষে সমগ্র দেশবাসীকে জেসিন্দা আরদার্নের মত আমরাবলার বোধবুদ্ধি নাই তার। বরং হিন্দু সন্ত্রাসবাদপ্রসঙ্গে বিরোধীদের সমালোচনাকে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি বলেন আমাদের বদনাম করা হচ্ছে, স্পষ্টতই বুঝিয়ে দেন যে তাঁর কাছে আমাদেরমানে কেবল হিন্দু

0 Comments

Post Comment