পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আর্টিকেল-১৫

  • 17 July, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 6664 view(s)
  • লিখেছেন : মনীষা
কখন যেন ছবিটা আপনাকে আমাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় তাহলে কি সত্যি আমরা ভাল নেই, শুধুমাত্র ভাল থাকার ভান করে যাচ্ছি রোজ। এই অস্বস্তিটাই এই ছবির প্রাপ্তি। এই প্রশ্নটাই এই ছবির প্রাপ্তি।

চলচ্চিত্র এমন একটি অডিও ভিশ্যুয়াল মাধ্যম যার সাহায্যে খুব সহজেই সামাজিক মেসেজগুলিকে সমাজের অনেক গভীর পর্যন্ত পৌছে যাওয়া যায়কিছু চলচ্চিত্র আছে যা সহজে সমাজের একটা পরিসর ছুঁয়ে গেলেও একদম গভীরে সাধারমানুষের আকর্ষণেরকারন হয়ে ওঠে না,ফলে সুদুরপ্রসারি প্রভাবও নেই, একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্র থেকেই মেসেজগুলি হারিয়ে যায় যেন


অনুভব সিনহার আর্টিকেল-
১৫ সেই অর্থে অনেকটাই গভীর জায়গা লাভ করেছে ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল-১৫এ বলা হয়েছে- এই দেশ ধর্ম,জাতি, লিঙ্গ,জন্মস্থান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কোনো বৈষম্যমুলক আচরকরবেনাএমনকি কোনো প্রকাশ্য স্থানে, রেস্তোরায়, শপিং মল সহ বিভিন্ন স্থানেও কোন ভেদাভেদ করতে পারবে নাঅথচ আমরা করি, আমরা এড়িয়ে যাই, আমরা দেখেও না দেখার ভান করি, আমরা এগুলো নিঃশব্দে সমর্থনও করি, আমরা দেখাই আমরা শিক্ষিত, আমরাউচ্চ মনোভাবসম্পন্ন আর ওরানোংরা, অশিক্ষিত, অচ্ছুত,ওদেরছায়া মাড়ানো ঘৃণ্য,জল খাওয়ার পাত্র আলাদা... ভাবা যায় এই বর্তমান শতাব্দীর ভারতবর্ষ এটা!


আমরা সাধারন মানুষরা বেশিরভাগই ভারতীয় সংবিধানের ন্যুনতম অধিকার সংক্রান্ত ব্যপারে উদাসীন বা জানি না
জানতে ইচ্ছাও বোধয়করি নাজানি না সেগুলো উপেক্ষা বা অন্যথাহলে কিভাবে লড়তে হয়কারন যারা একদম মাটির কাছের সাধারমানুষগুলি, যারা ধর্ম, জাতপাতের জাঁতাকলে নিজেরা নিজেদের পিষে চলেছে তাঁদেরকে পথ দেখাবে যারা, যাদের প্রতি তাদের ভরসা, তারাই হাত ধরে আরো অন্ধকার গহ্বরে নিয়ে যায়তাদেরই ভোগের লালসার বস্তু হয়ে ওঠে এই ভীরুপ্রানিরক্ষর, অবহেলিত, নিপীড়িত মানুষগুলো


আর্টিকেল-
১৫ আমাদের ভাবতে শেখাআইনে কি বলা হয়েছে!! এই ছবি দেখে যদি কিছু শিক্ষিত,বিচক্ষন মানুষদের মনে এই বোধ জাগে যে যত খারাপ কিছু করুক না কেন কাউকে বিশেষত কোনো মহিলাকে কোনো পরিস্থিতিতেই রেপ সংক্রান্ত বা শারীরিক কটুক্তি করা, বলা বা যারা করছে /বলছে তাদের সমর্থন করা যায় না, তাহলেই এই ধরনের চলচ্চিত্রর সমাজে প্রভাবের সার্থকতা হবে। নাহলে সেই শিক্ষিত হওয়া সম্পূর্ন মূল্যহীন যা নীরব থাকতে শেখায়নাহলে পপকর্ন, বাদাম ভাজা, কোল্ডড্রিংক্সের অব্যবহৃত প্যাকেটের ডাস্টবিনে গড়াগড়ি খাওয়ার সামিল তা

মাত্র তিনটে টাকা, দলিত, এবং শুধু মেয়ে হওয়ার অপরাধে মেয়ে তিনটেকে রেপ করে মেরে গ্রামের মাঝে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলবাকি গ্রামবাসীদের ঔদ্ধত্ব যাতেমাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে তার জন্যই ছিল এই প্রকাশ্য প্রদর্শন।দলিত, নিপীড়িত মানুষদের জন্য লড়াই করা মানুষটাকে প্রশাসনের নির্দেশেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিলনোংরা জলে ডুবে গেলেও শুধুমাত্র দলিতরাই সমাজের আবর্জনা প্রবাহের ড্রেন পরিষ্কার করবে অথচ কি অবাক লাগে সেই সাথে কবে যে আমাদের মনের ময়লা, কালিমাগুলি দূর হবে! কেউ কি ভাবতে পারেন!ওটাও বাস্তব আর এটাও, যেখানে সুন্দরসাজপোশাক,পেশার আড়ালে জাত, ধর্ম, লিঙ্গ।নিজেদের অব্যক্ত ক্ষোভ ইত্যাদির প্রকাশে যদি কোন মহিলা আক্রমনের লক্ষ্য হন তাহলে তা কতটা শোভনীয়!

ইতিহাস ও বাস্তব এবং এই চলচ্চিত্র বলে ওঠে সমাজের মঙ্গলচিন্তকরা চিরকালই উপেক্ষিত, অবহেলিত, অসম্মানিত, একঘরে,কিন্তু তাতে এদের প্রকৃতপক্ষে দাবিয়ে রাখা যায় নাস্ফুলিঙ্গহয়ে জ্বলে ওঠে এরা বিভিন্ন অবতারেঅনুভব সিনহা এই সাহস দেখিয়েছেনএর জন্য কত বাধা বিপত্তি তিনি পেরিয়েছেন না জানিসমাজ সকলকে নিয়ে, তাই এই সকলের সাথে মিলে মিশে থাকাই এই মতো আমাদের উদ্দেশ্য যাতে ধীরে ধীরে ভুলগুলি দূরীকরণ করা যায়। ভুলটা ভুএটা মেনে নেওয়াই শিক্ষিত মননের পরিচয়

এমন একটা সমাজে আমরা বাস করছি যেখানে কি আমরা শুধুই দর্শক? আমাদের কি কিছুই করনীয় নেই? ছবির একটি দুটি সংলাপ শুনলেই মনে হয় কি অদ্ভুত বৈপরীত্য কাজ করছে আমাদের সমাজে। যত বেশী সৈন্য সীমান্তে মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশী মানুষ রোজ মারা যায় ড্রেন পরিষ্কার করতে, কই আমরা তো এতো উদ্বেলিত হই না! তবে কি এই মানুষগুলোর জীবনের কোনও মূল্যই নেই আমাদের কাছে? পরিচালক অনুভব সিনহা যে সময়ে এই ছবিটি বানিয়েছেন, যে সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে এই ছবিটি বানিয়েছেন তার জন্য নিশ্চিত তাঁর অভিনন্দন প্রাপ্য। যখন বেশীর ভাগ পরিচালক এই ধরনের বিষয় থেকে দূরে থাকা সমীচীন মনে করেন তখন এই পরিচালক দর্শকদের একটা আয়নার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন যেখানে তাকালে লজ্জায় মাথা নিচু করা ছাড়া আর কিছু করনীয় থাকে না। অন্যান্য বলিউডের ছবির থেকে এই ছবি অনেকাংশে আলাদা তা আমার আপনার পছন্দ না হলেও আলাদা। কখন যেন রাবন চন্দ্রশেখরেরা, ভগত সিংএরা আমাদের সামনে চলে আসেন। কখন যেন তাঁরা বলে ওঠেন যারা শুনতে পায়না তাঁদের শোনানোর জন্য বড় বিস্ফোরণের প্রয়োজন। কখন যেন জিগ্নেশ মেভানির লড়াই সামনে চলে আসে , গরুর চামড়া ছাড়ানোর যারা কাজ করে তাঁরা যদি অসহযোগিতা করে তাহলে সত্যিই হয়তো সমাজের ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যায়। কখন যেন ছবিটা আপনাকে আমাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় তাহলে কি সত্যি আমরা ভাল নেই, শুধুমাত্র ভাল থাকার ভান করে যাচ্ছি রোজ। এই অস্বস্তিটাই এই ছবির প্রাপ্তি। এই প্রশ্নটাই এই ছবির প্রাপ্তি। হল থেকে বেরিয়ে কেউ যদি ভারতের সংবিধানের প্রায় সমস্ত ধারাগুলোকে আরও একবার বা বলা ভালো প্রথমবার পড়ে ফেলার চেষ্টা করেন সেটাই হবে এই ছবির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। প্রতিদিন আমরা যে রোজ হারছি সেখান থেকে এক পা এগোনোর ছবি আর্টিকেল – ১৫।

0 Comments

Post Comment