সালটা সম্ভবত ১৯৮৭ বা ১৯৮৮ হবে। চন্দননগর লাগোয়া নতুন নতুন বসতি প্লট তৈরি হচ্ছে রেল স্টেশনের আশেপাশে। একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের একটি প্লট কেনার খুবই আগ্রহ। কিন্তু সেই গুড়ে বালি। সেই শিক্ষক একজন মুসলমান। তার কিন্তু আরেকটি পরিচয় ছিল, তিনি সিপিএমের আঞ্চলিক কমিটির নেতা। তথাপি তাকে একটা প্লট দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, এই নতুন বসতি তে তিন জন জোনাল কমিটির নেতা এবং চারজন অঞ্চল কমিটির নেতা প্লট কিনেছিলেন।
প্রসঙ্গটা উল্লেখ করলাম এই জন্য যে এ পাড়ায় কোন মুসলমানকে জমি কিনতে দেওয়া হবে না, এটাই ছিল ঘোষণা। মাজেদ মাস্টার ছিলেন একজন বাঙালি মুসলমান। তথাপি বাংলায় তিনি জমি কিনতে পারেননি। ১৯৯০ সালে আমি এই পাড়াতেই জমি কিনলাম। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এক ঘরও মুসলমানের আগমন ঘটেনি। এই পুরো এলাকাটা ছিল সিপিএমের তালুবন্দি। এরপর পাড়ার ভৌগোলিক সীমা ক্রমশই প্রশস্ত হয়েছে। অন্য একটি সত্য প্রকাশমান, এখন এই পাড়ায় প্রায় ৩২ টি অবাঙালি হিন্দিভাষী পরিবার বাড়ি করেছে। অর্থাৎ বলতে চাইছি সেই প্রতাপ শালী সিপিএমের যুগেও মুসলমান নৈব নৈব চ, বরং অবাঙালি হিন্দুও গ্রহণযোগ্য।
এরপর কলকাতায় ও হাওড়ায় বেশ কিছু খাটাল উচ্ছেদ হলো এবং সেই খাটালের হিন্দিভাষী গোয়ালারা হাজার হাজার গরু মোষ নিয়ে বিধায়ক লগণ দেও সিংয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের এখানে চলে এলো। এলাকা আরও সম্প্রসারিত হলো প্রায় একটা বিহার গড়ে উঠেছে। যেখানে দোকানের সাইনবোর্ড হিন্দিতে, পাড়ার ভেতরে আপনি ঘুরে বেড়ালে, কোথাও কোন বাংলা কথা শুনতে পাবেন না। মাঠে বাচ্চারা খেলাধুলা করছে, তাদের মুখে হিন্দি। দোকানপাটে উপকরণ, সেগুলো হিন্দি প্রধান, মানে ছাতু গুটকা অরহর ডাল বিন্দিয়া বিশেষ কিছু রান্নার মসলা ইত্যাদি।
তৎকালীন সিপিএমের সুপরিচিত নেতা ও তার সাগরেদ এইসব জমিজমা বিক্রি করল, মানে দালালি করল (পরে অবশ্য দল পাল্টেছে) । প্রচুর দাম পেল, যে দাম এইসব মধ্যবিত্ত বাঙালি দিতে পারবে না। খাটাল কে কেন্দ্র করে খোল ভুষির বিরাট গুদাম গড়ে উঠলো। সহস্রাধিক নতুন হিন্দিভাষী মানুষের আগমনে সিমেন্ট বালি ইট লোহার রড স্যানিটারি দ্রব্য এসবের বিরাট বাজার খুলে গেল। দুহাতে লাভ করল জমির কারবারিরা। যত বাড়ি ফাঁকা হচ্ছে, মানে বুড়োবুড়ি গত হচ্ছে, ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকছে, সেই সমস্ত বাড়িগুলো প্রায় সবই কিনছে হিন্দি ভাষীর দল। কারণ বেশি দাম দিচ্ছে। ভাবা যায় আমার এই স্টেশন সংলগ্ন বসতি টি এখন পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত। এটা এখন পৌরসভার সবচেয়ে বড় একটি ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে সাতটি বুথ, সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি ভোটার। এরমধ্যে মুসলিম ভোটের সংখ্যা ২২ এর কম। আর হিন্দি ভাষি হিন্দুর সংখ্যা, অন্তত ১৮০০ হবে। আমি আসলে দ্রুত পাল্টে যাওয়া একটা ছবিকে তুলে ধরতে চাইছি।
আমার আলোচ্য এই একটি পৌর ওয়ার্ডে দুটি বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক বিদ্যালয় উঠে গেছে। এখন যে দুটি আছে তার একটি ছাত্র সংখ্যা খাতায়-কলমে ১৭ হলেও, বাস্তবে ওটা ৬/৭জন। অর্থাৎ বলা যায় বাংলা মাধ্যম প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি। অথচ আলোচ্য সময়ে একটি সুবৃহৎ ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় চালু হয়েছে। যেখানে দেড় হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী। উল্লেখযোগ্য এই স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিন্দি। এছাড়াও এই অঞ্চলে নতুন দুটি হিন্দি স্কুল গড়ে উঠেছে। আমি বোঝাতে চাইছি যে, বাংলা মাধ্যম স্কুল উঠে যাচ্ছে। আর ইংরেজি ও হিন্দি মাধ্যম জন্ম নিচ্ছে। সেখানে বাঙালির সন্তান গিয়ে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা পড়ে। আগে আমাদের এই অঞ্চল থেকে দলবেঁধে হিন্দিভাষী কিছু ছেলে মেয়ে ২০-২৫ জন তেলিনিপাড়া চাঁপদানি তে আর্য বিদ্যাপীঠ, গান্ধী বিদ্যালয়, এসব হিন্দি স্কুলে পড়তে যেত। আর বহু সংখ্যক হিন্দিভাষী মেয়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলে এসে পড়তো। ফলে এরা বাঙালিয়ানার সাথে সহজে মিশে গিয়েছিল। ফুল কুমারী প্রসাদ, লছমী পাশোয়ান, এমন আরও অনেকে হিন্দিটাই জানে না। কারণ বাংলা মাধ্যম স্কুল, বন্ধু বান্ধব বাঙালি, খাদ্যাভ্যাস বাঙালি, উৎসব অনুষ্ঠান নাচ গান বাঙালি। এখন ঠিক বিপরীতটা হয়েছে। বাঙালি সন্তান পড়তে যাচ্ছে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে, যেখানে দ্বিতীয় ভাষা হিন্দি। ফলে বহু সংখ্যক হিন্দুস্তানি ছাত্র-ছাত্রী তাদের সাথে মেলামেশার মধ্য দিয়ে এই সংখ্যালঘু বাঙালি সন্তান একটা হিন্দি সংস্কৃতিকে আশ্রয় করে বড় হচ্ছে। “পাঙ্গা মত্ লেনা”..... “কিঁউ কি” … ইত্যাদি “বিবিধ রতন“ বাংলা শব্দ ভান্ডারে স্থান পেয়েছে।
এর ফল হল আমি পাশের বাড়ির দে সরকার পরিবারের ছেলেটাকে বলতে শুনছি “আরে উঠানা ইয়ার, জলদি জলদি উঠানা ফোন” …… পাড়ার নাইন টেনে পড়া বড় মেয়ে, তাকে হঠাৎ মা প্রহার করেছে। ফলে এক ভয়ঙ্কর চিৎকার চেঁচামেচি। বাধ্য হয়ে পরিচিত নারায়ণ বাবুর বাড়িতে নাক গলালাম। গিয়ে শুনি মেয়ে বলছে মাকে “আইন্দা মেরি স্কুল ব্যাগ মে কভি হাত ডালা তো …….”। বুঝলাম মেয়ের প্রাইভেসি, সম্পর্ক সমস্যা, এসব নিয়ে গোলমাল ও প্রহার। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, কাঁদতে গেলে নিজের মাতৃভাষা বেরিয়ে আসে। কিন্তু দেখলাম সেটা এখন ভুল ধারণা, কারণ ভাবগুলোই আর মাতৃভাষায় নেই।
আগে হাওড়া ব্যান্ডেল মেইন লাইনে ডাউন ট্রেন শ্রীরামপুর ছাড়ালে রিষড়া থেকে প্রায় কুড়ি শতাংশ হিন্দিভাষী যাত্রী উঠতো। তারপর হিন্দমোটর এবং বালি, বেলুড়, লিলুয়া, থেকে চল্লিশ/পঞ্চাশ শতাংশ হিন্দিভাষী যাত্রী উঠত। এখন চন্দননগর মানকুন্ডু ভদ্রেশ্বর থেকেই ৩০ শতাংশের বেশি হিন্দিভাষী যাত্রী ওঠে। বিশেষ বিশেষ সময়ের ট্রেনে সেটা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। সংখ্যার বিন্যাস সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে এই মফস্বল অঞ্চল গুলিতে।
ভিন রাজ্যের মানুষ আসবেনা এমনটা আমি বলছি না, নিশ্চয়ই আসবে। কিন্তু তারা বাংলা ভাষাটাই জানবে না এটা অস্বাভাবিক। এমন হিন্দিভাষী দেখেছি যার বাংলা কথায় হিন্দি একসেন্ট এতটুকু অবশিষ্ট নেই। নাম শুনে প্রশ্ন করেছি তুমি হিন্দিভাষী? সে বলেছে না আমি বাঙালি। আমার দাদুর বাবাও এখানে ছিলেন। কয়েক পুরুষ ধরে আমরা বাংলাতেই আছি। একে তো আমি অবাঙালি ভাবি না। এতো নিপাট বাঙালি। এমনকি কেউ কেউ বলেছে দেশে গিয়ে খুব অসুবিধা হয়, কারণ ওখানকার খাবার দাবার খেতে পারিনা। এখানকার খাবারে অভ্যস্ত। ভোজপুরিটাও ভালো বলতে পারিনা। এদের তো আমি বাঙালি বলবো।
কিন্তু কাজের সুবাদে যারা পরিবার নিয়ে এখানে আছে, মা বাবা বউ ছেলেমেয়ে সবাই দেশে থাকে। সেখানে টাকা পাঠায়। ওখানেই বিয়ে-শাদী নানা সামাজিক অনুষ্ঠান পরব সম্পন্ন হয়। তাদের আমি বাঙালি মনে করি না। তবে জীবিকার প্রয়োজনে কাকে কোথায় যেতে হবে, কে বলতে পারে। কথা হলো বাসন্তী থেকে যে বাঙালি সাবির মল্লিক হরিয়ানা গিয়েছিল, সেও তো কাজ করতে গিয়েছিল। তার সুরক্ষা কে দেবে? প্রশ্নটা হল এই বাংলায় জীবিকার প্রয়োজনে এসে এই বাংলার ভাষাটাকে তুমি জানবে না, মানবে না, এখানকার খাদ্যাভ্যাসকে তুমি পরিহাস করবে, এমনকি তোমার দোকানে গিয়ে বাংলা কথা বললে তুমি উত্তর দেবে না। ঔদ্ধত্য নিয়ে বলবে ওটা বাংলাদেশের ভাষা। ভারতের ভাষা নাকি হিন্দি। এটা আমার বাঙালি জাতিসত্তার আত্মসম্মানে আঘাত করে। যে সমস্ত হিন্দিভাষী ছাত্র ছাত্রী আমার বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়তে এসেছে, দেখেছি তারা সরস্বতী পুজো, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, সমস্ত অনুষ্ঠানে বাংলা সংস্কৃতিকেই পারফর্ম করেছে। এমনকি স্বাধীনতা দিবস বা সুভাষজয়ন্তীর দিনেও তারা বাংলার সংস্কৃতিকেই বহন করেছে। দেশাত্মবোধক বাংলা গান গেয়েছে। বরং কোন কোন বাংলাভাষীকে “আও মেরি ওয়াতন কি লোগ” গাইতে বেশি উৎসাহ দেখেছি।
এইখানে এসে আমি একটু বাঙালির স্বভাবের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে চাই। আমাদের অভ্যাস, অবাঙালি দেখলে তার সাথে হিন্দি কথা বলার। আপ্রাণ চেষ্টা চালাই, যাতে তার অসুবিধা না হয়। খুব বেশি সহযোগিতার মনোভাব। এই সহযোগিতা বাস্তবে দুর্বলতা বলে ভাবতে থাকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী বিকৃত স্বরে ও সুরে “দিইইদি ওও দিইইদি” চরম বিদ্রূপ বইকি। এমনকি আমরা কেউ ভুল হিন্দি বললে, তা নিয়ে কত রঙ্গ রসিকতা, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ চলে। অথচ উচিত ছিল ওই অবাঙালিকে বাংলায় কথা বলানোর চেষ্টা করা। আমরা সেই সুযোগটাই দেই না। আগন্তুকের যেন অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে সজাগ।
আমাদের বাঙালিদের অনেক বেশি আত্ম সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা সামান্য বিরোধ বিদ্বেষ প্রতিযোগিতা থেকে বহু ক্ষেত্রে নিজের বাঙালি সত্তাকে অপমান করে বসি। যে কোনো খারাপ স্বভাবের সমালোচনায় বলি, “বাঙালির স্বভাব”। সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবী পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে গিয়ে বলল যে, হাসপাতালে তুলো ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। কত নীরবে সেই অসত্য ভাষণকে তার বাঙালি মক্কেলরা মেনে নিলেন। এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে কতো বড়ো বড়ো সফল চিকিৎসা সম্পন্ন হয়, সে কথা সোচ্চারে বলতে বাঙালি ডাক্তার বাবুদের অসুবিধা হলো? ঐতিহাসিক ভাবে বাংলা বিধান রায়ের আমলে, জ্যোতিবাবুর আমলে, কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার। আজও সেই বঞ্চনা চলেছে। অথচ বর্তমান রাজ্য সরকার বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা বললে কতো ব্যঙ্গ বিদ্রুপ চলে। বাংলা তার জিএসটির ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বললে, বাংলার অন্য রাজনৈতিক দল নীরব। অথচ এটা স্বীকৃত যে বিরোধী শাসিত সরকার গুলিকে কেন্দ্র সর্বতোভাবে বঞ্চনা করে থাকে। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন করলে তবেই এ রাজ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। এ কাজে বিরোধীদল গুলি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলতঃ “বাংলা নিজের মেয়েকে চায়” শুধু স্লোগান নয়, বাস্তব সত্য হয়ে উঠলো।
বিজেপি একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল। বাংলার বিজেপি বিরোধী শক্তিকে বুঝতে হবে ও বোঝাতে হবে যে, বিজেপির হিন্দুত্ব হল হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান। কিন্তু বাংলার হিন্দুত্ব ভিন্নতর। বাংলায় ভাঁটির হিন্দুত্ব, কপিল মুনির হিন্দুত্ব। হিন্দিভাষী বলে জয় শ্রীরাম, শব যাত্রায় বলে রাম নাম সত্য হ্যায়। কিন্তু বাঙালি বলে হরে কৃষ্ণ, শব যাত্রায় বাঙালি বলে হরিবোল। যাত্রা শুভ করতে বাঙালি বলে দুর্গা দুর্গা। বাংলার হিন্দুত্ব আর হিন্দিভাষী হিন্দুত্ব এক নয়। বাংলার মনসামঙ্গল আর চন্ডীমঙ্গলকে হনুমান চালিশা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। বিজেপির হিন্দুত্ব শুধু তো হিন্দি নয়, আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে নিরামিষাশী। মাছে ভাতে বাঙালি কি বিজেপির মীন সংরক্ষণে সায় দিয়ে মাছভাত ত্যাগ করবে? বাঙালি কি উৎসবে আনন্দে আমিষ খাবেনা? আমাদের ষোলআনা বাঙালিয়ানা দিয়েই বিজেপির রাজনীতিকে প্রতিহত করতে হবে। আমাদের হিন্দি বলয়ের হিন্দুত্ব দিয়ে বেঁধে রাখা যাবে না।
জীবিকার সন্ধানে ভিন রাজ্যে বাঙালিকে যেতে হয়। আবার জীবিকার কারণেই ভিন রাজ্যের অবাঙালি হিন্দিভাষী এই বাংলায় আসে। কিন্তু দিওয়ালি দিয়ে ধনতেরাস দিয়ে দীপাবলিকে ম্লান করতে দেব না। হোলি দিয়ে দোলযাত্রাকে প্রতিস্থাপন করবো না। এই বাংলায় যার যার নিজেও ধর্ম আচরণ পদ্ধতি, আচার অনুষ্ঠান স্বীকৃত। কিন্তু অপরের আচরণ ও পদ্ধতিকে শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করা হয়, এটাই বাংলার ঐতিহ্য । একমাত্র এই ঐতিহ্য দিয়েই কট্টর হিন্দুত্ববাদী কে ঘায়েল করা সম্ভব। একমাত্র এই ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়ে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে বাংলায় বিকল্প শক্তি হয়ে ওঠা সম্ভব। বিজেপি বিরোধী শক্তি গুলি সে বিষয়ে সচেতন কি।
বিজেপি সুকৌশলে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান নীতি কে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে এ রাজ্যে যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে কোনমতেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য চাকরি রাজ্যের উচ্চতম থেকে নিম্নতম প্রশাসন সর্বত্র একটা হিন্দি আগ্রাসনের ছক প্রস্তুত। এই আগ্রাসন রুখতেই হবে। হেমন্ত সরেন তো বিকল্প আত্মপরিচয় নিয়েই আগ্রাসী হিন্দুত্ব কে রুখতে পারলেন। বেশ মনে আছে বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় যখন হিন্দুমুসলমান সংঘাত তীব্র, তখন অযোধ্যায় ব্যারিস্টার হবিবুল্লাহ, ব্যবসায়ী আয়ুধিয়া নাথ প্রমুখের জবানবন্দিতে জানা যায় “Neither Hindus nor Muslims, only Bengalees would get all.” পশ্চিমবাংলা আজ সেই একই নির্মম সত্যের সম্মুখীন। এই আত্ম পরিচয় অবলম্বন করে বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন ঠেকানো সম্ভব। অন্যথায় জন্ম নেবে একটি পাল্টা আগ্রাসন, যা বাংলা তথা ভারতের পক্ষে বিপদজনক।