ভারতে লোকসভায় এখন নারী প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৫%। একই সঙ্গে, দেশের ১৯টি রাজ্যের বিধানসভায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১০%-এরও কম। আর রাজ্যসভাতে নারী প্রতিনিধিত্ব ১১% -এর কাছাকাছি। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে পার্লামেন্টে নারীদের গড় প্রতিনিধিত্ব ২৬.৫%। মানে চিত্রটা কোথাও খুব আশাব্যাঞ্জক নয়। কিন্তু ভারতের অবস্থা খারাপের মধ্যেও খারাপতর। ভারতের স্থান এ নিরিখে বিশ্বে ১৪৪ তম। এ বড় লজ্জার বিষয়। অথচ ভারতীয় রাজনীতির অতীত ও বর্তমান জুড়ে শক্তিশালী নারীদের আনাগোনা। দেশ প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পায় সেই ১৯৬৬ সালে। কয়েকটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেও রয়েছেন নারীরা। নারী মুখ্যমন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের কয়েকটি রাজ্য পরিচালনা করেছেন। বেশ কিছু কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ের শক্তিশালী মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান দ্রৌপদী মুর্মুসহ দু'জন নারী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। কিন্তু নারী প্রতিনিধিত্বে শতাংশের হিসেবে আজও ভারত পিছিয়ে, এমনকী বাংলাদেশের থেকেও।
যদিও বলা হচ্ছে, মহিলা আসন সংরক্ষণ বিলের লড়াই সাতাশ বছর পুরোনো, কিন্তু আসলে লড়াইয়ের আগের লড়াই আরও অনেক প্রাচীন। স্বাধীনতার পর থেকেই জনপ্রতিনিধিত্ব সংক্রান্ত সচেতনতার বিকাশ। মহিলারা বেশি সংখ্যায় পঞ্চায়েত বা স্থানীয় স্তরে, লোকসভা বা বিধানসভায় থাকলে লিঙ্গসচেতন আইন তৈরি হয়, সংসদে আলোচনা হয় নিরপেক্ষতর। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে 'টুয়ার্ডস ইকুয়ালিটি' নাম দিয়ে এক রিপোর্ট পেশ করে 'নারীর অবস্থান সমীক্ষা কমিটি'। এই রিপোর্টে প্রদর্শিত বিপুল লিঙ্গ-অসাম্য ভারতের নারী সেই সময়ের আন্দোলনের অভিমুখ স্থির করে দেয়। অন্য নানা আন্দোলনের সঙ্গে মহিলা আসন সংরক্ষণ আন্দোলনও শুরু হয়।
রাজীব গান্ধী পঞ্চায়েত ও স্থানীয় স্তরে মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল পেশ করেছেন। কিন্তু ১৯৯২ সালে নরসিমা রাওয়ের আমলে তা পাশ হয়েছে। আর কার্যকর হয়েছে ১৯৯৩ সাল থেকে৷ দেশ জুড়ে প্রায় দশ লাখ মেয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন ফলত। আর তখনই নতুন উদ্যমে কোমর বাঁধেন নারীবাদী নেত্রীরা। পাখির চোখ বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা। অতএব ১৯৯৬ সালে দেবেগৌড়া সরকারের আইনমন্ত্রী রমাকান্ত খালাপ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাদল অধিবেশনের শেষ দিকে মহিলা সংরক্ষণ বিলের একটি খসড়া পেশ করেন ৷ যুক্তফ্রন্ট সরকারের 'কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম' ছিল মহিলা সংরক্ষণ বিল। নির্বাচনী ইস্তেহারে বিভিন্ন দলই মহিলা সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়েছিল৷ অতএব '৮১ তম সাংবিধানিক সংশোধন বিল' হিসেবে খালাপের বিল পেশ হল। প্রবল বিতর্ক শুরু হল। সংরক্ষণ বিরোধীরা সংরক্ষণ বাতিল করতে বললেন। সংরক্ষণপন্থীরা বললেন, দীর্ঘ আলোচনার বিষয়টি কেন শেষদিন উঠল? এমতাবস্থায় একটি যৌথ সংসদীয় সিলেক্ট কমিটি গঠন হল। তার চেয়ারপার্সন করা হল সিপিআই নেত্রী, পাঁশকুড়ার সাত বারের সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায়কে। বলা হল, শীত অধিবেশনে তাঁরা যেন রিপোর্ট পেশ করেন৷
গীতা মুখোপাধ্যায়, প্রমীলা দণ্ডবতে প্রভৃতি নানা দলের নারীদের ইচ্ছা ছিল, জেদ ছিল, জীবদ্দশায় এ বিল পাশ করাবেন। তা হয়নি। কমিটিতে সংসদের উভয় কক্ষের মোট একত্রিশ জন সদস্য ছিলেন। কমিটি বিভিন্ন নারী সংস্থা, মহিলা দল এবং নারী সমাজকর্মীদের থেকে ১০২টি স্মারকলিপি পেয়েছিল। সারা দেশ ঘুরে মেয়েদের কথা শোনা হয়। রঞ্জনাকুমারীর মতো তরুণ স্কলারদের ডাক পড়ে বিল তৈরিতে সাহায্যর জন্য। রেকর্ড সময়ে কাজ শেষ করে ১৯৯৬ সালের ৯ই ডিসেম্বর তারিখে একাদশ লোকসভায় রিপোর্ট পেশ করা হয়। রিপোর্টে সাতটি মুখ্য সুপারিশছিল, যার মধ্যে পাঁচটি বিলে গৃহীত হয়েছিল।
সুপারিশগুলি হলঃ
১) রাজ্যসভা ও লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে (বিধান পরিষদে) সংরক্ষণ।
২) মহিলা সংরক্ষণের ১৫ বছর পর রিভিউ।
৩) সংবিধান সংশোধন হয়ে ওবিসি সংরক্ষণ চালু হওয়ার পর মহিলাদের মধ্যেও ওবিসি সংরক্ষণ চালু হবে।
৪) অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মেয়েদের সংরক্ষণ হবে।
৫) কোন রাজ্যের তিনটের কম সিট অথবা এসসি/এসটিদের জন্য তিনটের কম সিট থাকলে সেখানে আলাদা ব্যবস্থা।
৬) দিল্লির বিধানসভাতেও এই বিল প্রযোজ্য।
৭) সংরক্ষণ এক তৃতীয়াংশের যত কাছাকাছি হওয়া সম্ভব, তত ভাল। শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় মনমোহন সিং-এর আমলে ২০১০ সালে যখন বিল পাশ হয়, শেষ প্রস্তাবটির ভাষায় সামান্য বদল করে 'অন্তত এক তৃতীয়াংশ' করা হয়। কিন্তু রাজ্যসভা ও বিধান পরিষদে সংরক্ষণের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। আর ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে চাপান-উতোর চলতে থাকে বলে, তা লোকসভায় পাশ হয় না। লক্ষ্যণীয়, ২০২৩ সালে উভয় কক্ষে পাশ হওয়া বিলে কিন্তু 'এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি' শব্দগুচ্ছই ফিরে এল।
নারী আসন সংরক্ষণ বিলবাদীদের সঙ্গে বর্ণভিত্তিক দলগুলোর কিন্তু তাত্ত্বিক বিরোধ ছিল না৷ ওবিসি সংরক্ষণবাদীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন গীতারা। কিন্তু ইন্টারসেকশনাল দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে ওবিসি প্রশ্ন দিয়ে নারীপ্রশ্নকে ঘেঁটে দেওয়া হচ্ছিল বারবার। মুলায়ম সিং যাদব বলেন, বড়জোর ১০% সংরক্ষণ মহিলাদের দেওয়া যেতে পারে৷ শরদ যাদব বলেন, 'ছোটচুলের মেয়েরা' (শিক্ষিত শহুরে মেয়েরা) আবার সামগ্রিক ভাবে মেয়েদের প্রতিনিধি নাকি? শরদ যাদব ও লালু যাদব আত্মঘাতেরও হুমকি দিয়েছিলেন ১৯৯৭ সালে। পরবর্তী কালে রাবড়ি দেবীও 'বেটি-বহু' গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণ চেয়েছিলেন, কিন্তু অভিজাত নেত্রীদের দাঁড় করিয়েছিলেন তাঁদের বিপ্রতীপে। মুলায়ম-লালুদের দল ক্রমে তাদের অবস্থান নমনীয় করেছেন এতদিনে। কিন্তু ওবিসি নারীদের সংরক্ষণের প্রশ্নটি যে এখনও অধরা, এ বড় আক্ষেপের।
যাইহোক, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হলেন আই.কে.গুজরাল। ১৯৯৭ সালে সংসদের বর্ষা অধিবেশন জুড়ে গীতা বিলটির জন্য গলা ফাটালেন। কেউ কান দিলেন না। 'অজ্ঞাত কারণে' বিলটি রাখা হয়েছিল তালিকার শেষে৷ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে, ১৪ই অগাস্ট গীতা সভা পরিচালনা করতে উঠে হঠাৎ আবার এই বিলের কথা তোলেন, চব্বিশ নম্বর বিষয় আলোচিত হওয়ার সম্ভাবনা নগণ্য জেনেও। আবারও তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর ঠিক পরে নীতিশ কুমার পরিচালনার দায়িত্বে। তিনি বলেন, তাঁর বলা হলে আবার গীতাকে বলতে দেবেন। কিন্তু তারপরেই বলা হয়, এবার প্রাইভেট মেম্বার বিলের পালা। মহিলা সংরক্ষণ বিল ওঠার সময় নেই৷ গীতা পাঁচজন বাম-কংগ্রেস মহিলা সাংসদের সঙ্গে হাউস থেকে ওয়াক আউট করেন।
১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে বিল প্রসঙ্গে সংসদেই নারীরা বিক্ষোভ দেখালেন। পথ অবরোধ, কুশপুত্তলিকা দাহ হল। সঙ্গে চলল পুলিসি নির্যাতন। অগাস্ট মাসে নারী সংস্থাগুলির যৌথ প্রতিনিধিদল নতুন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর সাথে দেখা করল। তিনি বিলটি পেশ করেন ১৯৯৯। আবারও বিল পাশ হল না।
২০০০ সালে এপ্রিল মাসে বিলের বিকল্প হিসাবে দলীয় তালিকায় মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে যৌথ মেমো জমা পড়ল। রাবড়ির বদলে রসগোল্লায় কেউ রাজি নয়, কখনও আবার সর্বদলীয় বৈঠকে আলোচনার দাবি তুললেন পুরুষরা, সংসদীয় বিতর্কের পরিবর্তে৷ এনডিএ সরকারের পতন যখন হয়, তখন তারও অন্যতম কারণ ছিল মহিলা বিলের প্রশ্নে সদর্থক ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হওয়া৷
আলোচনার জন্য বিল উত্থাপনের আর্জি নিয়ে এরপর যৌথ নারীদল সনিয়া গান্ধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে দরবার করতে গেলেন। তাঁরা রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের সাথে দেখা করেন ও যৌথ প্রতিনিধি দল তাকে বিলের পক্ষে ইতিবাচক হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ করেন। মূল বিলের একটি সংশোধিত সংস্করণ ২০০৮ সালে পেশ করা হয়েছিল একেবারে রাজ্যসভায়, কারণ লোকসভায় পাশ হওয়ার আশা কম। আর বারবার বিল পেশ করার পর সেখানে বিল ল্যাপ্স হয়ে যায় নির্দিষ্ট সময়কালের পর৷ কেঁচেগণ্ডূষ করতে হয়। রাজ্যসভায় পেশ হলে বিল সময়াধীন নয়। ২০১০ সালে রাজ্যসভায় বিল পাশও হল। কিন্তু আটকে গেল লোকসভায়।
চিরকালই এই বিল আটকে গিয়েছে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতো ওবিসি-প্রধান দলগুলি চাপে। তাদের দাবি ছিল, মহিলা সংরক্ষণের মধ্যে অনগ্রসর সমাজের মহিলাদের আলাদা ভাবে সংরক্ষণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক। এইবার, ২০২৩ সালে কিন্তু তাদের নিশ্চুপ দেখা গেল। কংগ্রেস প্রসঙ্গটি তুললেও বিশাল বিতর্ক হল না৷ কার্যত ওবিসি সংরক্ষণ ছাড়াই বিল পাশ হল। আবার রাজ্যসভা বা বিধান পরিষদে সংরক্ষণের আশ্বাসও দেওয়া হল না।
এদিকে সমাজমাধ্যমে যোগী আদিত্যনাথ ২০১০ সালে মহিলা আসন সংরক্ষণ প্রশ্নে তাঁর বিরোধিতার কথা জানয়েছিলেন। মনে রাখতে হবে, এই হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীই হিন্দু কোড বিলে বাধা দিয়েছিল নারীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে৷ হাথরস-কাঠুয়া-উন্নাও কাণ্ডের নায়কও তারা। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা,বিলেই পরোক্ষে লেখা আছে যে, এই দশকের শেষ দিকের আগে এই বিল কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়। আগে হবে জনগণনা। তারপর লোকসভা আসনের পুর্ননিধারণ। তারপর এ বিল কার্যকর হতে পারবে। জনগণনার কাজ ২০২১ সাল থেকে বাকি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যেসব রাজ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা গেছে, সেখানে লোকসভা আসন পুনর্নিধারণ নিয়ে বিতণ্ডাও হবে। এত কিছু পেরিয়ে মহিলা আসন সংরক্ষণ লাগু হলে, তা আসলে কবে হবে? হয়ত ২০২৯ সালের আগে না। কেন যে মহিলা আসন সংরক্ষণের জন্য জনগণনা প্রয়োজন, তা বোঝা মুশকিল। আর যদি প্রয়োগে এত দেরিই হবে, তবে কেন চটজলদি বিল পাশ করানো? আলোচনা, বিতর্ক ছাড়া বিল পাশ করানোর যে ধারা বিজেপি তৈরি করছে, তাতে কি সাংসদরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন না? তা গণতন্ত্রের জন্য অস্বাস্থ্যকর। যে বিল তিন দশক আটকে ছিল, তা ওবিসি প্রশ্নে বা রাজ্যসভা প্রশ্নে এত সহজে ক্লিনচিট পাওয়াটাও স্বাস্থ্যকর না।
তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার বিলটিকে পাশ করালো কেবল নির্বাচন মাথায় রেখে। আর বিরোধী দলগুলো ভয়ে মুখ খুলল না কারণ বিতর্ক হলে তাদের নামেই অপপ্রচার হবে যে, তারা একটি নারী সশক্তিকপ্রণ বিল পাশ করতে দেয়নি।
নারী আসন সংরক্ষণ সংক্রান্ত কোনো বিল যখন পাশ হয় এক পুরুষ রাষ্ট্রপ্রধানের আত্মতোষণ ও তাঁর পারিষদবর্গের ব্যক্তিতোষণের নিনাদের মধ্য দিয়ে, যখন নারীকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে উক্ত পুরুষপ্রবরের আবির্ভাব দিবস উপলক্ষ্যে এই উপঢৌকন ছুড়ে দেওয়া হল, বা উক্ত মহামহিম পুরুষ ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর উপকার করার জন্য, তখন 'আয়রনি' নামক অলংকারের (সেই যেখানে যা আশা করা হয়, ঘটে ঠিক তার বিপরীত) এক নিদারুণ পুস্তকোপযোগী উদাহরণ হয়। সাতাশ বছর পর বহুকাঙ্ক্ষিত মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল লোকসভা ও বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর ভারতীয় নারীর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ার কথা ছিল৷ স্মরণ করার কথা ছিল এই দীর্ঘ রাস্তার পথপ্রদর্শক পূর্বজাদের। কিন্তু আপাতত এসবের বদলে ভারতীয় নারী বোধহয় ভেজা বেড়াল বোধ করছে, যার ভাগ্যে ঈশ্বরের প্রতিনিধির দয়ায় শিকে ছিঁড়েছে। অবশ্য সংরক্ষণের মতো কেজো শব্দে রাষ্ট্রপ্রধানের আপত্তি৷ তিনি 'বন্দন' বা 'বন্দনা'-র মতো সুললিত শব্দের মায়া জড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর বিল। তাই বিলের নাম হয়েছে নারীশক্তি বন্দন৷ মানে, আবারও, নারীর কাছে অপাংক্তেয় বা হীন হওয়া ছাড়া আর একটিই পথ খোলা। তা হল পূজনীয় হওয়া। এই দেবী-শয়তানি দ্বিত্বের যেন শেষ নেই। অথচ সাতাশ বছর নয়, বস্তুত প্রায় অর্ধশতক ধরে যারা এই বিলের জন্য লড়লেন, তাঁরা কিন্তু এই বাইনারি ভাঙতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন, আর কিছু না, সমানতা।
সংসদে লবিইং, ওয়াক আউট, আবেদন-নিবেদন থেকে শুরু করে দেশ ঘুরে মেয়েদের মত সংগ্রহ, স্মারকলিপি গ্রহণ, রাস্তা অবরোধ, কুশপুত্তলিকা দাহের মতো নানা বিচিত্র ঘটনায় ভরা মহিলা বিল আন্দোলনের ত্রিশ বছরের ইতিহাস। সে এক গর্বিত নারী সংগ্রামের ইতিহাস। শেষে তাকেও ভোটেরঙ্গের উপকরণে পরিণত হতে হল।