পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বাংলাতে কেন এমন ফল বামেদের ৫

  • 12 June, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 585 view(s)
  • লিখেছেন : গৌতম রায়
বাংলায় বামেদের কেন এমন হতাশাজনক ফল হলো, এর থেকে বেরোনোর রাস্তাই বা কী? এই নিয়ে একটি ধারাবাহিক আলোচনা করলেন গৌতম রায়। পঞ্চম পর্ব।

কেবলমাত্র নির্বাচনী সংগ্রামের প্রেক্ষিতে নয়। লড়াইয়ের ময়দানেও , বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথা মহম্মদ সেলিম সবসময় বলেন। এই বৃহত্তর প্রশ্নে বামফ্রন্টের বাইরের কোনো রাজনৈতিক দল ঘিরে, অতীতের সিপিআই(এম) নেতাদের মত ,কখনো কোনো রকম ছুৎমার্গে বিশ্বাস করেন না সেলিম। সমস্ত রকমের রাজনৈতিক সংস্কারের উর্ধ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সেলিম, ভোট রাজনীতির প্রেক্ষিতে, সাম্প্রতিক অতীতে , মানুষের দাবি ঘিরে, বিশেষ করে, বিজেপির সাম্প্রদায়িক নীতি এবং বিভিন্ন প্রকারের জন বিরোধী নীতির প্রতিবাদে, মিটিং মিছিলের প্রশ্নে, ফ্রন্টের বাইরের বামপন্থী শক্তিগুলিকে একত্রিত করবার একটা আন্তরিক চেষ্টা সেলিম করেছিলেন ।

সিপিআই(এম এল)  এর মত দল, তাঁরাও  মানুষের স্বার্থবাহী মিছিলে সিপিআই(এম)  নেতাদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে হেঁটে ছিলেন। কিন্তু সেটাকে নির্বাচনী সংগ্রামের রাজনীতিতে একটা ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস হিসেবে প্রতিফলিত করতে পারা যায়নি। বিষয়টা এমন নয় যে, সেটা প্রতিফলিত করতে পারা গেলেই ভোটের ফলাফল একেবারে উল্টে যেত। কারণ সি পি আই (এম এল ) দলের বিহারের রাজনীতির ক্ষেত্রে যে অবস্থান, সেই অবস্থান তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি প্রেক্ষিতে নেন না। সিপিআই(এমএল) দলের ফল  বিহারে হয়েছে ইন্ডিয়া জোটের যৌথ লড়াইয়ের ভিতর দিয়ে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষিতে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়বার ক্ষেত্রে,  সিপিআই (এম এল) দলের অবস্থান ভিন্ন। তাঁদের ধারণা, বিজেপিকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে ‘লেসার ইভিল’ তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর ভরসা রাখাটা অনেক যুক্তিযুক্ত।

এই অবস্থান তাঁরা ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিয়েছিলেন। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নিয়েছিলেন। এই বিষয়টিকে যদি আগামী দিনের রাজনৈতিক সংগ্রামের ক্ষেত্রে একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, স্বচ্ছ ভাবনা নিয়ে, মুক্ত মন নিয়ে, সিপিআই (এম এল) দল ভাবেন, তাহলে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা এবং প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিষদটা আরো অনেক বিস্তৃত হয়।

বামফ্রন্টের মধ্যে সিপিআই(এম) ব্যতীত অন্য শরীক দলগুলি এখন একেবারেই ক্ষয়িষ্ণু। সিপিআই দলের জাতীয় স্তরে সামান্য কিছু প্রভাব থাকলেও,পশ্চিমবঙ্গে, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, গীতা মুখোপাধ্যায়দের প্রজন্মের পরে, এই দলটি কার্যত অস্তিত্ব বিহীন।

বিগত লোকসভা নির্বাচনে, বামফ্রন্টের প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে, বসিরহাট কেন্দ্রটি সিপিআই(এম) কে ছেড়ে দিয়ে, বৃহত্তর বাম ঐক্যের প্রশ্নে, সেলিমের যে জর্জি দিমিট্রভের ‘যুক্ত ফ্রন্টে'র রাজনীতির কৌশল, তাকে শক্তিশালী করবার ক্ষেত্রে, সিপিআই অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

এই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি সিপিআই দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টিতে রেণু চক্রবর্তী মত মানুষ এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন। পরবর্তীকালে ভাতিন্দা কংগ্রেস উত্তর সিপিআই যখন তাঁদের শ্রেণী সহযোগিতার লাইন পরিত্যাগ করে, শ্রেণী সংগ্রামের লাইনে ফিরে আসেন, তারপর সিপিআই দলটি বামফ্রন্ট ভুক্ত হওয়ার পরবর্তী সময় থেকে, এই কেন্দ্র থেকে সিপিআই  প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত ।

ওই দলের কিংবদন্তি সাংসদ ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত একাধিক বার ই বসিরহাট কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ।পরবর্তীকালে অজয় চক্রবর্তীর মতো এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সিপিআই সংসদ হিসেবে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

             দীর্ঘদিনের জেতা  বসিরহাট কেন্দ্রটি রাজনৈতিক প্রয়োজনে সিপিআই(এম)  দলকে ছেড়ে দিয়ে যে রাজনৈতিক ঔদার্য এবং যুক্তফ্রন্টের রাজনীতির প্রতি আস্থার দিক থেকে সিপিআই নেতৃত্ব প্রকাশ করেছে এটি কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

         অপ্রিয় সত্য হলেও বলতে হয়, আরএসপি বা ফরওয়ার্ড ব্লকের মত বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি, বিভিন্ন সময়ে, রাজনৈতিকভাবে তাঁদের ঘোষিত শত্রু শিবিরের সঙ্গে যেভাবে সংযোগ রেখে চলেছেন সেটি কিন্তু সামান্য হলেও এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে।

0 Comments

Post Comment