পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বিশ্বকাপ- ২০২২, কারা যেতে পারে শেষ আটে?

  • 22 November, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 968 view(s)
  • লিখেছেন : সৌভিক ঘোষাল
বিশ্বকাপের মুল পর্বের খেলা শুরু হয়ে গেছে। সারা পৃথিবীর মানুষ তাকিয়ে আছে কাতারের দিকে। কারা যাবে শেষ আটে, কারা যাবে শেষ চারে, সেই নিয়ে চলছে আলোচনা। তারই প্রাথমিক কিছু আলোচনা থাকলো সৌভিক ঘোষালের কলমে।

গ্রুপ লিগ থেকে কারা কারা পরবর্তী রাউন্ডে যাবার জন্য ফেবারিট ?
এর জন্য প্রথমে দেখা নেওয়া দরকার গ্রুপ ভিত্তিক বর্তমান ফিফা বিশ্ব রাঙ্কিং।

গ্রুপ এ
8 Netherlands
18 Senegal
44 Ecuador
50 Qatar

দেখাই যাচ্ছে এই গ্রুপের দুটি দল রাঙ্কিং এ বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে। ফলে বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে নেদারল্যান্ডস আর সেনেগাল যে এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাবার জন্য ফেবারিট, তা বলাই যায়।
নেদারল্যান্ডস ই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে মনে হয়। ডাচরা কখনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় নি। এবার তারা হয়ত ফেবারিট নয়, কিন্তু গুলিট, বাস্তেন, রাইকার্ডদের কথা মনে রেখে উজ্জ্বল কমলা রঙের জার্সির দিকে আমাদের অনেকেরই সমর্থন থাকবে। লিভারপুলের সমর্থকরা বিশেষ আগ্রহী থাকবেন ভ্যান দিয়াকের খেলা দেখার জন্য। লিভারপুলের আর এক মহাতারকা মারিয়া সালাহ এবার বিশ্বকাপে নেই। তাঁর দেশ মিশর এবার কোয়ালিফাই করতে পারে নি যে।
কাতার এশিয় চ্যম্পিয়ন হয়েছে বটে কিন্তু তারা বেশ দুর্বল দল। তাদের এই বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়া সহ নানা কিছু নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন আছে। কাতার খারাপ খেলার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব নিয়ে বিদ্রুপ আরো বাড়বে। মনে হয় না তারা একটি ম্যাচও জিততে পারবে। নিদেনপক্ষে ড্র করে একটি পয়েন্টও ঘরে তুলতে পারলেও তারা নিজেদের ভাগ্যবান ভাববে।
একেবারে শেষ বেলায় মহিলাদের জন্য ড্রেসকোড ও খাদ্য পানীয় বিধির কথা জানিয়েছে আয়োজক ইসলামিক দেশটি এবং তাই নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। ফিফা অবশ্য এইসব বিতর্ককে ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত। কাতারীয় ডলার কাকে কতটা বশ করেছে এ যদি কোনওদিন জানা যায়, তাহলে বিশ্ব ফুটবল আরো অনেক কলঙ্কের মুখোমুখি পড়বে বলে অনেকেই মনে করেন। ফিফার একদা প্রেসিডেন্ট ও অনেক বিখ্যাত প্রাক্তন প্লেয়ার তথা কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে পদ হারিয়েছেন বা জেল খাটছেন। কিন্তু মনে হয় অন্ধকারের সবটা এখনো আলোর মুখ দেখে নি।

গ্রুপ বি
5 England
16 USA
19 Wales
20 Iran

গ্রুপ এ নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা যতটা সহজ, ততটাই কঠিন গ্রুপ বি নিয়ে। ইংলণ্ড ছাড়া বাকিদের রাঙ্কিং একেবারে গায়ে গায়ে। আর দলগুলির শক্তি ভারসাম্যও কাছাকাছি। তাই ইংলণ্ড সেকেন্ড রাউন্ডে যাবে ধরে নিয়েও তাদের সঙ্গী কে হবে বলা মুশকিল।
ওয়েলস এর গ্যারেথ বেল এর খেলা বহু বছর ধরে লা লিগা বা ই পি এল এ আমরা দেখেছি। এখন বেল অবসরের মুখে। পড়ন্ত বেলা। তবু তাঁর দিকে চোখ থাকবে। গ্যারেথ বেল এর জন্যই ইউ এস এ বা ইরানের চেয়ে রাঙ্কিং সামান্য পিছিয়ে থাকলেও তাদের দুই নম্বরে রাখা গেল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে করা বলে দাবিসহ একটি প্রেডিকশন চোখে পড়ল। সেখানে এই গ্রুপ থেকে ইংলণ্ডের পাশাপাশি ইরান দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের রাউন্ডে যাবে বলে মনে করা হয়েছে। আমার মনে হয় না ইরান সেটা পারবে। দেখা যাক। এশীয় একটি দলের দিকে বিশেষ সমর্থন এশিয়দের থাকারই কথা।
ইংলণ্ড বিশেষভাবে তাকিয়ে থাকবে তাঁদের নেতা হ্যারি কেন এর দিকে। ই পি এল এ টোট্যেনহ্যামকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে অসাধারণ সব গোল করে। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলগেটারদের একজন নিঃসন্দেহে হ্যারি কেন। ম্যান সিটির অন্যতম স্তম্ভ ফোডেনও ইংলণ্ডের বড় ভরসা। ইংলণ্ড টিমের তারকা অনেকেই ম্যান সিটিতে খেলেন। এটা তাদের বোঝাপড়ায় বাড়তি সুবিধে দেবে।

গ্রুপ সি
3 Argentina
13 Mexico
26 Poland
51 Saudi Arabia

গ্রুপ সি তে আর্জেন্টিনা আর মেক্সিকো বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তারাই পরের রাউন্ডে যাবার জন্য দুই ফেবারিট টিম। মেসি এবার আর্জেন্টিনাকে তাঁর সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপে ট্রফি জেতাতে পারেন কীনা, সেটা দেখার।
তবে এই গ্রুপের পোলান্ডের দিকে চোখ রাখতেই হবে। ভুলে গেলে চলবে না বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা পেলার ও এক নম্বর গোলগেটার লিয়নডস্কি এই দলেই খেলেন। ব্রায়ান মিউনিখ ও জার্মান লিগ ছেড়ে এইবার তিনি এসেছেন স্পেনের লা লিগাতে। খেলছেন বার্সিলোনার হয়ে। বার্সিলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগে তেমন কিছু করতে পারে নি। তবু লিয়নডস্কি একাই অনেক অঘটন ঘটাতে পারেন বিশ্বকাপে।

গ্রুপ ডি
4 France
10 Denmark
30 Tunisia
38 Australia

গ্রুপ ডি থেকে ফ্রান্স ও ডেনমার্ক যে পরের রাউন্ডে যাবে এই নিয়ে সন্দেহ কম। ফ্রান্সকে এবার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু চোট আঘাতের পর পরিস্থিতি বদলেছে। ফ্রান্সের আক্রমণের মাঝখানে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্লেয়ার করিম বেঞ্জিমার থাকার কথা ছিল। কিন্তু করিম বেঞ্জিমার চোট ও শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের স্কোয়াডের বাইরে চলে যাওয়া ফ্রান্সকে অনেকটাই দুর্বল করে দিল। বেঞ্জিমার পরবর্তী অলিভিয়ের জিরাঁদ বেঞ্জিমার অভাব কতটা পূরণ করতে পারবেন সেটা দেখার। বেঞ্জিমার আগেই চোট পেয়ে বিশ্বকাপ দলের বাইরে চলে যান তাঁদের দুই সেরা মিডফিল্ডার ও গেমমেকার পোগবা ও কঁতে। এইবার বেঞ্জিমাও বিশ্বকাপের বাইরে চলে যাওয়ার গতবারের চ্যাম্পিয়নরা বিরাটভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হল।
এমবাঁপে এই বিশ্বকাপের প্রধান তারকা হতে পারেন।  তার স্পিড আর গোলক্ষুধার কথা পি এস জির খেলাগুলিতে আমরা দেখেছি। সেখানে মেসি নেইমারের মত মহাতারকাদের পাশেও তিনি অতি উজ্জ্বল। বিশ্বকাপে গতবারই সাড়া ফেলেছিলেন তখনো প্রায় কিশোর এমবাঁপে। এবার তিনি আসছেন আরো অনেক পরিণত হয়ে।
গত ইউরো কাপের প্রথম ম্যাচে ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান এরিকশনের হার্ট অ্যাটাক সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। এরিকশন আবার ফিরেছেন মাঠে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে পুরো সময় খেলছেন পূর্ণ শক্তিতে। শেষ ম্যাচেই গোল করেছেন ম্যান ইউর হয়ে। শুধু ফুটবল প্রেমীদের কাছেই নয়, হার্ট অ্যাটাক সারভাইভারদের কাছেও এরিকশন এক বিরাট প্রেরণা।

গ্রুপ ই
7 Spain
11 Germany
24 Japan
31 Costa Rica

এই গ্রুপকে অনেকেই গ্রুপ অব ডেথ বলেছেন। রাঙ্কিং এর দিকে তাকালে স্পেন আর জার্মানিই অন্যতম ফেবারিট বলে মনে হয়। কিন্তু জাপান আর কোস্টারিকা - এই গ্রুপের বাকি দুই দলই অনেক চমক দেবার ক্ষমতা রাখে। গতবার জার্মানী অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে বিদায় নিয়েছিল। জার্মানির পাশাপাশি বাংলার অনেক জার্মান সমর্থকেরও বুক ভেঙেছিল। আগে এখানে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার যে একচেটিয়া সমর্থন ছিল, তাতে খানিকটা ভাগ বসিয়েছে জার্মানী আর ফ্রান্স, বিশেষত জার্মানী। ফলে তাদের নিয়ে এখানে সবার বাড়তি আগ্রহ।
জার্মানীর গোলকিপার নোয়া অসুস্থতা আর চোটের মোকাবিলা করে কেমন খেলেন দেখার। ব্রায়ান মিউনিখে জার্মান দলের দুই স্তম্ভ মুলার আর কিমিচ সতীর্থ। তাদের বোঝাপড়া জার্মানীকে বাড়তি সুবিধে দেবে।
স্পেনের তিতিকাকা নিয়ে বাংলার ময়দানেও একসময় অনেক চর্চা হয়েছে। জাভি, ইনিয়েস্তারা ইউরো, বিশ্বকাপ সবই দিয়েছিলেন সেই সময় স্পেনকে। বিশ্বের অন্যতম সেরা লিগ ছিল স্পেনের লা লিগা। ইদানীং ইপিএল আবার লা লিগার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মেসি রোনাল্ডোরা লা লিগার বাইরে চলে আসায় আর বার্সিলোনার সঙ্কট বাড়ায়। তবু স্পেন সব সময়েই অন্যতম ফেবারিট। গ্রুপ লিগের সবচেয়ে বড় ম্যাচ হতে যাচ্ছে এই গ্রুপেই। স্পেন বনাম জার্মানীর খেলা ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে বারোটায়, মানে ২৭ নভেম্বর রোববারের রাত পোহালেই।

গ্রুপ এফ
2 Belgium
12 Croatia
22 Morocco
41 Canada

বেলজিয়াম বরাবরই বিশ্বের সেরা দলগুলির একটা। রাঙ্কিং এক থেকে পাঁচের মধ্যেই থাকে। কিন্তু ফেবারিট হিসেবে তাদের ধরা হয় না সেভাবে কখনো। এটা ফুটবল বিশ্বের এক মজার ব্যাপার। গতবার ক্রোয়েশিয়া চমক দিয়েছিল, ফাইনালে পৌঁছবে তারা কে ভেবেছিল ? বেলজিয়ামের লুকাকু, কেভিন আর গত বিশ্বকাপের সেরা প্লেয়ার ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিজের দিকে সবার নজর থাকবে বলাই বাহুল্য।

গ্রুপ জি
1 Brazil
15 Switzerland
21 Serbia
43 Cameroon

নেইমারের ব্রাজিল ছাড়া এই গ্রুপ থেকে সুইজারল্যান্ডই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে বলে মনে হয়।
প্রশ্ন হল ব্রাজিল কি এইবার আবার কাপ জিতবে ? হলুদ সবুজ জার্সি যতক্ষণ টুর্নামেন্টে আছে, তারাই যে অন্যতম ফেবারিট বলাই বাহুল্য। বাংলার লক্ষ লক্ষ ব্রাজিল সমর্থক দুপুর থেকে রাত - টিভির পাশাপাশি ল্যাপটপ বা মোবাইলের পর্দাতেও চোখ রাখবেন এইবার। দেখবেন অফিসে বসেই বা ফেরার পথে লাইভ স্ট্রিমিং। নেইমার ছাড়াও অসংখ্য তারকা ব্রাজিলের। সবাই তারকা টিমটার। দেখার বিশ্বকাপের মঞ্চে কে কেমন পারফর্ম করছেন।

গ্রুপ এইচ
9 Portugal
14 Uruguay
28 South Korea
61 Ghana

পর্তুগাল আর উরুগুয়ে পরের রাউন্ডে যাবে বলেই মনে হয়। যদিও ২০০২ এ কোরিয়া যে চমক দিয়েছিল, চলে গেছিল সেমিফাইনাল অবধি আর সেখানেও দীর্ঘক্ষণ এগিয়েছিল, এই বাইশে এসেও সে সব অনেকের মনে থাকবে। তাদের শন ই পি এল এর সুবাদে আমাদের অতি পরিচিত। টটেনহ্যামের অন্যতম সেরা প্লেয়ার তিনি, বিশ্বমানের ফরওয়ার্ড। দেখা যাক সতীর্থদের নিয়ে তিনি কিছু অঘটন ঘটাতে পারেন কিনা।
বার্সিলোনায় দীর্ঘদিন মেসির পাশে খেলা সুয়ারেজ বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। এখন আটেলেটিকো মাদ্রিদকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি ক্লাব ফুটবলে। উরুগুয়ে তার দিকে অনেকটাই তাকিয়ে থাকবে।
মেসির মতোই সম্ভবত এতাই শেষ বিশ্বকাপ পর্তুগীজ মহাতারকা রোনাল্ডোর। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের প্রথম দশে অনেকেই তাঁকে রাখেন। কিন্তু বলা হয় ক্লাবের হয়ে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া রোনাল্ডো দেশের হয়ে খানিকটা গুটিয়ে থাকেন। গত কয়েক বছর তাঁর ক্লাব ফুটবলে দিনকাল ভালো কাটছে না। রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর গেলেন ইতালিয় লিগ খেলতে জুভেন্টাসে। সেখানে ভালো চলল না বলে এলেন পুরনো ক্লাব ম্যানচেস্তার ইউনাইটেডে। সেখানে কোচ মাঝেমধ্যেই তাঁকে প্রথম এগারোয় রাখছেন না। তাই নিয়ে ঝঞ্ঝাটও চলছে। আবার তিনি ক্লাব ছাড়তে চান বলে শোনা যাচ্ছে। এইসব বিতর্ককে সরিয়ে আবার মহাতারকা হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠার জন্য বিশ্বকাপের মঞ্চকে তিনি এবার নিশ্চয় বেছে নিতে চাইবেন। একা তিনি যে শুধু ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন তাই নয়, একা টুর্নামেন্টের অনেক হিসাব রদবদলও করার ক্ষমতা রাখেন তিনি। এই পড়ন্ত বেলাতেও। বাকিটা সময় বলবে। চোখ থাকবে সবার সি আর সেভেনের দিকে।

0 Comments

Post Comment