পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

লোকাল ট্রেন চলবে কবে: ২ বৈধ যাত্রীর মাপকাঠি

  • 13 October, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1884 view(s)
  • লিখেছেন : পার্থ প্রতিম বিশ্বাস
লোকাল ট্রেন বন্ধ প্রায় ছ’মাস। নগর কেন্দ্রিক যাবতীয় রুজির উপায় বন্ধ। মফসসলের লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম বিপদের মধ্যে। কিন্তু অতিমারীর এই অবরুদ্ধ সময়ে লোকাল ট্রেন কবে এবং কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো যেতে পারে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না রেল দফতর বা রাজ্য সরকার। এখানে তারই কিছু সুপারিশ। দ্বিতীয় পর্ব।

লোকাল ট্রেন চালুর প্রাথমিক পর্যায়ে যদি নিত্যযাত্রীর সংখ্যা একধাপে কমপক্ষে দশ গুন কমানোর পথ হাতড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে অঙ্কের নিয়মেই স্বাভাবিক কালের নিত্যযাত্রীর কেবল ১০% এই ট্রেন যাত্রার সুযোগ পাবেন। বাকি ৯০% সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন তা বলাই বাহুল্য। এতদসত্তেও শুরুর পর্বে এমন যাত্রী নিয়ন্ত্রণ ভাবনা ছাড়া লোকাল ট্রেন চালু করা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এমনকি যে সমস্ত স্টেশনে যাত্রীদের প্রবেশ প্রস্থানের সুনির্দিষ্ট পরিকাঠামো নেই, তেমন স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করানোর ভাবনাও এই মুহূর্তে অনুচিত। যাত্রী নিয়ন্ত্রণের এমন ভাবনায় কেবলমাত্র স্মার্ট ফোন নয় বরং সাধারণ মানের ফিচার ফোন (যেটা অধিকাংশ যাত্রীদেরই থাকে) ব্যবহার করে আগাম টিকিট ঘণ্টা ভিত্তিতে চালু করা যেতে পারে। কিন্তু প্রান্তিক আয়ের নিত্যযাত্রী অথবা যারা প্রযুক্তি বান্ধব এখনও হয়ে উঠতে পারেননি, তাদের কথা ভেবে নির্ধারিত কাউন্টার থেকে টিকিট কাটার সুযোগ রাখা উচিত। এই মুহূর্তে ট্রেনের মাসিক বা ত্রৈমাসিক টিকিটের ব্যাবস্থা বন্ধ রাখাই শ্রেয়, ট্রেন এবং প্ল্যাটফর্মে যাত্রী নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে।

ট্রেন চালানোর অগ্রাধিকার

পরীক্ষামূলক ভাবে লোকাল ট্রেন চালু করার প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রেনের সংখ্যা সকাল সন্ধ্যের অফিস টাইমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ দিনের ঐ ব্যস্ত সময়ে শহরতলি থেকে ছেড়ে আসা সমস্ত ট্রেনের গন্তব্য শিয়ালদা কিংবা হাওড়ার মতো প্রান্তিক স্টেশন, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি ঘণ্টায় লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করে। ফলে প্রান্তিক এই স্টেশনদুটির প্ল্যাটফর্মে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রেনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি। শহরের মুল স্টেশন শিয়ালদহ কিংবা হাওড়া থেকে শহরতলির স্টেশনের দূরত্ব যত বাড়তে থাকে, সাধারণভাবে তত কমতে থাকে স্টেশনের যাত্রীঘনত্ব। ফলে শহরের কাছোকাছি স্টেশনগুলোর যাত্রী সংখ্যার তুলনায় দুরের স্টেশনগুলোর যাত্রী বেশি। পাশাপাশি স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা নির্ভর করে সেই স্টেশনের সংলগ্ন জনপদের জনঘনত্বের ওপর। এছাড়াও জংশন স্টেশনের ভিন্নমুখী যাত্রীদের আনাগোনার প্রয়োজনেও বাড়তে পারে স্টেশনের নিত্যযাত্রীর সংখ্যা। কিন্তু শহরের নিকটবর্তী স্টেশনগুলোর নিত্যযাত্রীদের গনপরিবহনের বিকল্প হিসেবে ইতিমধ্যে চালু হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বাস পরিসেবা, যার মাধ্যমে কিছুটা হলেও শহরের সীমানায় পা রাখতে পারছে মানুষ। কিন্তু দূরত্ব বা ভাড়ার নিরিখে শহর থেকে দূরবর্তী স্টেশনের যাত্রীদের সড়ক পথে শহরের সাথে যোগাযোগ যেখানে দুঃসাধ্য এবং ব্যয় সাপেক্ষ তেমন জনপদগুলোকে লোকাল ট্রেন দিয়ে শহরের সাথে যুক্ত করাটাই প্রথম অগ্রাধিকার। সেক্ষেত্রে সেই দূরবর্তী জনপদগুলোকে সীমিত সংখ্যক স্টপেজ দিয়েই মুল শহরের সাথে যুক্ত করার কথা ভাবা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রানাঘাট, কল্যাণী, খড়্গপুর, পাশকুড়া, বর্ধমান কিংবা ব্যান্ডেলের মতো স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রনের পরিকাঠামো রয়েছে সেগুলিকে কেন্দ্র করে নন-স্টপ বা সীমিত স্টপেজের লোকাল ট্রেন চালু করা যেতে পারে। এই পর্যায়ে অফিসের ব্যস্ত সময়ে ট্রেনের সংখ্যা কমানোর কমিয়ে কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ শিয়ালদা বা হাওড়া স্টেশনের আগেই শেষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি কিংবা পূর্ব রেলের দমদম, কলকাতা কিংবা শিয়ালদহ দক্ষিন শাখার বালিগঞ্জের মতো স্টেশনগুলিকে ভাবা যেতে পারে। নিত্যযাত্রীদের সিংহভাগের যাত্রা শহরমুখী হলেও সেটা সবক্ষেত্রে তেমন গন্তব্য কেবল শিয়ালদহ বা হাওড়া নয়। এটা মাথায় রেখে জেলার বিভিন্ন স্টেশনের মধ্যে লোকাল ট্রেন চালানো যেতে পারে, যেগুলি প্রয়োজনে সব স্টেশনেই দাঁড়াতে পারে। উদাহরণ হিসেবে শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় সোনারপুর স্টেশনকে কেন্দ্র করে নামখানা, ক্যানিং, লক্ষ্মীকান্তপুরের মতো গন্ত্যব্যে, কিংবা দক্ষিণ পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি, উলুবেড়িয়া স্টেশনকে কেন্দ্র করে মুল শহরের বিপরীত দিকে এমন লোকাল ট্রেন চালানো যেতে পারে। লোকাল ট্রেন যেহেতু জরুরি এক সরকারী গনপরিবহন, তাই আশু লাভের হিসাব না কষে এহেন করোনা-সংকটে এমন একটা পরীক্ষামূলক ট্রেনের সূচি ভাবা যেতেই পারে।

এই বিষয়ে এই লেখকের অন্য লেখাটি পড়ুন।

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/when-will-the-local-trains-resume-to-run-again-part-1

রাজনৈতিক-প্রশাসনিক মতৈক্য

কোন সন্দেহ নেই যে পরিসেবাধর্মী কাজের জন্য শহরতলির মানুষের স্বাভাবিক গন্তব্য বড় শহর, সেহেতু যাত্রী চাহিদার সিংহভাগই হবে কলকাতা বা হাওড়ামুখী। ফলে সাধ থাকলেও সাধ্য না থাকার কারণে সীমিত সংখ্যক ট্রেন চালু হলেও সামগ্রিক যাত্রী চাহিদা পুরনে অপারগ হবে রেলের লোকাল ট্রেনের এই পরিসেবা। এখানেই অবশ্য রাজ্য সরকার এবং রেল কতৃপক্ষকে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিত্যযাত্রী নিয়ন্ত্রনের উপায় নিয়ে। মেট্রো রেলের লাইন বা স্টেশন প্ল্যাটফর্ম যেমনটা থাকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে তার কোনটাই লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। ফলে যাত্রী সংখ্যা নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনে ননস্টপ বা সীমিত স্টপেজের ট্রেন চালু হলে ব্রাত্য স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা তাঁদের ট্রেনে ওঠার অধিকারের দাবীতে যে রেল অবরোধে সামিল হবে না, একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। কারণ নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের মানুষ রাজ্যে কিছু কম নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন মতৈক্যের ভিত্তিতে বৈধ যাত্রী ও স্টেশন নির্বাচনের যথাযোগ্য মাপকাঠি। অন্যথায় এই সংক্রমণের আবহে সব স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করাতে গেলে প্রয়োজন প্রতিটি স্টেশনেই প্রযুক্তি নির্ভর এবং উপযুক্ত প্রশাসনিক বন্দোবস্ত। এক্ষেত্রে আমজনতাকেও বুঝতে হবে লোকাল ট্রেন চালুর এই প্রাথমিক পর্যায়টা হচ্ছে খানিকটা ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’-র মতো। পরিশেষে অবশ্যই এমন লোকাল ট্রেন চালু করার ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে জেলা অথবা অঞ্চলভিত্তিক সংক্রমণের ‘সেরো সার্ভে’ রিপোর্ট, যার ওপর ভিত্তি করেই আগামী দিনে নিতে হতে পারে লোকাল ট্রেন চালু, বন্ধ কিংবা প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের বিশদ খুঁটিনাটি। আর এভাবেই লোকাল ট্রেন যাত্রায় ধীরধীরে নিত্যযাত্রীদের অভ্যস্ত হতে হবে আজকের এই ‘নিউ নর্মালে’।

0 Comments

Post Comment