পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

দ্য লাস্ট সাপার ও আমার লক্ষ্মী

  • 19 October, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 304 view(s)
  • লিখেছেন : ফাল্গুনী দে
আজ সহমনের গল্প বিভাগে থাকলো ফাল্গুনী দে'র লেখা দুটো অনুগল্প। দ্য লাস্ট সাপার ও আমার লক্ষ্মী

দ্য লাস্ট সাপার  

কিভ শহরের রাস্তায় বন্দুকবাজ রুশ সেনা চরে বেড়াচ্ছে হায়নার মতো। গোলা বারুদের বিকট আওয়াজে এবং বিষাক্ত ধোঁয়ায় শহরে যেন সূর্যেরও প্রবেশাধিকার নিষেধ। সাধারণ মানুষ প্রায় সকলেই আত্মরক্ষার তাগিদে মাটির নিচে বাঙ্কারে লুকিয়ে। অসহায় কেউ কেউ এখনও মাটির উপরে নিরুপায় জীবনে শেষ নিশ্বাসের প্রহর গুনছে। রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে জেলেনস্কির সৈন্যরাও জবাব দিতে প্রস্তুত।

কিছু রুটির সন্ধানে ইভান বাড়ি থেকে বেরিয়েছে বেশ কয়েক ঘন্টা হয়ে গেলো। বাড়িতে বয়স্ক বাবা মা একা। রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। তিন রাস্তার মোড়ে গির্জার পেছনে অন্ধকার এক ছায়ামূর্তিকে লক্ষ্য করে রুশ সৈন্যটি লেজার লাইট তাক করে আচমকা গুলি ছোঁড়ে। ইভান গোঁ-গোঁ আওয়াজ করে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। গুলি যুদ্ধে জেলেনস্কির সৈন্যদের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে রুশ সৈন্যটি ঢুকে পড়ে অদূরে এক গেরস্থ বাড়িতে। 

খাবার টেবিল থেকে বৃদ্ধ গৃহকর্তা আনন্দিত অথচ মৃদুকন্ঠে ডেকে ওঠেন -- ইভান ফিরলি ? 

কিছুক্ষণের মধ্যে সব আশঙ্কা সত্যি করে বিভীষিকার মতো রুশ সৈন্যটি ভারী বুটের শব্দে বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে এলো। কর্তা গিন্নি দুজনে ভূত দেখার মতো ভয়ে চেয়ারে বসেই কম্পমান। আগন্তুক ক্ষুধার্ত লোকটি একটি চেয়ার টেনে নিয়ে গোগ্রাসে খাবারগুলি মুখে গুঁজতে উদ্যত। হটাৎ টেবিলের ওই প্রান্তে একটি খালি ডিশ লক্ষ্য করে প্রশ্ন করে আপনারা কি কারোর আসার অপেক্ষা করছেন ?

 

আমার লক্ষ্মী 

 

বন্ধন এখনও পুরোপুরি ডাক্তার হয়ে ওঠেনি। হাউস স্টাফ শেষ করে মেডিকেল ব্যাংকে অথবা রাতে ওষুধের দোকানে প্রাক্টিস করছে। ওভারটাইম করে কিছু বাড়তি টাকা যদি সংসারের হাতে তুলে দেওয়া যায়। ডাক্তার হিসেবে অনেক সময় পতিতাপল্লীতে বাচ্চা ডেলিভারি করাবার ডাক আসে। যেতেও হয় -- কখনো গোপনে কখনো রাতের অন্ধকারে। ডাক্তারদের প্রতি মানুষগুলোর অশেষ কৃতজ্ঞতা স্বচক্ষে না দেখলে বুঝিয়ে বলা মুশকিল।

একদিন প্রায় মাঝরাতে চোখ মুখ ঢেকে একটি লোক এসে বললে -- "কলে যেতে হবে।" অন্ধকার গলি পথে লোকটিকে অনুসরণ করে পেছনের রাস্তা দিয়ে বন্ধন একটি কাঠের দেওয়ালের সামনে এসে দাঁড়ায়। বুঝতে পারে ওপারে কয়েকজন মহিলা আদুল গায়ে কলরব করে স্নান করছে। লোকটি হাঁক পাড়ে -- "ডাক্তারবাবু এয়েছেন।"  হাঁক শুনেই হাতের সামনে কাপড় জামা যা ছিল টেনে নিয়ে বুক ঢাকবার হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। পেশা আর নারীত্বের মাঝে এই লজ্জা বস্ত্রের অনুভবটুকু বন্ধন উপলব্ধি করতে পারে।

মড়মড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখে রোগিণী তাঁর পূর্ব পরিচিত। কিছু মাস আগে সার্জিক্যাল রিপেয়ার করেছে। এক ট্রাক ড্রাইভার কান কামড়ে দিয়েছিল। অবশ্য টাকাও দিয়েছিল। ছ্যাঁকাও। ডাক্তারের "আজ আবার কি বিগড়ালো" প্রশ্নের জবাবে রোগিনী বললে -- "গ্যাসের ব্যথায় বুক পেট জ্বলছে। রাতে সর্ষে বাটা দিয়ে ইলিশ ভাপা খেয়েছি। সেই থেকেই বিপত্তি।" রোগিনীর মুখের কথা প্রায়ই কেড়ে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে লোকটি বললে -- "আমার লক্ষ্মীর কোন দোষ নেই ডাক্তারবাবু। ইলিশ ভাপা খাবার শখ আমারই।" বন্ধন ভারী গলায় "ভেতরে আসুন" বলতেই  মাথা নামিয়ে লোকটি অন্ধকার থেকে আলোয় এসে দাঁড়ায়। চিনতে অসুবিধা হয়না, লোকটি বন্ধনের চেম্বারের পাশেই পান বিড়ি বিক্রি করে। মাথা নামিয়েই বললে -- "চিকিৎসার সব খরচ আমি দেবো। রাতটুকু ওর সাথেই আমি থাকি।"

 

0 Comments

Post Comment