পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

তৃণমূল এবং বিজেপির ক্ষমতার দড়ি টানাটানির শিকার কমবেশি ১৭-১৮ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী

  • 14 April, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 583 view(s)
  • লিখেছেন : অমিত দাশগুপ্ত
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে শাসকদল তৃণমূল, তাদের নেতৃত্ব, মায় মন্ত্রীসভা বিপুল দুর্নীতি করেছে, যা তৃণমূলের স্বভাবসিদ্ধ, এবং ধরা পড়ে যাওয়াতে সেই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার অপরিসীম কিন্তু অপরিণত চেষ্টা করেছে।কিন্তু তা বলে সুপ্রীম কোর্টকে ছাড় দেওয়া যায়? তাঁরা কি এর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংবিধানের কথা মাথায় রেখেছে? যোগ্য শিক্ষকরা কিন্তু তৃণমূলের দুর্নীতি এবং সুপ্রীম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এখনও আন্দোলনে আছেন এবং যতদিন না দাবি আদায় হয়, রাস্তায় থাকবেন।

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের অবাধ দুর্নীতি, বিরোধীদের বিবেক বর্জিত রাজনীতি এবং সম্ভবত রাজ্য দখলের ফ্যাসিবাদী চক্রান্তের সঙ্গতকারী উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিচারের শিকার হল ১৭-১৮ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। জানিয়ে রাখা ভালো আমাদের মত সাধারণ নাগরিকদের উপরে নেমে আসা রাষ্ট্রীয় খড়্গের অত্যাচার অনাচারে অসহায় হয়ে পড়লে তবেই আমরা বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হই নিরুপায় হয়ে, বিচারব্যবস্থার উপর সুগভীর বিশ্বাস আছে বলে নয়। যেমনটা ডুবন্ত মানুষ সামনে যা কিছু পায় আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়  তেমনটা আর কী। 

দেখে শুনে মনে হয় শাসক, বিশেষত কেন্দ্রীয় শাসক দল বিচারকে প্রভাবিত করতে যারপরনাই সক্ষম, তেমনটা হলে বুড়ো আঙুল দেখাতেও। কয়েকটা উদাহরণ দিই। অতি সম্প্রতি দিল্লির রাউস এ্যাভিনিউ আদালত দিল্লি সরকারের আইনমন্ত্রী কপিল মিশ্রর বিরুদ্ধে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করতে বলেছে দিল্লি পুলিশকে, দিল্লি হাইকোর্টও সেই আদেশকে বহাল রেখেছে। তবে দিল্লি পুলিশ এখনো এফআইআর করেনি। আশারাম বাপুর প্যারোলের মেয়াদ বেড়েছে। খুন ও ধর্ষণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত রাম রহিম জেলের থেকে প্যারোলে থাকে অধিক সময়। সবরিমালা মন্দিরে সকল বয়সের নারীর প্রবেশাধিকার দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন ৬ বছর ধরে পড়ে রয়েছে, আদালত কোনো স্থগিতাদেশ না দিলেও ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ বন্ধই রয়েছে। ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী অধ্যাপক জিএন সাইবাবাকে মুম্বাই আদালত একবার রেহাই দিলেও তড়িঘড়ি আদালত বসিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সেই আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে তাঁকে জেলেই রেখে দেন। তার ২ বছর বাদে মুম্বাই হাইকোর্ট অধ্যাপক জিএন সাইবাবাকে নিরপরাধ সাব্যস্ত করে। এর মধ্যে তাঁর ১০ বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। জেলে থাকার অমানবিক অবস্থার কারণে সম্ভবত তিনি ছাড়া পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে মারা যান। অশীতিপর স্ট্যান স্বামীর বিচার বিভাগীয় হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা, যা আদতে হত্যা, তো সর্বজনবিদিত। কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে এফআইআর করার আদালতের নির্দেশ না মানলেও দিল্লি পুলিশ উমর খলিদ সমেত বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রীকে সেই দাঙ্গার দায়ে বিনা বিচারে ৪ বছর ধরে আটক রেখেছে। রাফ্যাল মামলা ও পেগাসাস মামলায় খামে ভরা রিপোর্ট এখনো খামবন্দীই রয়েছে বোধহয়। এরাজ্যে বিরোধী দলনেতা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী যত কুকথাই বলুন না কেন আদালত তাকে রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি বিজেপির আরেক বাহুবলী নেতা অর্জুন সিংএর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও কলকাতা হাইকোর্ট তার উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।  বিচার ব্যবস্থা তথা আইনী প্রক্রিয়ার খামতি, শাসকের সঙ্গে বোঝাপড়া ও সেই প্রক্রিয়াকে শাসকের স্বার্থে লঘু করার এরকম উদাহরণ অসংখ্য, সম্প্রতি তা বেড়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে শাসকদল তৃণমূল, তাদের নেতৃত্ব, মায় মন্ত্রীসভা বিপুল দুর্নীতি করেছে, যা তৃণমূলের স্বভাবসিদ্ধ, এবং ধরা পড়ে যাওয়াতে সেই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার অপরিসীম কিন্তু অপরিণত চেষ্টা করেছে। যার ফলে দুর্নীতি করে, ঘুস দিয়ে, ওএমআর কারচুপি করে, তালিকা-ক্রম টপকে, তালিকায় না থেকেও নিয়োগ পেয়েছে বলে প্রমাণিত ৮ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর সঙ্গে বাকি ১৭-১৮ হাজার নিয়োজিতরাও বিপন্ন হয়েছেন, এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাদের নিয়োগও বাতিল হয়েছে। এটা অনস্বীকার্য যে, এই নিয়োগ দুর্নীতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং তার দায় মমতা ব্যানার্জী, তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর মন্ত্রীসভাকে নিতে হবে

২৬ হাজার নিয়োজিত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর প্রায় সকলকেই (১ জন বাদে) কর্মচ্যুত করার যে রায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ঘোষণা করেছেন সেই রায় পূর্বে উল্লেখিত বিচার ব্যবস্থার খামতি বা বোঝাপড়ার আরেকটি উদাহরণ বলে সন্দেহ করা যায় নাকি? যোগ্য কিন্তু নিয়োগ না পাওয়া কিছু কর্মপ্রার্থী আদালতে গিয়েছিলেন নিয়োগ পাওযার আবেদন নিয়ে। সেই মামলার সূত্র ধরে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তদন্তে নিয়োগের বিভিন্ন স্তরে ভয়ানক কারচুপি ধরা পড়ে। আদালত সিবিআই-এর তদন্তের উপর ভিত্তি করে পাওয়া কারচুপি করে নিযুক্তদের চাকুরি বাতিল করে। তদন্তের ফলে ক্রমাগত কারচুপি করে নিযুক্তদের সংখ্যা ও নাম বেরতে থাকে। আদালতও নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিতে থাকে।  রাজ্য সরকার এবং এসএসসি সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনে। পরে শীর্ষ আদালতের নির্দেশক্রমে কলকাতা উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি একটি ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করেন। সেই বেঞ্চ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাতিল করে দেয়। তখন সংসদীয় নির্বাচন চলছিল। এসএসসি ও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে এবং সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ আনে। প্রায় ১ বছর বাদে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মোটামুটি সেই রায়কেই বহাল রেখেছে।

রায়ের মধ্যে দেওয়া পরিসংখ্যানগুলিতে  মনোযোগের অভাবের ছাপ পরিস্কার, যেটি কলকাতা হাইকোর্টের রায়েও দেখা গিয়েছিল। কতজনকে নিয়োগ করা হয়েছিল, কজন তার মধ্যে বেআইনী ভাবে নিযুক্ত বলে এপর্যন্ত সিবিআই চিহ্নিত করেছে তা জানা যাচ্ছে না,  না ডিভিশন বেঞ্চের রায় না সুপ্রিম কোর্টের রায় থেকে। 

এছাড়াও পরিসংখ্যানে গরমিল তো আছেই। যেমন, বর্তমান রায়ের ২৯ পাতার ২৫ নং অনুচ্ছেদে একটি তালিকার (তালিকা ১) উল্লেখ করা হয়েছে যেটি এসএসসি দাখিল করেছিল যে, ওই সংখ্যক নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে তালিকাক্রম পাল্টানো হয়েছিল ও প্যানেলের বাইরে থেকে নিয়োগ করা হয়েছিল। ওই পাতার ২৬ নং অনুচ্ছেদে আবার বলা হয়েছে যে এসএসসি পরে পুনরায় যাচাই করে নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে তালিকাক্রম পাল্টে ও প্যানেলের বাইরে থেকে নিয়োগের একটি তালিকা (তালিকা ক) দিয়েছে। ওই তালিকা এবং পূর্বের তালিকা আসলে একটিই। সেটি নিম্নরূপ:

ক্রমিক সংখ্যা

শ্রেণি (ক)

তালিকাক্রম উল্লম্ফন (খ)

প্যানেল বহির্ভুত নিয়োগ (গ)

মোট (ঘ)

সহকারি শিক্ষক (৯-১০)

৭৪

১১১

১৮৫

সহকারি শিক্ষক (১১-১২)

২০

১৮

৩৮

গ্রুপ সি

১৩২

২৪৯

৩৮১

গ্রুপ ডি

২৩৭

৩৭১

৬০৮

মোট

৪৬৩

৭৪৯

১২১২

 

আমাদের মত যেকোনো সাধারণ বিচারবুদ্ধির মানুষ তথ্য খুঁটিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন যে, পুনরায় যাচাই করে এসএসসি বেআইনী নিয়োগের তথ্য দিচ্ছে যাতে ওই তালিকায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; পরিবর্তন ঘটেছে ওএমআর ঘটিত কারচুপির তালিকার ক্ষেত্রে যা পূর্বে প্রদত্ত তালিকার থেকে সামগ্রিকে সংখ্যায় ৪,২৭৩ থেকে কমিয়ে ৪০৯১ হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে (রায়ের ২৯ নং পাতার তালিকা ২ এবং ৩০ নং পাতার তালিকা খ)। কিন্তু মহামান্য আদালত তালিকা ১ ও তালিকা ক-কে  পৃথক ধরে যোগ করে বের করেছেন যে,  ১,৪৯৮ জন প্যানেল বহির্ভুত নিয়োগ হয়েছে এবং ৯২৬ জন তালিকাক্রম পাল্টে নিয়োজিত হয়েছে। (রায়ের ৩০ নং পাতা)। রায়ের ৩৫ পাতার ৩৭ অনুচ্ছেদের তালিকায় ১২,৯৪৬ এবং ১১,৪২৫এর তফাৎকে ১,০৭১ করা হয়েছে। অবশ্যই তা অনবধানতাবশত হয়েছে, এবং তা রায়ের চরিত্রকে পাল্টে দেয়নি। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে যখন এসএসসির অকার্যকারিতা এবং ন্যায্য অন্যায্যের বিভাজন করতে পারার অক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন এধরণের পরিসংখ্যানগত ত্রুটি এত গুরুতর বিষয়টি সম্পর্কে মহামান্য বিচারকদের অমনোযোগকে তুলে ধরে নাকি?

মহামান্য আদালতের প্রশ্ন ছিল, ন্যায্য অন্যায্য নিয়োগকে আলাদা করা যায় কিনা? ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় থেকে যতদূর বোঝা যাচ্ছে যে, ওএমআর শিট পরীক্ষণের জন্য এসএসসি কর্তৃক নিয়োজিত ন্যাসার আধিকারিক পঙ্কজ বনসলের কাছ থেকে  সিবিআই যে তিনটি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছিল তার সঙ্গে এসএসসির রেকর্ডে থাকা তথ্য মিলিয়ে অন্যায্যদের (তালিকাক্রম উল্লম্ফন, প্যানেল বহির্ভুত নিয়োগ এবং এসএসসির সুপারিশ ব্যতিরেকে পর্ষদ কর্তৃক নিয়োগ) চিহ্নিত করেছিল সিবিআই। এও মনে হচ্ছে যে, সিবিআইএর সেই অন্যায্যদের তালিকা অসম্পূর্ণ। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে, সিবিআই-এর উদ্ধার করা হার্ড ডিস্কের ভিত্তিতে ও নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকার ভিত্তিতে অন্যায্য ন্যায্য বিভাজন করা গেল না কেন? ডিভিশন বেঞ্চ বা শীর্ষ আদালত সেই মর্মে নির্দেশ দিলেন না কেন, বা সেই কাজ করতে কোনো কমিটি গঠন করে দিলেন না কেন, যেমনটা করা হয়েছিল প্রথম দিকে বাগ কমিটি গঠনের সময়ে। এটা অনস্বীকার্য যে, এসএসসির তরফে সেই বিভাজনের যথেষ্ট প্রচেষ্টা করা হয়নি কিন্তু রায়ের ফলে তো এসএসসির কর্তাদের চাকুরি যাচ্ছে না বা শাস্তি হচ্ছে না, যতক্ষণ না তাদের কারুর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট গাফিলতি বা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হচ্ছে; চাকুরি যাচ্ছে বেশ কিছু ন্যায্যভাবে নিয়োজিত যুবকের যারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি তাহলে কি মহামান্য আদালত মনে করেন যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় খবরদারিও কর্মপ্রার্থীদের করতে হবে? 

অন্যায্য ও বেআইনীভাবে নিয়োজিত প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে যদি উদ্ধার হওয়া হার্ড ডিস্ককে ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং সেই তিনটি হার্ড ডিস্কে যদি সমস্ত পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিটের স্ক্যানড কপি থাকে, তাহলে তো অনায়াসেই বিভিন্ন শ্রেণি ওএবং বিষয়ের জন্য ক্রমানুসারে পরীক্ষার্থীদের সাজিয়ে ফেলা সম্ভব, এবং তার থেকে ন্যায্য ও অন্যায্য ভাবে নিয়োজিতদের তালিকা প্রস্তুত করে নেওয়া যায়। কেবল তাই নয় যে সমস্ত কর্মপ্রার্থীকে অন্যায়ভাবে বাদ নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অন্তত পক্ষে হাজার আটেক নিয়োগ হয়েছে, সেই সমস্ত পদে সেই তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ করা যায়। তাহলে আন্দোলনরত  সেই ২০১৯ সাল থেকে বঞ্চিত প্রার্থীদের প্রতিও তো সুবিচার করা হয়। ডিভিশন বেঞ্চ বা সুপ্রিম কোর্ট কেন সেই আদেশ দিলেন না? তার কারণ কি এটাই যে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে পুরো ২৬ হাজার নিয়োগকে বাতিল করলে কেন্দ্রীয় শাসক বিজেপির সুবিধে হয়? এক বছর বাদে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন, সেদিকে চোখ রেখেই কি এমন রায়, যেমনটা হয়েছিল ২০২৪-এর নির্বাচনের আগে? যদি ওই হার্ড ডিস্কগুলিতে সমস্ত পরীক্ষার্থীর তথ্য নাও থাকে তাহলেও তো প্রচলিত স্বাভাবিক ন্যায়ের বিধির (ল অফ ন্যাচারল জাস্টিস) দৃষ্টি থেকে অন্যায্য বলে চিহ্নিত নয় এমন সকলকেই সংশয়ের সুবিধে দেওয়া যেত, কারণ নিয়োজিত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা তো আর সিজারের স্ত্রী নয় যে তাঁদের সমস্ত সংশয়ের উর্ধে থাকতে হবে। নাকি তেমনটা এই জন্য করা হয়নি কারণ রায়টি পূর্ব নির্দিষ্ট ছিল? তাছাড়া, যতদূর জানি, এসএসসি তো শেষে সিবিআই কর্তৃক প্রদত্ত সকল অন্যয্যভাবে নিযুক্তদের তালিকাকে মেনে নিয়েছিল, এবং মহামান্য আদালতকে সেই মর্মে ন্যায্য-অন্যায্য বিভাজনের কথা জানিয়েছিল।

 কিছু বঞ্চিত প্রার্থী আদালতে গিয়েছিলেন তাঁদের নিয়োগের জন্য। যদি চিহ্নিত অন্যায্যদের চাকুরি বাতিল করে বঞ্চিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে নিয়োগ করা হত তাহলে আদালত সুবিচার দিয়েছে বলা যেতে পারত। তাঁদের আবেদনের কোনো সুরাহা হল না। আদালত তাঁদের জন্য কোনো বয়সের শিথিলতার নির্দেশ দেয়নি, যা দেওয়া হয়েছে অন্যায্য বলে চিহ্নিত নয় এমন সমস্ত নিযুক্তদের ক্ষেত্রে। তাহলে যে সমস্ত আইনজীবী মূল আবেদনকারীদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন তাঁরা সেই আবেদনকারীদের জন্য আদালত থেকে কী আদায় করলেন? ডিভিশন বেঞ্চের নিয়োগ বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে যখন এসএসসি বা রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে আবেদন করল তখন আবেদনকারীদের আইনজীবীরা ডিভিশন বেঞ্চের রায় বহাল রাখার সওয়ালের মধ্য দিয়ে হয়তো বা বৃহত্তর  রাজনৈতিক স্বার্থ দেখেছিলেন কিন্তু আবেদনকারীদের স্বার্থ দেখেননি। এখানেই সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ফুটে উঠছে। রাজ্য শাসকের দুর্নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত, সিবিআইএর তদন্তে ধরা পড়েইছিল। সেটা নিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীসভা এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা যেত, সেটাই সকল বিরোধীদের কাজ। কিন্তু আন্দোলনকে নাটকীয় ও তীব্র করার জন্য কমবেশি ১৭-১৮ হাজার অন্যায্য বলে চিহ্নিত না হওয়া ৬ বছর ধরে কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে পথে বসানো কোনো সদর্থক রাজনীতি হতে পারে না। প্রধান বিরোধী দল এই বিবেক বর্জিত রাজনীতিই করেছে। নির্বাচনী স্বার্থ ওই কমবেশি ১৭-১৮ হাজার যুবকের জীবন ও জীবিকার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিরোধী দলের কাছে।

রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে মাননীয় বিচারকদের যে আইন ব্যতিরেকেও নিজেদের ব্যক্তিগত বিবেচনার ক্ষমতা আছে তা ফুটে উঠেছে শারীরিকভাবে অসুস্থ সোমা দাসের নিয়োগ বজায় রাখার ক্ষেত্রে। কিন্তু অন্যান্য শারীরিকভাবে অসুস্থদের ক্ষেত্রে সেই বোধ সার্বিক প্রতিফলিত হয়নি। সেক্ষেত্রে তাঁদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে এবং তাঁদের বিকল্প নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সমাপ্ত (সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া তিনমাসের মধ্যে সমাপ্ত করার কোনো নির্দেশ সুপ্রিম  কোর্টের রায়ে দেওয়া হয়নি) না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের বেতন পাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। অপরদিকে অন্যায্যভাবে চিহ্নিত না হওয়া নিযুক্তদেরও বিকল্প নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাননীয় বিচারকদের এই অপরিসীম নিজস্ব ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাঁরা কেন চিহ্নিত অন্যায্যভাবে নিযুক্ত এবং অন্যান্য নিযুক্তদের চাকুরি বাতিলের ক্ষেত্রে একই বন্ধনীতে রাখলেন তা আন্দাজ করা গেলেও বলা যাবে না। কারণ তাতে আদালত অবমাননা হতে পারে। এমনটা মনে করা অসঙ্গত হবে না যে, রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য রাজ্য শাসক তৃণমূল এবং কেন্দ্রীয় শাসক বিজেপির দড়ি টানাটানির শিকার হলেন কমবেশি ১৭-১৮ হাজার কর্মরত যুবক সেই কাজে অনুঘটকের কাজ করলেন মূল আবেদনকারীদের আইনজীবীরা, যদিও তাঁদের জন্যই এই বিপুল দুর্নীতি উদ্ঘাটিত হল, তবুও তাঁরা ওই কর্মরত যুবতী-যুবকদের মধ্যে ন্যায্যভাবে নিযুক্তদের জীবন ও জীবিকাকে বিপর্যস্ত ও ধ্বংস করার জন্য বহুলাংশে দায়ী হলেন।

আদালতের এই রায়কে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অন্যায্যভাবে নিয়োজিতদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের চাকুরি বাতিল করে সেই জায়গায় বঞ্চিত চাকুরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে। সকল ন্যায্যভাবে (যারা অন্যায্য ভাবে নিয়োজিত নয় তাঁরা সকলেই ন্যায্য) নিয়োজিতদের চাকুরি বহাল রাখতে হবে। এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মন্ত্রী-শান্ত্রী, আমলাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

সর্বোপরি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই চরম প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির দায় গ্রহণ করতে হবে

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখায় যোগ্য-অযোগ্য শব্দাবলী ব্যবহৃত হয়নি যোগ্যতার মান পূরণ করলে তবেই পরীক্ষায় বসা যায় ফলে যে ২২ লক্ষ কর্মপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই যোগ্য যে সমস্ত নেতা মন্ত্রী শান্ত্রী টাকা নিয়েছেন চাকুরি দেওয়ার জন্য তাঁরা যে অন্যায় করেছেন সেই অন্যায় যারা টাকা দিয়েছেন, চাকুরি পাওয়ার জন্য, তাঁরা করেননি মনে রাখা দরকার, ন্যায্য জীবিকার অধিকার সকল দেশবাসী রাজ্যবাসীর আছে সেই জীবিকা সৃষ্টি করার দায় শাসকদের, কেন্দ্র রাজ্যের তাঁরা সেক্ষেত্রে অক্ষম বলেই স্বল্প পদের (২৬ হাজার) জন্য বিপুল (২২ লক্ষ) পরীক্ষা দেন সেই বিপুল জীবিকার ঘাটতিকেই ব্যবহার করে অক্ষম নেতা মন্ত্রী শান্ত্রীরা অর্থ নিয়ে চাকুরি বিক্রি করে

 

 

0 Comments

Post Comment