কথায় আছে বনের বাঘের চেয়ে মনের বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর। কথাটা খুব সত্যি। নিজের জীবনেই বহুবার প্রমাণ পেয়েছি। যেমন একবার ট্রেণে কোথায় যাচ্ছিলাম। ফাঁকা ট্রেণ। হঠাৎ সিগারেটের নেশা পেয়ে বসল। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালাম। বেশ আয়েশ করে টানছি। না, যখনকার কথা বলছি, ট্রেণে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়নি। তো, সিগারেট টানা শেষ হলে অবশিষ্ট টুকরোটা পাশের জানালা গলিয়ে না ফেলে সামনের দরজা লক্ষ্য করে ছুঁড়লাম। কিন্তু আমার মনে হল সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বাইরে না পড়ে গিয়ে আটকেছে দরজার পাশে বসে থাকা এক বৃদ্ধা মহিলার গায়ে।
আমি ভয় পেয়ে তৎক্ষণাৎ উঠে গেলাম মহিলার কাছে। দেখলাম মহিলা যেমন বসেছিলেন তেমনি বসে আছেন। তাঁর কোনও হেলদোল নেই। তাহলে কি আমারই দেখার ভুল? সিগারেটের টুকরোটা কি তবে বাইরেই পড়েছে!
নিশ্চিন্ত হতে পারলাম না। আবার ফিরে এসে বসলাম নিজের সিটে। কিন্তু ওই বৃদ্ধার ওপর থেকে দৃষ্টি সরাতে পারলাম না। এই বুঝি বৃদ্ধার পরণের শাড়ি থেকে আগুনের ধোঁয়া বেরোতে দেখব! আমার এমনই আশঙ্কা হচ্ছিল। সত্যি বলতে বাকি যাত্রাটুকু আমার উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না।
যদিও তেমন কিছুই ঘটেনি। আমরা যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছেছিলাম। এবং প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আমি বৃদ্ধাকে ট্রেণ থেকে নামতে সাহায্য করেছিলাম।
বহুদিন আগের সেই ঘটনা আজ মনে পড়ল একটা খবর দেখে।‘করোনায় মৃত স্পেনের রাজকুমারী’। সঙ্গে সুন্দরী যুবতীর ছবি। প্রথমে ছবি দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলাম। তারপর খবরের শিরোনাম দেখে বুক যে ধড়াস করে ওঠেনি তা নয়, অবশ্যই উঠেছিল। যে হারে বিশ্বের তাবড় তাবড় মহাতারকারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, বুক ধড়াস করে ওঠারই কথা। যেমন ধরুনঃ
প্রিন্স চার্লস- কুইন এলিজাবেথ পুত্র। বয়স ৭১ বছর। আপাতত করোনার কবলে। মৃদু লক্ষণ ধরা পড়লেও তিনি এখন ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন। প্রিন্স চার্লসের অফিস থেকে বলা হয়েছে,৭১ বছরের চার্লসের করোনা টেস্ট পজিটিভ হলেও তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা এই রোগে আক্রান্ত হননি। দুজনে এখন স্কটল্যান্ডে ক্লারেন্স হাউসে রয়েছেন।
সোফি ট্রাডিউ- কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী। বয়স ৪৫ বছর। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে সোফি করোনা আক্রান্ত। সেই বিবৃতিতে আরো বলা হয় প্রধানমন্ত্রী আপাতত সুস্থ রয়েছেন। স্ত্রী সোফি আলাদাভাবে আইসোলেশনে আছেন।
টম হ্যাংকস- অভিনেতা। বয়স ৬৪ বছর। অস্ট্রেলিয়ায় শুটিংয়ে গিয়ে মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হন হলিউডের এই সুপারস্টার এবং তাঁর স্ত্রী রিতা উইলসন। বিশ্বজোড়া ভক্তদের উদ্বেগের মধ্যে কাস্ট অ্যাওয়ে, ফরেস্ট গাম্প-এর নায়ক মাঝে মধ্যেই নিজের শারীরিক আপডেট দিচ্ছেন। হ্যাংকস ও রিতা আপাতত দুজনেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে।
ক্যালাম হাডসন- বয়স ২০ বছর। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ফুটবলার হিসাবে চেলসির তারকা ক্যালাম হাডসনের করোনা টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ে। তারপরেই চেলসির সমস্ত ফুটবলার ও সাপোর্ট স্টাফদের তরিঘড়ি করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
মাইকেল আরতেতা- বয়স ৩৯ বছর। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় বড় ধাক্কা হিসাবে আবির্ভূত আর্সেনালের প্রাক্তন ফুটবলার ও বর্তমান কোচ মাইকেল আরতেতার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। তারকার কোভিড ভাইরাসে ধরা পড়তেই সঙ্গে সঙ্গে ব্রাইটনের বিপক্ষে গানার্সদের ম্যাচ সঙ্গে সঙ্গে স্থগিত করা হয়।
পাওলো দিবালা- বয়স ২৭ বছর। ফুটবলার। করোনা আক্রান্ত। ইতালিতে এই মুহূর্তে মৃত্যুমিছিল চলছে। বিশ্বের সর্বাধিক মৃত্যুর নজির ইতালিতেই। ইতালিয়ান লিগে জুভেন্টাসের জার্সিতে রোনালদো ও আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে মেসির সতীর্থ দিবালার আরোগ্য কামনায় আপাতত ফুটবল বিশ্ব।
বরিস জনসন- বয়স ৫৬ বছর। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এরকম আরও অনেকের সঙ্গে অবশেষে স্পেনের রাজকুমারী। মারিয়া টেরেসা। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। বয়স মাত্র ৮৬ বছর।
এইসব খবর দেখে শুনে আমাদের অনেকেই শারীরিক ভাবে না হলেও মানসিক ভাবে করোনার ভয়ে ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছি। সেটাই স্বাভাবিক। ওই যে কথায় আছে, বনের বাঘের চেয়ে মনের বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর! কিন্তু সত্যি কি তাই?
উত্তর পেতে তাহলে আসুন নজর দিই আর একটি খবরেঃ
ইদ্রিস আলবা- বয়স ৪৮ বছর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রখ্যাত নায়ক করোনায় আক্রান্ত।‘ম্যান্ডেলা’, ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’-এ দর্শকদের মন জয় করেছিলেন। তিনি টুইট করে বলেছেন,“কোভিড ভাইরাসের টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়েছি। আপাতত আমি সুস্থ, তবে আমাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আমার শারীরিক পরিস্থিতির বিষয়ে আপডেট দিয়ে যাবো। কেউ প্যানিক করবেন না।”
তথ্যসূত্র : iebangla /The Indian Express