ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেল ইলন মাস্কের কোম্পানি স্টারলিংক। ইকোনমিক টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে নেওয়ার পরই ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন (DoT) স্টারলিংককে ভারতে পরিসেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে। এনিয়ে খুব বেশি হইচই ভারতীয় সমাজে নেই, বরং এক অদ্ভুত নিরবতাই বিরাজ করছে। ভারতীয় সংসদীয় দলগুলির মধ্যে একমাত্র সিপিআই(এম) বিবৃতি দিয়ে তাদের আপত্তি জানিয়েছে।
জেফ স্টেইন ও হানা নাতানসনের লেখাওয়াশিংটন পোস্ট-এ গতবছরের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারছি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যেসব দেশের উপর আমেরিকা শুল্ক আরোপ করেছিল, তাদেরকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বিলিওনিয়ার এলন মাস্কের স্টারলিংক অনুমোদনে চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কেবলগুলিকে উদ্ধৃত করে এই দাবি করেন উক্ত দুই প্রতিবেদক।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রকাশিত সূত্রগুলি থেকে জানা যাচ্ছে, স্টারলিংকের এই আবেদন বেশ কিছুদিন ধরে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনাধীন ছিল, তবে গত সপ্তাহে সংশোধিত নিরাপত্তা নীতিগুলো মেনে নেওয়ার পরই চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে।ইকোনমিক টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আলোচনায় স্টারলিংক দুটি শর্তে আপত্তি জানিয়েছিল১)আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে স্টারলিংকের টার্মিনালগুলি মনিটর করার বাধ্যবাধকতা২)এই ধরনের স্যাটকম কোম্পানিগুলোতে ভারতীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডিং বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব -- সরকার শেষ পর্যন্ত এই দুটি শর্তই প্রত্যাহার করে নেয় বলে দ্যা ওয়ার জানাচ্ছে।
এই বছর মার্চ মাসের শুরুতে স্পেসএক্স (স্টারলিংকের মূল সংস্থা) এবং ভারতের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি রিলায়েন্সের জিও প্ল্যাটফর্মস নিজেদের মধ্যে অংশীদারিত্ব চুক্তির ঘোষণা করেছে, যার মধ্য দিয়েই মূলত ভারতে স্টারলিংকের পরিষেবা চালু হবে।রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে (যা পরে ডিলিট করা হয়েছে) স্টারলিংককে ভারতের রেল প্রকল্পে সহায়তার জন্য স্বাগত জানিয়েছিলেন।খেয়াল করে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের একমাসেরও কম সময়ের মধ্যেই এইসব কীভাবে যেন ঠিকঠাক হয়ে গেল। আপনাদের মনে থাকতে পারে ওই সফরে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং স্পেস এক্সের প্রধান ইলন মাস্কের সাথে দেখা করেছিলেন। ইলন মাস্কের ছোট বাচ্চাদের সাথে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর খুনসুটি সেসময় এদেশের অন্ধ ভক্তকূলের দু’চার দিনের আবেগতাড়িত হবার খোরাক জুগিয়েছিল। ইলন মাস্ক যদিও ভারতী এয়ারটেলের সাথেই প্রাথমিক চুক্তি করেছিল। এয়ারটেল এবং জিও এরা ভারতীয় টেলিকম বাজারে এক অপরের তীব্র প্রতিদ্বন্দী তবুও “মোদি ম্যাজিকে” এরা দুজনেই এখন থেকে স্পেস এক্স-এর সাথে এক হয়ে ভারতীয়দের “পরিষেবা” দেবে।
ভারতে তো ইন্টারনেট পরিষেবা আছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় গত দশ বছর ধরে ভারতের সরকারি টেলিকম পরিষেবাকে শুকিয়ে মেরে মুকেশ আম্বানীর কোম্পানি জিও সারা দেশে একচ্ছত্র রাজত্ব করে ছলেছে। তাহলে নতুন করে স্টারলিংকের আগমন এদেশে কেন? স্টারলিংক প্রযুক্তিগত ভাবেই বা নতুন কী দেবে? সেসব কথায় যাবার আগে একটা কথা শুধু জানিয়ে রাখি ২০২০ সালে নরেন্দ্র মোদি ১০০০ দিনের মধ্যে ভারতের সমস্ত প্রত্যন্ত গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার পৌঁছের দেবার কথা ঘোষণা করেছিলেন। আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র ২১৪৩১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই তা পৌঁছে দেওয়া গেছে। যেখানে এর প্রায় দশগুণ জায়গায় তা প্রাথমিকভাবে পৌঁছাবার কথা ছিল। আজ স্টাওরলিংককে ছাড়পত্র দেবার সময়ও ডট বড়মুখ করে জানাচ্ছে এর মধ্যে দিয়ে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে যাবে।
২০২৩ সালে জেসমিন নিহালানি এবং ভিগনেশ রাধাকৃষ্ণন দ্য হিন্দু-তে একটি লেখা লেখেন, কীভাবে বারবার নানা ধরনের বেল আউট প্যাকেজের কথা সরকার ঘোষণা করেছে বিএসএনএলের জন্য। কিন্তু কার্যত ভারতীয় টেলিপরিষেবা ও ইন্টারনেটের বাজার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পুঁজির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে। ২০০৫সালে, বিএসএনএলের বাজার শেয়ার ছিল ২১%, যা ভারতী এয়ারটেলের সমান এবং রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের চেয়ে সামান্য বেশি।২০২২ সালের মধ্যে, বিএসএনএলের শেয়ার ১০% এ কমে যায় যখন বাকি দুটি বেসরকারি কোম্পানি বাকি বাজারের দখল কার্যত নিয়ে ফেলে। এই মুহুর্তে আবার স্পেস-এক্স-কে ডেকে এনে ভারতীয় সংস্থাটিরই অন্তর্জলী যাত্রার ঘোষণা হয়ে গেল।
স্টারলিংক মূলত কাজ করে লো আর্থ অরবিট(LEO) টেকনোলজির মাধ্যমে। LEO স্যাটেলাইট গুলি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫০০-২০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে, যা ট্র্যাডিশনাল জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইটের (৩৬,০০০কিমি) চেয়ে অনেক নিচে।এইকম দূরত্বের কারণে LEO-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিসেবায় কম লেটেন্সি (২০-৪০ms) এবং তুলনায় উচ্চগতি (১০০ Mbps ) পাওয়া যায়। স্টারলিংক বা ওয়ান ওয়েবের মতো কোম্পানিগুলো হাজারো LEO স্যাটেলাইটের ঝাঁক তৈরি করে সারা বিশ্বে ইন্টারনেট দিচ্ছে, বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এই কারণেই এই প্রযুক্তি নিয়ে মূলত হইচই। কিন্তু যেহেতু এই পরিসেবা স্যাটেলাইট নির্ভর তাই এর খরচও বিপুল। আমেরিকায় এর খরচ প্রায় মাসে ১২০ ডলার এমনকি কেনিয়াতেও মাসে প্রায় ১০ ডলার। বাংলাদেশে যারা এই পরিষেবা ব্যবহার করেন তাদের বাংলাদেশি টাকায় প্রায় তিন থেকে চার হাজার টকা খরচ করতে হয়।এইবার ভারতে ইন্টারনেট প্রযুক্তি গুলির তুলনামূলক তথ্যের জন্য নীচের এই ছবিটি দেখতে পারেন।
<!--[if gte vml 1]>
ছবিটি দেখে নিশ্চিতভাবে বোঝা সম্ভব শুধুমাত্র প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া ছাড়া স্টারলিংকে ইন্টারনেট জগতে বিপুল বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবে এমন নয়। এমনও নয় শহরাঞ্চলে আপনি যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পান তার চেয়ে বেশিকিছু স্টারলিংক আপনাকে দেবে। এবার যদি আপনি ধরে নেন গ্রামে পরিষেবা পৌঁছানোর মহান ব্রত নিয়ে ইলন মাস্ক এদেশে আসছেন, তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই। আমি নিশ্চিত জানি আপনারা কেউই সেরকম কোনও ভাবনা নিয়ে বিষয়টিকে দেখছেন না।
তাহলে বোঝাই গেল স্টারলিংক মূলত গ্রাহকদের সরাসরি তার স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ দেওয়ার ব্যবসা করে এবং ভারতে তাদের এই মডেল একই থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে রিলায়েন্স জিও এবং এয়ারটেলের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, জিও তার রিটেইল আউটলেটের মাধ্যমে স্টারলিংকের সরঞ্জাম বিক্রি করবে, অন্যদিকে এয়ারটেল এই মুহূর্তে শুধুমাত্র “পর্যালোচনা” করবে যে তারা তাদের দোকানগুলোতে স্টারলিংক ডিশ সরবরাহ করবে কিনা।
মজার বিষয় হলো, গ্রাহকরা জিও বা এয়ারটেলের দোকান থেকে স্টারলিংক ডিশ কিনলেও, তাদের ইন্টারনেট সংযোগ সরাসরি স্টারলিংকের নেটওয়ার্কে যাবে—জিও বা এয়ারটেলের নিজস্ব ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সাথে এর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। এটি একটি অস্বাভাবিক ব্যবস্থা, কারণ সাধারণত টেলিকম কোম্পানিগুলো স্যাটেলাইট অপারেটরদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনে তা নিজেদের গ্রাউন্ড নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দেয়। যেমন, জিও-এসইএস বা এয়ারটেল-ওয়ানওয়েব পার্টনারশিপে এয়ারটেল/জিও নিজেরাই স্যাটেলাইট ও গ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক মিলিয়ে গ্রাহকদের পরিসেবা দেয়।
স্টারলিংক লো-আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট ব্যবহার করে, যার জন্য তাদের হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি বিশাল ঝাঁক তৈরি প্রয়োজন। বর্তমানে তাদের ৭,০০০ স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে (ভারতের মোট স্যাটেলাইটের সংখ্যা মাত্র ১২৭!)। প্রতিটি স্যাটেলাইটের আয়ু মাত্র ৫ বছর, তাই এই সিস্টেম চালানোর খরচ অত্যন্ত বেশি সেটা আগেই আমরা বলেছি। স্পেসএক্স ভবিষ্যতে যে ৩০,০০০ স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তা দীর্ঘমেয়াদে ব্যয়বহুল।এত বেশি সংখ্যক স্যাটেলাইট মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ ও সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলি জ্যোতির্বিদদের টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে গত বেশকিছু বছর।ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ স্টিভ সং-এর মতে (একই কথা ইন্ডিয়ান স্পেস অ্যাকাডেমিও জানাচ্ছে), জিওস্টেশনারি (GEO) বা মিডিয়াম আর্থ অরবিট (MEO) স্যাটেলাইট ব্যবহার করলে ছোট কনস্টেলেশনেই কাজ চলে, পরিবেশগত ঝুঁকি কমে এবং স্থানীয় ইন্টারনেট পরিসেবাদাতারা (ISPs) স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথ কিনে গ্রাহকদের কাছে নামমাত্র মূল্যে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু স্টারলিংকের মডেলে এই সুবিধা নেই—এটি মূলত একটি বিলাসবহুল, শহরতলি-কেন্দ্রিক সেবা হিসেবেই ভারতে আসছে। ফলত ওই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবার প্রতিশ্রুতিটি ১৫ লাখের মতই একটি জুমলা।
স্টারলিংকের ভারতে বাজার তৈরির বাণিজ্যিক আগ্রহের কারণ সহজেই বোঝা যায়। ভারতের ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা, গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ৫৯.২৬% টেলিডেনসিটি, দ্রুত ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়া, বিশেষ করে দুর্গম ও শহরাঞ্চলে। ধরা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বাজার ১.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এছাড়াও আছে প্রথম প্রবেশকারীর সুবিধা: প্রতিযোগীদের (যেমন প্রোজেক্ট কুইপার) আগে বাজার দখলের সুযোগ। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে গেছে স্পেকট্রাম নিলাম ছাড়াই বরাদ্দের নীতি।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেস উভয়ই স্টারলিংক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল প্রাথমিকভাবে তার প্রধান কারণ কোথাও প্রশাশনিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বা দাঙ্গা হলে ইন্টারনেট বন্ধ করার সুবিধা এতে নেই। গণতান্ত্রিকভাবে আমি সরকারের ইন্টারনেট বন্ধ করার পক্ষে নই কিন্তু কথাটা ওপর ওপর বলে দেওয়াটাও একধরনের ছেলেমানুষী। সে যাই হোকশুধুমাত্র “ইন্টারনেট বন্ধ করার ক্ষমতা” নিয়ে নয় বরং এর পেছনের মার্কিন গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ছাড়াই ডট একে ছাড়পত্র দিয়েছে। স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট পরিষেবাই দেয়না, এটি একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা-ও বটে, যা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর (CIA, NSA) সরাসরি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারে।
মার্কিন ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভেইল্যান্স অ্যাক্ট (FISA)-এর সেকশন ৭০২-এর অনুযায়ী যেকোনো অ-মার্কিন নাগরিকের ইন্টারনেট যোগাযোগ সংক্রান্ততথ্য সংগ্রহ করা বৈধ।২০২৪ সালের এপ্রিলে, মার্কিন কংগ্রেস FISA-এর পরিধি অনেকটা বাড়িয়ে সব স্যাটেলাইট ও টেলিকম কোম্পানিকে বাধ্য করেছে ডেটা শেয়ার করতে, যদি তাদের নেটওয়ার্কে মার্কিনীদের ডেটা থাকে। অর্থাৎ, স্টারলিংকের মাধ্যমে ভারতীয়দেরও সমস্ত ইন্টারনেট ট্র্যাফিক (মেটাডেটা সহ) NSA-র হাতে যেতে পারে—এমনকি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন থাকলেও!
স্টারলিংকের সিস্টার প্রজেক্ট স্টারশিল্ড সরাসরি পেন্টাগন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য কাজ করে।২০২৩ সালে রয়টার্স জানিয়েছিল যে স্টারশিল্ড মার্কিন ন্যাশনাল রিকনাইস্যান্স অফিস (NRO)-এর জন্য একটি গোপন জাস্ট স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নজরদারি সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত।প্রশ্ন হল: স্টারলিংক ও স্টারশিল্ডের স্যাটেলাইটগুলো কি আলাদা? প্রযুক্তিগতভাবে, এদের নেটওয়ার্ক পরস্পর সংযুক্ত করা সম্ভব—যা ভারতেররাষ্ট্রেরজন্যেও গোয়েন্দা ঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণ আম নাগরিকদের কথা তো বাদই দিলাম। সারাদিন ধরে ভারতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য গলা ফাটানো দেশপ্রেমিরা এই বিষয়ে চুপ কেন তা খুব বোঝা যাচ্ছে না।
অবশ্য চুপ না থেকে করবেই বা কী? দেশের নাগরিকদের যখন হাতে পায়ে বেড়ি পড়িয়ে বিমানে করে এদেশে পাঠানো হচ্ছে তখন তো ট্রাম্পের হয়ে ভোট চাওয়া নরেন্দ্র মোদি সরকার মুখে কুলুপ এঁটেছিল। দুদেশের সংঘর্ষের মধ্যে নাক গলিয়ে ত্রাতা সাজা মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাদাগিরির বিরুদ্ধতা তো দুরস্থান সরকারিভাবে ঘোষণার আগে ছেলেমানুষী ট্যুইটের আজ অবধি কোনও জবাব দেওয়া যায়নি। ফলে দেশে দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণের কাজে হাত পেতে ভিক্ষা নেবার শর্তে রাজি না হয়ে এই সরকারের উপায় আছে কি? টুজি স্পেক্ট্রাম কেলেংকারির মূল বিষয়ই ছিল নিলাম না করা। একটা মার্কিন দেশে মিটিং-এ যেখানে মাস্কের বাচ্চারা খেলে বেড়াচ্ছে আর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সহ ভারতীয় আধিকারিকদের গোটা টিম উপস্থিত থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ভারতীয় বাজার স্পেস-এক্সকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে… এ যদি দেশদ্রোহিতা, দূর্নীতি না হয় তাহলে তা কী? এই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটাই যখন কাজ তখন বিরোধীদলগুলোর ভূমিকা কি সদর্থক ?