আমার তখন কুড়ি বছর বয়স, আমার ওপর দিয়ে যা গেছে তা এদেশের হাজার হাজার মহিলার ওপর দিয়ে রোজ বয়ে যায়। কিন্তু এই রিয়া চক্রবর্তী ( যার নাম আমি আগে শুনিনি) সংবাদমাধ্যম যার বিচার সভা বসিয়েছে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে ( যার নামও আমি আগে শুনিনি) আমার চারপাশের দূর্গটাকে যেন ভেঙেচুরে দিল, যে দূর্গটাকে আমি তিলতিল করে গত ১৯ বছর ধরে নিজের চারপাশে গড়ে তুলেছিলাম।
১৯৯৮ সালে আমার হঠাৎ ইচ্ছে হয়েছিল যে কলকাতার একটা ছোট সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম দেবো, যেমন ভাবা তেমন কাজ, তারপর সেটাতে বিজয়নী হয়ে দেশের নানান জায়গায় আরও বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। তারপর ৬ মাসের মধ্যে জাতীয়স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এবং পরাজিত হওয়া। আমার মডেলিং কেরিয়ার, যা কোনওদিনই আমি উপভোগ করতাম না, তার ইতি। এমনিতে তখন আমার দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষাও ছিল সামনে, সুতরাং আমার ওই ঝলমলে গ্ল্যামারাস জগত থেকে বেরিয়ে আসতে সুবিধাই হয়েছিল।
খুব তাড়াতাড়ি আমি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো কলেজ যাওয়া থেকে শুরু করে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সিনেমা দেখা সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। কখনও হাতে পয়সা থাকলে টুকটাক বারে গিয়ে বিয়ার খাওয়াও চলতো না এমনটা নয়। জীবন চলছিল ভালোই। ২০০১ সালে একদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে শুনি যে আমার মা এমনকি আমাদের বাড়ির পরিচারিকাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আমাদের বাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে লোকাল থানায় ছুটলাম, সেখান থেকে আমাকে এবং আমার পরিবারের সকলকে সিআইডি হেডকোয়ারটারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর প্রত্যেককে একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় যে আমরা কোনোভাবে খাদিমের মালিকের অপহরণের সঙ্গে যুক্ত কিনা? পরে যদিও জেনেছিলাম যে টাকাটা ওই ঘটনায় দাবী করা হয়েছিল তা নাকি ৯/১১ ঘটনাতে কাজে লেগেছিল। সেদিন রাত ৩টে তে আমরা বাড়ি ফিরেছিলাম, ভেবেছিলাম বোধহয় আমাদের ভুল করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এই ঘটনার এখানেই ইতি হলো।
কিন্তু না, সেটা ছিল শুরু। তার পরদিন থেকে শুরু হল আসল খেলা। কলকাতার সমস্ত কাগজ পরদিন সামনের পাতায় হেডলাইন করলো, যার সারমর্ম হলো আমি এবং আমার মা দুজনেই দেহপোজীবিনি এবং আমরা সেক্স র্যাকেট চালাই। যেহেতু আমি একসময়ে মডেলিং করেছি, আমার পুরনো ছবি বার করে যতরকমের রগরগে খবর করা যায় তা করা হয়েছে সেইসময়ে। যদিও আনন্দবাজার, বর্তমান বা টেলিগ্রাফ বা স্টেটসম্যান এই কাজটি করেনি কিন্তু একটি বিখ্যাত কাগজ যাকে লোকজন আগেও বলত এবং এখনও নিশ্চিত ‘টয়লেট পেপার অফ ইন্ডিয়া’ বলে তাঁরা এই কাজটি দীর্ঘদিন ধরে করে গেছেন। এই সংবাদমাধ্যমের বিচারসভা এমন মাত্রায় পৌছেছিল যে সিআইডি প্রধান পার্থ ভট্টাচার্যকে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাতে হয় যে আমরা কোনোভাবেই সেই মামলার সঙ্গে যুক্ত নয়।
আমাদেরকে বলা হয়েছিল যে কেউ বা কারা নাকি উড়ো চিঠি দিয়েছে যে আমরা নাকি খাদিম কর্তাকে আমাদের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছি। আমার মা, নিজে একজন ডিভোর্সী মহিলা এবং একজন সফল ব্যবসায়ী। আমার বায়োলজিকাল পিতা বিভিন্ন সময়ে আমার মাকে বিভিন্ন কেসে জড়িয়ে রেখেছিলেন। যে বাড়িতে আমরা থাকতাম, সেই বাড়ি নিয়ে প্রচুর মামলা মোকদ্দমা চলতোই। পরে জেনেছিলাম, আমার ঠাকুর্দা এবং বাবা লোকাল কাউন্সিলারের কাছেও গেছিলেন যে আমাদের মতো মহিলাদের একটি ভদ্র পাড়ায় থাকতে দেওয়া উচিত কিনা তাই নিয়ে দরবার করতে। আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া উচিৎ কিনা সেই নিয়ে কথা বলতে। এখানে একটু বলে নেওয়া উচিত যে আমার মা তাঁর সঙ্গীর ( দ্বিতীয় সবামি)র সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকতেন এবং যাকে বলে নিরীহ মানুষ, আমিও কোনোভাবে সেই শ্রেণীতে পড়তাম না। আমিও পাড়ায় আড্ডা দিতাম, সিগারেট খেতাম সবার সামনেই, এবং জামাকাপড়ও সবার পছন্দমাফিক হতো না। সেগুলো হয়তো অনেকেরই চক্ষুশূল ছিল।
এরপর যা শুরু হল তা দুঃসবপ্নের মতো। ভুতুড়ে ফোন আসতে লাগলো। তখন খুব বেশী মোবাইল ফোন ছিল না। প্রতিবেশী এক মহিলা সমস্ত কাগজের কাটিং জেরক্স করে অঞ্চলে বিলি করতে লাগলেন যাতে আমাদের সম্পর্কে মানুষের আরও ভুল ধারণা হয়, লোকে আমাদের দেখে গুজগুজ ফিসফাস করতো রাস্তায়। আমার এক প্রিয় বান্ধবী রটিয়ে দিল যে আমি নাকি বেশ্যা বৃত্তি করে নিজের হাতখরচ চালাই। যেহেতু সে একটি কলকাতার অত্যন্ত পরিচিত পরিবারের মেয়ে তাই তাঁর কথা সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করলো। আমরা সমস্ত সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করলাম এবং সেই মামলা চলল প্রায় দীর্ঘ ৯ বছর।
কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা বেঁচে ছিলাম, কারণ তখন কোনও সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম ছিল না। কোনও রিপাবলিক টিভি বা সেই অর্থে কোনও টিভিতে আমার নাম ধরে রোজ চিৎকার করা হতো না। কোনও হোয়াটসআপে আমাকে নিয়ে মিম শেয়ার হতো না, বা কোনও হ্যাশট্যাগ দিয়ে আমায় বদনাম করা হতো না। কিন্তু ততদিনে আমি ধীরে ধীরে নারীবাদী হয়ে উঠছি। আমি কলেজের প্রথম বছরেই ‘ দি সেকেন্ড সেক্স’ বইটি পড়ে ফেলেছি, সবটা যে বুঝতে পেরেছি তা নয়, কিন্তু কিছু কথা বুঝতে পারছিলাম এই যে আমাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছিল তার পিছনেও একটা কারণ ছিল। তা হল পিতৃতন্ত্র যার প্রভাব পরিবার থেকে রাষ্ট্র সবক্ষেত্রেই ছিল এবং আছে।
যে গ্রামীণ, শ্রমজীবী, দলিত ও মুসলমান মহিলারা পিতৃতান্ত্রিক হিংসা তথা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি সেই সাংস্কৃতিক এবং শ্রেণীগত পুঁজি সম্বন্ধে ভাবতে বাধ্য হলাম, যা বর্ণাশ্রমে এবং শ্রেণীতে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার জন্য আমি আর আমার মা পেয়েছি। এই বিশেষ সুবিধাই আমাদের যখন তখন বন্দী হওয়া এবং পুলিশি সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা করেছে, আর বহু ভাল মানুষের সমর্থনও আদায় করে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে একটা গবেষণা প্রকল্পের জন্য আমি ছত্তিশগড়ে গেছি দুর্দমনীয় সোনি সোরির সাক্ষাৎকার নিতে। তারপর মণিপুরে গেছি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইরম শর্মিলার সাক্ষাৎকার নিতে। এঁরা এমন দুজন মহিলা যাঁরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, চিহ্নিত আক্রমণ, বেশ্যা বলে দেগে দেওয়া, সংবাদমাধ্যমের বিচারসভা --- সবকিছুর সম্মুখীন হয়েছেন, তারপরেও ন্যায়বিচারের সন্ধানে অক্লান্ত ছিলেন।
সোনি যখন বললেন তিনি কীভাবে বেশ্যা বলে দেগে দেওয়ার মোকাবিলা করেছেন এবং স্পষ্টতই প্রবল নারীবিদ্বেষী এক রাজনৈতিক পরিমণ্ডল, যেখানে মহিলারা নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের বিচারের মুখে পড়েন, সেখানে প্রবেশ করতে তিনি কেমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, আমি হতবাক হয়ে গেছিলাম। তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন “আমার স্বামী আমাকে বলল ‘তুমি যৌন নির্যাতন নিয়ে কেন কথা বলছ? লোকে আমার পিছনে লাগছে, ভেঙাচ্ছে, মারাত্মক সামাজিক চাপ আসছে। তুমি অন্য নির্যাতনের কথা বলতে পারো, যৌন নির্যাতনের কথা বোলো না’… আমি তখন বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলাম কারণ আমি লড়াই ছাড়ব না… ও কেবল সম্মান আর লজ্জার কথা ভাবছিল, আমি ওসবে আর বিশ্বাস করি না।”
কথাটা আমাকে নাড়িয়ে দিল। আমি আমার নিজের প্রবণতাগুলোর কথা ভাবলাম। আমি তো চুপ করে যাই, লোকজনকে এড়িয়ে চলি, খুব বেশি সামাজিক মেলামেশার মধ্যে যাই না এবং ভীতি নিয়ে একা একা কাটাই। সারা আহমেদ যথার্থই বলেছেন যে লজ্জা খুব জোরালো অনুভূতি। “যে লজ্জা পায় সে নিজের মধ্যে গুটিয়ে যায়, একইসঙ্গে নিজের কাছেও গুটিয়ে যায়।” সোনির কথাগুলো আমাকে মনে করিয়ে দিল যে নীরবতা আমাদের রক্ষা করে না, পিতৃতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
কিছু তথ্য এখানে জানিয়ে দেওয়া দরকার: সেই ট্যাবলয়েডগুলোর মধ্যে গোটা দুয়েক বন্ধ হয়ে যায়, একটার কেসের শুনানি বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে যায় কারণ ফাইলটা ‘হারিয়ে গেছিল’। আর গোটা দুয়েক শেষ পর্যন্ত ভ্রম সংশোধনী ছাপে। আমার বাবার সাথে আমি বহু বছর পরে দেখা করি। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত মদ্যপান করার ফলে তখন তিনি ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন, ওসব ঘটনা মনেই ছিল না। আমি জীবনের শেষদিনগুলোতে ওঁর দেখাশোনা করি, ক্ষমা করতে পেরেছিলাম বলে নয়। ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম বলে। বীভৎস স্মৃতি আর দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম। বলা বাহুল্য কোনটাই পাইনি।
আজ উনিশ বছর পরে এতদিন ধরে অনেক কষ্ট করে যা গড়ে তুলেছি তা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে জেনেও কেন কলম তুলে নিলাম? সম্ভবত কারণটা হল আমি মাস দুয়েক আগে একটা টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলেছি, এবং অবিরাম #rhea এড়াতে পারছিলাম না (আমার টিভি নেই, দেখিও না)। আর সম্ভবত এই বোধও কাজ করেছে যে এ দেশে কোন মহিলাই সুরক্ষিত নন।
গতকাল একটা ভিডিও দেখলাম যেখানে বেঙ্গালুরুর একজন অভিনেত্রীকে হেনস্থা করা হচ্ছে ‘অশালীন’ পোশাক পরার জন্য, আর পিছনে কিছু লোকের কথা শোনা যাচ্ছে। তারা হুমকি দিচ্ছে মাদক সংক্রান্ত একটা চালু তদন্তে ঐ মহিলার নাম জড়িয়ে দিয়ে শিক্ষা দেওয়া হবে। কত সহজে একজন মহিলার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে দেওয়া যায় এটা তার চমৎকার উদাহরণ। এর ফলে বিপন্ন হয় এবং আসলে তার কথা বলার স্বাধীনতাই ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
অবশ্য আমাদের দেশে গণপিটুনি আর আইন বহির্ভূত বিচার নতুন ব্যাপার নয় আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধটা প্রমাণও হয় না। বহুবার গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আবেগ তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে জনতার বিচারে খুন পর্যন্ত হয়েছে। এই উন্মত্ত জনতার বিচারে বেশিরভাগ সময়েই দোষী সাব্যস্ত হয় মহিলা, দলিত, আদিবাসী, মুসলমান এবং বিকল্প যৌন পরিচিতির মানুষ। অধিকাংশ গণপিটুনি স্বতঃস্ফূর্ত নয়, পূর্ব পরিকল্পিত এবং সুচিন্তিত। কারণগুলো বেশিরভাগ সময়েই কল্পিত। কখনো কল্পনা করা হয় কোন ক্ষমতাবিন্যাস ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কখনো ভাবা হয় কোন নিয়ম ভাঙা হয়েছে, কোন সামাজিক প্রথাকে আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা দেখেছি গত কয়েক বছরে কীভাবে গোরক্ষকরা কীভাবে মুসলমানদের চিহ্নিত করে আক্রমণ করেছে, এবং বলা হয়েছে যে হোয়াটস্যাপের মত প্রযুক্তি হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়ার ফলেই এই ঘটনাগুলো বেড়ে গেছে।
কিন্তু প্রযুক্তির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে হিংসার সামাজিক স্বীকৃতি এবং যারা কাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি না পাওয়ার ঘটনাগুলো অস্বীকার করা যাবে না। এরা শাস্তি পায় না কারণ এই হিংসাকে সমাজ, গোষ্ঠী তথা দেশকে কোন একটা কল্পিত বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য জরুরী বলে মনে করা হয়। সে বিপদ কোন ‘অবাধ্য’ মেয়ে হতে পারে, যে লিঙ্গ রাজনীতির কাঠামো মানতে চাইছে না। আবার কোন দলিতও হতে পারে, যে পবিত্র স্থানকে ‘দূষিত’ করেছে।
রাষ্ট্রের দ্বারা রাজনৈতিক কর্মী, বিরোধী এবং শিক্ষাবিদদের চিহ্নিত আক্রমণ অনেকসময় একই পথ নেয়। মানুষটাকে খলনায়কে পরিণত করে এবং তার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। সুধা ভরদ্বাজের বিরুদ্ধে রিপাবলিক টিভির কদর্য প্রচার তাঁর কারারুদ্ধ হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যা থেকে তিনি আজও মুক্তি পাননি। সংবাদমাধ্যমে রিয়া চক্রবর্তীর বিচারের পিছনে একাধিক কারণ আছে। যেমন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তেমনি আছে দর্শকদের কলরব, যাদের অন্তরের ইচ্ছা হল ‘অন্যায়ের প্রতিকার’ করতে হবে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সুশান্তের পরিবারের নারীবিদ্বেষী কৌশলগুলো ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত। ছেলের আত্মহত্যার ব্যাখ্যা করতে সঙ্গিনী ডাইনি, ছেলের টাকায় ফুর্তি করত, ছেলের মাথা খাচ্ছিল --- এইসব বলা। রিয়ার বিরুদ্ধে এরকম বিচার এটাও প্রমাণ করে যে এ দেশে আর কোন মহিলাই সুরক্ষিত নয়, কারণ উনি কিন্তু কোন রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করেননি বা বিরোধিতাও করেননি। বা বলা উচিৎ ওঁর রাজনৈতিক মতামত আমরা জানিই না।
উনি আর পাঁচজন শহুরে মহিলার মতই একজন, যিনি নিজের ইচ্ছামত বাঁচার এবং ভালবাসার অধিকারের সদ্বব্যবহার করছিলেন। দোষের মধ্যে সেই পছন্দটা পিতৃতান্ত্রিক প্রথায় বেমানান। তবু সি বি আই, ই ডি আর এন সি বি রিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, এখনো তাঁর বিরুদ্ধে কণামাত্র প্রমাণ যোগাড় করতে না পারলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। সংবাদমাধ্যমে রিয়ার বিচার (আমার বিচারটাও) আসলে আমাদের সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিচার। এটা এমন একটা শ্রেণী, যারা নীতিবোধ এবং নিত্যপ্রয়োজনগুলো সম্বন্ধে তিতিবিরক্ত কারণ ওগুলো তাদের ভোগবাদী জীবনযাত্রা এবং ব্যর্থ উচ্চাশার হাত-পা বেঁধে রেখেছে। এই শ্রেণী এত দিনে পরনিন্দা পরচর্চার বলে বলীয়ান হয়ে আইন-বহির্ভূত বিচারকের পোশাকটা পরতে পেরেছে এবং রক্তপাতহীন হিংসা চালাচ্ছে। এত দিনে অ্যামাজনে শেষ কী কেনা হয়েছে তার বাইরে এরা জীবনের একটা মানে খুঁজে পেয়েছে।
পাঞ্চালী রায় একজন দিল্লী নিবাসী স্বাধীন গবেষক
অনুবাদ ঃ প্রতীক
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত
মুল লেখাটি ঃ https://thewire.in/media/rhea-chakraborty-media-trial-witch-hunt