পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

দাদা

  • 25 October, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1020 view(s)
  • লিখেছেন : জয়ন্তী দাশগুপ্ত
পুজো শেষ হয়েছে। কিন্তু পুজো আসলেই, বিশেষ করে বিশ্বকর্মা পুজো আসলেই কেন যে দাদার কথা মনে পড়ে, কমিউনিষ্ট পার্টি, উদ্বাস্তু কলোনির লড়াই এবং আরো নানান কিছু নিয়ে এই আখ্যান।

বিশ্বকর্মা পুজো এগিয়ে এলে অবধারিতভাবে দাদার কথা মনে হয়। ঐদিন দাদা আসতেন আমাদের পুজোর জামাকাপড় নিয়ে। মা তাঁর বোনপো'র পছন্দের সাধারণ কিছু পদ রান্না করতেন।  উৎসবের গন্ধ বয়ে আনা দাদার সেই মামুলি ব্যাগ ঘিরে কৌতূহল তো থাকতোই। আমাদের আনন্দ যেন দাদার মুখেও আলো ছড়িয়ে দিত।

দাদা মানে মানিকদার আর আমার গর্ভধারিনী মায়ের জন্মের বছর একই-১৯৩২ সাল। দাদার বাবা ছিলেন গণিত শিক্ষক, মেধাবী ছাত্র। ওপার বাংলার বরিশালে শ্বশুরবাড়ি আসার পথেই কলেরায় আক্রান্ত হন। শ্বশুরবাড়ির দোরগোড়ায় এসেই মৃত্যু। শ্বশুর শহরের নাম করা চিকিৎসক। অথচ নিজের জামাইয়ের চিকিৎসার কোন সুযোগই পেলেন না। দাদা তখন সদ্য জন্মেছেন। সম্ভবত সেই সদ্যোজাত সন্তানকেই দেখতে আসছিলেন পিতা। এরপর মা সহ পিতৃহারা সন্তানের পাকাপাকি ঠাঁই হল মামার বাড়িতে। দাদার মা, মানে আমাদের সুন্দর  মাসিমার জীবনে দুর্বিপাকের বোধ হয় আরেকটু বাকি ছিল। উনুনে কাঁঠাল বিচি পোড়াতে গিয়ে ছিটকে এসে চোখে লাগে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় চোখ। সম্ভবত দেশভাগের ঠিক আগে মানিকদার দাদু অনেক শোক সন্তাপ পেয়ে দেহ রেখেছিলেন। দাদু ছিলেন সুচিকিৎসক, তার ওপর জমিদারের নায়েব। বরিশালে শহরে এবং দেশের বাড়িতে বেশ কিছু স্থাবর সম্পত্তি  ছিল। মায়েরা ছিলেন ছ'বোন এক ভাই। সেও আরেক করুণ ঘটনা। সুস্থ সুন্দর সাত বছরের বালকটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলল। একমাত্র ছেলের এই পরিণতিতে দাদু পাগলপ্রায়। অনেক চিকিৎসার পরেও দৃষ্টি ফিরলো না। তখন কলকাতার ব্লাইন্ড স্কুলে তাকে ভর্তি করে দিলেন দাদু। সেখানে পাঠ সাঙ্গ করে অন্ধ মামা বরিশালের বাড়িতে ফিরলেন। দাদুর মৃত্যুর পর অনেক সম্পত্তিই হাতছাড়া হতে থাকল। অন্ধমামা এসব নিয়ে অনেক মামলা লড়েছেন। মায়ের তখনও বিয়ে হয়নি, তিনি মামাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতেন। মায়ের হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মত। এর মধ্যে বজ্রাঘাতের মত এল দেশভাগ। সেই সময়ে মায়ের বিয়ে হয়। বর ফৌজী। ওপারে যাওয়া নিষেধ। তাই মা-ই বরিশাল থেকে এলেন এপারে বিয়ে করতে। এপারে বসে মায়ের মনে নানা চিন্তা। নিজের আজন্ম পরিচিত ভিটে মাটি এখন অন্য দেশ। মা দাদা দিদি সেই ভিটে আঁকড়ে পড়ে আছেন। কীভাবে তাঁরা আসবেন? ১৯৫২ সাল। মায়ের তখন কোলে শিশুসন্তান। স্বামী  ওপার বাংলায় গেলে চাকরি খোয়াবেন। মাকে সাফ জানিয়ে দিলেন সেকথা। মা নিজের দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে গেলেন তাদের আনতে।  অত্যন্ত বুদ্ধিমতী অসমসাহসী মা, যিনি কোনোদিন স্কুল কলেজে যাওয়ার সুযোগ পাননি, কী ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে কতখানি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে তাঁদের নিয়ে ফিরেছিলেন-সেই রোমহর্ষক গল্প মায়ের মুখে শুনেছি। আফশোষ হয় কেন তখন সেসব লিখে রাখিনি! মায়ের বর্ণনা ছিল অনুপুঙ্খ।


ওপারে পড়ে রইল ঘর বাড়ি জমি পুকুর ফলের বাগান চাষের খেত আর দলিল দস্তাবেজের পাহাড়। পারিবারিক বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছিল। সেগুলি মায়ের বুদ্ধিমত্তায় আনা সম্ভব হয়েছিল।

এপারে এসে কলকাতার উপকণ্ঠে এক ভাড়া বাড়িতে শুরু হল দিন গুজরান। বরিশালের কিছু চেনা জানা পরিবারও তখন সেখানে বসবাস শুরু করেছেন। এক বাসা থেকে অন্য বাসা। অন্য পাড়া। কিছুদিন অন্ধমামারা ছিলেন আড়িয়াদহের দলিত পাড়ায়। পূর্ব পরিচিত কিছু মানুষের উৎসাহে অবশেষে এক উদ্বাস্তু পল্লীতে এক টুকরো জমি কেনা হল। সেখানে অস্থায়ী ডেরায় এসে উঠলেন অন্ধ মামা। বৃদ্ধা মা ভাড়া বাড়িতেই দেহ রেখেছিলেন। দেশভাগের তাড়নায আর অন্ধ ও অসুস্থ ক'টি মানুষের 'অন্ধের যষ্টি' মানিকদার ম্যাট্রিক পরীক্ষায় আর বসা হয়নি। পড়াশুনোয় ইতি পড়ছিল আগেই । অন্ধমামা সংসার চালানোর জন্যেঙ একবার কয়েকটি গরু কিনলেন। বিশেষ কিছু সুবিধা হল না। একবার কিনলেন কয়েকটি রিকশা। সেখানেও ডাহা লোকসান। প্রতারিতও হলেন।

উদ্বাস্তুপল্লীর মানুষের কাছে একজন শিক্ষিত এবং আইনজ্ঞ বিচক্ষণ মানুষ হিসাবে অন্ধমামা তখন বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বিভিন্ন জন আসে বিভিন্ন সাহায্যের জন্য। কিন্তু নিজের ব্যবসার এক্সপেরিমেন্টের করুণ ব্যর্থতায় সম্পত্তিবেচা পুঁজিও একসময় শেষ হল। এবার শুরু হল গয়না বেচা। সংসারে তীব্র অভাব। সেই সময় দাদা অনেক দিন বেলঘরিয়া থেকে গড়পাড়ে আরক মাসিমার বাড়ি খেতে যেতেন, হয়তো তাদের কিছু কাজকর্মও করে দিতেন। কখনও হেঁটে, কখনও ট্রেনে। হঠাৎই একদিন নিখোঁজ হয়ে গেলেন। অনেক খোঁজ খবর করেও হদিস মিলল না। তিন মাস পর দাদা নিজেই ফিরে এলেন। গড়পাড়ে যেতে গিয়ে ডব্লুটি-তে ধরা পড়ে তিন মাস জেলে কাটিযে।

মামা, বড় মাসিমা অসুস্থ হয়ে শয্যা নিয়েছিলেন। চলেও গেলেন একে একে। ওদিকে মা- ও সন্তানদের পড়াশুনোর জন্যে পাকাপাকিভাবে চলে এলেন। সুন্নামাসি আছেন তাদের সঙ্গে। দাদা এক জ্যেঠতুতো দাদার সূত্রে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এক ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানায় ঢুকলেন শ্রমিকের কাজে।  তাঁর দাদাও ওখানকার শ্রমিক। মানিকদা তাঁর বাড়িতেই থাকতে লাগলেন স্থায়ীভাবে, কাজের সুবিধার জন্য। সুন্নামাসি ছেলের পথ চেয়ে থাকেন। ছেলের আর আসার সময় হয় না। তবে মায়ের খরচ নিয়মিত পাঠান। মা , মাসি বিয়ের কথা বললে উড়িয়ে দেন," যাও বা চাইড্ডি খাইতে আছ, তাও পাবা না।" সুন্নামাসি ভাবী বৌমাকে বরণ করার জন্যে নিজের বালাজোড়া অভাবের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। বৌমার মুখ আর দেখা হল না। তিনিও চোখ বুজলেন চিরতরে।

দাদার সম্ভবত ছকবাঁধা জীবন বা সংসারের জন্যে তথাকথি আগ্রহ বা টান ছিল না। জ্ঞান হওয়ার আগে পিতৃহারা। মা অন্ধ মানুষ। পিতৃহীন বালক মামার বাড়ি অনাদরে ছিল না। তবুও বুকের কোণে বোধ হয় জীবনের প্রতি একটুকরো  অভিমান, কোন অভাব বোধ ছিল পিতৃহারা বালকের।। আর দেশভাগ একেবারে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। তার পরিণতিতে শিক্ষিত সচ্ছল সম্ভ্রান্ত একটা পরিবার যে এইভাবে পথে বসতে পারে, সেটা কে- ই বা ভেবেছিল। সেই আকস্মিকতায় বিমূঢ় সদ্যতরুণ মন ঐ অনিশ্চয়তা, মামার ব্যবসায়ে লোকসান, তীব্র অভাব, বেকারত্বের গ্লানি, রোগ,মৃত্যুর সেই বিষণ্ণ ভারী আবহ থেকে সম্ভবত বেরিয়ে আসতে চাইছিল। এ বার এক অন্য জগৎ, যোগ দিলেন রাজনীতিতে। দাদা এসইউসি'র এক একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। আশ্চর্য, মায়ের আরও দুই বোনপো, সুবোধ দাশগুপ্ত এবং সুপল দাশগুপ্ত, তাঁরাও দেশভাগের পর এপারে এসে বামপন্থী রাজনীতিতেই ঝুঁকেছিলেন। তাঁরা ছিলেন আরএসপি'র দায়িত্বশীল সংগঠক তথা নেতা। কোন্নগরে অনেকেই তাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে চিনতেন। তাঁরাও ছিলেন অকৃতদার যদিও রাজনীতির পাশাপাশি চাকরিও করেছেন। পারিবারিক দায় দায়িত্ব পালন করেছেন। সামাজিক সংযোগ রক্ষা করেছেন।

এখন ভাবি তখন উদ্বাস্তু হয়ে আসা তরুণ প্রজন্ম কেন কম্যুনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। হৃতসর্বস্ব হতমান, অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের  নতুন এক লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে থাকা ঐ প্রজন্ম সর্বহারার মুক্তির সংগ্রামেই খুঁজেছিলেন নিজেদের 'মানুষ' হিসাবে উত্তরণের ঠিকানা, সমাজে মাথা তুলে দাঁড়ানোর শক্তি ও সাহস, সামাজিক পরিচিতি। হঠাৎ নিঃস্ব হয়ে যাওয়া, ভিটে হারানো মানুষগুলোর, 'উদ্বাস্তু' পরিচয়টা যেন অসহ্য হয়ে উঠেছিল। যদিও সেই তকমা নিয়েই বাঁচতে হয়েছে বহুদিন।

কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যরা উদ্বাস্তুপল্লী গড়ার কাজে, অধিকারের আন্দোলনে , রোগের মোকাবিলায় মানুষের পাশে থাকতেন বলেই এক বলিষ্ঠ গণভিত্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল। সম্ভবত এই কারণেই কম্যুনিস্ট পার্টি বাংলায় ১৯৫২ র নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।

ফিরে আসি দাদার কথায়। মাসিমার মৃত্যুর পরও দাদাকে বিয়েতে রাজী করাতে না পেরে মা হাল ছাড়লেন। পরিবারের বড় ছেলের মত দাদা বহু দায়িত্ব পালন করেছেন। মায়ের কষ্টের সংসারে বরাবর অর্থ সাহায্য করে গেছেন। আশির দশকেই প্রথম দাদাকে দেখি। তখন দাদার কারখানায় কখনও স্ট্রইক বা লক আউট হলে মা চিন্তায় পড়ে যেতেন। শ্বশুর মশায়ের ১৭৫ টাকা পেনশন, দাদার মাসিক ১০০টাকা সাহায্য আর আমার ছাত্রীপড়ানোর মাসিক ৩০০ টাকার উপার্জন-এই দিয়ে মা কী নিপুণভাবে সংসার চালাতেন।

বরাবর এক পোশাক। সাদা হাতা গোটানো ফুল শার্ট।  হালকা ছাই বা খাঁকি রংএর প্যান্ট। জীবনে যাপনে মননে এক সত্যিকারের বামপন্থী মানুষ। মাঝে মাঝে দু'একটি চটি বই দিয়ে যেতেন পড়ার জন্য। খুব লজ্জার কথা, সেসব বইয়ের পাঠোদ্ধার সব সময় সম্ভব হত না। যদিও এসইউসি'র মহিলা কর্মীদের লেগে পড়ে থাকার ধৈর্য ও কর্মীদের দেওয়াল-লিখন তখন ছিল সমীহ আদায় করা। দাদামণি মানে আরএসপি'র সুবোধদাও একবার নিজের প্রচুর লেখাপত্র ডাকে পাঠিয়েছিলেন। প্রবন্ধগুলো সযত্নে এড়িয়ে বেছে বেছে গল্পগুলো পড়েছিলাম। আশ্চর্যভাবে দেখেছিলাম বেশিরভাগ গল্পের উপজীব্য আবাসন সমস্যা, উদ্বাস্তু মানুষের মাথা গোঁজার আস্তানার সমস্যা। সুবোধদারাও দুই ভাই ছিলেন খাঁটি বামপন্থী মানুষ। রোজগার করলেও তার বড় অংশ যেত পার্টির তহবিলে। আত্মীয় বন্ধুদের প্রয়োজনেও। পার্টিজান সরল শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবন ছিল তাঁদেরও।

মানিকদা মার্ক্সবাদী পাঠচক্রে  অংশ নিতেন। বুদ্ধিজীবী কমরেডদের সঙ্গে তাত্ত্বিক বিতর্কের কথাও উঠে আসতো কখনও কথা প্রসঙ্গে। শ্রমিক হিসেবে নিজের বাস্তব উপলব্ধি বলিষ্ঠ ভাবেই রাখতেন। আমি শুনতাম আগ্রহভরে। কখনও ছেড়ে আসা দেশ গাঁয়ের গল্পও হত। কখনও ভাইয়ের সঙ্গে প্রবল তর্ক বিতর্কও হত রাজনৈতিক প্রশ্নে। আমি আর মা খুব সন্তর্পণে সেসব বিতর্ক থেকে দু'জনকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতাম। কারণ কেউ কারও যুক্তি মানতে প্রস্তুত নন, তাই  অন্তহীন বিতর্ক চালিয়ে লাভ কী!

মাঝে মাঝে অনুচিত, হয়তো অবান্তরও, একটা প্রশ্ন আমার মনে জেগেছে। আমার এই অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় দাদারা, যারা সংসারে থেকেও সংসারী হননি, সমান্তরালভাবে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বও পালন করে গেছেন, তারা তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ ছিলেন! জীবনে কখনও প্রেম আসেনি? হয়তো এসেছিল, আমড়া গাছের কোণ থেকে দাওয়ায় লুটিয়ে পড়া শেষ বেলার নরম লাজুক রোদের মত!ক্ষণিকের তরে। হয়তো আসেইনি। একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের ব্যাপারে এঁরা ছিলেন ভীষণ চাপা।    

অবসর নেওয়ার পর দাদার ক্রমশ শরীর ভাঙছিল। পার্টি বন্ধু আত্মীয়স্বজন- সকলের পাশেই প্রয়োজনে দাঁড়িয়েছেন। তার যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা কি পেয়েছিলেন? যে কারণেই হোক অবসাদের মেঘ জমছিল। নীরবেই একদিন চলে গেলেন হাসপাতালের রোগশয্যায়।

আমার অর্ধপক্ব রাজনৈতিক ভাবনার জগতে দাদা, মানিকদা, মানিক লাল সেনগুপ্ত ছিলেন রাজনীতি সচেতন শ্রমিক শ্রেণির এক বলিষ্ঠ প্রতিনিধি। ইতিহাসের এক সন্ধিঃক্ষণে, এক মহাবিপর্যয়ের সাক্ষী ছিল যাঁর বয়ঃসন্ধিক্ষণ, স্বাধীনতা-উত্তর নানা আন্দোলনের ঝাপটায় পোড় খাওয়া যাঁর যৌবন, উন্নত সমাজের স্বপ্ন দেখা বুকে স্বপ্ন ভঙ্গের নৈরাশ্য যার মৃত্যুশয্যার সঙ্গী হয়েছিল।

কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কেন দাদাকে মনে পড়ে যায়? কেন পয়লা মে নয়? তার উত্তর আমার জানা নেই। শুধু মনে পড়ে যায় বিটি রোডের দু'ধারে ছোট, বড় , মাঝারী অসংখ্য কারখানায় অসংখ্য বিশ্বকর্মা ঠাকুর। রিকশা স্ট্যান্ডের মাইকে হিন্দি-বাংলা গান। বাচ্চাকোলে দেহাতী মহিলা, সলজ্জভাবে বাতাসে উড়ন্ত ঘোমটার কাপড় দাঁতে চাপা। বাচ্চা কাচ্চার হাত ধরে মেয়ে পুরুষের ছাড়া ছাড়া মিছিল। কারখানার গেট হাট করে খোলা তাদের জন্যে। নীল মেঘমুক্ত আকাশে নানা রংয়ের ঘুড়ির মেলা। আর উজ্জ্বল রোদে ঘর্মাক্ত হাসিমুখে দাদার প্রবেশ,  "কই! সব আছ ক্যামন? মাসিমা--?"

সেসব কারখানায় এখন আলো ঝলমল বহুতল, মল। কোনটা আবার আগাছার জঙ্গলে মুখ ঢেকেছে, মরচে পড়া রং চটা বিবর্ণ বন্ধ গেটে নামটাও হয়তো আজ দুষ্পাঠ্য। শ্রমিকরা? তাঁদের খবর হয়তো কখনও স্টোরি-খোঁজা কোন সাংবাদিকের কলমে ক্বচিৎ উঠে আসে!

 

0 Comments

Post Comment