ঘরবন্দী আমরা সবাই...সারা পৃথিবী জুড়ে ত্রাস , মৃত্যু মিছিল...রাষ্ট্রনায়ক থেকে রাজপুত্র...গায়ক থেকে নায়ক...সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে কোটিপতি কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না কোভিড ১৯...এরকম ধ্বংসলীলা মানব সভ্যতা এর আগে কখনো দেখেছে কিনা জানিনা কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড়ো সঙ্কটের মুখে হোমো সেপিয়েন্সরা পরে নি আগে...
ভাইরাল ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে মানুষের এলাকায় নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিণ...পেখম মেলছে ময়ূর ...যমুনার জল আবার ঘন নীল...কি জঘন্য অত্যাচারটাই না আমরা করে চলছিলাম প্রকৃতির উপর...কিসের এত ঔদ্ধত্য? উপরয়ালা মগজ দিয়েছেন বলে তার সৃষ্টিকে প্রতিনিয়ত পায়ে রগড়ে বিজাতীয় আনন্দ পেতে হবে? জগতের নিয়ম " প্রতিটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে" আমাদের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম কাজের প্রতিক্রিয়া আসবেই...Law of Universe ...
এবার আসি ঘরে থাকার বিষয়ে ...গত দশকের সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া...তার সাথে স্মার্ট ফোন এবং সস্তায় ইন্টেরনেট এর হাতছানি...প্রচুর প্রচুর মডেলের রকমারি সম্ভার...ভারতের সামাজিক প্রেক্ষাপটের এক অভাবনীয় পরিবর্তন। ..সবুজ আলো জ্বলা মানুষ গুলির সাথে সখ্য, ভাললাগা কিছু ক্ষেত্রে গভীর প্রণয় ... যে গৃহবধূটি কোনও কালে স্বামীর চোখে মুগ্ধতা দেখেনি সে ইন্টেরনেট প্রণয়ীর কাছে ছবি পাঠিয়ে যখন সীমাহীন আবেগে ভাসা কিছু মুগ্ধ শব্দ ভাললাগা হিসেবে পাচ্ছে তখন তার মনে দোলা লাগা খুব স্বাভাবিক ঘটনা...এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই...
যে পুরুষটি সংসারের জাঁতাকলে পিষতে পিষতে ভুলেই গেছিল একদিন তার লেখা কবিতা ঝড় তুলত সহপাঠিনীদের বুকে...সে হঠাত যখন তার ইন্টারনেট এর এক গুনমুগ্ধ পাঠিকার সন্ধান পায় আবার তার মনে বসন্তের আগমন ও খুব স্বাভাবিক ঘটনা...এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ......কিন্তু তারপর?
ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সবই যে আপেক্ষিক ...একটি ব্লক এ হাত ছোঁয়ালেই সব হাওয়া..তা সত্ত্বেও এখানেও সেই অধিকার বোধ."তোমার কালো শাড়ি পড়া ছবিতে যে লোকটা লাভ রিয়াক্ট দিয়েছে তার সাথে খুব কথা হচ্ছে নাকি আজকাল?"
অথবা " তোমার প্রত্যেক কবিতা তে যে মহিলা কমেন্ট করছেন তার সাথে মিট করেছো বুঝি কাল, এই জন্য চার ঘন্টা অনলাইন ছিলে না তাই না?"
আজব ব্যাপার ...আরে মশাই আপনি যার কালো শাড়িতে মোহিত হলেন তার আর ও কিছু কারেন্ট একাউন্ট থাকতেই পারে... কিংবা যার কবিতা মনে করতে করতে রান্না করেন আর গরমে ঘেমেও দখিণা বাতাসের ছোঁয়া পান, সেই বাতাস আরও কিছু ঘর্মাক্ত হলুদ নুন মাখা আপনার মত সহযোদ্ধা পেলে দোষটা কোথায়?
এই আগলে রাখলেই বিপদ...একটা ব্যাপার বুঝতে হবে...এই সম্পর্ক গুলো যদি আপনার মধ্যে পসিটিভ ভাইব আনে তাহলে ভাল কিন্তু আপনার বা আপনার পরিবারের মধ্যে বিন্দুমাত্র বিষণ্ণতার সৃষ্টি করলে এক লাফে পালান......গুরুত্ব যতটা পাবেন ততটাই দিন ... তিনি সবুজ হয়ে জ্বলজ্বল করছেন অথচ আপনার সাথে কথা বলছেন না মানেই যেমন অন্য কারোর সাথে প্রেমালাপ এ ব্যস্ত নন...আর যদি হয়েও থাকেন তাহলেই বা সমস্যা কি ? এটা অদ্ভুত এক দুনিয়া ...যেখানে উল্টো দিকের মানুষকে যাচাই করার যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা আছে ...
এবার বলি আমার এত বাজে বকার কারণ...... মানুন চাই না মানুন এই লক ডাউনের বাজারে সকলেরই গোটা কতক সবুজ আলো মনে ও প্রাণে জ্বলেছে ...। খুব ভাল কথা...প্রেমে থাকা খুব ভাল জিনিস...তবে বাস্তব দুনিয়াতে শক্ত করে পা দিয়ে রাখুন...ভেসে বা উড়ে গেলে করোনা পরবর্তী বিশ্বের মজা ভাল করে উপভোগ করতে পারবেন না... নিজের প্রতি কমিটেড হন... আর সবুজ আলোর কাছে কমিটমেন্ট ... হেহেহেহে .........তার থেকে একটু ডাল্গোনা কফি বানিয়ে খেয়ে ফেলুন আর নিজেদের সেভিংস একাউন্ট দের ও খাওয়ান ... আর আমার মত বিশ্ব গরিব যাদের কারেন্ট বা সেভিংস কোনও একাউন্ট ই নেই তারা লকডাউন উঠলে কি কি করবেন তার লিস্টি বানিয়ে ফেলুন... একটা সুন্দর পৃথিবীর আসছে আগামী দিনে...এই আশাতেই না হয় আর ১৫ টা দিন কাটিয়ে দি.....
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে … আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে এই যুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে তার একটা রূপরেখা …ঘরবন্দি গোটা দুনিয়া ... ত্রস্ত ...অনিশ্চিতের অশনি সঙ্কেত... এই বিপর্যয়ের পর হয়ত আগামী প্রজন্মকে শুধু লড়াই চালিয়ে যেতে হবে টিকে থাকার জন্য... যেমনটা আমাদের পূর্বসূরিরা চালিয়েছেন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর , দেশভাগের পর, হিরোশিমা নাগাসাকি ধংসের পর... মা বাবা হিসেবে শুধু ওদের মানসিক প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করতে পারি ... আগামী যুদ্ধ জয়ের জন্য ওদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেক শক্ত হতে হবে ... ভিডিও গেম এর চেয়ে বেশি আরও অন্য কিছু ... আর অনলাইন গেমের চেয়েও ইতিহাসের বই পড়াতে হবে ... সবথেকে বড় ব্যাপার ওদের ভীষণ ভাবে পরিবেশ সচেতন করতে হবে ... সেটা সম্ভব শুধু মাত্র নিজেরা শৃঙ্খলা মেনে চললে ...
এই ঘরবন্দির দিন গুলি তে আশা করি সবাই ওদের অনেক সময় দিয়েছেন ... আগামীদিন গুলি তেও একটু সোশ্যাল মিডিয়া তে কম সময় দিয়ে এদের দিকে দৃষ্টি দিই চলুন... ওদের অদ্ভুত বকবক শুনি ...নিজেরা ভুলভাল আড্ডা মারি ... গান গাই ... সুকুমার রায় একসাথে আবৃত্তি করে ফেসবুক আর ইউ টিউব এ আপলোড করি ... মোট কথা ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করি ... সেটা সম্ভব ওরা মানসিক নিরাপত্তা পেলে আর আনন্দে থাকলে...
আমি এই ব্যাপারে একদমই বিশেষজ্ঞ নই কিন্তু একজন মায়ের দৃষ্টি ভঙ্গী দিয়ে বুঝতে পারছি আগলে রেখে মানুষ করলে পরবর্তী কালের লড়াইতে ওদের অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে...সুতরাং বাস্তবের মাটিতে ওদের পা রাখতে দিন ... জানতে দিন আগামী পৃথিবী হয়ত আর আগের মত হবে না ... দায়িত্ব নিক ওরা ... চলুন, সভ্যতার পতাকা বয়ে নিয়ে চলার মত যোগ্যতা অর্জন করতে সাহায্য করি আমাদের সোনাদের ... ওরাই আগামী... সুস্থ হয়ে উঠুক আমাদের পৃথিবী এই কামনা করি ....