পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কাশ্মীর ফাইলস: একটি আদর্শ সঙ্ঘী প্রোপাগান্ডা ও বলিউডি সাংস্কৃতিক কারখানার 'নাৎসি'করণ

  • 16 April, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1349 view(s)
  • লিখেছেন : অত্রি ভট্টাচার্য
যেখানে হরিদ্বারের ধর্মসংসদ থেকে ডাক আসছে হিন্দুদের প্রতি, মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র তুলে নেওয়ার, ঠিক সেই সময়েই অগ্নিহোত্রী সংখ্যাগুরু জনতার ইউটোপিয়ান ফ্যান্টাসিকে, তাদের স্বপ্নের অন্তর্লীন স্বপ্নকে সিনেমার ভাষায় জীবন্ত করে তুলছেন। যে দেশে 'লাভ জিহাদ'-এর ভুয়ো সংজ্ঞাকে ক্রমশ আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই সিনেমায় উঠে আসা হিন্দুরমণীর আর্তনাদের 'ফলস ট্রুথ' হিন্দু-অস্মিতাকে রক্ষা করার চিন্তাকেই ক্রমশ জনমানসে লালিত করতে সাহায্য করবে।


'Only graveyard breezes blow in the valley of Kashmir. Murder tours the region in different guises, garbed sometimes in the uniform of the Indian army or in the form of bearded men, armed and infiltrated by Pakistan, speaking the language of jihad—Allah and Fate rolled into one. The background presence of nuclear missiles offers a ghoulish comfort to both sides. Kashmir, trapped in this neither–nor predicament, suffocates. Depressed and exhausted by the decades of violence, many Kashmiris have become passive: the beauties of spring and summer pass unnoticed by listless eyes.
Yet, fearful even of medium-term possibilities, Kashmiris prefer to live in the present. Oppressed by neither–nor, they are silent in public, speaking the truth in whispers.'

~ Tariq Ali, The Story of Kashmir (2011)

জার্মানির নুরেমবার্গে আয়োজিত ৭ লক্ষ সমর্থক-সমৃদ্ধ নাৎসি পার্টি কংগ্রেসের উপর আধারিত, ১৯৩৫-এ নির্মিত ট্রায়াম্ফ অফ দ্য উইল তথ্যচিত্রটিকে ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকিং-এর ইতিহাসে একটি মাইলফলক গণ্য করা হয়। শুধু ফিল্ম ইতিহাসে মহৎ টেকনিকের উত্থাপনের জন্য নয়, প্রোপাগান্ডার বিশ্ব- ইতিহাসে এই তথ্যচিত্রটিকে বলা যায়, জার্মান ম্যাসকুলানিটির, তথা- ব্লন্ড, নীলচোখো নাৎসি যুবকদের সাংস্কৃতিক 'পুরুষত্বের' একটি দলিলসুলভ দিকচিহ্ন।


অ্যাডলফ হিটলার ছবিটিকে 'করমুক্ত' করেন এবং এই সিনেমার পরিচালক, প্রযোজক লেনি, যিনি ছিলেন নেহাতই তৎকালীন জার্মান বাণিজ্যিক ছবির অভিনেত্রী, হয়ে ওঠেন হিটলারের প্রিয় চলচ্চিত্রকার এবং থার্ড রাইখের সবথেকে প্রয়োজনীয় প্রোপাগান্ডিষ্ট।

ট্রায়াম্ফ অফ দ্য উইল ছাড়াও লেনি ১৯৩৮-এ তৈরী করেন, 'ওলিম্পিয়া' নামক তথ্যচিত্রটি যেখানে নাৎসি জার্মানিকে, গৌরবান্বিত করা হয় বিশ্বের দরবারে।


যদিও, চলচ্চিত্রের মাপকাঠিতে লেনির সমতুল্য না হলেও, বিজেপির মাপকাঠিতে বিবেকরঞ্জন অগ্নিহোত্রী প্রকৃষ্ট প্রোপাগান্ডা-নির্মাতা হিসেবে উঠে আসছেন।

কাশ্মীর ফাইলসের মুক্তির পর পরই, বিবেক ভারতীয় জনতা পার্টির স্নেহধন্য হয়ে উঠেছেন, কারণ, বার্তা ও নান্দনিকতার দিক থেকে, বিজেপির মুখের কথাই যেন সিনেমার ভাষায় অনুবাদ করেছেন বিবেক। মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং এই সিনেমার পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন।


সিনেমার বিষয় মূলতঃ আবর্তিত হয়েছে, ১৯৮৯- এ কাশ্মীরের মিলিট্যান্সি পর্বে, কাশ্মীরী পন্ডিতদের বিতারণ নিয়ে। কাশ্মীরী পন্ডিত সংঘর্ষ সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত উপত্যকার হানাহানিতে মৃত কাশ্মীরী পন্ডিতদের সংখ্যা ৩৯৯-জন। যদিও, এই চলচ্চিত্রটিতে দাবি করা হয়েছে, আরো বেশিসংখ্যক কাশ্মীরী পন্ডিতদের মৃত্যুর- এবং, এই এক্সোডাসের দায় চাপানো হয়েছে- ক্রমান্বয়ে জাতীয় কংগ্রেসের, 'লিবারাল'দের, মানবাধিকার কর্মীদের, নকশালপন্থীদের, জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অতি অবশ্যই মুসলমান জনসম্প্রদায়ের উপর। যদিও, একবারও সিনেমায় বলা হল না, সেই সময়কার বিজেপি-সমর্থিত কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভি.পি সিং সরকারের কথা। এলো না, তৎকালীন কাশ্মীরের রাজ্যপাল জগমোহনের কথা- যিনি পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন।

এছাড়াও,সিনেমাটি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির দ্বারা অসংখ্য কাশ্মীরী মুসলমানের মৃত্যুকে সুচারুভাবে এড়িয়ে গেছে। সিনেমায়, এমন মুহূর্তও রয়েছে, যেখানে ৩৭০ ধারা আগেই রদ করলে এমন অঘটনগুলি ঘটতো না, এই ইঙ্গিত রয়েছে। আসলে, কাশ্মীর ফাইলস হল অ্যাংরি সঙ্ঘী পাড়া-প্রতিবেশীর পাঠাতে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ ফরোয়ার্ডের দৃশ্যরূপ, যেখানে 'ফ্যাক্ট'-এর খাতা শূন্য,আর 'জেনোসাইড' শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়েছে, ভুয়োদর্শী ইতিহাস নির্মাণ করার জন্য, মোদী সরকারের কাশ্মীরের প্রতি অগণতান্ত্রিক মনোভাবকে দেশবাসীর কাছে 'সহি' পদক্ষেপ প্রমাণ করার জন্য।

ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা পোষণের জন্য নির্মিত এই 'কাহিনিচিত্র'টি, বিজেপির মুসলমান বিরোধী রাজনীতির তূণীরে, একটি নতুন তীর তো বটেই, যে অস্ত্রাগার থেকে তার উৎপত্তি, তা হল কাশ্মীরী পন্ডিতদের জীবনযন্ত্রণা।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য ব্যপার হল- কিছু বিশেষ সংবাদমাধ্যমকে, কিছু বিশেষ ফিল্ম ক্রিটিকদের লক্ষ্য করে অগ্নিহোত্রীর বিষোদগার- বিবেক-নির্মিত 'গণশত্রু'র তালিকা আরো দীর্ঘ করছে।
একদা, এই বিবেক অগ্নিহোত্রী নিউজলন্ড্রিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,“who said facts are facts”, সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, কেউ তার সিনেমার তথ্যভ্রান্তি ধরিয়ে দিলে, কেন তিনি আগ বাড়িয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছেন!

খানিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে, খানিক নিজেদের হিন্দুত্ববাদী শাখা-প্রশাখাকে কাজে লাগিয়ে, এই সিনেমাটি জনমানসে শোরগোল ফেলেছে। যে কারণে, আগ্রাসী হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা স্লোগানের ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন সিনেমাহলগুলোতে।
যদিও, দিল্লি ও জম্মুতে এখনো বসবাসকারী কাশ্মীরি পন্ডিতদের প্রকৃত সুবিচারের দাবি, ধামাচাপাই রয়েছে। তাতে অবশ্য, বিবেক অগ্নিহোত্রীর, হাইপার-জাতীয়তাবাদের 'মসিহা' হওয়া আটকাচ্ছে না।

একটা দৃশ্যের নিমার্ণও এখানে মিথ্যা নয়, সবটাই আদ্যন্ত সত্যি, এটাই ইতিহাস,প্রকৃত ইতিহাস- ট্রায়াম্ফ অফ দ্য উইলের পক্ষে সাফাই গাইতে লেনিকেও এমন কিছু কথা বলতে হয়েছিল।

যদিও, বিবেকের ও লেনির মধ্যে স্থান, কাল,পাত্রের বিস্তর ফারাক থাকলেও, ফ্যাসিবাদী প্রোপাগান্ডার মূলসূত্রে তারা দুজনেই আবদ্ধ- অর্ধসত্যের উপর মিথ্যের এমন প্রলেপ দাও, যাতে আমরা নির্ণয় করতে পারি মিথ্যাকে, নিমার্ণ করতে পারি সত্যের বয়ান, নিজেদের মত।

কাশ্মীর ফাইলস আসলে শেষমেশ নিঃশব্দে, এই কথাই বলে যে, ভারতীয় মুসলমানদের সকলকে পন্ডিতদের মৃত্যুর দায় নিতে হবে, এবং মেনে নিতে হবে আজকের হিংসাকে, যা দৈনিক নেমে আসছে সাধারণ মুসলমানের উপর।

এখানে প্রধান মিলিট্যান্ট চরিত্রটি, মূলত ইয়াসিন ভাট ও বিট্টা কারাটের মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। যে হিন্দু মহিলার নৃশংস ধর্ষণদৃশ্যের চিত্রায়ণ হয়েছে এই সিনেমায়, তা সরলা ভাটের গণধর্ষণের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে। আজাদ কাশ্মীরের শ্লোগানের সঙ্গে যখন জুড়ে গেছিল, 'হিন্দু পুরুষকে মেরে হিন্দু মেয়েদের রাখো'র ঘৃণ্য স্লোগান, সেই কথা তো ২০১৭-তে অঙ্কুর দত্তের On Uncertain Ground: Displaced Kashmiri Pandits and the Jammu Camps সম্পর্কে লিখতে গিয়ে, তথ্যচিত্রকার সঞ্জয় কাক লিপিবদ্ধ করেছেন। কাজেই, বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধা প্রথম 'সুপারম্যান' আর যেই হোন, বিবেক অগ্নিহোত্রী নন।

প্রধান খলচরিত্র বিট্টার মাধ্যমে, মুসলমান জনসম্প্রদায়কে একটি হিংস্র,বর্বর ধার্মিক সম্প্রদায় হিসেবে দেখানো হয়েছে।
কখনো কারোর স্বামীকে রক্তমাখা ভাত খাওয়ানো, কোনো কবিকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া, এইসব দৃশ্যের নির্মাণের মাধ্যমে, বিবেক প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছেন এটি মুসলমান বিরোধী সাবটেক্স নির্মাণের। যাতে, সন্ত্রাসবাদীর মুখ হয়ে ওঠে প্রতিটি ভারতীয় মুসলমানের মুখ।

আদপে, বিশ্বজুড়ে যে ইসলামোফোবিয়ার কারখানা গড়ে উঠেছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী মদতে, সেই প্রোজেক্টের একটি সাংস্কৃতিক রূপ হিসাবে এই সিনেমাটিকে দেখা যেতে পারে। সুচারুভাবে তাই, প্রখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিক নিবেদিতা মেননের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয়, সিনেমায় দেখানো এএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের 'দেশদ্রোহী' প্রফেসর রাধিকা মেননের প্রতিভূ হিসেবে। 'কাশ্মীর' শুধুমাত্র আর শব্দ থাকেনা, 'মুসলমান' থাকেনা আলাদা কোন শব্দ, এই শব্দগুলি জনমানসে হয়ে ওঠে এক একটি সাংস্কৃতিক চিহ্ন - ত্রাস, রক্ত ও হিংসার প্রতীক।

এখানে, মূল ন্যারেটিভটি রচিত হয়েছে একপেশে বয়ান ও অর্ধসত্যের সঙ্গে। এবং, সম্পূর্ণ নির্মাণটিকে একমাত্র সত্য বলে প্রচার করা হচ্ছে। যেভাবে, অনুপম খের বলেই ফেলছেন 'ফেক নিউজ বিষয়টি সত্য ধামাচাপা দেওয়ার থেকে কম খারাপ বিষয়'।

বিবেক খুবই সক্ষমতার সঙ্গে নিরীক্ষণ করেছেন, ভারতীয় সিনে-দর্শকদের হিংস্র ও সরলীকৃত প্রোপাগান্ডার প্রতি আকর্ষণকে। প্রোপাগান্ডা, যা আদপে যে কোন বিষয়ে জনসম্মতি আদায় করার একটি কৃৎকৌশল মাত্র, তা এই সিনেমার ছত্রে ছত্রে বিবেক অগ্নিহোত্রী বুঝিয়েছেন।

অগ্নিহোত্রীর সিনেমাটোগ্রাফি, ব্যবহার করেছে বিভিন্ন দৃশ্যসংকেতকে, এই সিনেমার নৈতিক গ্রহণযোগ্যতার নির্মাণে- রক্তস্নাত রাস্তাঘাট, সিঁড়ি, মিলিট্যান্টদের শরীরী অ্যাকশন, গানশটের শব্দ ও ছায়া, নিপীড়িত পন্ডিতদের ত্রস্ত মুখ- দেখা গিয়েছে অবিরত।

যেভাবে অনুপম খেরের চরিত্রটি ক্রমশ ক্যারিকেচার হয়ে ওঠে, ঠিক সেভাবেই লাল আলোময় ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্যামেরা, পল্লবী জোশি অভিনীত চরিত্রটি একইসঙ্গে আবেদনময়ী ও ক্রূর হিসাবে উপস্থাপিত করেছে। অন্তিম দৃশ্যে, অগ্নিহোত্রী আমাদের বাধ্য করেন, বন্দুকের ডগায় ২৪ জন সিভিলিয়ানের মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করতে। ক্যামেরা নিয়োজিত হয়, মৃতদেহের স্তূপের উপর কিশোর শিবার মুখভঙ্গিকে ক্লোজআপে ধরতে, যেখানে এই দৃশ্যটি রচনা করে একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন- 'কোন পরিস্থিতিতে, কোন রাজনৈতিক প্ররোচনায় এই নৃশংস হত্যাকান্ড সম্পন্ন হয়েছিল?'

নাৎসি জমানার জার্মানিতে সরকারী প্রোপাগান্ডার জরুরীতম স্তম্ভ ছিল Volksgemeinschaft অর্থাৎ একটি জাতীয় সমন্বয়বাদী কমিউনিটির আদর্শ-প্রচার, ইহুদি বিনা সকল জার্মানই বিশুদ্ধ আর্যরক্ত, সুতরাং দুনিয়ার জার্মান এক হও, সদলবলে ইহুদি খেঁদাও, এই ছিল সেই প্রচারের মূলমন্ত্র।

এই সিনেমায়, অগ্নিহোত্রী কাশ্মীরি পন্ডিতদের দুর্দশাকে সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন ঠিক এভাবেই, যেখানে তার দুটো কার্যসিদ্ধি হয়েছে: প্রথমত, 'হিন্দু খতরে মে হে' এই স্লোগানকে সার্থক ইউনিফিকেশনের কাজে ব্যবহার করতে পারা, এবং দ্বিতীয়ত, মুসলমান জনসম্প্রদায়কে একটি একত্রিত ও খতরনাক 'অপর' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারা।

সময়োচিত পদক্ষেপ হিসেবেও অতি দক্ষিণপন্থীদের তরফ থেকে এই সিনেমাকে দেখা যেতে পারে, মনে রাখতে হবে যেখানে হরিদ্বারের ধর্মসংসদ থেকে ডাক আসছে হিন্দুদের প্রতি, মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র তুলে নেওয়ার, ঠিক সেই সময়েই অগ্নিহোত্রী সংখ্যাগুরু জনতার ইউটোপিয়ান ফ্যান্টাসিকে, তাদের স্বপ্নের অন্তর্লীন স্বপ্নকে সিনেমার ভাষায় জীবন্ত করে তুলছেন। যে দেশে 'লাভ জিহাদ'-এর ভুয়ো সংজ্ঞাকে ক্রমশ আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই সিনেমায় উঠে আসা হিন্দুরমণীর আর্তনাদের 'ফলস ট্রুথ' হিন্দু-অস্মিতাকে রক্ষা করার চিন্তাকেই ক্রমশ জনমানসে লালিত করতে সাহায্য করবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের নাৎসি জার্মানি আমাদের কয়েকটি প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়েছিল- যা থেকে আমরা ঐতিহাসিক ভাবে শিখেছিলাম যে, প্রোপাগান্ডা আসলে জনপ্রিয় ভাবধারা, অনুভূতি ও ডিজায়ারকে একটা জোরদার ধাক্কা দেয় মাত্র, বড়জোর সমাজে আগে থেকেই উপস্থিত ফল্টলাইনগুলোকে সে আরো উসকে দেয়।

এবং, প্রত্যাশিতভাবেই সমস্ত হিন্দি বলয় জুড়ে দেশপ্রেমিক জনতা মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গল স্ক্রিন ভরিয়ে দিচ্ছেন, উঠছে বীরদর্পী হিন্দু পুরুষের মুসলমান মহিলাদের বলপূর্বক বিবাহের স্লোগান, ধ্বনিত হচ্ছে, 'মুল্লে কাটে জায়েঙ্গে, রাম রাম চিল্লায়েঙ্গে'।
এখন, ভবিষ্যত বলবে বিবেক অগ্নিহোত্রীর এই ঘৃণা-উৎপাদন মেশিনটি কতদূর সফল হয়, হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণের ভিত শক্ত করতে!

0 Comments

Post Comment