পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই না প্রধানমন্ত্রীর বিয়ের বরযাত্রী ?

  • 24 May, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 927 view(s)
  • লিখেছেন : প্রশান্ত ভট্টাচার্য
ভাবতে অবাক লাগে, বিরোধীরা মোদীর ত্রাতা হতে উঠে পড়ে লাগলেন! আসলে মোদী-শাহর বিজেপি বহুদিন ধরে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, তারাই একমাত্র দেশপ্রেমী, তারাই প্রকৃত জাতীয়তাবাদী দল। এমনকী, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা জাতীয় কংগ্রেসের ক্রেডেনসিয়ালকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আর তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো দলকে তো বিজেপি মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম তোষণের অভিযোগে বার বার কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। তাহলে তাদেরকে বরযাত্রী হিসেবে বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্য কী?

লোহা তপ্ত থাকতে থাকতেই তা থেকে আয়ূধ তৈরি করতে হয়। নইলে হাইড্রাস ফেরিক অক্সাইড। এটা আমাদের দেশের বিরোধীরা কবে বুঝবেন? সবাই মিলে 'বরাত' -এ চলে গেলেন! গেলেন নরেন্দ্র মোদীকে বাঁচাতে। বুঝতেই পারছেন না 'সিঁদুর'বেচা শুরু হয়েছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে। সিঁদুর সওদাগর মোদী দেশপ্রেম বেচে যাবেন।এখন তো তাঁর ধমনীতে রক্ত নয়, গরম সিঁদুর বইছে।


আমাদের এক বন্ধু রসিকতা করে বলেছেন, 'New Blood Group discovered in India - Vermilion Red. Symptom: Boiling hot blood.' তবে এসব নিয়ে আমরা ঠাট্টা, ইয়ার্কি করতে পারি কিন্তু ভারতীয় জনতার পয়লা নম্বর শত্রু বিজেপি আর বিরোধীদের কিছু যায় আসে না। বিজেপি পদ্ম সংখ্যা বাড়ানোর কাজ সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত ভাবে করছে। অন্যদিকে, বিরোধীরা মশারির ভিতর মশারি করতে করতেই শেষ। যখন সবার মিলিত উদ্যোগে চেপে ধরার কথা মোদী-শাহকে তখন তরজা চলছে, কে গেল, কাকে ডাকা হল না। বিতর্কটা শশী তারুর না রাহুল গান্ধীর পঠানো নাম থেকে কাউকে, ইউসুফ পাঠান, বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে নয়, বা মিম-এর ওয়াইসিকে নিয়ে নয় কেন? বিতর্কটা এই নয় যে, নালায়েক শ্রীকান্ত শিন্ডে বা কানিমোঝি নিয়ে নয় এমনকি, সাত প্রতিনিধি দলে সাংসদের সংখ্যায় তৃতীয় তৃণমূলের কেউ নেতা নয় কেন? কেন সিপিএমের জন ব্রিটাস? এই সব নিয়ে কথা বলার থেকেও বেশী জরুরি, কেন প্রধানমন্ত্রী এভাবে তড়িঘড়ি সাংসদদের দল পাঠালেন বিদেশে?


এর একমাত্র কারণ দেশের প্রধানমন্ত্রী দুর্বল আর বাইরে প্রচার করে বেড়ান, তাঁর নাকি ৫৬" ছাতি। আসলে নিজেকে বেইল আউট করতে মোদী বিরোধীদের ছেড়ে দিলেন দেশে দেশান্তরে। গোটা ইন্ডিয়া ব্লকের উচিত ছিল মোদীর এই 'বরযাত্রী' বয়কট করা। অথচ কোনো বিরোধী দলের তরফে এ নিয়ে রা শোনা গেল না। একমাত্র শিব সেনার উদ্ধব শিবিরের নেতা সঞ্জয় রাউত বলছেন, এই ধরনের বরযাত্রী বিদেশে পাঠানোর কোনো মানে ছিল না। এটা পাঠাতে হচ্ছে কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজে দুর্বল। ভাবুন তো, একজন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে (একনাথ শিন্ডের ছেলে শ্রীকান্ত শিন্ডে) বিদেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে কী বলবেন? রাউতের অভিযোগ, অন্য সব কিছুর মতো এখানেও পুরোপুরি রাজনীতি করছে বিজেপি। ইন্ডিয়া ব্লকের উচিত এই বরযাত্রী বয়কট করা। যদিও তাঁর দলের নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীকে প্রতিনিধি দলে রাখা হয়েছে। রাজনীতি করা হচ্ছে বলে কংগ্রেসও অভিযোগ করেছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী চার জনের নাম পাঠান। তার মধ্যে ছিল প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী আনন্দ শর্মা, লোকসভা সাংসদ গৌরব গগই, রাজ্যসভার সাংসদ ডঃ সইদ নাসির হুসেন ও লোকসভা সাংসদ রাজ্য ব্রার। কংগ্রেসের প্রস্তাবিত নামের তালিকা মোদী সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে শশী তারুরকে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিনিধিদলের নেতা করেছেন।  যা স্পষ্টতই কংগ্রেসের ভেতরে চিড় চওড়া করার উদ্যোগ বলেই মনে করছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। যেমন ইউসুফ পাঠানকে প্রাথমিক তালিকায় রেখে তৃণমূল কংগ্রেসে অন্তর্বিরোধ বাড়াতে চেয়েছিল মোদী সরকার। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বর সঙ্গে আলোচনা না করে পাঠানের নাম রাখা হয়েছিল বলে মমতা ও অভিষেক বেজায় ক্ষেপে গিয়েছিলেন। তাঁরা বলেও দেন, তৃণমূলের কেউ প্রতিনিধি দলে থাকবেন না। তাঁদের যুক্তি, অন্য রাজনৈতিক দলের কোন সদস্য এই প্রতিনিধি দলে শামিল হবেন, তা কেন্দ্রীয় সরকার একতরফাভাবে কী করে ঠিক করে। যদিও দলের ভিতরের খবর, ইউসুফ পাঠানের নামটা মোদী সরকার নিজে থেকে ঠিক করেনি, কিরেন রিজিজু আগ বাড়িয়ে বহরমপুরের সাংসদকে ফোন করেননি। দলেরই এক বর্ষীয়ান সাংসদ অভিষেককে ছেঁটে পাঠানের নাম সাজেস্ট করেন। কেননা, দলীয় সংগঠনের সাম্প্রতিক রদবদলে ওই বর্ষীয়ান সাংসদের ডানা ছাঁটা হয়েছে। আর এই ছাঁটাছাঁটির প্রধান কারিগর ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ স্বয়ং।  তাই এটা ছিল পালটা কোপ। কিন্তু আসরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেমে পড়তেই সমীকরণ বদলে গেল।


এ গুলো সবই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার বিন্যাস ও সমবায়, এরমধ্যে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আদর্শ বিরোধী দলের ভূমিকা নেই। সবচেয়ে বড় কথা আরএসএসের বাঁধা ছকে মোদীর এই ভারতের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী বার্তা দিতে সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিবিদল পাঠানো নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারল না বিরোধীরা? কেউ জানতে চাইলেন না, যে প্রধানমন্ত্রী পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার পর সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে সেখানে না থেকে বিহারের মধুবনীতে সরকারি অনুষ্ঠানের আড়ালে ভোট প্রচারে ছোটেন, তাঁকে তোলা দিতে 'আমাদের' কেন বিদেশে যেতে হবে? কেউ প্রশ্ন করলেন না, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির প্রধান পুরোহিত, তখন 'আমরা' কেন? ট্রাম্পকেই বলুন, তিনি স্পষ্ট করে বলুন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের মৃগয়াক্ষেত্র আর ইসলামাবাদ তার মদতদার। বলবে কোন মুখে? পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের দাবিদার এই বিজেপিতে একজন মুসলমান সাংসদ নেই, মোদীর মন্ত্রিসভায় একজনও মুসলমান মুখ সদস্য নেই, সেই সরকারের মুসলিম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনও কথা কেউ বিশ্বাস করবে? যে শাসকের দেশে বিলকিস বানুর ধর্ষকদের সাজা হয়ে যাওয়ার পরও আদালত জামিন দেয়, ঘরে গোমাংস খেলে বাইরে টেনে নিয়ে হত্যা করা হয়, লাভ জেহাদের নামে তরুণ-তরুণীর প্রেমকে অবৈধ বলা হয়, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের গান গাওয়ার জন্য এফআইআর হয়, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধাপক মুসলমান বলে তাঁকে জেলে পোরা হয়, সে দেশের সরকার প্রধানদের কথা কেউ বিশ্বাস করবে কেন, এই প্রশ্ন তোলাটাই এখন জরুরি। প্রশ্ন তোলার, সরকার ও সরকারি দলের এসব প্রতিদিনের কাজ কি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের ভূমিকে শক্ত করছে না? 


মোদী-শাহরা নিজের মতো করে অপারেশন সিঁদুরের প্রচার করবেন, আর বিহার থেকে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার ফন্দি করবেন,  আর বিরোধী দলের সাংসদরা বিদেশে গিয়ে বলবেন সরকার সন্ত্রাসবাদের কোমর, মাজা সব ভেঙে দিয়েছে, তা তো হতে পারে না! বিরোধীদের তো এখনই বিজেপিকে ফালা ফালা করে দেওয়ার সময়। মিছিলে-মিটিংয়ে ইস্তেহারে দেয়ালে-দেয়ালে ২৬ জন নিরীহ মানুষের রক্ত-রস-হাড়-মাস-অশ্রু দিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্ন তোলার এখনই তো সুসময়। সন্ত্রাসের মুখোমুখি চরম ব্যর্থতার প্রতীক মোদী-শাহ সরকারের বিরুদ্ধে এখনই তো সেই স্লোগানের জন্ম হওয়ার কথা, যার সারকথা অন্তর হতে বিদ্বেষ বিষ যারা ছড়ায়, তারা নিপাত যাক। বিদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খোলার চেয়ে অনেক জরুরি ছিল, ২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদী যা যা বলে এসেছে সবটাই 'জুমলা'। সবটাই নাটক। বলা উচিত ছিল 'ভগবান রাম' এর নাম ভোট করে নরেন্দ্র মোদী আদৌ হিন্দুহৃদয়ের সম্রাট হতে পারেননি। যা যা করে এসেছে এই সরকার সবটাই এই জল-জমি-জঙ্গলের প্রকৃত অধিকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। যা যা করে এসেছে, সবটাই অম্বানি-আদানি ও আরও যারা যারা আছে, তাদের পুঁজির সেবা করতে। এই তো সেই সময় যখন মোদী ও তাঁর প্রধান শাগরেদকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো আর জিজ্ঞাসা করা, আপনারা যে ২০১৬ সালে রাতারাতি নোটবন্দি করে গলাবাজি করেছিলেন, সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে দিয়েছেন। আপনারা যে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বুক চিরে রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত করে দাবি করেছিলেন উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে দিয়েছি, তা সেই কোমরভাঙা সন্ত্রাসবাদ এত শক্তিশালী হল কী করে যে আমাদের দেশের মধ্যে ঢুকে পড়ে বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের খুন করে সুরক্ষিত ভারতের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেল? এখনই তো মো-শাকে প্রশ্ন করার কথা, ওই  জঙ্গিরা এখন কোথায়?
এই যে মোদী সরকার সাংসদদের ধরে ধরে সাতটা দলে ভাগ করে  দেশে দেশে সমর্থন আদায় করতে পাঠাল, এটা তো নিছকই দেশবাসীকে বোকা বানানো। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপই প্রমাণ করছে, ভারতের বিদেশনীতি পুরোটাই ফাঁপা। সাংসদরা বিদেশে যান না তা নয়, কিন্তু সমর্থন আদায় করাটা বিদেশমন্ত্রকের কাজ, তাদের কূটনীতিকদের কাজ, সাংসদদের নয়। আর মোদী সরকার নিতান্ত দুগ্ধপোষ্যর মতো ভাব করছে, যে, বিদেশি  রাষ্ট্রনেতাদের এই সাংসদরা বুঝিয়ে বলবেন, আর তাঁরা গুডবয়ের মতো ঘাড় কাত করে সব মেনে নেবেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। আরে বাবা, এসব ছেলের হাতের মোয়া নয়। ওভাবে বিদেশনীতি পৃথিবীর কোথাও কাজ করে না। প্রতিটি রাষ্ট্ররই এসব জানাবোঝার জন্য নির্দিষ্ট দফতর আছে। তারা দেশ-দুনিয়ার হরেক কিসিমের খবর রাখে, তথ্য রাখে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করে, বড় কর্তাদের পাঠায়, দরকষাকষি করে, তারপর সম্পর্ক তৈরি হয় বা হয় না। এরপর রাষ্ট্রনেতারা চুক্তি করেন, যৌথ বিবৃতি দেন। মনে রাখবেন, ওই অনুষ্ঠানগুলো সব আলঙ্কারিক। সবটাই দীর্ঘ চর্চা ও বিশ্লেষণের ওপর আগে থেকেই তৈরি হয়। ধর তকতা মার পেরেক বলে বিদেশনীতিতে কোনও কৌশল নেই। কোনো বিশ্বগুরুও তাদের নেই। এসব কি মোদী বা তাঁর আদর্শগত গুরু মোহন ভাগবত জানেন না? আলবাত জানেন। আসলে এটা আরেকটা 'জুমলা'। মুখরক্ষার জন্য, সাংসদদের পাঠানো হচ্ছে, কারণ মোদীর আমলে ভারতের বিদেশনীতি ব্যাপারটা বরবাদ হয়ে গিয়েছে। গোটা পৃথিবীর কাছে হাস্যকর হয়ে গিয়েছে। এমন হাল, যে বাংলাদেশও আজ বন্ধু নেই! ভারত সরকারের কান্ডারীকে আজ বোধহয় আর কেউ বিশ্বাস করে না, তাই বিরোধী সাংসদদের পাঠানো হচ্ছে, অন্তত এঁদের কিছু বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও আছে। তা দিয়ে যদি এই ব্যর্থতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ভাবতে অবাক লাগে, বিরোধীরা মোদীর ত্রাতা হতে উঠে পড়ে লাগলেন! 

আসলে মোদী-শাহর বিজেপি বহুদিন ধরে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, তারাই একমাত্র দেশপ্রেমী, তারাই প্রকৃত জাতীয়তাবাদী দল। এমনকী, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা জাতীয় কংগ্রেসের ক্রেডেনসিয়ালকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আর তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো দলকে তো বিজেপি মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম তোষণের অভিযোগে বার বার কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। স্বাভাবিক বোধ থেকে এই মুসলিম-সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খুলে দিতে, তারা যদি শামিল না হয়, তবে বিজেপি আরও সরব হবে, এই আশঙ্কা করেছে বিরোধীরা। তাই ইতিকর্তব্য ভুলে, দেশের বৃহত্তর মানুষের স্বার্থ ভুলে একটা ফেকমাস্টার জেনারেলের ইচ্ছেয় কথকতায় নেমেছে। বলি সাত মণ তেলও পুড়বে তবু রাধা নাচবে না।

0 Comments

Post Comment