প্রতি বছর নিট পরীক্ষা নিয়ে নাটকের সীমা নেই। আর কিভাবে নিট এর কাউন্সেলিং হয় , সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষ তো বটেই শিক্ষিত মানুষও ঘোল খেয়ে যাবেন এর নিয়ম কানুন আর ট্যাকটিক্স জানলে। আর উচ্চ প্রতিষ্ঠিত পয়সাওলা ডাক্তাররা স্বাভাবিকভাবেই চান তাদের ছেলেমেয়ে অযোগ্য হলেও ম্যানেজমেন্ট কোটা দিয়ে ঢুকে ভারতের যেকোন প্রান্তে একটা এমবিবিএস এ ভর্তি হলেই হলো। অনেক ক্ষেত্রেই কিভাবে হলো , এ কেন পেল না , ও কিভাবে পেলো - কোথায় কোথায় অপশন দিলে পাওয়া যাবেই, কোথায় সিট ফাঁকা পড়ে রইল - এসম্পর্কে হিসেবনিকেশ করতে গেলে অনেকের হয়তো মাথা ঝিমঝিম করবে - এবং শেষে এটাই হবে যে কিছুই বুঝতে পারা যাবে না কিন্তু। এখানেই দালালি, দুর্নীতি, পয়সার ছড়াছড়ি বা ব্যাপম কেলেঙ্কারি ও তার জন্য দুর্বৃত্তায়ন ঘটে ।
কিন্তু, আসলে চিত্রটা কি একটু আলোচনা করা যাক।
বাবা মায়ের প্রেস্টিজ ১২ ক্লাশে সায়েন্স নিয়ে পড়া, তারপর বলার মতো বলা - আমার ছেলে বা মেয়ে এমবিবিএস পেয়েছে। বাহ্ ! তো - এই দেখনদারির পরে কি হবে?
ভারত প্রতি বছর ৮৭ হাজার এমবিবিএস তৈরি হয়, প্রতি বছর ২০ হাজার বিদেশী মেডিকেল স্নাতক ভারতে আসে। এমনকি মাত্র ১৬ শতাংশ বিদেশী মেডিকেল স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আমাদের দেশে। অতএব রাশিয়া, নেপাল, ইউক্রেন, চীন, ভূটান, বাংলাদেশ, মালয়শিয়া থেকে এমবিবিএস আসলেই হবে না । এখানকার মেডিকেল কাউন্সিলের কঠিন পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। সেটা গড়ে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১৬ শতাংশ।
সরকারের তরফ থেকে যেটি সবচেয়ে বড় নিয়োগকর্তা তা হল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে এমবিবিএস-এর জন্য প্রতি বছর ১৭৫০ টি শূন্যপদ রয়েছে মোটামুটি। রেলওয়ে, ইএসআই, পিএসইউ, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বিভিন্ন সরকারী সংস্থা দ্বারা বছরে প্রায় অনুরূপ সংখ্যক নিয়োগ করা হয়। তাহলে প্রতি বছর ৬৬৭০০ এমবিবিএস ডাক্তারের চাকরির খোঁজ করেন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে যোগ দেবেন, কিন্তু আসন সংখ্যা বাড়লেও এখনও বছরে প্রায় ৩৫০০০ এমবিবিএস ডাক্তার বেকার। যেহেতু স্নাতকোত্তর আসনের সংখ্যা ২ বছর আগে পর্যন্ত বর্তমান শক্তির প্রায় অর্ধেকের মধ্যে সীমিত ছিল, সেখানে পূর্ববর্তী বছরের একটি ব্যাকলগ রয়েছে যা এই সংখ্যাকে যোগ করে যা প্রতি বছর NEET PG প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১ লক্ষ এমবিবিএস ডাক্তারের সমাগম হয় এই পোস্ট গ্রাজুয়েট এন্ট্রান্সে। এই ৩৫ হাজার প্লাস ব্যাকলগে থাকা ডাক্তারেরা, কয়েক মাস থেকে কয়েক বছরের জন্য কিছু প্রাইভেট হাসপাতালে আবাসিক ডাক্তার হিসাবে যোগদান করে তবে এটি একটি ক্যারিয়ারের বিকল্প তো তেমন নয় - যা তাদের মাইনে দেয় (সাধারণতঃ) তা আর বলার মতো নয়।
বেসরকারি ক্ষেত্রে একজন আবাসিক ডাক্তারের তেমন কোন ক্যারিয়ার নেই যতই আপনি ক্লিনিক্যাল দক্ষতায় ভালো হন না কেন। নিয়মিত বেতন স্কেল এবং বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং স্টক বিকল্পগুলির সাথে এটি একটি স্থায়ী চাকরি বলে মনে হয় না। শেষ পর্যন্ত কিছু সময় পরে তাদেরও এগিয়ে আসতে পিজি এন্ট্রান্সের জন্যে আশা জাগায়, এখানেই একটি সমস্যা দেখা দেয়। যারা স্নাতকোত্তর ছাড়াই রয়ে গেছে, নিট পিজি পরীক্ষায় পাশ করার জন্য একাধিক প্রচেষ্টার চেষ্টা করেছে, ৩ বছর বা তার বেশি সময় ধরে মেডিকেল রেসিডেন্টের চাকরি করেছে এবং কোনও রিজার্ভেশনের সুবিধাভোগী নয়, তাই কোনও সরকারি চাকরি পাননি, তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ২৭-২৮ বছর বয়সী পাশ করা ডাক্তারদের এবং তাদের পরিবার এবং বন্ধুরা আশা করেছিলেন যে তাঁরা এবারে একটু নিজেরা আর্থিক ভাবে স্থিতধী হবেন, কিন্তু তাঁরা কোনো দিকনির্দেশনা ছাড়াই দূরে সরে যাচ্ছেন মূলস্রোত থেকে ।
এর একটাই কারণ। সত্যিই আমাদের দেশে ডাক্তার কম। অথচ জনস্বাস্থ্য প্রণালীর কোনো সুনির্দিষ্ট প্ল্যান নেই। উপরন্তু কি দেখছি? লোকে সুচিকিৎসা পাচ্ছে না, ডাক্তারও বেকার হচ্ছে, কর্পোরেট হাসপাতালে ও ওষুধ কোম্পানির রমরমা এবং চুরি , ব্যাপক চুরি ও সর্বাত্মক চুরি। কি মনে হয় , যে বাবা বা মা ছেলে-মেয়েকে এনআরআই কোটায় বা ম্যানেজমেন্ট কোটায় এক/দেড় কোটি টাকায় ডাক্তার প্রোডাকশনের জন্য জোর করেওই প্রোডাকশন প্রসেসে ঢুকিয়ে দিল, তাঁদের কি হলো ! তারা গ্রামে গিয়ে কি প্রাথমিক স্ব্যাস্থ্যকেন্দ্রে যাবেন? নাকি খরচের পুরোটাই তুলবে এক বিষাক্ত মন তৈরি করে এবং অপ্রয়োজনেও এমআরআই বা পেটস্ক্যান লিখে দেবে - কোনটার সম্ভাবনা বেশি?
ডাঃ নীরজ নাগপাল আহবায়ক, মেডিকোস লিগ্যাল অ্যাকশন গ্রুপ ,চন্ডীগড় - এনার কতগুলো আলোচনা তুলে ধরা যাক।
'কেউ কেউ সবুজ চারণভূমি খোঁজার জন্য বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। ক্লিনিকে বা নিজ চেম্বার দিয়ে একটি প্র্যাকটিস সেট আপ করা সহজ বলে বলা হয়। কিন্তু একটি শহরে একটি জিপি অনুশীলন করে নিজেকে আর্থিক ভাবে সংসার করে স্থাপন করে কার্যকর হওয়া বিকল্প নয় এখন আর আদৌ। ছোট শহরগুলিতে ও গ্রামে না পাশ করা কোয়াক ডাক্তারের প্রাকটিশের স্পেসকে সঙ্কুচিত করেছে। অথচ বর্তমানে সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত কোয়াক এবং ক্রসপ্যাথরা স্থান দখল করেছেন৷ তাহলে চাহিদা ও সুবিধে মতন করতে, একটি গ্রামের এমবিবিএসকে এই বদ্ধতার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য তাদের আশেপাশের লোকদের কৌশল এবং প্রতারণামূলক অসদকর্মের অবলম্বন করতে হবে, যদি তাতে টিকে থাকা যায় - কিন্তু এটা কি ঠিকঠাক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অনুশীলন? অনেক যুবক যুবতী পেশা ছেড়ে মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন করে আইটি ফার্মে যোগদান করে, অন্যরা ফার্মা শিল্পে যোগ দেয়, কেউ সিভিল সার্ভিসের জন্য চেষ্টা করে আবার কেউ ম্যানেজমেন্ট ক্যারিয়ার বেছে নেয়।
বর্তমানে ভারতে গভীরভাবে প্রচলিত সুপার স্পেশালিস্ট সংস্কৃতি মানবদেহের পরিবর্তে অঙ্গের চিকিৎসাকে উৎসাহিত করে। গোটা মানুষটিকে নয়। ক্লিনিকাল অনুশীলনে এমবিবিএস-এর ভূমিকা ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে এই স্তরে করে দেওয়া হয়েছে যে একটি ক্যাথেটারাইজেশন একজন ইউরোলজিস্ট এবং একজন কার্ডিওলজিস্ট দ্বারা একটি ইসিজি করতে হবে। আমরা সুপার স্পেশালিটি থেকে সুপার সুপার স্পেশালিটিতে চলে যাচ্ছি। একজন ডিএম গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির আজ EUS (Endoscopic Ultrasound) এবং সেই সাথে POEM (Peroral Endoscopic Myotomy) এবং অন্যান্য বিশেষ পদ্ধতিগুলি সম্পাদন করার জন্য আরও একটি ফেলোশিপ প্রয়োজন। এই পরিবেশে ক্লিনিকাল অনুশীলনে এমবিবিএস-এর ভূমিকা আজ একজন মহিমান্বিত ক্লার্ক এবং Phlebotomist (যে রক্ত নেয় vein থেকে) এর। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে টার্ফ ওয়ার এমন একটি পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেছে যেখানে মেডিসিন এবং সার্জারিতে স্নাতক হওয়া সত্ত্বেও এমবিবিএস কোন মেডিসিন বা সার্জারি, প্রসূতিবিদ্যা, ইএনটি, চক্ষু বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে অনুশীলন করতে পারে না যা আজকে একটি বিশেষত্ব হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের আদালত এই জগাখিচুড়ি তৈরিতে তাদের শক্তির অবদান রেখেছে।
দুর্ভাগ্যবশত পেশার এই দুর্বলতম অংশটি এমন একটি যা পেশাদার সমিতির অগণিত কনফারেন্স এবং সভায় সবচেয়ে কম শোনা যায়। আজ্ঞে স্যার, শুনছেন ?- আপনার তরুণ তরুণী দের পেশাগত চাহিদাগুলি সুরক্ষিত করা সিনিয়র হিসাবে দায়িত্ব কি নয় আপনার?
প্রতিষ্ঠিত ডাক্তারদের এ প্রশ্ন করা যায় কি? আমাদের দেশে পরিষেবা দেওয়ার জন্য এমবিবিএস ডাক্তারদের জন্য আরও নিয়মিত পদ তৈরি করা আমাদের প্রথম এবং প্রধান দাবি হওয়া উচিত নয় কি? আমরা চিকিৎসকদের অভাবের কথা বলে চিৎকার করি কিন্তু আমাদেরই সম্প্রদায়ের কাছে ডাক্তার হিসাবে তাদের জন্যে একটি স্থিতিশীল ক্যারিয়ারের বিকল্প সরবরাহ করতে ঘৃণা করি না কি? কি বলেন সমাজ সচেতক "নো ভ্যাক্সার" বলে "অপর" ও "অস্বস্তিদায়ক" প্রশ্ন কে দেগে দেবার প্যান্ডেমিক কিছু চিকিৎসক কারিগরকূল?
জবাব আমরা চাইবার আগেই , ভয় পাবেন না স্যার , the supposed low profile "others" of your brotherhood , fraternal community will not let you to sleep.
কোথায় আমাদের দেশ পৌঁছেছে? প্রায় প্রতি বছর ৩৫ হাজার বেকার