পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সম্ভলে পাঁচজন নাগরিকের মৃত্যুর দায় কি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির ?

  • 03 December, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 630 view(s)
  • লিখেছেন : সুজাত ভদ্র
আমরা দৃঢ়তা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতেই পারি, জ্ঞানবাপী নিয়ে বিচারপতি চন্দ্রচূড় - এর বেঞ্চের অবস্থান ও নির্দেশ সরাসরিভাবে সম্ভলের পাঁচ নাগরিকের প্রাণ নিল। এঁদের এবং ভবিষতে যদি আরো রক্তপাত, ধর্ষণ, লুঠ তরাজ, মসজিদ আক্রমণের ঘটনা ঘটে তাহলে বিচারপতিদের তথা বিচার ব্যবস্থার এই নিন্দনীয় বিশ্বাসঘাতকতা, স্ববিরোধিতা, দ্বিচারিতা দায়ী থাকবে।

 "The narrative is tailored so that it links past with present"

- Navina Jafa,                         'Performing Heritage'(2012)

উত্তর প্রদেশের সম্ভলের ঐতিহাসিক মিশ্র সাংস্কৃতিক পরম্পরা/ ঐতিহ্য/হেরিটেজ -- শাহি জামা মসজিদ --  জ্ঞানবাপী  মসজিদের মতোই আইনি পথে আজ আক্রান্ত। মসজিদের পাশাপাশি আজমীরের সুফি সাধক মঈনউদ্দিন চিস্তি দরগাহের উপর বিষাক্ত আক্রমণ শুরু হয়েছে। ২৪ নভেম্বরের  সম্ভলের সহিংসতার ঘটনায় পাঁচজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে। রাজ্য সরকার তিন  সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন ঘোষণা করেছেন। আগামী দুমাসের মধ্যে জাস্টিস অরোরা কমিশনের এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা।

২৯ নভেম্বর। সুপ্রিমকোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি ও সার্বিক শান্তি বজায় রাখার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে, নিম্ন আদালতকে  এই মসজিদ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মসজিদ সংক্রান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদনও নিম্ন আদালত প্রকাশ করতে পারবে না। মুখবন্ধ খামে জমা পড়বে কোর্টে। আবেদনকারী মসজিদ কমিটিকে হাই কোর্টে মামলা দায়ের  করার কথা বেঞ্চ বলেছেন। পরবর্তী শুনানি ২০২৫ র ৬ জানুয়ারি। সর্বশেষ সংবাদে প্রকাশ, ASI এই মসজিদ ব্যবস্থাপনার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার জন্য আদালতে আবেদন করেছে।
আলোচ্য বিষয়টির তাৎক্ষণিক ক্ষতি কিন্তু মারাত্মক হল:  ভারতের সমগ্র সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের স্বঘোষিত প্রতিনিধিত্ব দাবি করা কিছু উগ্র সনাতনী সংগঠন (যারা নানা  কায়দায় আরএসএস মদতপুষ্ট) এবং হিন্দুত্ববাদী আদর্শে পুষ্ট একটি আইনজীবী গোষ্ঠীর তথাকথিত ঐতিহাসিক তথ্যের দাবির ভিত্তিতে একের পর এক  সিভিল  মামলা দায়ের করা , নিম্ন দেওয়ানি আদালতগুলোর  সেই মোতাবেক সমীক্ষার  নির্দেশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়া একটি নির্দিষ্ট দিকে অঙ্গুলি সঙ্কেত করছে:পরিকল্পনা করে  পিটিশন দায়ের করা  হল এমন কোর্টে, যেখান থেকে  বিবাদী পক্ষ , ASI কাউকে  নোটিশ না দিয়ে তৎক্ষণাৎ সমীক্ষার আদেশ বেরিয়ে যাবে; আগে থেকেই অ্যাডভোকেট কমিশনার মজুত থাকবেন। সেই দিনই কয়েক ঘন্টার মধ্যে তিনি এবং বাদীপক্ষ উক্ত 'বিতর্কিত' স্থানে পৌঁছে যাবেন ; সমীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। অন্য কোনও পক্ষ এই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ আবেদন করার সময়টুকুও যাতে না পায় তা নিশ্চিত করা হল।
এই  "hot haste" এর পরিণতি হল মারাত্মক। বার্তা পৌঁছল আক্রমণের মূল নিশানায় থাকা সম্প্রদায়ের কাছে যে, এথনিক হেরিটেজ আক্রমণের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করা হচ্ছে। সমস্ত মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির বা ক্রস সংস্কৃতির চিহ্নগুলোকে ধ্বংস করে দাও ও তার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক তথা সাংস্কৃতিক ক্লিনিজিং- র পথকে আইনি উপায়েই বৈধতা অর্জন কর। এখন যেহেতু সর্বভারতীয় স্তরে ক্ষমতায় আসীন বিজেপি - আর এস এস কম্বো (এবং তৃতীয় পর্বে মুসলিম ঘেঁষা শক্তির উপর নির্ভরশীল), সেহেতু বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মতো পহেলি ঝাঁকি তুল্য, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ জাতীয় গণ অ্যাকশন নেওয়া যাবে না। তাই বৈধ বা বৈধতার অজুহাতের পথ ধরো। সুবিধাও আছে।  বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা বিপন্ন ; হিন্দুত্ববাদী আরএসএস কিভাবে গ্রাস করছে এই বিভাগকেও তার ইতিবৃত্ত Caravan ম্যাগাজিনের অক্টোবর সংখ্যায় সবিশেষ আলোচিত।

সবচেয়ে শঙ্কার বিষয়, এই পন্থা একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন হয়ে উঠেছে। মধ্য প্রদেশ (ধর জেলার ভোজশালা) থেকে আগ্রার তাজ মহল, ছোটি মসজিদ (জাহানারা বেগম মসজিদ), বেনারস থেকে আজমীর এই পরিকল্পনার আওতাভুক্ত। ২০২২ সালের ১৩ জুন ইন্ডিয়া  টুডে - তে  সুনীল মেনন দেখিয়েছিলেন, বিভিন্ন আদালতে পেশ করা এই সমস্ত সিভিল মামলার বয়ান একই ধরনের  (" identically - worded suits")। বলা  যেতে পারে, ২০১৯ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত রায়ের পর ,মসজিদ ধ্বংস করার ঘটনাকে vandalism বলার পরেও তাদেরকেই পুরস্কার হিসেবে যেন ঐ স্থানে মন্দির করতে দেওয়ার অনুমতি পরেই, নতুন করে উগ্র হিংস্র  হিন্দুত্ববাদী শক্তি         "মন্দির ওয়াসপি" পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যতদূর জানা যাচ্ছে, দেশের নানা দেওয়ানি আদালতে বা কয়েকটি  হাই কোর্টে মসজিদ, দরগা, কবরস্থান, মাদ্রাসা, নজুল (nazul) জমির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রায় তিন হাজার মামলা শুনানির অপেক্ষায়। ওয়াকফ সম্পত্তির উপর নয়া আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
 
স্মরণ করুন দিল্লির কথা, যেখানে অতীত ও বর্তমান সবসময় পাশাপাশি থাকতো, সহাবস্থানে ছিল,  আজ সেই শহর আক্রান্ত। এই বছরে শুরুতেই ( ৩০ জানুয়ারি) ঐতিহ্য মন্ডিত মেহরৌলির আখন্দজি মসজিদ দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ "পুরসভার অনুমতি পত্র" না থাকার কারণে বেআইনি কাঠামো ঘোষণা করে কাক ভোরে বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিল। এখানে সনাতনীরা শিব মন্দির বা নিদেন পক্ষে লিঙ্গের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে আওয়াজ তুলতে পারে নি। কুছ পরোয়া নেই। বাবরি মসজিদ ধ্বংসে যুক্ত করসেবক আজ তো লেফটেনেন্ট গভর্নর। ছলের অভাব তাই হলো না। অতএব, ইউনেস্কো হেরিটেজ স্থান হিসেবে স্বীকৃত, ১৯২০ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক তালিকা ভুক্ত, সুলতানা রাজিয়ার সময়ে নির্মিত প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো মসজিদেরই অস্তিত্ব মুছে দেয়া হলো "আধুনিক পৌরসভার বৈধ কাগজ " না থাকার কারণে। ঐতিহাসিক  নারায়ণী গুপ্ত আক্ষেপ করে বললেন, এই ধ্বংস কার্য  ভারতের সমষ্টিগত ক্ষতি  ("collective loss")। রাষ্ট্রসংঘের অধীনে ২০০২ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য অনুসারে, এথনিক হেরিটেজ ধ্বংসটাও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। যেমন পড়েছিল  আফগানিস্তানে তালিবানদের বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তিগুলোর ধ্বংস লীলা সাধন, , অথবা মালি -র শহর টিম্বুকটু (Timbuktu)- তে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মধ্যযুগের  গ্রন্থাগার গুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার অপকার্যটি, বা ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অপরাধটি। ২০১৭ সালের হেগ  কনভেনশন অনুসারে , সম্ভলের মতো হেরিটেজ সম্পত্তি সমস্ত ধরনের আক্রমণের বাইরে রাখতে হবে, বিপরীতে বরং সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে। অথচ এদেশে দেখলাম, প্রাগুক্ত আখন্দজি মসজিদ ধ্বংস কার্যকে কার্যত সিলমোহর দিয়েছিলেন  দিল্লি হাই কোর্টের যে প্রধান বিচারপতি, তাঁকে  পুরস্কৃত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের জজ পদে উন্নীত করার সুপারিশ  করেছে সম্প্রতি কলেজিয়াম। কি নিদারুণ পরিহাস!।
অথবা স্মরণ করুন, এই বছরের দ্বিতীয় মাসে উত্তরাখণ্ডের  বানফুলপুরাতে মসজিদ, মাদ্রাসা ধ্বংসের কাজটি। অজুহাত ছিল, ওয়াকফ জমির উপর নয়, নুযুল জমির উপর বেআইনি ভাবে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছে। অতএব গুড়িয়ে দাও। অন্তত পক্ষে চারজন মারা যান পুলিশের গুলিতে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি প্রতিবাদীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আমার নিবেদন, ভারত  নামক ভূখণ্ডে রাজনৈতিক ইসলামের আগমন, শতাব্দীর পর শতাব্দী শাসন এবং তারই স্বাভাবিক ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠা এক নতুন সাংস্কৃতিক পরিবেশ, নতুন ধরনের শিল্প, স্থাপত্য, ভাস্কর্য যে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এক মিশ্র হেরিটেজ গড়ে তুলেছিল, সেই ঐতিহাসিক সত্যকে সনাতনী হিন্দুত্ববাদীরা এক অন্ধ বিদ্বেষ থেকে মানতে নারাজ। শুধু তাই নয়, তাদের কাছে তথাকথিত উজ্জ্বল, স্বর্ণযুগের প্রাচীন হেরিটেজটাই একমাত্র  ভারতীয় সভ্যতার ফিক্সড অনড় অটল একমাত্রিক পরম্পরা। তার বিচিত্র আজগুবি তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার জন্য ইদানিং হিন্দুত্ববাদীরা যদুনাথ, রমেশ মজুমদার ছেড়ে ইতিহাসের অধ্যাপিকা মীনাক্ষী জৈন-র চারটি বইকে আঁকড়ে ধরেছেন; তিনি তার জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন। তাঁর মতে, ভারতের হিন্দুদের যুগ যুগ আগে যে যাত্রা  শুরু হয়েছিল, সেই যাত্রা আজও  বহমান। এবং সেটা নাকি খাঁটি নিখাদ হিন্দু সভ্যতার যাত্রা। যুগে যুগে দেশের রাজনৈতিক  সামাজিক  সাংস্কৃতিক  পরিবর্তন, বিদেশি শক্তির আক্রমণ, শাসন ইত্যাদির কোনো প্রভাবই নাকি এই হিন্দুদের উৎকৃষ্ট সভ্যতার যাত্রাকে কলুষিত করতে পারে নি, প্রভাবিত করতে পারে নি আজ পর্যন্ত!
দুই, প্রাচীন ভারতের হিন্দু শাসনের পর ভারতের ইতিহাস সব বর্বর হানাদারদের কীর্তিকলাপ, যা কোনোভাবেই ভারতীয় সভ্যতার তথা হেরিটেজের অংশ নয়। তাই  হিন্দুত্ববাদীরা  গ্রাহ্যের মধ্যে আনে না তাদের ধারণা বিরোধী কোনো তথ্য সমৃদ্ধ ইতিহাস গবেষণাকে, স্বীকার করতে চায় না যে, ঐতিহ্য/ পরম্পরা স্থির  নয়, বরং dynamic, flowing phenomenon ;  উলটে দাবি করে,  প্রাচীন হিন্দু হেরিটেজ ফিরিয়ে আনতে হবে একবিংশ শতাব্দীতেও। কীভাবে? কী হবে তার রূপ? বেনারসের বিশ্বেশ্বর মন্দির/ জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কের উপর এক গবেষক ঐতিহাসিক, মাধুরী দেশাই লিখছেন, তার রূপ হবে "a story of destruction, appropriation, relocation and rebuilding"
( অর্থাৎ কোনও  কিছুকে "হিন্দু হেরিটেজ বিরোধী" তকমা মেরে ধ্বংসের আওয়াজ তোলা, প্রয়োজনে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া এবং গুঁড়িয়ে দেওয়া বস্তুর/ স্থানের উপর পুননির্মাণ করা)  একাডেমিক ভাষ্যের পাশাপাশি শুনুন  যাবতীয় সনাতনী উগ্র ব্যক্তি, সংগঠনের সর্বোচ্চ গুরু সংগঠন আর এস এসের  মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির পুনঃ প্রতিষ্ঠার করার একটি বিষাক্ত ঘোষণা। ১৯৮৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আরএসএসের "হিন্দু আজ ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ কেন?" পুস্তিকার অংশ বিশেষ এই :  "আপনারা কি জানেন না, কি ভাবে ওরা মন্দিরগুলোর পবিত্রতা নষ্ট করেছে, কি ভাবে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে? কি ভাবে হিংস্র হামলাদারের দল আমার মন্দিরসৌধের পবিত্র প্রস্তরখন্ড গুলিকে  পায়ের নিচে ফেলে পদদলিত করে উল্লাস করেছে?"
         
"আমার দেবতারা আজ লাঞ্ছনায় অপমানে জর্জরিত হয়ে কাঁদছেন।আমায় ডাকছেন তাঁরা। আমায় নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁরা - আগে যেখানে স্বমহিমায় মন্ডিত হয়ে যেমনটি বিরাজ করতেন তাঁরা, তেমনি মহিমামণ্ডিত রূপে তাঁদের পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।..." ( পৃ ৪)। বাবরি মসজিদ দিয়ে শুরু; কত মসজিদ ভাঙ্গলে যে তাদের তৃপ্তি হবে কে জানে। আর, হিন্দু ব্রাহ্মণ্য শক্তির ভেঙে দেওয়া বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মস্থান নিয়ে কোনও কথা এনারা বলেন না, বা যেসব হিন্দু মন্দিরের নিচে বৌদ্ধ বা জৈন উপাসনাগৃহের চিহ্ন পাওয়া যায়, সে মন্দিরগুলোর ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ করা হবে , সে নিয়েও তারা একদম চুপ। প্রাচীন ভারতের সহিংসতার ভয়ানক রূপ তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পাবেন না হিন্দুত্ববাদীদের  ইতিহাস রচনায়; তেমনি পাবেন না তাঁদের পূজ্য হিরো চরিত্র শিবাজীর একের পর লুঠ- তরাজ, নারী অত্যাচার, হত্যার, সৌধ ধ্বংসের ইতিহাস, যার বিবরণ আবার তাদেরই পূজ্য ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের লেখায় সবিস্তারে বিধৃত।

দুটো বিষয় বিশ্ব জুড়ে ঐতিহাসিকভাবে সত্য।
১। দেশে দেশে ইতিহাস জুড়ে ধর্মীয় সংঘাত ছিল। অন্য ধর্ম মতকে "অপর" পক্ষ, শত্রু পক্ষ ধরে নেওয়া  হত এবং তাই তাদের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখানো পাপ। শত্রু নিধনই একমাত্র পথ।
২। পৃথিবীর ইতিহাস জুড়ে ভুরি ভুরি নির্দশন রয়েছে, বিজয়ীরা তার বিজয়ের স্মারক হিসেবে বিজিতদের নানা স্মারক, উপাসনা স্থল ইত্যাদি ভেঙে দিয়েছে। ভারতের প্রাচীন, মধ্য ভারতের ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। আবার, এটাও ঐতিহাসিক ভাবে আজ প্রমাণিত সত্য যে, ভারতে রাজনৈতিক ইসলাম  আগমনের প্রাথমিক পর্বের রক্তপাত, অত্যাচার কিন্তু চিরস্থায়ী হয় নি। বরং উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংহতি, সম্প্রীতি, সহযোগিতার, সহাবস্থানের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এই দুই রূপের স্বীকৃতি ভারতীয় ইতিহাসে আছে। কিন্তু সেই আখ্যানকে সচেতনভাবে বিকৃত করেন সাভারকর ও আরএসএস; তাদের কথিত ভাষ্যে, হিন্দু মুসলমানের মধ্যে আজও চলছে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে যুদ্ধ,  হিন্দুদেরএক কাল্পনিক  স্বাধীনতা সংগ্রাম অব্যাহত আছে বর্বর হানাদার ( invader) মুসলমানদের বিরুদ্ধে ! তারই পরিণতি ছিল বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও সেটাই সোপান হয়ে উঠেছিল ক্ষমতায় আসার। আর, তাতেই বলিয়ান হয়ে আদালতের সহযোগিতায় নতুন করে আক্রমণ নামিয়ে আনছে। সম্ভল তার একটা সাম্প্রতিক উদাহরণ।
তবে, শুনলে পাঠকরা হয়তো অবাক হবেন  জেনে যে, বিজেপির পূর্বসূরি জনসংঘ (যার জন্মদাতা আরএসএস) অন্তত পক্ষে একবার সত্যের খাতিরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল, মুসলমানরা ভারতের বাইরে থেকে এলেও " were absorbed in it( i.e. Indian national life) and became identified with it."[ party Documents(1951-1972), vol.1,  ( 1973, N Delhi) , p.174] ।
     
আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবো, হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের নিশানা মূলত দুটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে - বাবর এবং আওরঙ্গজেব। বাবরের আমলের বাবরি মসজিদ আজ নেই।  ভারতে তাঁর মাত্র চার বছরের শাসন( ১৫২৬ - ১৫৩০) তাঁর সহযোগীরা চারটি মাত্র মসজিদ বানিয়েছিল। তার মধ্যে একটা সম্ভলের প্রাগুক্ত শাহি জামা মসজিদ, যা বানিয়েছিলেন মীর হিন্দু বেগ, আনুমানিক ১৫২৬- ২৭ সালে।হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, "হরিহর মন্দির ভেঙে, তার উপর এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল"। অতএব সমীক্ষা শুরু হোক। ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসেবে বাবর নামা, ১৮৭৪- ৭৬ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের দ্বাদশ প্রতিবেদনের কথা মামলাকারীরা পেশ করেছেন আদালতে। বাবরনামা-তে কিন্তু নেই সম্ভলে হিন্দু বেগ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। শুধু বলা আছে, সম্ভলে হিন্দু বেগকে পাঠানো হয়েছিল।  ব্যস। আর কিছুই বলা নেই। লক্ষ্যণীয়, হিন্দুত্ববাদীদের সপক্ষে যে সমস্ত নিউজপোর্টাল প্রচার করছে, এবং বাবরনামার ইংরেজি অনুবাদের [যদিও কার অনুবাদ, কোন সংস্করণ বলা নেই] প্রাসঙ্গিক পাতার অংশটুকু স্ক্যান করে যুক্ত করছে, সেখানেও মসজিদ---মন্দিরের কোনও উল্লেখ নেই। সুতরাং বাবর নামা প্রাসঙ্গিক প্রাথমিক হিসেবে বিবেচিত হবে কি করে? এটাও উল্লেখের দাবি রাখে, মিসেস এ .এস.  Beveridge ছাড়াও মূল  তুর্কি ভাষা থেকে বাবর নামা ইংরাজিতে অনুবাদ ( টীকা সহ) করেছিলেন Leyden এবং Erskine; ফরাসি তে দুজন টীকা সহ অনুবাদ করেছিলেন। তুর্কি থেকে ফার্সি ভাষায় একজন টিকা সহ অনুবাদ করেছিলেন। এগুলো মামলাকারীরা উল্লেখ করেন নি, তুলনামূলক আলোচনা তো বাদই দিলাম। প্রাগুক্ত Beveridge -এর অনুবাদ গ্রন্থের টীকায় মসজিদ নির্মাণের সংবাদ আছে এবং সেটাও তিনি নিয়েছেন প্রাগুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা থেকে। ঐতিহাসিক শ্রী রাম শর্মার বহুল পঠিত বইতে উল্লিখিত তথ্যের কথা পিটিশনে বলা হয়েছে সেটাও সেই প্রাগুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার কথা এবং একটি মাত্র বাক্যে । সেই বাক্যেও হরিহর মন্দিরের নামোল্লেখ নেই[ দ্র "The religious policy of the Mughal Emperors (Delhi, 1988[1940],p.9, fn.2]।  বাক্যটি এই: "One of his[ Babur] officers is said to have converted a Hindu temple at Sambhal into a mosque."  এই কথিত কথার বয়ানটির উৎপত্তি ১৮৭৪- ১৮৭৬ সালের প্রাগুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা। সমীক্ষাটি করেছিলেন উক্ত বিভাগের প্রথম সহকারী A.C.L. Carlleyle ; অর্থাৎ মসজিদ নির্মাণের ৩৫৮ বছর বাদে । তিনি  স্থানীয় কিছু হিন্দু মানুষের মতকে, হিন্দু মিথলজি ভিত্তিক কথার উল্লেখ করেছেন।আর, তাঁর  মসজিদ পরিদর্শনের সময়ে মসজিদের  কাঠামো, প্রবেশদ্বার দেখে মনে হয়েছে, স্থানীয় হিন্দু মন্দিরের মালমশলা এবং তাঁর এটাও মনে হয়েছিল, মসজিদে উৎকীর্ণ শিলালিপি জাল। এই সমীক্ষার মূল সুপারভাইজার ক্যানিংহাম জাল শিলালিপির বিষয়টি খারিজ করে দিয়েছিলেন[ দ্র "Report..., vol.XII, PP. 24-27. ASI কর্তৃক প্রকাশিত, 2000, N Delhi]। নানা বিকল্প মত আছে; যেমন, বাবর সময়কালে এই মসজিদটি তৈরি হয় নি,  বহু আগের- পাঠান যুগের। মসজিদ বহুবার সংস্কারের মধ্য দিয়ে গিয়েছে - ১৬২৬, ১৬৫৭, ১৮৪৫ সালে। সুতরাং কি মালমশলা দিয়ে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল তা বোঝা মুশকিল ছিল ৩৫৮ বছর বাদে। ১৮৭৮ সালে এলাহাবাদ হাই কোর্টে একটি সিভিল মামলা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খারিজ করে দিয়েছিলেন। Howward Crane - র গবেষণা (১৯৮৭) সরাসরি জানিয়েছে, আলোচ্য মসজিদটি কোনোভাবেই হিন্দু মন্দিরের রূপান্তর নয়। একই কথা বলেছেন মোগল স্থাপত্যের উপর সর্বজনস্বীকৃত গবেষক Catherine B.Asher(1992), Ebba Koch(2014[1991]; Asher শুধু যোগ করেছেন, আবুল ফজলের সময়ে, হিন্দু গীতিতে বলা হয়েছিল, বিষ্ণুর শেষ এবং দশম অবতার সম্ভলে আবির্ভূত হবেন (p.28)। তার অর্থ কি এই হয় যে, মসজিদটি মন্দির ছিল? এবং যেখানে তাঁর কলিযুগে আসার কথা!! মিথলজিকে ইতিহাসের প্রামাণ্য তথ্য বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার, নিরঙ্কুশ সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করার নগ্ন অপচেষ্টা বর্তমান হিন্দুত্ববাদীদের অন্যতম কৌশল।
                   
ঐতিহাসিক সোহেল হাশমি সঠিকভাবেই বলেছেন যে, একটি দেশের একটি পর্বের স্থাপত্য যখন গড়ে উঠে, তখন তা সেই দেশের সেই সময়ের ভৌগোলিক পরিবেশ, জলবায়ু, স্থানীয় শিল্পীদের দক্ষতা ইত্যাদি  সেই পর্বের  স্থাপত্য চরিত্র নির্ধারণের প্রধান মাপকাঠি হয়ে উঠে। বস্তুত, রিচার্ড এম ইটন, নাইয়ার আজম (২০০৩), এবং এলিজাবেথ Schotten Merklinger - র গবেষণা (২০০৫) দেখিয়েছে, সুলতানী যুগে এবং আদি মোগল যুগে স্থানীয় (হিন্দু) রাজমিস্ত্রী, পাথর ভাঙ্গার শ্রমিক, বাস্তুকারদের হাজারে হাজারে নিয়োগ করা হতো মসজিদ, প্রাসাদ ইত্যাদি নির্মাণে। বাবর নামা তেই বলা আছে, বিপুল সংখ্যক এই জাতীয় শ্রমজীবীদের বাবর নিয়োগ করেছিলেন এবং এটা জেনেই যে, সমরখন্দ মার্কা স্থাপত্য এখানে করা যাবে না। স্থানীয় শিল্পীদের মন্দির বানানোর, তার কারুকার্য নির্মাণের দক্ষতা দিয়েই মিশ্রিত স্থাপত্য গড়ে উঠবে। তাই হয়েছিল( দ্র Mohibbul Hasan, Babur (Delhi, 1985, pp.190-192)। পূর্ব ইউরোপ সহ নানা দেশে একই কারণে  ইসলামীয় স্থাপত্য এক সংমিশ্রিত রূপ নিয়েছিল।
২। যতই হিন্দুত্ববাদীরা লাফালাফি করে বলুক না কেন, বাবর বা অন্যান্য মুসলমান শাসকরা সর্বদা মন্দির ভেঙেই, তার উপর ভাঙা মন্দিরের মালমশলা নিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, সমাধি, দরগা  প্রভৃতি বানিয়েছে, ঐতিহাসিক গবেষণায়  তা আজ স্বীকৃত সত্য নয়। বহুবছরের স্বাভাবিক নিয়মে ভেঙে যাওয়া, ভগ্ন মন্দিরের বা গৃহের মালমশলা ব্যবহার করা হয়েছিল। অথবা প্রাগুক্ত শিল্পীদের হিন্দু কারুকার্যের প্রয়োগ ঘটেছিল নতুন মালমশালায়। যেমন, প্রাগুক্ত Merklinger লিখছেন, (ইসলামের আগমনের আদি পর্বে) " the Hindu workmen was much in evidence. Pointed ogee-shaped arches, built in the indigenous overlapping corbel technique appear everywhere...."(P.9)l
ASI এর সমীক্ষা কিভাবে এই ঐতিহাসিক উপাদানগুলোকে বুঝবে, বিশ্লেষণ করবে? তাদের কাছ থেকে সেটা প্রত্যাশা করা তাও অন্যায়। তাদের কাজের  আওতার বাইরে এইসব জ্ঞানচর্চা ।
হিন্দুত্ববাদীদের  আলোচ্য বিষয় সহ  মধ্যযুগের ইতিহাস সংক্রান্ত লেখাপত্তর গুলো মূলতঃ ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের সময়কালে রচিত ইংরেজ লেখকদের লেখার উপর নির্ভরশীল। এবং তাদের উপনিবেশিক অভিসন্ধি সম্পর্কে সচেতনতা না দেখানোর [ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?] জন্য, তাঁদের ছাপার অক্ষরের  ভাষ্যকে ধ্রুব সত্য বলে ধরে নেওয়া টা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক। মানবতা বিরোধী চূড়ান্ত মুসলিম বিদ্বেষের  ভূমিকায় অবতীর্ণ  তারা। ভারতীয় স্থাপত্য সংক্রান্ত ব্রিটিশ গবেষণা সম্পর্কে Thomas R. Metcalf - র সতর্কবার্তা হিন্দুত্ববাদী সহ সকলের জন্য প্রণিধানযোগ্য :" British study of India's architecture...reflected the colonial sociology and reinforced it's hold[over India]"(দ্র তাঁর "Forging the Raj"(N Delhi,2005, pp.105-139, at 110)।
আগেই বলেছি, হিন্দুত্ববাদীদের অন্যতম প্রধান টার্গেট বাবর। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নি, সম্রাট বাবর ভীষণ বর্বর ছিলেন। তাহলে তার দায় স্বাভাবিক নিয়মে সেই ব্যক্তি সম্রাটের উপর বর্তায়। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা সচেতনভাবে বাবর ছাড়াও ইসলাম ধর্মীয় মতাদর্শকে দায়ি করে, এবং এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে "বাবরের সন্তান" বলে তকমা মেরে সেই জন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে  যুদ্ধ ঘোষণা করে; অতীতকে এক মিথ্যা আখ্যানের নির্মাণের মাধ্যমে বর্তমানের সঙ্গে যুক্ত করে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে আজ নিয়োজিত।
           
 আর, এই ভয়ঙ্কর শক্তিকে মদত দিচ্ছে নিম্ন আদালতের একাংশ, হাই কোর্টের একাংশ শুধু নয়, সুপ্রিম কোর্ট ও। মন্দির মসজিদ ঘিরে সত্য - আধা সত্য - মিথ্যা , এমনকি মিথলজি কে আইনি গ্রাহ্যতা দিয়ে নানা স্থাপত্যের উপর সমীক্ষার আদেশ দিচ্ছে। আদালত দ্বিচারিতার ভূমিকা পালন করছে। ২০১৯ সালে বাবরি মসজিদ এর উপর রায়ে ৫ জন বিচারপতি  দশ পাতা জুড়ে বললেন, ধর্মীয় স্থানে স্থিতাবস্থা রাখার আইনটির (১৯৯১) যৌতিকতাকে ব্যাখ্যা করলেন; এই আইনকে মেনে চলার জন্য নাগরিকদের কর্তব্য  হিসেবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫১ক - র কথা মনে করালেন।লিখলেন তাঁরা অনবদ্য ইংরাজিতে: " Historical wrongs can not be remedied by the people taking law in their own hands."  তারপর তাঁরা ঘোষণা করলেন: " In preserving the character of places of worship, Parliament has mandated in no uncertain terms the history and its wrongs shall not be used as instruments to oppress the present and the future."
 
দেশবাসী হতবাক হয়ে দেখল,  জ্ঞানবাপী মামলায় উক্ত রায়ের অংশীদার (সদ্য প্রাক্তন) প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় - এর তিন বেঞ্চ জ্ঞানবাপী মসজিদের সমীক্ষার অনুমতি দিলেন। ভেতরে পুজোর অনুমতিতেও  ছাড়পত্র দিলেন। নিজেদের দেওয়া নর্ম মানার কর্তব্য নিজেরাই নির্লজ্জ ভাবে ভাঙলেন। দেশের সর্বত্র বিতর্কিত কাঠামোর আওয়াজ তুলে সমীক্ষার দ্বার খুলে দিলেন।শুধু তাই নয়, তাকে কেন্দ্র করে অশান্তি, সংঘর্ষ , রক্তপাত ও মৃত্যুকে ডেকে আনলেন, যা হিন্দুত্ববাদীরা চাইছিল। এই রায়কে হাতিয়ার করে দেশের সামাজিক স্থিতিকে হিন্দুত্ববাদীরা তছনছ করে দেবে।
আমরা দৃঢ়তা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতেই পারি, জ্ঞানবাপী  নিয়ে বিচারপতি চন্দ্রচূড় - এর বেঞ্চের অবস্থান ও নির্দেশ সরাসরিভাবে সম্ভলের পাঁচ নাগরিকের প্রাণ নিল। এঁদের এবং ভবিষতে যদি আরো রক্তপাত, ধর্ষণ, লুঠ তরাজ, মসজিদ আক্রমণের ঘটনা ঘটে তাহলে বিচারপতিদের তথা  বিচার ব্যবস্থার এই নিন্দনীয় বিশ্বাসঘাতকতা, স্ববিরোধিতা, দ্বিচারিতা দায়ী থাকবে। যে Deislamization - এর প্রক্রিয়া হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে বলে  শঙ্কার কথা অধ্যাপক মুজিবর রহমান তাঁর সাম্প্রতিক "Shikwa - e- Hind" গ্রন্থে (লন্ডন, 2024) ব্যক্ত করেছেন তাতে ইন্ধন যোগাবে উক্ত রায়টি। সাংবাদিক জিয়া উস সালামের উপলব্ধিটি যেন সংখ্যালঘুর উপলব্ধি হয়ে উঠছে গণতন্ত্রের শেষ অতন্দ্র প্রহরী, বিচার ব্যবস্থার হাল দেখে:" To be a Muslim[ in India] is to be an orphan."(দ্র তাঁর "Being Muslim in Hindu India"(Gurugram,2023,p.xi)।

 

 

0 Comments

Post Comment