পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কাতারে অঘটনের বিশ্বকাপে শোনা যাচ্ছে এশিয় হুঙ্কার

  • 23 November, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 948 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস মজুমদার
এ যেন একেবারে আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব ম্যাচের রিপ্লে। ফলাফল স্কোরবোর্ডে হুবহু এক। জাপানের পক্ষে ২-১। মারাদোনার দেশের পর বেকেনবাওয়ারের দেশও ঠিক একইভাবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের শিকার হল। জোয়াকিম লোর পর হ্যান্সি ফ্লিক জার্মানির কোচ হয়ে দলের খোলনলচে প্রায় পুরোটাই বদলে ফেলেছেন। কিন্তু এককালের ফিফা বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল গত বিশ্বকাপ থেকে যে ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছে তা যেন কাতারের মাটিতেও অব্যাহত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তৎকালীন হিদেকি তোজোর জাপান রাজনৈতিক স্লোগান দিয়েছিল এশিয়া শুধু এশিয়দের জন্য। পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ কে সরিয়ে সেসময় জাপানের উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র এশিয়ার রাজনৈতিক শক্তিকে কুক্ষিগত করা। কিন্তু তার বহুবছর পর ফুটবলবিশ্বের বিশ্বযুদ্ধের মঞ্চে এশিয়ার মাটিতে ইন্দ্রপতন ঘটিয়ে চলেছে এশিয়ার দলগুলো। পরপর দুদিনে কাতার বিশ্বকাপে এশিয়ার দুই দল সৌদি আরব আর জাপানের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পরাজিত হল যথাক্রমে আর্জেন্টিনা আর জার্মানি। এর আগে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া/জাপানের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপই ছিল এশিয়ার দলগুলির কাছে সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপ। দক্ষিণ কোরিয়ে তাতে বিতর্কিতভাবে হলেও চতুর্থ স্থানে শেষ করেছিল আর জাপানের প্রদর্শনও ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আবার এশিয়ার মাটিতে আয়োজিত দ্বিতীয় ফিফা বিশ্বকাপের অঙ্গনে গর্জে উঠছে এশিয়ার সেরা ফুটবল শক্তিগুলো।

এ যেন একেবারে আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব ম্যাচের রিপ্লে। ফলাফল স্কোরবোর্ডে হুবহু এক। জাপানের পক্ষে ২-১। মারাদোনার দেশের পর বেকেনবাওয়ারের দেশও ঠিক একইভাবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের শিকার হল। জোয়াকিম লোর পর হ্যান্সি ফ্লিক জার্মানির কোচ হয়ে দলের খোলনলচে প্রায় পুরোটাই বদলে ফেলেছেন। কিন্তু এককালের ফিফা বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল গত বিশ্বকাপ থেকে যে ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছে তা যেন কাতারের মাটিতেও অব্যাহত। সবচেয়ে বেশি মোট আটবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা (১৯৫৪, ১৯৬৬, ১৯৭৪, ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০, ২০০২, ২০১৪), মোট চারবারের বিজয়ী (১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪) এবং সর্বাধিকবার সেমি-ফাইনালে পৌছানো বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল জার্মানি, রাশিয়ায় আয়োজিত ২০১৮-র বিশ্বকাপ থেকেই তাদের চিরাচরিত লড়াকু ছন্ড হারিয়েছে। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে জার্মানি বারংবার ব্যররথতার সম্মুখীন হয়েছে। ব্যতিক্রম ২০১৭ সালের কনফেডারেশন কাপ যা জার্মানি জয় করেছিল। ২০২০ ইউরোতেও তাদের পারফরম্যান্স ছিল বেশ হতাশাজনক। বিগত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায় থেকেই বিদায় নিয়েছিল জার্মানি। তাদের প্রথম ম্যাচে তারা সেবার মেক্সিকোর কাছে পরাজিত হয়েছিল, তারপর সুইডেনের বিরুদ্ধে জয় পেলেও তাদের গ্রুপের শেষ ম্যাচে ০-২ গোলে আরেক এশিয় দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। এবারে জার্মানদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরুই হল এশিয় দল জাপানের কাছে ১-২ গোলে হার দিয়ে। এরপরে জার্মানি এশিয় ফুটবলদলগুলিকে জুজু দেখলে বলার কিছু থাকবে না। খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আগের দিনের আর্জেন্টিনার মত জাপানের বিরুদ্ধে জার্মানিও শুরু করেছিল আক্রমণাত্মকভাবে। সেই একইভাবে পেনাল্টি থেকে জার্মানিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন গুন্ডোগান ঠিক এলবিসেলেস্তে জার্সিতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মেসির মত করেই। প্রথমার্ধ আর্জেন্টিনার মতই এগিয়ে থেকেই শেষ করেছিল জার্মানি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আগের দিনের সৌদি আরবের মতই উজ্জীবিত অদম্য লড়াই করল সুর্যোদয়ের দেশ জাপান। বিগত বিশ্বকাপে তারা তাদের বিদায়ী ম্যাচে একসময় বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ তাদের হারতে হয় ২-৩ গোলে। ঠিক ছেড়ে আসা বিশ্বকাপের স্মৃতি নিয়েই যেন উজ্জীবিত লড়াই চালালো জাপান। জার্মানির আক্রমণের জবাব তারা দিল গতিশীল প্রতি-আক্রমণে। দীর্ঘকায় শক্তিশালী জার্মানদের বিরুদ্ধে তুলনায় খর্বকায় জাপানিরা যে লড়াই চালালো তা বিশেফুটবলের তুলনীয় দুর্বল দেশগুলিকে অনুপ্রেরণা জাগাবেই। জাপানের রক্ষণভাগ আর তাদের গোলরক্ষক অসাধারণ ফুটবল খেললেন। জাপানের ফরোয়ার্ড লাইন মাঝেমাঝেই ভয়ের সঞ্চার করছিল জার্মান রক্ষণে। বিগত কয়েকবছর ধরেই জার্মানি ভুগছে দুর্বল রক্ষণভাগ নিয়ে। তাদের সে রোগ যে এখনও অব্যাহত তা এই ম্যাচ আবার প্রমাণ করে দিল। একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতেও জার্মান ডিফেন্ডাররা জাপানি ফরোয়ার্ডদের আটকাতে ব্যর্থ হলেন। নিজেদের গতিকে কাজে লাগিয়ে জার্মান বধ করে কিস্তিমাৎ করে গেল জাপানি খেলোয়াড়রা। রিতসু দুয়ানের গোলে ম্যাচের ৭৫ মিনিটে সমতা ফেরায় জাপান। কিন্তু সমতা ফিরিয়েই হাল ছেড়ে দেয়নি তারা। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণে উন্মুক্ত জার্মান ডিফেন্সের হতদরিদ্র অবস্থাকে প্রকট করে দিয়ে জয়সূচক গোল করে কেল্লাফতে করে দিলেন আসানো। তারপরে বাকি সময় ধরে চলল জাপানের মরিয়া লড়াই। রেফারির শেষ বাঁশি বাজানো পর্যন্ত অদম্য লড়াই চালিয়ে জয় ছিনিয়ে নিল জাপান। আবারও সাধিত হল অঘটন। আর নিয়ে পরপর দুটি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হার বরদাস্ত করতে হল জার্মানদের।

আর্জেন্টিনা আর জার্মানি কাতার বিশ্বকাপে তাদের অভিযান হার দিয়ে শুরু করলেও বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৪-১ গোলে দুর্দান্ত জয় পেল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। স্কোরলাইন দেখে কিন্তু বোঝার উপায় নেই ম্যাচটা কতটা লড়াইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। গুডউইনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল অস্টেলিয়াই। ১৯৯৮ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পরবর্তী বিশ্বকাপ ২০০২ সালে প্রথম ম্যাচেই সেনেগালের কাছে হেরে গিয়েছিল ফ্রান্স। সেই স্মৃতি যখন ফুটবলপ্রেমীদের মনে উঁকি দিতে শুরু করেছে আর আরও একটা অঘটনের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে তখনই জ্বলে উঠলেন এমবাপে, গ্রিজম্যান, জিরোউরা। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে অজিদের রক্ষণভাগকে তছনছ করে দিয়ে তারা জয় ছিনিয়ে নিলেন ৪-১ গোলে। বিগত বিশ্বকাপের ফর্ম থেকেই যেন আবার নতুন করে শুরু করলেন কাতার বিশ্বকাপ অভিযান কিলিয়ান এমবাপে। আগের চেয়েও পরিণত আর গতিশীল এমবাপের খেলাকে অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। একই তারিখে ইউরোপের দুই প্রতিবেশী দেশের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হল দুভাবে। প্রাচীন গলদেশের উত্তরাধিকারীরা যখন জয় দিয়ে শুরু করে বিশ্বকাপ বিজয়ী তকমা ধরে রাখার পরিকল্পনায় মশগুল তাদের প্রতিবেশী প্রাচীন গথিক সভ্যতার অধিকারীরা কিন্তু আবারও প্রথম ম্যাচেই হেরে গিয়ে আবারও গ্রুপ পর্যায়ে বিদায়ের আশঙ্কায় আশঙ্কিত। তবে কাতার বিশ্বকাপ অঘটনের বিশ্বকাপ হয়ে উঠলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।     

0 Comments

Post Comment