১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন রাত্রে সারাদেশে অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণার মধ্যে দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী তাঁর অসহনশীল এবং ফ্যাসিস্তপ্রবণ আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক অনুশীলনের কুখ্যাত নজির স্থাপন করেছিলেন। দীর্ঘ একুশ মাস ধরে সারাদেশে তিনি ধ্বংস-যজ্ঞের অপ্রতিহত আগুনের দাবদাহ বজায় রেখেছিলেন। কুমি কাপুরের মতো প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এই জরুরি অবস্থাকালীন সময়কে ইতিহাসের ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এই দীর্ঘ একুশ মাসের লাগামহীন অত্যাচার জারি রাখায় সময়ে সারাদেশে যতসংখ্যক মানুষকে কারাবন্দি করা হয়েছিল তার সংখ্যা বিয়াল্লিশের আন্দোলনকালীন সময় সারাদেশে বন্দি হওয়া মানুষের পরিসংখ্যানকে অতিক্রম করে গিয়েছিলো।
১৯৭৪-এর জানুআরি মাসে গুজরাটে ছাত্রযুব আন্দোলনই সম্ভবত দেড়বছর পরে এই কুখ্যাত জরুরি অবস্থা জারির ধাত্রী হিসেবে কাজ করেছিল। সেখানকার তৎকালীন দুর্নীতিপরায়ণ কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী চিমনভাই প্যাটেলের অপসারণের দাবিতে এই ছাত্রযুব আন্দোলন সারারাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৬৬ এবং ১৯৬৭-তে দু’দুবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লিতে ক্ষমতার তখতে বসার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোরারজি দেশাই পরাজিত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধির কাছে। এবার তিনি গুজরাটের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যূত করার লক্ষ্যে ছাত্রযুবদের এই আন্দোলনকে নীতিগত সমর্থন জানিয়ে তাদের ‘আশীর্বাদ’ করেন। এই প্রবীণ নেতা এই প্রক্রিয়ায় পুনরায় তাঁর ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ হন। অন্যদিকে এই সময়ই বিহারে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল গফুরের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই আন্দোলনে নেতা ছিলেন একদা জহরলাল নেহরুর ঘনিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সর্বোদয় আন্দোলনের নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ। তিনি ‘সম্পূর্ণ ক্রান্তি’র ডাক দিয়ে বিহারের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন। তাঁর এই ‘সম্পূর্ণ ক্রান্তি’র লক্ষ্যে তিনি ছাত্র সমাজের নিকট একবছর যাবৎ ক্লাস বয়কট এবং স্কুল-কলেজ বর্জনের আহ্বান জানান। আর এই প্রজ্বলিত আগুনে ঘি ঢেলেছিল শ্রমিক নেতা জর্জ ফার্নানডেজ-এ ডাকা দেশব্যাপী চুয়াত্তরের রেল ধর্মঘট।
দেশের সমস্ত বিরোধী দলগুলিকে জয়প্রকাশ তাঁর এই আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান। মতাদর্শিক বিরোধিতা সত্ত্বেও জনসঙ্ঘ (ফ্যাসিস্ত আরএসএস-এর রাজনৈতিক শাখা সংগঠন) এবং ‘কমিউনিস্টরা’ একই সঙ্গে এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। জয়প্রকাশের এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল ইন্দিরা গান্ধিকে ক্ষমতার মসনদ থেকে অপসারিত করে ‘দলহীন গণতন্ত্র’-এর প্রতিষ্ঠা করা!
পঁচাত্তরের ২ জানুয়ারি তৎকালীন রেলমন্ত্রী ললিতনারায়ণ মিশ্র বিহারের সমস্তিপুর রেলস্টেশনের প্লাটফরমে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। তাঁর এই হত্যাকাণ্ডে শ্রমিক নেতা জর্জ ফার্নানডেজের অনুগামীরা জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার দেড়মাসের মাথায় ১৫ ফেব্রুআরি খোদ দিল্লিতে এসে জয়প্রকাশ নারায়ণ দেশের পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে ইন্দিরা গান্ধির ‘বেআইনি’ নির্দেশ অমান্য করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ১১ মার্চ গুজরাটে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে মোরারজি দেশাই ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন। উনআশি বছর বয়সি এই গান্ধিবাদী নেতার প্রেশার পলিটিকস বা চাপ-সৃষ্টির রাজনীতির ফলশ্রুতিতে ইন্দিরা গান্ধি মাথা নত করতে বাধ্য হয়ে জুন মাসে নতুন করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় ঘটে এবং জয়প্রকাশ এবং মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ দলের জোট জয়লাভ করে।
গুজরাটের এই পরাজয় ইন্দিরা গান্ধীকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ এবং প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলেছিল। ১২ জুন এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাঁর রায়ে জানান যে ১৯৭১-এর সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধি অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এই রায়ের ফলে ইন্দিরা গান্ধির সাংসদ-পদ বাতিল হবে এবং আগামি ছয় বছর তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না বলে রায়ে জানানো হয়। এই অভিযোগটি ‘মাইনর’ তথা গৌণ হিসেবে আখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও দেশের জনসাধারণের মধ্যে ইন্দিরা-বিরোধিতা তুঙ্গে উঠতে থাকে। ফলে ইন্দিরা হঠাও-এর দাবিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। এসময় প্রখ্যাত আইনজীবী ননী পালকিওআলা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে জানান যে তাঁর আবেদনের শুনানি না-হওয়া পর্যন্ত ইন্দিরা গান্ধিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের প্রশ্নই ওঠে না। ২৪ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণ আয়ার তাঁর রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে ‘শর্তাধীন’ প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতির রায়ের সূত্র ধরেই জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং জনতা মোর্চা ইন্দিরা গান্ধির পদত্যাগের দাবি জানাতে থাকে। ২৫ জুন দিল্লির রামলীলা ময়দানের প্রতিবাদী সভায় জনসঙ্ঘের নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ি, সর্বোদয় আন্দোলনের নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ, মোরারজি দেশাই প্রমুখ নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনতে অজস্র মানুষ হাজির হন। এদিন মোরারজি দেশাই বলেন : আমরা ইন্দিরা গান্ধিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবো, তিনি পালিয়ে যেতে পারেন সুতরাং আমরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রাখবো যাতে তিনি পালাতে না পারেন।—জয়প্রকাশ এদিনের সভায় কবি দিনকর-এর কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে আওয়াজ তুলেছিলেন : সিংহাসন খালি করো কি জনতা আতি হ্যায়।
মনে রাখা দরকার যে জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং মোরারজি দেশাই কিন্তু এসময় তাঁদের ঘোষিত এবং চর্চিত গান্ধীবাদের পথ থেকে বিচ্যূত হয়েছিলেন, এমনকি সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও তাঁরা যথাযথ মান্যতা দেন নি। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতার মসনদ আগলে রেখেই ইন্দিরা গান্ধি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমদের মাধ্যমে ২৫ জুন রাত্রে সারাদেশে অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
এই জরুরি অবস্থা জারি করেই ইন্দিরা গান্ধী তাঁর ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করতে শুরু করেন। তাঁর স্বৈরতান্ত্রিক অনুশীলন ফ্যাসিবাদের মধ্যেই চূড়ান্ত সার্থকতার সন্ধান করেছিল। এই ফ্যাসিস্ত অনুশীলনের মধ্যে দিয়েই প্রথমত দেশের সমস্ত বিরোধী দল এবং সংবাদপত্রের গণতান্ত্রিক অধিকার তিনি খর্ব করেন। দ্বিতীয়ত সমস্ত বিরোধী দলসমূহের পত্রপত্রিকা (সংবাদপত্র সহ) অফিসের বৈদ্যুতিন সংযোগ ছিন্ন করা হয়। তৃতীয়ত কঠোরভাবে প্রেস সেনসরশিপ জারি করা হয়। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনও লেখা বা সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সমস্তরকম প্রতিবাদী পদযাত্রা, মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় বিরোধীদের ব্যাপক ধড়পাকড় এবং কারাবন্দিকরণ। গোটা দেশ হয়ে ওঠে জেলখানা। এরই সঙ্গে শুরু হয় নির্মম অত্যাচার, বন্দিহত্যা, বলপূর্বক নাসবন্দি এবং উচ্ছেদ।
২৬ জুন বিপুল সংখ্যক বিরোধী নেতৃবর্গ এবং কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং জামায়েত-ই-ইসলামি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এই জরুরি অবস্থা জারি করার পর সারাদেশে কেবলমাত্র মিসা (MISA) আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৩৪,৯৮৮ জন দেশবাসীকে। আর ডিআইএসআইআর (DISIR) আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৭৫৮১৮ জন দেশবাসীকে। অর্থাৎ এই দুটি আইনের প্যাঁচে ফেলে দেশের ১,১০,৮০৬ জন দেশবাসীকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল।
আজ সাতচল্লিশ বছরের মাথায় এসে আমরা আরও এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি। ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে সেদিন আন্দোলনে সামিল হয়েছিল আরএসএস-এর রাজনৈতিক সংগঠন জনসঙ্ঘ, সমসময়ে যার অন্যতম নেতা ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ি। জরুরি অবস্থা জারি করে ইন্দিরা গান্ধী এই জনসঙ্ঘের পরিচালিকা শক্তি আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। জয়প্রকাশের নেতৃত্বে সমাবেশিত নেতৃবর্গ প্রধানমন্ত্রীর তখত থেকে ইন্দিরা গান্ধীকে হঠাতে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। সেদিনের সেই সরকার-উচ্ছেদের আন্দোলন যারা করেছিলেন তাদের অন্যতম অধুনা বিজেপি (তৎকালীন জনসঙ্ঘ) এখন রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে বসে আউট-হেরড প্রক্রিয়ায় ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারকেও ম্লান করে চলেছে। সেদিন সরকার উচ্ছেদের আন্দোলন ছিল ন্যায্য, আর আজ তার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাকেও বিজেপি সরকার দেশবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত আখ্যা দিয়ে সমস্ত বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে কুখ্যাত ঔপনিবেশিক আইনের অবাধ ব্যবহার করে চলেছে।
আজ দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা না করেও সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ত সরকার দমনপীড়ন, অত্যাচার, নিপীড়নকে অবাধ করে তুলেছে। জরুরি অবস্থা জারি না করেও সারাদেশে সংবাদপত্রের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ জারি রেখেছে। সত্য এবং ব্রতবদ্ধ সাংবাদিকদের হত্যা, কারারুদ্ধ করে চলেছে। বিভিন্ন অছিলায় মুসলিম, ক্রিশ্চান, দলিত জনসাধারণকে হত্যা, পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে মারার মতো সামন্ততান্ত্রিক প্রথার উজ্জীবন ঘটিয়ে চলেছে। নারী স্বাধীনতা ক্রমাগত খর্ব করার পাশাপাশি ঘৃণার বিস্তার ঘটানো এবং মিথ্যেকে ক্রমাগত প্রচার-প্রচারণার মধ্যে দিয়ে সত্য বলে প্রতিভাত করে দেশের জনসাধারণকে বিভ্রান্তকরণের মাধ্যমে নিজেদের অপরাজনৈতিক সাফল্য অর্জনে মরীয়া হয়ে উঠেছে।
মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের তরফে পরিবেশিত এক তথ্যে জানা গিয়েছে যে বিজেপি নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জমানায় ২০১৪ থেকে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের অন্তর্বর্তী সময়ে সারাদেশে ৩২৬টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করা হয়েছে। ২০১৯-এর পর থেকে এপর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার তথ্য সরকারিভাবে এখনও জানা যায়নি। স্মরণ থাকতে পারে যে এই ৩২৬টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার মধ্যে ১৪৯টি রুজু করা হয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করার কারণে, আর ১৪৪টি মামলা রুজু করা হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে মুখ খোলার কারণে! হাথরাসের ধর্ষণকাণ্ডের তথ্যানুসন্ধানের কারণে উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার জন্যে সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান-এর বিরুদ্ধে য়ুএপিএ প্রয়োগ করে তাঁকে কারান্তরালে রেখে দেওয়া হয়েছে দেড় বছরেরও বেশি সময়কাল।
২০১৪-য় কেন্দ্র সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকেই মোদি জমানায় সারাদেশে ঘৃণার বিস্তারকরণ শুরু হয়েছে। ২০১৫-তে ব্যাপক হারে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হয়েছেন এই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্তদের হাতে। এই ২০১৫-তেই তো ঘরে গোমাংস রাখার অভিযোগে বাহান্ন বছর বয়সি এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা সংঘটনের কয়েক সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রতিক্রিয়াজাত নীরবতা ভঙ্গ করে বলেছিলেন যে আমাদের দেশের হিন্দু এবং মুসলিমদের উচিত দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়ানো, নিজেদের মধ্যে বিবাদ করা নয়! কী সুকৌশলে তিনি এই পঞ্চাশোত্তর অসহায় মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যার নিন্দা থেকে বিরত থেকেছেন!
২০১৭-য় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর তখতে আরোহন করার আগে যোগী আদিত্যনাথ যে কী পরিমাণ উত্তেজক সাম্প্রদায়িক প্রচার করেছিলেন তা বিস্ময়কে বিপন্ন করে। এরপরও তিনিই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে আসীন হয়েছেন! ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী ২০২০-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে কারান্তরালে থাকা বন্দির সংখ্যা ৪,৮৮,৫১১। এর মধ্যে ৩,৭১,৮৪৮ জন বন্দি বিচারাধীন! বাকি ১,১২,৫৮৯ জন বন্দি ‘কনভিক্ট’! আর অবশিষ্ট ৪,০৭৪ জন ‘ডেটেন্যু’!
১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থা জারি করে ইন্দিরা গান্ধির ‘আধা-ফ্যাসিস্ত’ জমানায় দেশের ১,১০,৮০৬ জন দেশবাসীকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। আর বর্তমান আরএসএস নিয়ন্ত্রিত হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ত বিজেপি সরকার জরুরি অবস্থা জারি না করেই গত ২০২০-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৪,৮৮,৫১১ জন মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠরোধ করতে তাদের কারারুদ্ধ করেছেন। দেশে জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ জারি রাখতে বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী অবিরল অসত্যভাষণে দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকেন হাসিমুখেই, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি বিতরণ করে থাকেন নির্বিকারচিত্তেই। বিরুদ্ধস্বর দমনে য়ুএপিএ সহ বিভিন্ন কালাকানুন অবলীলায় প্রয়োগ করার দক্ষতা তিনি সপ্রমাণ করেছেন। এসব তো জরুরি অবস্থা জারি না করেই।
তবে যদি কোনও কারণে কখনও দেশের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন তাহলে তারপর তিনি যে কী করবেন, কী করতে পারেন তা গবেষণার বিষয়। দেশ এবং জাতির এই ভয়ঙ্কর শত্রু ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এখনও সুসংগঠিত নয়। প্রকৃত ফ্যাসিবিরোধী শক্তিসমূহের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ পথের লড়াই শুরু হতে যত বিলম্ব ঘটবে আগামী দিনের গাঢ় অন্ধকার ততই বেশি ঘনবদ্ধ হবে।
জুন ১৬, ২০২২