ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার একশো বছর : ফিরে দেখা সুশোভন মুখোপাধ্যায়
ছাত্র বয়সে ছাত্ররা যখন মননে সমাজ পরিবর্তনের বিপুল আবেগ ও প্রত্যাশা নিয়ে রাজনীতি করতে আসে, তখন তাঁরা বহু লাল পিঁপড়ের কবলে পড়ে, চিনির মতো হয়ে ওঠে। বিশেষ করে এটি শহরের নামী-দামী প্রতিষ্ঠানগুলিতে অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে দেখা যায়। এই লাল পিঁপড়েরা নানা মত ও ধারার গোষ্ঠী চিনির মত মিষ্টি, সুস্বাদু রূপের কমবয়সী নতুন ছাত্র পেয়ে নিজেদের মধ্যে কাড়াকাড়ি করে থাকে। ফলে অনেক সময় নতুন ছাত্রটি অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে, কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল বা বেঠিক তা না বুঝে উঠতে পেরে তার মননে তখন নানা জটিলতা, কুটিলতাও বাসা বাঁধতে থাকে। আবার প্রবল সংঘর্ষ বাঁধে সঠিক ও ভুল মত ও ধারাগুলির মধ্যে। এ সময় প্রধানত প্রয়োজন পড়ে আদতে প্রকৃত 'লাল' কারা তা বোঝবার।
এই 'লাল' রংটি শ্রমজীবী মানুষের রক্তক্ষয়ী বহু সংগ্রামের বিনিময়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংগ্রামী দলগুলো এই রক্ত-মাখা লাল রঙের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সমস্ত কিছুই হয়েছে এদেশের সমাজ, মাটির বর্তমান অবস্থার মধ্যেকার দ্বন্দ্বগুলির সংঘর্ষ ও তার বিকাশ এবং সেসবের প্রকৃত সমাধান খোঁজবার তাগিদে।
ভারতে তথাকথিত লাল দল বা কমিউনিস্ট পার্টি আকাশ থেকে পড়েনি। তা তৈরি হয়েছে সমাজ, মাটির টানে। ঠিক যেমন ভাবে গাছ থেকে পেয়ারা খসে পড়লে মাটির টানে তা এসে সমাজের কোলে পরে। তেমন ভাবে মাটির জনগণের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমাজে এই লাল দল উপরে উঠতে পারে। অথবা তার ডালপালার চারিপাশে বিস্তার ঘটিয়ে ফেলে। তাই কোনটা রাজনৈতিকভাবে সঠিক 'লাল' দল, সেটি বুঝতে প্রাথমিকভাবে এদেশের সমাজ ও মাটির দিকে তাকাতে হবে। মাটির অবস্থা কেমন, সমাজের প্রকৃতি ও চরিত্র কেমন তা-ই প্রাথমিকভাবে গভীরতার সাথে খোঁজবার প্রয়োজন পড়ে। এর মূলে থাকে সঠিক তথ্য ও উপযুক্ত মার্কসবাদী তত্ত্ব। তথ্য সবসময়ই তত্ত্বের অধীনস্থ, কারণ যে কোনও তথ্যকে বিশ্লেষণ করতে হয় তত্ত্বের ভিত্তিতে। সমাজবিজ্ঞানের নিরিখে এই মার্কসবাদী তত্ত্বে সমাজকে দুই দিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়; এক, উৎপাদিকা শক্তি; দুই, উৎপাদনের সম্পর্ক। উৎপাদিকা শক্তির মধ্যে থাকে, প্রকৃতি, শ্রমশক্তি-শ্রমের অভিজ্ঞতা ও সেই দেশের উৎপাদনের হাতিয়ার, প্রযুক্তি। উৎপাদনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এর মধ্য দিয়ে। উৎপাদিত পণ্যের বণ্টন, ক্রয়-বিক্রয়, বাজার ও জনগণের শ্রেণিসংগ্রামের উপর ভর করে। সমাজে এই উৎপাদন সম্পর্কই প্রধান। এটিই যে কোন সামাজিক পরির্বতনে প্রধান ভূমিকা নেয়। আর শ্রেণিসংগ্রাম জনগণের চেতনাকে বিকশিত করে। এইগুলির মধ্যেকার দ্বান্দ্বিক সংঘর্ষে আবার উৎপাদিকা শক্তিরও বিকাশ ঘটে। তাই যে কোন সমাজ ও তার মাটিকে চিনতে হয় সমাজবিজ্ঞানের এই তীক্ষ্ম অস্ত্র দুটির দিকে তাকিয়ে।
এদেশের প্রথম লাল দল তৈরির ইতিহাস নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। অথচ এদেশে প্রথম লাল দল তৈরি হয়েছে বিদেশে। এক ভিন্ন দেশের চরিত্রের লাল দলকে সম্পূর্ণভাবে অনুকরণ করে। ইতিহাস ও মার্কসবাদী পদ্ধতি বলে, এদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রচুর রক্ত ঝরেছে। সেই রক্তের বিনিময়ে প্রথম লাল দল তৈরি হয়, ১৯২৫ সালে। এর মূলে রয়েছে সেই সময়ের শ্রমিকশ্রেণীর রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি অর্থাৎ শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস। তবে এখানেও প্রশ্ন থাকে এদেশের 'শ্রমিকশ্রেণী' সমীকরণে কারা পড়ে, কেবলই বৃহৎ শিল্পে কাজ করা 'শ্রমিক'ই হবে? এর উত্তর খুঁজতে প্রথমে এ সমাজের মাটির প্রকৃতি ও সামাজিক চরিত্র বুঝতে হবে।
ভারতকে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা রাজনৈতিকভাবে সরাসরি দখল করবার আগের ও পরের মুহূর্তে উচ্চবর্ণের জোতদার-জমিদার শ্রেণির বিরুদ্ধে কৃষকেরা বহু সংগ্রাম করেছেন। জমি ও ফসলের অধিকারের দাবীতে। এমনকি সেসময় থেকে কৃষকেরা গেরিলা পদ্ধতিতেও যুদ্ধ করেছেন। যেমন, এই বাংলা ছিল এসমস্ত আন্দোলন ও বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান পীঠস্থান। ১৭৬০ সাল থেকে ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত বাংলার সন্ন্যাসী ও ফকিররা বিদ্রোহ করেন। এই বিদ্রোহ ছিল খাজনা আদায়, লুন্ঠন, বাংলার কুটির শিল্প ও বস্ত্রশিল্প ধ্বংসের বিরুদ্ধে। এরই সমসাময়িককালে ঘটে চুয়ার বিদ্রোহ। মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও ধলভূমের জঙ্গলমহলের আদিবাসী কৃষকরা ও অরণ্যবাসী সমাজের নিম্নবর্ণের মানুষদের বিদ্রোহ ছিল এটি। অরণ্যের ওপর দীর্ঘদিন ও বংশ-পরম্পরায় ভোগদখলের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে এবং উচ্চহারে খাজনা আদায় করার বিরুদ্ধে চুয়ার বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। চুয়ারদের এই বিদ্রোহের সাথে যোগ দিয়েছিল পাইকরা। এই সময়ে আবার গড়বেতায় শুরু হয় লায়েক বিদ্রোহ, ১৮১৬ সালে। এখানে লায়েক প্রজারা গেরিলা কায়দায় শালবনীর জঙ্গলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ইতিহাসে এই ধরনের আরও নানা বিদ্রোহ রয়েছে। অর্থাৎ, এই প্রতিটি শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস তথা সংগ্রামী আন্দোলন, বিদ্রোহগুলি আদপে সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ এবং উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে। দেশের স্বাধীন পুঁজির বিকাশের পক্ষে। অতএব, ভারতের 'শ্রমিকশ্রেণি' অংশ আদিবাসী, নিম্নবর্ণের কৃষকেরাও। অথচ ভারতের প্রথম তথাকথিত লাল দলের গঠন এসমস্ত ইতিহাসকে উপেক্ষা করে গেছে। কেবলই ব্রিটিশের তৈরি তথাকথিত আধুনিক শিল্প-শ্রমিকের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনগুলিতে বন্দী থেকেছেন, তৎকালীন তথাকথিত লাল দলের নেতৃত্ব বৃন্দ, প্রবক্তা'র বড় অংশ। উপরন্তু এই শ্রমিকেরা আবার শহরের আয় কমলে গ্রামের চাষবাস করেন। সিংহভাগ শ্রমিকের সাথে জমি-সম্পর্ক বিদ্যমান(এখনও)। আদতে ভারতে উৎপাদনের সম্পর্ক কেমন ও শ্রমিকের চরিত্র কেমন, সেই সম্পর্কে তাঁদের পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এমটাই লেখকের(আমার) ধারণা আজকে দাঁড়িয়ে। এরও প্রধান কারণ আবার তাঁদের বস্তুগত ভিত্তি, শ্রেণী ও বর্ণগত অবস্থান। এই ধরনের সহজ সরল সত্যগুলিকে অস্বীকার করে বা এড়িয়ে গেলে বোঝা অসম্ভব এদেশের প্রকৃত লাল দল কোনটি আসলে!
১৯২৫ সালে ভারতে প্রথম লাল দল তৈরি হয় তথাকথিত বৃহৎ শিল্প-শ্রমিকের নানা অর্থনৈতিক সংগ্রাম ও রাজনৈতিক সংগ্রামে যুক্ত হয়ে 'শ্রেণী' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবার ফলে। ১৯২০ সালে ট্রেড ইউনিয়ন 'AITUC' গঠনের পেছনেও এমনই কারণ রয়েছে। কিন্তু এদেশের ইতিহাস এবং উৎপাদিকা শক্তি এবং উৎপাদন সম্পর্কের উপর সঠিক নজর না দেওয়ায় তা বহু ক্ষতিও ডেকে আনে। যেমন, এগুলির ফলে নানা সংগ্রামের মধ্যে শ্রমিকশ্রেণীর প্রসারিত হওয়ার সুযোগ আসে। এর পাশাপাশি আবার এই ট্রেড ইউনিয়ন ও দলের মূলে ও নেতৃত্বে শ্রমিকশ্রেণি বস্তুগতভাবে না থাকায় ভারত ব্যাপী শ্রমিকশ্রেণি রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ভুল সমাজ বৈজ্ঞানিক, তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ-ই যার শীর্ষ কারণ হিসেবে দর্শায়। এটি ঠিক ক্রমাগত সংঘর্ষের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে সঠিক হতে আরও চার দশক লাগে। কৃষকের তেভাগা বিদ্রোহ হয়ে সিপিআইএম(১৯৬৪), জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব হয়ে নকশালবাড়ি কৃষি বিপ্লবের রাজনৈতিক লাইন তথা সিপিআইএম(এমএল), নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। অবশেষে যা ভারতের উৎপাদন সম্পর্ককে সঠিক পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষমতার ন্যূনতম জায়গায় আসে। তাই জরুরি অবস্থা, মোটা অর্থের সেনাবল, লম্বা চওড়া নেটওয়ার্কের ইন্টেলিজেন্স দিয়ে নানা প্রকারের প্রবল রাষ্ট্রীয় দমন, ভাঙা-গড়ার দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের পরেও প্রকৃত লাল দল এগিয়ে চলে জনগণের মুক্তির স্বার্থে নতুন গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে। পাহাড় থেকে সমতল, জঙ্গল থেকে গ্রাম হয়ে শহর ঘিরে। কারণ, রাষ্ট্র এই লড়াইয়ে প্রথমে হেরে বসে আছে, জনগণের বিপক্ষের নীতিমালা গ্রহণ করে। এই লাল দলকে নিশ্চিহ্ন করতে আদতে রাষ্ট্রকে জনগণের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, যা অসম্ভব এ সময় দাঁড়িয়ে।
এখন প্রশ্ন, সেই সময় তো অনেক আগের। এখন এত রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, বিশ্বায়ন-পরবর্তী সময়ে এদেশের সামাজিক পরিবর্তন ঘটেনি? উত্তর হল, না, পরিমাণগত পরির্বতন ঘটেনি। বহু অর্থনৈতিক সংস্কার হলেও তা কখনই সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। আজকের বিশ্বে এটি ঘটতে পারে কেবল এক শ্রেণি হটিয়ে আরেক শ্রেণি'র উত্থানের মধ্য দিয়ে। শ্রমিকশ্রেণি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। বলা বাহুল্য পরিমাণগত কিছু পরিবর্তন ঘটছে। এক্ষেত্রে সেগুলি মূলত, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, সাম্রাজ্যবাদ ও জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং শ্রম ও পুঁজির মধ্যকার দ্বন্দ্ব আরও তীক্ষ্ম হওয়ার ফলে। এই গুণগত পরিবর্তন অর্থাৎ সামাজিক বিপ্লব বা উৎপাদন সম্পর্কের পরির্বতন, কখনই বিদেশি পুঁজি'র লগ্নি, বিদেশের শিল্প ও ব্যাংক-পুঁজি, উৎপাদনের হাতিয়ার, প্রযুক্তি ইত্যাদি আনবার মধ্য দিয়ে ঘটে না। এই ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারগুলির কারণে একপ্রকারের বিকৃত পুঁজিবাদী সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেলেও এগুলি আসলে এদেশের নিজস্ব প্রাকৃতিক বিকাশকে স্তব্ধ করেছে। যার ফলে দেশীয় পুঁজির বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা এদেশে হতে পারে কেবলই প্রকৃত কৃষকের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জমি, ফসল ন্যায্য দাম ও দেশীয় বাজার গড়ে উঠবার মধ্যে দিয়ে(এখনও এদেশে কৃষিতে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ফলে দেশীয় বাজার গড়ে উঠবার জায়গা নগণ্য)। এসব হয়নি বলেই অত্যধিক পরিমাণে বাজার বহির্ভূত শোষণের কোপে কৃষকেরা ফসলের অধিকার ও তার ন্যায্য দাম পান না। ঋণের জ্বালায় আত্মহত্যা করেন। আজ এসমস্ত কিছু না হওয়ার কারণে আবার ছোট উৎপাদক সংস্থা, ব্যবসায়ীরা বিদেশি শক্তিগুলির নিয়ন্ত্রণ, স্বার্থে চলা বাজারেও স্থায়িত্ব পায় না। হাতি ও মশার প্রতিযোগিতায় বেঁচে থাকতে পারেন না। আর এদেশের একচেটিয়া বৃহৎ ব্যবসাদার গোষ্ঠীগুলি বিদেশি শক্তিগুলির দেখানো পথে, তাদের নানা সহায়তায় এদেশে প্রসারিত হয়ে চলছে। জল-জঙ্গল-জমি লুঠ ও বিদেশে পাচার করবার মধ্য দিয়ে দিন দিন ফুলেফেঁপে উঠছে। অর্থাৎ, বিপুল পরিমাণে উৎপাদিকা শক্তি ক্ষতির সম্মুখীন।
এই সমস্ত কিছু ধরে আন্দোলনের প্রকৃতি কেমন হলে তা সঠিক দিকে এগোবে, বিপ্লবের স্তর কেমন হবে, সেই অনুযায়ী লাল দলের অনুশীলনের গঠনমূলক পদ্ধতিগুলিও নির্ধারিত হয়। পরস্পর পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। প্রত্যেকটি দলই তাদের নিজেদের রাজনৈতিক লাইন অনুযায়ী অনুশীলন করে। সেই অনুযায়ী যুক্তফ্রন্টের শক্তিরও নির্ধারণ করে থাকে। এই যুক্তফ্রন্টের মার্কসবাদী পদ্ধতি হল প্রধানত শ্রেণীগত ফ্রন্ট। এরপরেও কৌশলগত ফ্রন্ট হতে পারে। তবে তা-ও শ্রেণীগত ফ্রন্টের অধীনস্থ হয়। এখন প্রকৃত লাল দল কোনটি, সে বিষয় বুঝতে মাথায় রাখা প্রয়োজন, তথ্য সব সময়ই তত্ত্বের অধীনস্থ। তাই জোর সবসময়তেই মার্কসবাদী তত্ত্বে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী সমাজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং তা বিশ্লেষণ করে জনগণের সম্মুখে তুলে ধরা। অনেক 'মার্কসবাদী' লেখকেরা এসমস্ত কিছু করেন না, উৎপাদন সম্পর্কে নজর দেন না, ফলে তাদের লেখাগুলি সমাজে হতাশাজনক নানা দ্বন্দ্বগুলিকে বয়ে আনে। অথবা সেগুলিকে আরও তীব্রতর করে বা পুনঃরায় জাগিয়ে তোলে। এই ধারা তাদের মধ্যেও দীর্ঘকালব্যাপী অ-মার্কসবাদী অনুশীলনের মধ্য থেকে আসে। যেটি আসলে এদেশে সাম্রাজ্যবাদের তৈরি বিকৃত ইতিহাসের দেখানো পথ ও প্রকৃতি। এই ধরনের হতাশাগ্রস্ততা আসলে সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি বহনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সহমন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখক শ্রীমান সুশোভন মুখোপাধ্যায়ের "ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার একশো বছর: ফিরে দেখা" প্রবন্ধটি-ও মোটা দাগে সেই ধারার ইঙ্গিত বহন করে। আসলে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার একশো বছরে ইতিহাস সঠিকভাবে বুঝতে ও বোঝাতে গেলে কম করে তার আগের একশো বছরের শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাসের সঠিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখানোর প্রয়োজন পড়ে। যার ধারপাশ দিয়েও ঘেষেন না অনেকে।
ছাত্র বয়েসে সমাজ বদলের রাজনীতি করতে এসে সঠিক ও ভুল রাজনীতির মধ্যকার দ্বন্দ্বগুলি বুঝতে গেলে অথবা প্রকৃত লাল দল কোনটি, সে বিষয়টি খুঁজতে প্রধানত মার্কসবাদী রাজনৈতিক তত্ত্বে জোর দেওয়া প্রয়োজন। যদিও বা সেই সময় তখনই তা বোঝাও সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এত তত্ত্ব-কথা অনেক সময় কানে ঢোকে না। তার জন্য পরে আরও বহু সময় পাওয়া যায়। জীবনের প্রতিটা ভুল পথ আরও দুটি পথের দরজা খুলে রাখে, আরও বড় ভুল ও সঠিক পথে আসবার জন্য। নানা চিন্তা ভাবনা ও রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী প্রত্যেকে প্রত্যেকের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সমাজে শ্রেণি সংগ্রামের তীব্রতা ও মাটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী এক্ষেত্রেও ভুলের প্রবণতাগুলি কমে। প্রকৃত লাল দলটি'কে চিনতেও খুবই কম সময় লাগতে পারে।