বিশ্বকাপে আবারও তৃতীয় স্থানে শেষ করল ক্রোয়েশিয়া। ফিফা বিশ্বকাপে আবির্ভাব বছরে ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থানে শেষ করেছিল দাভর সুকেরের ক্রোয়েশিয়া। সেমিফাইনালে তারা সেবার হেরেছিল ফ্রান্সের কাছে। আর জার্মানীকে হারিয়ে সেবার তারা পেয়েছিল তৃতীয় স্থান। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরেই রানার্স হয়েছিল তারা। এবারের কাতার বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে শেষে বিশ্বকাপের অগ্রগমন থেমে যায় ক্রোয়েশিয়ার, কিন্তু তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচেও হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের পর সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে পরাজিত হওয়া মরক্কোকে হারিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করল লুকা মডরিচের ক্রোয়েশিয়া।
একটা সময় ছিল যখন বিশ্বকাপে তৃতীয়-চতুর্থ স্থান নির্ধারক ম্যাচকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হত না। সেমিফাইনালে পরাজিত দুই দল অনেকটা গয়ংগচ্ছভাবেই এই খেলাটা খেলত, রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া হত এই ম্যাচে। কিন্তু ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে জার্মানি-উরুগুয়ের মধ্যে খেলা তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচ এই খেলার সংজ্ঞাটাই পাল্টে দেয়। দুর্দান্ত উত্তেজক সেই ম্যাচ জার্মানি জিতেছিল ৩-২ গোলে কিন্তু মন জয় করে নিয়েছিলেন উরুগুয়ের দিয়েগো ফোরলান। এই কাতার বিশ্বকাপের ক্রোয়েশিয়া-মরক্কো তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচও এক অনন্য উচ্চতায় পৌছালো। লড়াই হল তীব্র, ম্যাচে উত্তেজনা বজায় থাকল শেষ বাঁশি বাজা অব্দি। খেলা শুরুই হল দুর্দান্ত উত্তেজকভাবে। ৭ মিনিটের মধ্যে ফ্রিকিক থেকে জসকো গিভারদিওল এগিয়ে দেন ডালিচের দলকে। কিন্তু ঠিক পরের মুহুর্তেই ফ্রিকিক থেকে হেডে গোল করে সমতা ফেরান মরক্কোর দারি ৯ মিনিটে। দারির এটা প্রথম আন্তর্জাতিক গোল। নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে নিজেকে উজার করে দিলেন লুকা মডরিচ, বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক নায়ক আজ নিজেকে নিয়ে গেলেন মহানায়কোচিত উচ্চতায়। সারা মাঠ জুড়ে খেললেন। দলের রক্ষণভাগও সামলালেন, গোটা দলকে উজীবিত করে খেলালেন। প্রথমার্ধের ৪২ মিনিটে ওসিরিচ ক্রোয়েশিয়াকে আবার এগিয়ে দেন। খেলার প্রথমার্ধে যদি ক্রোয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে থাকে তবে দ্বিতীয়ার্ধ ছিল মরক্কোর। দ্বিতীয়ার্ধে তারা গোলশোধের মরিয়া চেষ্টা করল। কিন্তু দুপক্ষই বারংবার চেষ্টা স্বত্বেও গোলসংখ্যায় আর কোনও পরিবর্তন করতে পারেনি। ২-১ গোলে জয় পেয়ে বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান পেল ক্রোয়েশিয়া। এটা তাদের দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন। ২০০২-এর ফিফা বিশ্বকাপে স্বদেশের মাঠে স্বপ্নের দৌড়ের শেষে তুরস্কর কাছে হেরে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াকে। এবারে মরক্কোকেও একইভাবে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল। তবে তাদের লড়াই দীর্ঘদিন স্মৃতিতে থেকে যাবে। যদিও মরক্কোর খেলোয়াড়দের অনেকেই খেলার শেষে রেফারিং নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তবে যোগ্য দল হিসাবেই তৃতীয় স্থান পেল মডরিচ, পেরিসিচ, ওসিরিচ, লিভাকোভিচের ক্রোয়েশিয়া। মরক্কোও এবার ফুটবলবিশ্বের হৃদয় জয় করে নিয়েছে, আর এর সাথেই জিতে গেল ফুটবল। বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যম হিসাবে ফুটবলকে ব্যবহার করার কৌশলে এখানে ফিফা সফল।
কাতার বিশ্বকাপের শেষ এবং চুড়ান্ত লগ্ন আসন্ন। এবার শুধু চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ বাকি আর সেই লড়াই শুরু হতে আর চব্বিশ ঘন্টাও বাকি নেই। আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের ফুটবল মহারণ প্রত্যক্ষ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ফুটবলবিশ্বের ফুটবল প্রেমী মানুষ।