পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ব্রিজ

  • 25 July, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 1282 view(s)
  • লিখেছেন : রাহুল দাশগুপ্ত
১ বামনদের গ্রামের পাশে একটা মস্ত বড়ো ঝিল ছিল। সেই ঝিলের ওপারেই ছিল খেলার মাঠ। সেই মাঠে খেলতে যেতে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের খুব কষ্ট হতো। সকালে বা বিকালে হাঁটতে যেতে বূদ্ধ বা বূদ্ধাদের দম বেরিয়ে যেত। ঝিলের গা দিয়ে অনেকটা ঘুরে তবে তারা সেই খেলার মাঠে পৌঁছত। একদিন গ্রামের মোড়ল বললেন, আমরা এই ঝিলের ওপর একটা ব্রিজ বানাব। তোমরা রাজি তো? গ্রামের সবাই এই প্রস্তাব শুনে একদম হইচই করে উঠল।

একজন বলল, এটা একটা দারুণ ব্যাপার হবে। আমাদের দেশের কোনো গ্রামে এরকম ব্রিজ নেই...

আর একজন জানতে চাইল, এরকম একটা ব্রিজ বানাতে কতদিন লাগবে?

মোড়ল বললেন, তা ছ'মাস তো লাগবেই।

তিনি বললেন বটে ছ'মাস, কিন্তু ব্রিজ বানাতে লেগে গেল ছ'বছর।

মোড়লের কাছে সবাই জানতে চাইত, এত সময় লাগছে কেন?

তিনি বলতেন, আমরা সব বামুন। আমাদের পক্ষে কী এর চেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি কাজ করা সম্ভব?

সবাই মেনে নিয়েছিল কথাটা।

এই ব্রিজ বানাতে গিয়ে গ্রামের মানুষের দুরদশার অন্ত রইল না। সেখানকার বাতাস দূষিত হয়ে গেল। মাটি ও জলে দূষণ ছড়ালো। আর যা শব্দ হল, তা তো বলার নয়। সকাল থেকে রাত পরযন্ত প্রচণ্ড আওয়াজ শুরু হয়ে গেল। বড়ো বড়ো ক্রেন এল। সেগুলো টেনে টেনে নিয়ে এল ব্রিজ বানাবার নানা উপকরণ। প্রচণ্ড শব্দে বয়স্ক লোকেদের অনেকেই বধির হয়ে গেল। কানের ডাক্তারদের কাছে লম্বা লাইন পড়ল। ছোটো ছোটো শিশুদের অনেকেরই স্নায়ু বিপরযস্ত হয়ে গেল। তাদের কারো কারো মাথায় গোলমাল দেখা দিল। শব্দ না থাকলে পরিবেশ কেমন হয়, এই গ্রামের মানুষ সেটাই ভুলে গেল।

গ্রামের মানুষের স্বাভাবিক জীবন–যাপনের ছন্দটাই যেন নষ্ট হয়ে গেল। শিশুরা মাঝে মাঝেই স্কুলে যেতে পারত না। তাদের পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ত বড়ো বড়ো ক্রেন। মহিলাদের বিয়ের সময় অপেক্ষা করেই কেটে যেত। বর ও বরযাত্রী এসে পৌঁছত না। সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে ব্রিজের কাজ হতে থাকায়, নারী–পুরুষ নিরবিশেষে ঘরে ফিরে একটুও বিশ্রাম পেত না। একটানা আওয়াজে অফিস আর বাড়ির মধ্যে কোনো তফাতই তারা বুঝতে পারত না।

মানুষের স্নায়ুর ওপর যত চাপ বাড়তে শুরু করল, ততোই তারা স্বাভাবিকতা হারাতে শুরু করল। এই নিয়ে তারা মোড়লের কাছে গেল। নালিশ জানাল।

মোড়ল তাদের বুঝিয়ে বললেন, একটা বড়ো কিছু পেতে গেলে, মানুষকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। ওই শ্লোগানটা আপনারা শোনেননি, 'টুডেস পেইন, টুমরোস গেইন?' আজ যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে বলেই, ভবিষ্যতে অনন্ত সুখের অধিকারী হতে চলেছে এই গ্রামের মানুষ। এমন একটা ব্রিজ তারা পেতে চলেছে, যা এই দেশে আগে কেউ কখনও দেখেনি।

মোড়লের কথা শুনে গ্রামবাসীরা আশ্বস্ত হল এবং আরও কষ্ট সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হল।

শেষপরযন্ত তৈরি হল সেই ব্রিজ। আর সত্যিই সেই ব্রিজ দেখে সবার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। গোটা দেশের খবরের কাগজে ফলাও করে এই নিয়ে বড়ো বড়ো হেডলাইন হল। সবাই জানতে পারল, বামুনেরা তাদের গ্রামে কী অতুলনীয় কীরতি স্থাপন করেছে! সবাই তাদের নামে ধন্য ধন্য করতে শুরু করল। একটি আন্তরজাতিক পত্রিকার কভার হল সেই ব্রিজ। বিদেশ থেকে সাংবাদিকরা তো বটেই, ট্যুরিস্টরাও আসতে শুরু করল সেই ব্রিজ দেখতে।

সব মিলিয়ে এমন হইচই শুরু হল যে, বামুনদের গরবে বুক ভরে গেল। অহংকারের চাপে বুক ফেটে যাওয়ার জোগাড় হল। ঢাক–ঢোল নিয়ে তারা বেরিয়ে এল। মাইকে ঘোষণা করতে শুরু করল, কী বিরাট কাণ্ড তারা করে ফেলেছে! সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাট করে প্রচার শুরু করল। এতদিন তাদের গ্রামে সমস্ত উত্সব বন্ধ হয়ে গেছিল। এবার জোরকদমে আবার শুরু হল। এমন অবস্থা হল যে, সারা বছর ধরেই উত্সব চলতে শুরু করল। আর সবাই মেতে উঠল সেই উত্সব নিয়ে।

এইভাবে কেটে গেল কুড়ি বছর। ব্রিজ নিয়ে বামনদের গরবের শেষ নেই। কোনও জায়গায় দু'জন বামনের মুখোমুখি দেখা হলেই ব্রিজের কথা ওঠে। হয়তো একজন বলে, কাল বিকেলে ব্রিজের ওপর উঠেছিলি? কী চমত্কার হাওয়া দিচ্ছিল না? ওখানে একদম বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায়...

ব্রিজটা তখন দুলছিল?

হ্যাঁ, রে। একটু একটু।

দুনিয়ায় এরকম ব্রিজ আর একটাও নেই, তাই না রে?

ঠিক বলেছিস। আমরাই প্রথম।

আর আমাদেরটাই সেরা।

ব্রিজের ওপর উঠলে কী যে ভালো লাগে! মনটাই অন্যরকম হয়ে যায়...

এত সুন্দর দূশ্য দেখা যায় ওখান থেকে...

এইভাবে কথাবারতা চলতে থাকে। বামনরা ডুবে থাকে তাদের দিবাস্বপ্নে। তাদের সবচেয়ে গরবের বিষয়, তাদের ব্রিজ। জগতে কী বিরাট কীরতিই না তারা করে রেখেছে!

একদিন কিন্তু একটি বামনের সন্দেহ হয়। সে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গী বামনের দিকে তাকিয়ে সে বলল, ব্রিজটা কেমন পুরোনো হয়ে গেছে, না রে?

সঙ্গী বামনটি বলল, তাই তো! আগে তো লক্ষ্য করিনি!

করবি কী করে! বামনটি বলল, আমরা যে ব্রিজটার দিকে তাকানোর আগে সবসময়ই একটা রঙিন চশমা পরে নিই।

হ্যাঁ। সঙ্গীটি বলে। আমাদের গরব আর অহংকার দিয়ে তৈরি একটা রঙিন চশমা। কিন্তু আমার কী মনে হয় জানিস? ব্রিজটাকে এবার মেরামত করা দরকার। ওর কলকব্জাগুলোও পরীক্ষা করা দরকার। কেমন যেন জং ধরে গেছে, আর ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। এরকমভাবে চললে...

দু'জনের মুখেই আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসে।

কয়েকদিন পর আর এক বামুন বিদেশে যায়। গত কুড়ি বছরে এই প্রথম এই গ্রামের কেউ বিদেশে যাচ্ছে। গ্রামের লোকেরা তাকে রেল স্টেশনে বিদায় জানাতে আসে। বলে দেয়, তাদের গ্রামের আশ্চরয ব্রিজ সম্পরকে বিদেশে সবাই যখন ভুরি ভুরি জানতে চাইবে, সে যেন কাউকে নিরাশ না করে।

অনেক রাতে বিদেশের রেল স্টেশনে গিয়ে পৌঁছয় বামনটি। খুব ক্লান্ত ছিল সে। খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে। পরদিন ভোরে সে শহর দেখতে বেরোয়। আর তাজ্জব হয়ে যায় একেবারে।

রাতে হোটেলের ম্যানেজার তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি কোন দেশ থেকে আসছেন?

ওই যে দেশে, বামন বলেছিল, ঝিলের ওপর একটা আশ্চরয ব্রিজ আছে না...

হোটেল ম্যানেজারের মুখে শ্লেষ আর কৌতুক মাখামাখি হয়ে গেছিল। এমনভাবে সে হেসেছিল, যেন মনে হয়েছিল বিদ্রূপ করছে।

সকালে শহরটা দেখতে বেরিয়ে সেই বিদ্রূপের কারণটা বুঝতে পারল সে। এই শহরের মাঝখান দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে। চওড়া নদী। সেই নদীর ওপরে এরা তৈরি করেছে মস্ত একটা ব্রিজ। যেমন পরিষ্কার, তেমনই মজবুত সেই ব্রিজ।

সেই ব্রিজের কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় বামনটি। খুব ভোরে এসেছে সে। লোকজন বেশি নেই। এক বূদ্ধকে দেখতে পেয়ে সে জানতে চায়, এই ব্রিজটা আপনারা বানিয়েছেন?

হ্যাঁ। সে তো বছর পাঁচেক হয়ে গেল।

বাঃ!

শুধু এই ব্রিজ নয়, এরকম বেশ কয়েকটা ব্রিজ আমরা বানিয়েছি। আপনি যদি নদীর ধার দিয়ে হেঁটে যান, তাহলে এরকম পরপর পাঁচটি ব্রিজ দেখতে পাবেন। গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি বছরে এরকম একটি করে ব্রিজ বানিয়েছি আমরা...

বামন সত্যিই নদীর ধার দিয়ে হাঁটতে থাকে। যত হাঁটতে থাকে, ততো তাজ্জব বনে যায়। একের পর এক পাঁচটি ব্রিজ। তাদের গ্রামের ব্রিজটির মতো কোনও ঝিলের ওপর নয়। মস্ত একটা নদীর ওপর। ব্রিজগুলি লম্বায়–চওড়ায় তাদের গ্রামের ব্রিজটির চেয়ে অনেক বড়ো। দেখতেও নতুন আর স্পরশ করলে মালুম হয় কতটা মজবুত!

বামনটি বুক ভরা বিষন্নতা নিয়ে হোটেলে ফিরে আসে।

হোটেল ম্যানেজার তাকে দেখে মিটিমিটি হাসে। তারপর জানতে চায়, কেমন দেখলেন শহরটা?

আসলে কী জানেন, বামনটি বলল, আমাদের গ্রামে বাইরের কোনও খবরই পৌঁছয় না। এমনই কূপমণ্ডুক হয়ে গেছি না আমরা!

ও। ম্যানেজার বলল, ব্রিজগুলো তাহলে আপনি দেখেছেন!

সেটাই তো স্বাভাবিক। বামনটি বলল। দুনিয়া কোথায় চলে গেছে! আর এদিকে আমাদের সেই কোন কালের ব্রিজ, সেই নিয়ে আমাদের অহংকারের শেষ নেই...

আপনাদের আরও বাইরের খবর রাখা উচিত, তাই না?

আমারও তাই মত। বামনটি বলে। আমরা নিজেদের নিয়ে খুব বেশি তূপ্ত হয়ে আছি। ব্রিজটা আমাদের মনে একটা বিভ্রম তৈরি করে রেখেছে।

যারা ক্ষুদ্রকায়, তাদের এরকম কত বিভ্রম দরকার। ওই দিয়েই নিজেদের তারা ভুলিয়ে রাখে। ম্যানেজার বলল।

গ্রামে ফিরে কীভাবে খবরটি জানাবে, এই নিয়ে বামনটি চিন্তিত হয়ে ওঠে। তার চেয়েও ভাববার কথা, গ্রামের লোকেরা কীভাবে খবরটিকে নেবে!

বামন যেদিন ফিরে এল, তার কথা শুনতে রেল স্টেশন উপচে পড়ল ভিড়ে। সে ট্রেন থেকে নামতেই সবাই তাকে ঘিরে ধরল। জানতে চাইল, কেমন দেখলে বিদেশ?

বামন ঘামতে লাগল। তারপর বলল, কী চাও তোমরা? সত্যি কথা বলব? না, তোমাদের মন যুগিয়ে মনগড়া কথা বলব?

গ্রামের বূদ্ধ মোড়ল এগিয়ে এলেন। বললেন, সত্যি কথাই বলো...

কিন্তু তার আগে আপনাকে কথা দিতে হবে, বামনটি বলল, এই কথা শোনার পর আমার, আমার পরিবারের বা সম্পত্তির, কোনো ক্ষতি হবে না?

মোড়লের মুখ কালো ছায়ায় ঢেকে গেল। বামন কী তবে কোনও দুঃসংবাদ এনেছে? তিনি কিছু একটা আশঙ্কা করলেন। বললেন, সত্য কথাই বলো। তোমার কোনো ক্ষতি হবে না।

বামন বিদেশে যা কিছু দেখেছে, তার বিশদ বরণনা দিল। আর তখনই সেখানে উপস্থিত লোকেদের মধ্যে কেমন একটা অস্থিরতা দেখা দিল। সবাই কেমন যেন উসখুশ করতে লাগল।

হঠাত্ একজন চেঁচিয়ে উঠল, তুমি মিথ্যা কথা বলছ।

তখন আরেকজন বলে উঠল, নিজের গ্রামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ তুমি...

বেশ একটা হইচই শুরু হয়ে গেল।

বামনটি বলল, আমি এটারই আশঙ্কা করেছিলাম। তোমরা সুখী। কিন্তু সেই সুখের ভিত্তি একটা প্রকাণ্ড মিথ্যে। আমি জানতাম, মিথ্যে ও বিভ্রমের জগতে বসে কতটা স্বস্তিতে তোমরা রয়েছ। তোমরা কিছুতেই সত্যকে মেনে নিতে পারবে না। কারণ তাহলে তোমাদের সুখ, শান্তি, স্বস্তি–সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে...

ঠিক তখনই বামনটিকে লক্ষ্য করে চারদিক থেকে ঢিল–পাটকেল ছোঁড়া শুরু হয়ে গেল। বামনটি কীভাবে আত্মরক্ষা করবে, সেটাই যেন বুঝে উঠতে পারছিল না।

গ্রামের মোড়লের দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠল, আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন, আমার কোনও ক্ষতি হবে না। আপনি আমাকে রক্ষা করবেন।

বূদ্ধ বিজ্ঞের মতো হাসলেন। বললেন, কিন্তু তুমি তো পাগল হয়ে গেছ। আর যে পাগল হয়ে যায়, সে কোনও প্রতিশ্রুতিরই যোগ্য নয়। গোটা গ্রাম তোমার ওপর ক্ষেপে গেছে। তোমাকে রক্ষা করতে গেলে, তাদের ক্রোধ শান্ত হবে না। অনেক আশা নিয়ে তারা তোমার প্রতীক্ষায় ছিল। তুমি তাদের সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিয়েছো। তুমি শাস্তি পেলে, একমাত্র তবেই গ্রামের লোকেরা শান্ত হবে...

গ্রামের লোকেদের দিকে এবার তিনি ধূরতের মতো তাকালেন। তারপর বললেন, আমার একটা প্রস্তাব আছে। এই বামনটিকে আপাতত কিছুদিন নজরবন্দি করে রাখা হোক। এর মাপ মতো তোমরা একটা খাঁচা তৈরি করো। সেই খাঁচায় একে পুরে রাখো। যদি দেখা যায়, এ সত্যিই পাগল হয়ে গেছে, তাহলে ওকে আমরা পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেবো। আর যদি দেখা যায়, ও স্বাভাবিকই আছে, কোনো গোপন অভিসন্ধি নিয়ে আমাদের প্রতারিত করতে চাইছে, তাহলে ওকে আমরা একটা গাছের মোটা গুঁড়ির সঙ্গে বেঁধে ইট–পাথর ছুড়ে মেরে ফেলব অথবা জেলে পাঠিয়ে দেব।

সবাই এই প্রস্তাবে রাজি হল। মোড়ল বলল, তাহলে তোমরা খাঁচা বানাতে শুরু করে দাও...

ঠিক সেই সময় হঠাত একটা প্রচণ্ড শব্দে সবাই চমকে গেল। কে একজন চিতকার করে উঠল, ব্রিজের দিক থেকে শব্দটা আসছে। সবাই ব্রিজের দিকে চলো...

গ্রামের লোকেরা পড়িমড়ি করে ব্রিজের দিকে ছুটতে শুরু করল। আর তাদের চোখের সামনেই ব্রিজটা একটা বিকট শব্দে ঠিক মাঝখান থেকে দু–টুকরো হয়ে ভেঙে গেল। ঝিলের জলে পড়ার সময় সেই দু–টুকরো আরও অনেক টুকরোয় ভেঙে, গোটা ঝিলে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। শেষপরযন্ত ব্রিজটার আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না। শুধু সমস্ত ঝিল জুড়ে ব্রিজের টুকরো টুকরো অংশ ভাসতে লাগল। বোঝাই গেল, ব্রিজটা আত্মরক্ষার পক্ষে অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছিল।

সেই বিকট শব্দে অনেকেই বধির হয়ে গেল। আর আকস্মিক এই প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে কেউ পাগল হয়ে গেল, কেউ হাসতে লাগল, কেউ কাঁদতে লাগল, কেউ হাত–পা ছুঁড়তে লাগল, কেউ সারা গায়ে কাদা মাখতে লাগল।

শুধু সেই বিদেশ–ফেরত বামনটি দু–হাত তুলে ধেই ধেই করে নাচছিল আর বলছিল, গোটা গ্রামটাকেই তোমরা একটা খাঁচা করে তুলেছিলে। আমাকেও ভরতে চাইছিলে খাঁচায়। এখন তোমাদের জন্য আমাকেই একটা করে খাঁচার অরডার দিতে হবে দেখছি...

রসিক বলে এই বামুনটির সুখ্যাতি ছিল।

0 Comments

Post Comment