পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

টাটার হাতে এয়ার ইন্ডিয়া : তিন বছরের হিসেব নিকেশ

  • 23 June, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 989 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন কল্যাণ মৌলিক
এয়ার ইন্ডিয়ার তিন বছরের অভিজ্ঞতা আর এক বার প্রমাণ করল বেসরকারিকরণ হলেই পরিষেবা ভালো হবে বা সংস্থা লাভজনক হবে,এমনটা নয়। টাটার এয়ার ইন্ডিয়া ক্রয় এক লাভজনক সওদা ছিল। এই কথাটির বিস্তারে ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বাজারের সাধারণ নিয়ম হল পণ্যের চাহিদা থাকলে বিক্রেতা ভালো দাম পাবেন এবং চাহিদা না থাকলে কম দাম পাবেন। সাম্প্রতিক আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়ার পরে অনেক প্রশ্ন সামনে আসছে। সেই কথাগুলো বলা জরুরি।

বিধিসম্মত সতর্কীকরণ

প্রথমেই একথার উল্লেখ থাকুক যে গত ১২ জুন (২০২৫) টাটা এয়ারইন্ডিয়ার আমেদবাদ থেকে লন্ডনগামী ড্রিমলাইনার বিমানের,যা মার্কিন বোয়িং কোম্পানির তৈরি, ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা এবং ২৪২ জনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। ওয়াকিবহাল মাত্রই জানেন যে একটি বিমান কেন ভেঙে পড়ল তা নির্নয় করা এক অত্যন্ত জটিল ও শ্রমসাধ্য কাজ। এটা তারাই করতে পারেন যাদের এই বিষয়ে সম্যক প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে।বিগত সময়ে আমরা দেখেছি এই কারণ অনুসন্ধান করতে বছর ঘুরে যায়। সাধারণত যেটা হয় তা হল দুর্ঘটনার পর মিডিয়ার সৌজন্যে বিভিন্ন তত্ত্ব ঘোরাফেরা করতে থাকে এবং সেই অপরীক্ষিত তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে নানা ধরণের অনুমানের খেলা চলতে থাকে।এবারেও তার ব্যতিক্রম হয় নি।পাখির ধাক্কা,ফ্ল্যাপগুলো সঠিক সময়ে না খোলা,পাইলটের ত্রুটি,প্রযুক্তিগত ত্রুটি,বিমানের দুটো ইঞ্জিন একসঙ্গে বিকল হওয়া এবং অতি অবশ্যই মিডিয়ার অতিপ্রিয় নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বাতাসে ভাসছে। এক্ষেত্রে বোয়িং বিমানের প্রযুক্তিগত ত্রুটির বিষয়টি অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ। বোয়িং বিমানের এই মডেলটি ত্রুটিপূর্ণ -- এই অভিযোগ নতুন নয়।এ ব্যাপারে মূল অভিযোগটি হল এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নানান ধরণের সাপ্লাই চেন থেকে আসে ফলে অ্যাসেম্বেল করার সময় ত্রুটি থেকে যায়। হুইসেল ব্লোয়ার জন ব্যারেট প্রথম এই অভিযোগ করেন এবং পরবর্তীতে একই অভিযোগ তোলেন স্যাম সোলেপর ও ইডি পিয়ার্সন।  মজার কথা হল এত অভিযোগ সত্বেও বোয়িং কোম্পানির এই বিমানকে কখনো নিষেধাঞ্জা দেওয়া হয় নি বরং এই মুহুর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন এয়ারলাইনস কোম্পানির হাতে ১১০০ টি ড্রিমলাইনার রয়েছে।ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনা স্থল থেকে ব্ল্যাকবক্স ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার হয়েছে। আমরা আশা করতেই পারি যে এয়ার ইন্ডিয়ার টেকনিক্যাল টিম,ডিজিসিএ,বোয়িং বিমান কোম্পানি ও ইউএস ন্যাশানাল ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটির সেফটি বোর্ড সম্মিলিত ভাবে যে তদন্ত শুরু করেছে তা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্নয় করতে সক্ষম হবে। বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য একদা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এয়ারইন্ডিয়া প্রায় জলের দামে ( কেন জলের দামে তা পরে উল্লেখ করছি) কেনার পর এয়ার ইন্ডিয়া কেমন চলছে! বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যারা বিশ্বাস করেন বেসরকারিকরণ হলে পরিষেবা ভালো হয়,তাদের প্রচারের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল টাটার পেশাদারি দক্ষতা। সেই বেসরকারিকরণের তিনবছর অতিক্রান্ত। এই তিন বছরে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি,লেট রানিং,নিম্নমানের পরিষেবা,কর্মীদের ধারাবাহিক অসন্তোষের কারণে টাটা পরিচালিত এয়ার ইন্ডিয়া শিরোনামে এসেছে। এমনকি আহমেদাবাদের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরেও ছবিটা পাল্টায় নি।তাই আমরা এয়ার ইন্ডিয়ায় বেসরকারিকরণের মাহাত্ম্য বুঝতে চেষ্টা করছি।

ফিরে দেখা

২০২২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া কে টাটা গোষ্ঠীর কিনে নেওয়া ভারতে এক বহু চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছিল। একদিকে কর্পোরেট মহল, বাজার অর্থনীতির সোচ্চার সমর্থক ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে উল্লাসের ঝড়, অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়নগুলির নামমাত্র প্রতিবাদ। কর্পোরেট দুনিয়ার উল্লাসের একটা বড় কারণ ছিল বিলগ্নিকারণ,আংশিক নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে কর্পোরেট গঠনতন্ত্রের অংশ করার বদলে সরাসরি রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদকে টাটার হাতে বিক্রি করে দেওয়া গেছে।বিগত সময়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হল যখনই কোন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিক্রি বা বিলগ্নিকরণ করার পরিকল্পনা করা হয় তখন সুপরিকল্পিত ভাবে প্রচার করা হয় কর্মচারীদের অদক্ষতার কথা,তাদের ফাঁকিবাজির কথা,সরকারি সংস্থার খারাপ পরিষেবার কথা।আর চিৎকৃত স্বরে বলা হতে থাকে বেসরকারিকরণ হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।যদি আমরা বিমান পরিষেবার প্রশ্নটিকে দেখি তাহলে দেখব ভারতে ' ওপেন স্কাই ' পলিসি চালু হবার পর সবথেকে আলোচিত দুটি সংস্থা কিংফিশার এয়ারলাইন্স ( বিজয় মাল্য) ও জেট এয়ারলাইন্স চূড়ান্ত অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ পরিচালন ব্যবস্থা ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এয়ার ডেকানও প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকতে পারে নি।এমন কি একথাও স্পষ্ট করে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে পূর্ববর্তী টাটাদের পরিচালনাধীন সংস্থা হিসাবে এয়ার ইন্ডিয়া জাতীয়করণের আগে মোটেই  একটা লাভজনক সংস্থা ছিল না।নিজস্ব বিমান ও পুঁজির অভাব সংস্থার প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল।একই সঙ্গে আজ একথাটা খুব জোরের সঙ্গে বলা প্রয়োজন এয়ার ইন্ডিয়ার ভালো পরিষেবা, দুর্দান্ত খাবার,আধুনিক অন্দরসজ্জা প্রভৃতির কারণে গ্লোবাল ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা কিন্তু জাতীয়করণের পর। পরবর্তীতে সরকারের নীতিগত বিপর্যয় ও আধুনিকীকরণের অভাবে আর দশটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মত এয়ার ইন্ডিয়া রুগ্ন হয়ে যায়।

টাটা কর্তৃক এয়ার ইন্ডিয়া ক্রয়ের সময় টাটার স্তাবক গোষ্ঠী ( এদের মধ্যে একটা বড় অংশ ছিল সংসদীয় বাম,যারা আবার সাধারণ অবস্থায় বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে)  এমনটা বলার চেষ্টা করেন যে টাটারা দেশের ভালোর জন্য আইসিসিইউতে চলে যাওয়া একটি সংস্থাকে কিনে নিলেন। এই প্রচার সেসময় এতটাই জোরালো ছিল যে মুষ্টিমেয় ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই প্রশ্নটা কেউ করে নি যে মুনাফার মতাদর্শে চলা একটা কর্পোরেট সংস্থা কেন সরকারের ক্ষতির বোঝা নিজের কাঁধে নেবে! টাটার দিক থেকে এয়ার ইন্ডিয়া কেনার সিদ্ধান্ত ছিল পুরোপুরি বাণিজ্যিক। একথা সবার জানা যে ভারত উড়ান বানিজ্যে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বাজার।বিভিন্ন সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ কোটি মানুষ বিমান সফর করবে।মাল বহনের ক্ষেত্রে পরিমাণটা আজ ৩.৫ মিলিয়ন টন যা ২০৩০ সালে হবে ১০ লক্ষ মিলিয়ন টন। স্বাভাবিক ভাবে টাটার লক্ষ্য ছিল আভ্যন্তরীণ উড়ানে ইন্ডিগোর একাধিপত্যের অবসান এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মধ্য প্রাচ্যের সংস্থাগুলো( বিশেষ করে এমিরেটস) কে কঠোর প্রতিযোগিতায় ফেলা। যাত্রী সাধারণের প্রত্যাশাও ছিল বেশি কারণ ব্র্যান্ড হিসাবে টাটা সেরা-- এই সযত্নলালিত মিথ।

ঘটনার ঘনঘটা

পরিষেবা ক্ষেত্রে তিন বছর অনেকটা সময়। এয়ার ইন্ডিয়া টাটা হাতে নেবার পর যে প্রাথমিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল( কর্পোরেট দুনিয়ার ভাষায় মধুচন্দ্রিমা পর্ব) তা শেষ,যাত্রীরা এখন সঠিক পরিষেবা পাওয়ার দাবি জানাতে শুরু করেছেন। আর গত তিনবছরের অভিজ্ঞতা বলছে টাটার মিডাস টাচ সমস্যার সমাধান করতে পারে নি। এই বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা গত তিন বছরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সারণী আকারে উপস্থিত করছি--- # ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের অ্যাভিয়েশন রেগুলেটরি অথরিটি এয়ার ইন্ডিয়াকে ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করে। অভিযোগ ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ( নিউইয়র্ক ফ্লাইট) ও ডিসেম্বর মাসে ( প্যারিস থেকে দিল্লি ফ্লাইট) দুজন বিশৃঙ্খল যাত্রীকে নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। # ২০২৩ সালের জুন মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লি থেকে সানফ্রান্সিসকো যাওয়ার ফ্লাইটকে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তের এক বিমান বন্দরে জরুরি ভিত্তিতে অবতরণ করানো হয়। জুলাই ( ২০২৩) মাসেও একই ঘটনা ঘটে। # ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ইন্ডিয়ান এয়ার সেফটি অর্গানাইজেশন এয়ার ইন্ডিয়াকে ৮০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে কারণ ফ্লাইটের আগে কোম্পানি তার ক্রুদের যথেষ্ট বিশ্রাম দেয় নি।এমনকি টাটা নেওয়ার পর নিয়মিত এই অভিযোগ উঠেছে যে পাইলটদের সাপ্তাহিক বিশ্রাম নিয়ম মেনে দেওয়া হয় না। # ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনের অন্দরসজ্জার কাজ আটকে যায় সাপ্লাই চেনের সমস্যার কারণে। # ২০২৪ সালের মে মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটরা ধর্মঘটে যায় ফলে ১৭৫ টি উড়ান বাতিল করতে হয়। # ২০২৫ সালের মার্চ মাসে চিকাগো থেকে দিল্লি যাওয়ার এক উড়ানকে মাঝপথে ফিরিয়ে আনা হয় কারণ প্লেনের ১২ টা বাথরুম কাজ করছিল না। # আমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর ১৬  জুন হংকং - দিল্লি ও দিল্লি -রাঁচি-- এই দুটি উড়ানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পরে। # ১৭ জুন সানফ্রান্সিসকোগামী একটি প্লেনকে ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে কলকাতা বন্দরে জরুরি ভিত্তিতে অবতরণ করানো হয়।  তালিকা দীর্ঘায়িত করে লাভ নেই,মূল সমস্যা পরিচালনাগত।টাটা যাদের হাতে টাইটান ( ঘড়ি),তাজ হোটেল,টিসিএস ( সফটওয়্যার)  এর মত ব্র্যান্ড আছে তাদের এ কথা অজানা নয় পরিষেবা ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি বিপর্যয় ডেকে আনে।মোদ্দা কথা হল এয়ার ইন্ডিয়াকে তার বহু আলোচিত ' মহারাজা' (king of sky) অবতারে তো ফিরিয়ে আনা যায়ই নি বরং প্রতিযোগিতায় এয়ার ইন্ডিয়া পিছিয়ে পড়েছে।

পরিচালন ব্যর্থতার কারণ সন্ধান

এয়ার ইন্ডিয়ার মূল সমস্যা নিয়ে আলোচনার আগে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার।টাটা হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে  সবচেয়ে আশাবাদের জায়গা ছিল এয়ার ইন্ডিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে টাটার পূর্ব অভিজ্ঞতা। এটাও সত্য নয় কারণ এয়ার ইন্ডিয়া জে আর ডি টাটা ব্যক্তিগত ভাবে পরিচালনা করতেন, বোম্বে হাউস ( টাটা সনসের সদর দপ্তর)  এ  বিষয়ে কোন ভূমিকা রাখে নি। টাটা নিজে বিমান ব্যবসায় নতুন করে প্রবেশ করে ২০১০ সালে এয়ার এশিয়া ও ভিস্তারার মাধ্যমে। কিন্তু সেখানেও টাটার ভূমিকা ছিল প্রধানত বিনিয়োগকারীর,পরিচালকের নয়। তাই টাটার হাতে গেলেই এয়ার ইন্ডিয়া আবার বিশ্বমানের এয়ারলাইন্স হয়ে উঠবে,এই ভাবনা ছিল নেহাৎই কষ্ট কল্পনা। পাঁচ বছরের মধ্যে বদলে ফেলার পরিকল্পনা (vihaan.ai) প্রথম থেকেই বাধাপ্রাপ্ত হতে থাকে।টাটা কোম্পানি তাদের অন্যান্য গ্রুপ থেকে এক্সিকিউটিভ এয়ার ইন্ডিয়া পরিচালনার জন্য নিয়ে আসে।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে বোঝা যায় যে বিমান পরিষেবার অভিজ্ঞতা না থাকলে শুধু মোটরগাড়ি বা হোটেল চালানোর অভিজ্ঞতা দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া চালানো যাবে না। বিষয়টা সংশোধনের জন্য আজকের এয়ার ইন্ডিয়া সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন সহ বহু কর্মচারীকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস থেকে আনা হয়।আরেকটা বড় সমস্যা হল কর্মী ক্ষোভ।  প্রথমে একটা বড় অংশ টাটার দেওয়া স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প গ্রহণ করে অন্য কোম্পানিতে চলে যায়।আর যারা থেকে যান তারা প্রতিশ্রত সুবিধাগুলে না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।টাটার বহু প্রশংসিত ' ম্যান ম্যানেজমেন্ট' পলিসি এখানে কাজ করে নি।

এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্যা লুকিয়ে আছে তার মার্জার প্রক্রিয়ার মধ্যে। এয়ার ইন্ডিয়া,এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ভিস্তারা ও এয়ার এশিয়ার মার্জার এক বকচ্ছপ মডেল তৈরি করেছে যা প্রত্যাশিত ফল দিতে পারছে না।ওয়াকিবহাল মহলের মতে বিভিন্ন বিজনেস  মডেল,বিভিন্ন ধরণের এয়ারক্রাফট, বিভিন্ন কোম্পানি সংস্কৃতি থেকে আসা মানব সম্পদ এবং বিভিন্ন ট্রেনিং স্ট্যান্ডার্ডসকে একজায়গায় করতে গিয়ে গোটা বিষয়টা গুলিয়ে গেছে। আজ একথা আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থাকাকালীন এই একই ভুল হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এয়ার লাইনসের মার্জারের অবিবেচক সিদ্ধান্তে।সেবার মার্জারের আগে মার্কিন লবির চাপে এক বিশাল অঙ্কের বিমান কেনার বরাত দেওয়া হয় বোয়িং কোম্পানিকে।এই বরাতজনিত ঋণ ও তার সুদের বোঝা থেকে এয়ার ইন্ডিয়া কখনো বেরোতে পারে নি।সেবার একাধারে দুটো সংস্থা এক হল কিন্তু চার বছর ধরে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস ও এয়ার ইন্ডিয়া আলাদা আলাদা টিকিট বিক্রি করে।ফলে সাধারণ যাত্রী পরিষেবার দিক থেকে কোন সুবিধা পেল না তাই তারা বিমান চাপার ক্ষেত্রে এয়ার ইন্ডিয়াকে তাদের প্রথম পছন্দ ভাবলেন না। এবার কিন্তু আরো নতুন সমস্যা রয়েছে। অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না পারার কারণে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এয়ার ইন্ডিয়াকে।  বোয়িং বিমান সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবও এয়ার ইন্ডিয়ার ব্যবসায় প্রভাব ফেলবে কারণ এয়ার ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক উড়ানের বেশিটাই বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনার নির্ভর।

শেষের কথা

তিন বছরের অভিজ্ঞতা আর এক বার প্রমাণ করল বেসরকারিকরণ হলেই পরিষেবা ভালো হবে বা সংস্থা লাভজনক হবে,এমনটা নয়। টাটার এয়ার ইন্ডিয়া ক্রয় এক লাভজনক সওদা ছিল। এই কথাটির বিস্তারে ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বাজারের সাধারণ নিয়ম হল পণ্যের চাহিদা থাকলে বিক্রেতা ভালো দাম পাবেন এবং চাহিদা না থাকলে কম দাম পাবেন।করোনা অতিমারীর শুরু হওয়ার আগে থেকেই বিমান পরিষেবার ব্যবসা ছিল নিম্নগামী, অতিমারী পরিস্থিতি কে আরো শোচনীয় করে তোলে।ফলত এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য সেরকম কোন প্রতিযোগিতা ছিল না। দামের ক্ষেত্রে বেসপ্রাইস ১২,৫০০ কোটি টাকা অথচ ১৮,০০০ কোটি টাকার বেশি দাম ওঠে নি।এয়ার ইন্ডিয়ার দিক থেকপ তা ছিল বড় ক্ষতি। আর টাটারা নগদ দিয়েছিল মাত্র ২,৭০০ কোটি। আর ১৫,৩০০ কোটি টাকার ধার মেটানোর যে দায়িত্ব তারা নিয়েছে সেখানেই আসল লাভটা লুকিয়ে ছিল।টাকা যারা ধার দিয়েছিল,তারা টাকা পাওয়ার জন্য ঋণের একটা বড় অংশ ছাড় দেয়,তখনকার হিসাব অনুযায়ী যা ছিল ১৫৭০ কোটি টাকা,আবার ছাড় মিলেছিল সরকারের কাছ থেকে। সব মিলিয়ে খরচ কমেছিল ২,০০০ কোটি টাকা।বদলে টাটারা পেয়েছিল ১৪১ টি এয়ারক্রাফট ( ১১৮ টি ভালো অবস্থায়),৪,৪০০ টি ডোমেস্টিক রুট,১৮০০ টি আন্তর্জাতিক স্লট,৯০০ ডোমেস্টিক স্লট এবং প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী। তাই সব অর্থেই সওদা টাটার পক্ষে ছিল।এর সঙ্গে ছিল ভিস্তারার আন্তর্জাতিক খ্যাতি।কিন্তু তিন বছরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করছে প্রশাসনিক অদক্ষতা ও কিছুটা ভুল পরিকল্পনা বিমান যাত্রীদের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া সম্পর্কে এক নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে। যা কিছু ব্যক্তিগত,তাই পবিত্র -- এই শ্লোগানের সত্যাসত্য যৌক্তিক ভাবে বিচার করার আহ্বান জানাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার হাল-হকিকত।

 

 

0 Comments

Post Comment