পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সাফুরা জারগর

  • 06 June, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 2619 view(s)
  • লিখেছেন : জিনাত রেহেনা ইসলাম
সাতাশ বছরের ছাত্রীর ভবিষ্যৎ জেলের কালকুঠুরিতে অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাসে আটকে। অনিশ্চয়তার যাপনে আতঙ্কিত পরিবার। গর্ভের বাচ্চা গরাদের বাইরে খোলা আকাশের নীচে এক টুকরো তাজা হাওয়ায় অপেক্ষায়। মেয়েটির নাম সাফুরা জারগর

“ধারাবাহিক কান্নায় উত্তাল নগর যদি চায়,

এখনি তুমি নিষ্ঠুর নীরবতায় ভিজবে...।

যতটা ভালোবেসে জরায়ু ভরে যায় পৃথিবীর আরেকজন তুমির বীজে,

জন্ম হয় নতুন তুমির...।“

বিশ্বাসের উল্টো দিকে অবস্থান অধর্ম নয়। শক্তির বিপরীতে থাকা অন্যায় নয়। জামিয়ার সাফুরা জারগরের প্রসঙ্গে এই দুটি কথা শুধু যথেষ্ট নয়। জীবন যখন পলিটিক্যাল পলিটিক্সে ভরে যায় তখন হাতি ও মোবাইল একটা সিম্বল ষ্টেটমেন্ট হয়। আর সাফুরা জারগরের মত প্রতিবাদি ছাত্রীও রাজনৈতিক অবাধ্যতা ও অবৈধতার পাঠ্যসূচিতে স্থান পায়। ন্যায় ও সাম্যের বিজ্ঞাপণে বিশ্বাসীও সতর্ক হয়ে বলে, জেলে থেকে বাইরে আসার কি দরকার? শুনে গ্রামের ভুবন মন্ডল বলে, শালা! তোর বহিন হলে? ভুবন মন্ডল এলিটদের দশ গোল দেয় এক কথায়! আসলে প্রতিবাদের ভাষা আছড়ে পড়ে ভালোবাসার বাউন্ডারি লাইন বরাবর। জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের কান্নায় বুক ফাটে সাদা-কালো সবার। এই যন্ত্রণার কোনও রাজনৈতিক ভাষা নেই। ছয় বছরের ফ্লয়েড কন্যা জিয়ানাকে সামনে নিয়ে চোখ মুছে বার বার বলতে থাকে মা রক্সি, “হি ইজ নট অনলি স্পেশাল, হি ইজ গুড।“ সাফুরা ইজ আ গুড মাদার- বলার হিম্মত ওঁর গর্ভে থাকা ২১ সপ্তাহের ভ্রুনের আছে! সে জানে তার মা কি সইছে। মাও জানে তার সন্তানের জন্য নিরাপদ জায়গা জেল হতে পারে না! কিন্তু সাফুরার গল্পটা এক মা ও বাচ্চার মধ্যে থেমে থাকে না! গরাদের সীমানা পেরিয়ে দেশ ছুঁয়ে যায়,কাল ছুঁয়ে যায়।

প্রশ্ন চলে আসে কেন সাফুরা প্রতিবাদে শামিল হয়েছিল। কেন সাফুরা ষ্টিগমাটাইজ হয়েছিল? কেন তার আঁচলে বেঁধে দেওয়া হয়েছেল এক পর্নহাব মডেলের ছবি! আগামীর ভূমিষ্ট সন্তান ও দেশের নব্যনাগরিক এসবের জবাবদিহি চাইবে এই সমাজ, এই দেশ, এই মাটির কাছে। প্রত্যেক এলিট ও অরাজনৈতিক মহলের দাবিদারদের কাছে তাদের চুপ থাকার ব্যাখ্যা চাইবে এই বাচ্চা! কেন তার মা একা হয়ে গিয়েছিল? তার উত্তর সে নিশ্চিতভাবে বের করেই ছাড়বে। তখন এই সময়ের মানুষদের সে কর্তব্যপরায়ণ সুনাগরিক এবং নিজেকে বিশ্বসেরা গণতান্ত্রিক দেশের চেতনাসম্পন্ন জনগণের একজন ভেবে উঠতে পারবে কিনা জানা নেই। তবে গর্বে সে আলোড়িত হবে ততবার, যখন সে জানবে,তার মা দেশের প্রথম মহিলাদের একশো দিনের শাহিনবাগ আন্দোলনে শামিল ছিল ।

সাফুরা মানুষের মধ্যে বিভেদের বিরুদ্ধে ছিল। সে শান্তিপূর্ন প্রতিবাদেই বিশ্বাসী ছিল। যে আইন মানুষে মানুষের বিভেদ ছাড়াতে পারে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সাফুরা দেখিয়েছিল মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হল প্রতিবাদ। কোনও ভয় বা হুমকিতে কখনও তা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। সম্পর্কের মধ্যে অভিনব সৃজনশীলতা খুঁজে বেড়ানো এই দেশের মাটির টান। তাকে কোনও পাল্টা ডিসকোর্স দিয়ে রুখে দেওয়া যাবে না। বাজি খাইয়ে হাতি মারা এই দেশের সংস্কৃতি নয়। তেমনই সমন্বয়ের বুনোটে ঠাসা নকশিকাঁথার একটি সুতোকেও আলগা করা এই দেশের সংস্কৃতি নয়। কেন্দ্রীয় আধিপত্যের বাইরে সবসময় এক ইশারা থাকে লড়াই এর। সেই মানবীয় হাতছানিতে সাফুরা পা রেখেছেন। লড়ছেন। এক স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিকতার নিমজ্জিত না হয়ে সকলের জন্য লড়েছে। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের উপেক্ষা করে এগিয়েছে এক মানবিক আহ্বানে। খুঁজে বেরিয়েছে এক অন্তর্জাত সক্ষমতার পথে এক মানুষের অধিকারকে। শক্তির ছন্দে হাঁটতে শিখলে হাঁটো নইলে আধিপত্যের জমিনে বিলিয়ে দাও। কিন্তু বিভেদ নয়,ভালোবাসা হোক অস্ত্র।

হেট ক্যাম্পেনের বিরুদ্ধে সাফুরার স্বামী যথেষ্ট আধুনিকতার পরিচয় দিয়ে বলেছে, একটি সেকেন্ডও এই সব পড়ে সে নষ্ট করতে চায় না। জম্বু কাশ্মীরের কিস্তর থেকে এলেও সাফুরা আসলে দিল্লি গার্ল। স্কুল ফরিদাবাদে। ব্যাচেলর ডিগ্রী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এম ফিল জামিয়ায়। সমাজবিজ্ঞানে গবেষণা ছিল তার লক্ষ্য। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী। মা হোমমেকার। এখন এই সাতাশ বছরের ছাত্রীর ভবিষ্যৎ জেলের কালকুঠুরিতে অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাসে আটকে। অনিশ্চয়তার যাপনে আতঙ্কিত পরিবার। গর্ভের বাচ্চা গরাদের বাইরে খোলা আকাশের নীচে এক টুকরো তাজা হাওয়ায় অপেক্ষায়।

0 Comments

Post Comment