পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

এক চুক্তি বরবাদির কাহিনি

  • 21 December, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 976 view(s)
  • লিখেছেন : অশোক মুখোপাধ্যায়
কাল্পনিক চরিত্র সমাবেশে এক আধুনিক রূপকথাটি পড়তে পারেন। আজকের কাশ্মীরের সঙ্গে মিল পেলে, তা একান্তই কাকতালীয়।

ভজন সিং-এর পাশের জমির মালিক আক্রম ইসমাইল এসে তাঁকে বললে, স্যরজি, হামার জমিতে পঙ্গপাল পড়েছে। সব গম-উম খেয়ে লিচ্ছে। পুরা ফসল চৌপট করে দিচ্ছে। আমি একা পেরে উঠছি না। আপনি একটু সাহায্য করবেন?

ভজন সিং সজ্জন লোক। বললেন, জরুর। আমি আপনাকে সাহায্য করব। তবে আপনার জমিটা আমার জমির সঙ্গে আপনি মিলিয়ে দিন। আমি এক সঙ্গে আমার এবং আপনার জমির সারে কীটেঁ কো বরবাদ করে দেব। ঘাবড়াবেন না। পরে এক সঙ্গে আবাদ ভি করে দেবার ইন্তেজাম করব।

আক্রম সাহেবও সিধা শরিফ আদমি। ভজন সিং-এর কথায় খুবই প্রীত হলেন। হ্যাঁ, এ আর বেশি কথা কী? আসুন, আমরা একটা চুক্তি করে দুই জমি মিলিয়ে ফেলি। চুক্তি বরাবর আমিও মেনে চলব, আপনিও মেনে চলবেন। তাহলে আমাদের সমঝওতায় কভি গড়বড়ি হবে না।

ভজন সিং গোঁফ নাকে সিঁটিয়ে হেসে দিলেন। বেশ তাহলে আমি আমার নায়েবকে ডেকে বললে দিই একটা স্ট্যাম্প পেপারে আমার জমিনের সঙ্গে আপনার জমিন মিলিয়ে দেবার উপযোগী একটা চুক্তিপত্র তৈরি করে আনতে।

জনাব আক্রম বললেন, জি।

শুভ কর্মে বিলম্ব করা উচিত নয় ভেবে ভজন সিং খুব জলদিই একটা চুক্তিপত্র তৈরি করে ফেললেন। শিরোনাম হল Instrument of Accession of Akram’s Effects with Bhajan’s dated 22 December 1947!

চুক্তিতে বলা হল, উভয় পক্ষের সম্মতি ভিন্ন এই চুক্তি বাতিল করা যাবে না।

উভয় পক্ষের জমি এক সঙ্গে চাষবাস হবে, ফসল তোলা হবে, পতঙ্গনাশ হবে। কিন্তু দুই তরফে জমির সীমানা পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা থাকবে। জমির মালিক হিসাবে সরকারি খাতায় ভজন সিং-এর নামই থাকবে, কিন্তু বিভিন্ন ব্যাপারে ভজন সিং আক্রমের জমিকে বেশি গুরুত্ব দেবে।

ভালোই চলছিল। ভজনের পুত্র সজ্জন সিং-এর আমলে আক্রমের ছেলে মোকারমেরও কোনো অসুবিধা হয়নি। কিছু কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলেও মোটের উপর মিলেমিশেই চলছিল। সমস্যা দেখা দিল ভজনের নাতি গর্জন সিং-এর আমলে। সে মালিক হয়েই আক্রমের নাতি মোকাম্মেলকে সাফ জানিয়ে দিল, বাপদাদার জমানায় যা হয়েছে হয়েছে, এখন আর সে মোকাম্মেলকে কোনো সুবিধাই দিতে পারবে না। আসলে পারা না পারার প্রশ্নই নেই। তোমার জমি আমার জমিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তোমাকে জমিনের জন্য টন পিছু দুকিলো করে গম দেব। ব্যস!

মোকাম্মেল বলল, আর চুক্তি? আমার দাদা তোমার দাদার সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল তার কী হবে?

গর্জন জানাল, সে এখন ছেঁড়া কাগজের ঝুড়িতে। ওসব চুক্তিফুক্তি আমি মানি না।

তুমি না মানলেই হবে? আমি উচ্চ দরবারে নালিশ জানাব।

জানাও। আমি তোমার ভাগের জমিন এখন তিন টুকরো করে এক টুকরোতে তোমাকে চাষ করতে দেব। আর এক টুকরোতে নয়া কিসিমের ঘরবাড়ি বানাব। আর তিন নম্বর ফালিতে বাইরের দানিয়াদের ডাকব ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য। পারলে ঠেকাও।

উচ্চ দরবারে মোকাভাই নালিশ ঠুকল। সেই নালিশের সুনওয়াই শুরুই হল বেশ কয়েক বছর পর। তত দিনে গর্জন তার কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গেছে। দানিয়া, অর্থাৎ, দানব গোছের বানিয়ারা মোকাম্মেলের জমির অনেকটাই নিয়ে নিজেদের মতো করে বাণিজ্য করছে।

উচ্চ দরবার বলল, হাঁ, গর্জন তো সহি বাতই বতাচ্ছে। ভজন যবে আক্রমের জমিন লিয়েছিল তখন চুক্তি করেছিল। এখন দুই ভাগের জমি মিলে গেছে। এক হয়ে গেছে। এখন আর সেই দুই জমিন মেলানোর চুক্তি বরকরার থাকে কী করে?

মোকাম্মেল তবু বলল, হুজুর, চুক্তিতে বলা ছিল, দো শরিক মিল কর উসে রদ করতে পারবে, কোনো এক পক্ষ একাই উসে বাতিল করতে পারবে না।

চুক্তি বাতিল করছে কে বলেছে? ভজন-আক্রমের সেই চুক্তির এখন আর কোনো অস্তিত্বই নেই। উসে ভুল যাও।

ছত্রিশ শিঙায় বচনদারেরা আওয়াজ তুলল – ঠিক হ্যায়, সব ঠিক হ্যায়।

দরবার থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে গর্জন বলল, বড়ে হুজুররা সব সাফ বাতলে দিয়েছে। এখন ভগবান এসেও আর সেই চুক্তিকে লাগু করতে পারবে না। মোকা ভাইজান, তেরা জমিন চলা গয়া, ফির ভি অব সে তেরা তরক্কি হোতে রহেগা! দেখ লে তু!!

মোকাম্মেলের জমিতে এক বিরাট প্রাসাদ উঠেছে। মোকাম্মেল জমির মালিকানা হারিয়ে এখন সেই প্রাসাদের মূল ফাটকের সামনে পাহারাদারের উচ্চ পদে উন্নীত হয়েছে। এমনকি মাঝে মাঝে সেখানে বসার জন্য সে একটা টুলও পেয়েছে গর্জনের কাছে। 

0 Comments

Post Comment