পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

জলপ্রপাতের উপাখ্যান

  • 10 October, 2021
  • 1 Comment(s)
  • 2193 view(s)
  • লিখেছেন : সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ
নারী নরকের দুয়ার; অতঃপর আমিনা পানির কুলকুল ধারাপাতে সিক্ত নিজেকে বিধৌত করতে থাকে অবিশ্রান্ত; দেহ খানি পানির ছলছলানিতে মুখরিত। পানির ঢলানি দেহজুড়ে অবসাদ-গ্লানি হতে উত্তরণ করে চলে। সূর্যের প্রথম অরুণ কিরণ অংকিত প্রত্যুষে। শীতলতা কুয়ার পানির; আমিনা কুয়া হতে পানি তোলে; পানি মাথায়, সর্বাঙ্গে ঢালে। অনর্গল, গলগল করা এই পানির প্রবাহে ভিজে চলে সে। জলক্রীড়া তার শরীরময়।

জলজ হয়ে ওঠে আমিনা। সূযের বিকিরিত বর্ণচ্ছটা জলমগ্ন আমিনার শরীরে সুবর্ণ রচনা করে। এই আলোকে সম্পাত সুকুমার।

আমিনার মাথা ভিজিয়ে দিতে দিতে শরীর বেয়ে পানির স্রোতধারা নিচে নেমে আসতে আসতে তাকে শীতলতা দেয়। প্রবীভূত করে। শরীর বিস্তৃত শীতল জল অস্তিত্বে একক তখন।

প্রাচীন এক গম্ভীর কুয়ার পানি এই যে সে মাথায় তুলে নেয় তারপর ঝপাৎ ঝপাৎ করে বারবার নিজের শরীর সে উপুর করে দিতে থাকে; শরীর বেয়ে এক অনুরণন এক শিহরণ- এক জল মদিরতা ভাষণ ভীষণ রকম এক আচ্ছন্নতায় তাকে ডুবিয়ে মারে। শরীর পানি পান করে। শরীর ডোবা থাকে পানিতে।

পানির প্রবাহ চুল ভিজিয়ে দিচ্ছে তার। চুল চুবচুবিয়ে পানি গড়াচ্ছে। চুলের মধ্যে পানি গতিময়।

পানির

গতিপথ

কাঁধ-স্তন-নিতম্ব-পেট-ঊরু-জংঘা-যোনি

সব পাবিত করে

সর্বত্র শরীরে

গীতিময় চঞ্চল।

উচ্ছল।

উল¬সিত।

নটী বিনোদিনী।

পানি কপাল ভাসিয়ে দিচ্ছে। কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে

পাঁপড়ি স্পর্শ করছে চোখের। তির তির করে নেচে যাচ্ছে পানি

দুই গণ্ডদেশ সজল করে তুলছে

চিবুক, গ্রীবা বেয়ে পানিরধারা ছলকে ছলকে করে বয়ে চলেছে

মসৃণ কাঁধে পিছলে ছলকে ছলকে যাচ্ছে পানি উচ্ছ¡সিত

দুই স্তনের খাঁজের মধ্যখানে মুখ লুকাচ্ছে পানি। আরো আরো গভীরের উন্মুখ হয়ে উঠছে। স্রোতধারা কোন বাঁধা মানে না; বেপরোয়া, লজ্জাহীনা।

পানির ধারা চুলময় চওড়া পৃষ্ঠাদেশে পাগলের মতো আদর করে যাচ্ছে উত্তাল জোয়ারে।

যোনি প্রদেশে পানির আরো বেশি মাতলামি আরো উন্মত্ত উচ্ছাস; দুই উরু বেয়ে লেহন করতে করতে জংঘাময় হয়ে পানিক্রমে স্থিত হতে থাকে... পুনরাবৃত্তি চলে এইভাবে আর পানিকে দুই হাতে আশে¬ষে জড়িয়ে ধরে বাঁচার জন্য নিঃশ্বাসটুকু নেয় আমিনা।

পানি আর আমিনা, আমিনা আর পানি ভেসে যায় হারিয়ে যায়।

আমিনা

পানি

থেকে

মুক্তি

চায়

না

পানির আদরে সে একদম তলিয়ে আছে; কুয়ার পানি উত্তোলনের শ্রমটুকুও লুপ্ত; শরীরে পাতিকুয়া থেকে পানি উত্তোলন করে ক্লান্তিহীন এই ঢেলে যাওয়ার মধ্যে কষ্ট নাই কোনো আছে শুধু গভীর সংগমের মতো আনন্দ। কোনোটা আর জৈবিক নয়, অশরীরী, জলের মূর্চ্ছনায় আনন্দ ভৈরবী। শরীরকে খোড়াখুড়ি করা হলে যেটুকু শ্রম জলের সংগমে তা-ও নাই।

জল কি আমিনার মনের কথা বুঝতে পারে? তাই বুঝি জল শরীরময় অনেক আনন্দ ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলা করছে।

জল সিঞ্চন করে জলের মধ্যে অনেকক্ষণ বুদ থেকে অতঃপর দীর্ঘক্ষণব্যাপি সত্তার শুশ্রুসা ও স্বপ্ন ভেঙ্গে জেগে ওঠে আমিনা। জলবন্দি আমিনার পানিগ্রস্থ এই সুখ অপার মনে হচ্ছিলো এ যাবত।

সীমান্তের ওপারে জল এপারে পানি- ওপারে গঙ্গা এপারে পদ্মা আমিনার শরীরে ভেতর উত্তাল হয়। আমিনার শরীরে পানির এই দুই ধারা আলাদা না; বিভক্ত না; নতুন আবার কোনো নামজারী না; মিলে মিলে একাকার হয় একক। শরীরে রক্ত ও পানির কোন আলাদা জাত বিলীন।

আমিনার মাকে, ১৯৪৭ এর দাঙ্গায় উদ্যাম ধর্ষণ করেছিল হিন্দু গুণ্ডারা; ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে মাকে আবার উন্মত্ত বলাৎকার করেছিল মুসলমান পাক সৈন্যরা; একবার ইন্ডিয়ার কোলকাতায় লুণ্ঠিত হয়েছিল দাঙ্গার সময়, হিন্দু গুণ্ডাদের শিশ্নদাঁড়ায়, মুসলমান হওয়ার অপরাধে আবার হিন্দুদের হাত থেকে বাঁচতে ভিটামাটি উপড়ে ফেলে মুসলমান রাজ্য পাকিস্তানে আসার পর হিন্দু আর বাঙালি হওয়া নাকি একই রকম কথা, বাঙালিরা খাটি মুসলমান হতে পারে না, শরীরে তাদের হিন্দুর শয়তানি রক্ত, তারা সোনার পাকিস্তানের জন্য অশুভ আত্মাÑএই অপরাধে ১৯৭১ সালে বাঙালির শুদ্ধি অভিযানে খাটি-মুসলমান পয়দা করার জন্য পাকিস্তানি মুসলমান সৈন্যরা খাকি পোশাকের ভিতর থেকে শিশ্ন উত্তোলিত করে মায়ের যোনিতে বীর্যের প্লাবনে এক খাঁটি মুসলমানের জন্ম আদায় করে নেয়।

তার নাম আমিনা, স্বাধীন বাংলাদেশে ভোগযোগ্য আমিনা আরেকটি যৌনযন্ত্র। স্বাধীনভাবে। স্বাধীন বাংলাদেশে সব সমান। যে বাঙালি সেই মুসলমান। শুধু নারী আর পুরুষ মানুষ আলাদা দুই জান। নারীকে ভোগ করা যায়, অসহায় মতো বাগে পেলে বেশি বেশি পারা যায়। আর পুরুষরা এই কাজটা ভালো পারে।

আমিনা শরীর বাণিজ্য করে; শরীর তাকে অনুবস্ত্র সংস্থান করে; শরীর বিক্রি করে খেতে পাওয়া ভাতের স্বাদ আর দশটা ভাতের মতোই। ভাত খাওয়ার সময় শরীরদানের কোনো স্মৃতি থাকে না, রতির আঠার মতো চটচটে মনে হয় না ভাত; যোনিতে বীর্যপাতের মতো তপ্ত মনে হয় না গরম ভাত। কেবল ভাতের ধোঁয়া ওঠা গন্ধ থাকে। ক্ষিদার পেটে ভাত দানা পানি পড়লে ভুলিয়ে দেয় একদম। গরম ভাতের মধ্যে যখন গরম ডাল ঢেলে আলুর ভর্তা মেখে চটকে চটকে গলার ভেতর দিয়ে নামাতে নামাতে ঢেকুর তুলতে তুলতে কোঁৎ কোঁৎ করে গিলতে গিলতে তৃপ্তিতে চোখ বুজে আসে- অন্য ভুবনের বাসিন্দা মনে হয়- অমৃতের স্বাদ নেয় অমৃতের সন্তান মনে হয়; ঘুমিয়ে পড়লে তারপর স্বপ্ন এসে জমা হয় চোখে। রঙিন স্বপ্ন। লাল নীল স্বপ্ন। রূপকুমার টগবগ করে ঘোড়ায় চড়ে এসে রাজকুমারির পায়ের নিচে বসে বসরাই গোলাপ বাড়িয়ে দিল। গোলাপ ফুলের মন কেমন করা গন্ধ নাকে পর্যন্ত ভেসে আসে তখন। রূপকুমারের চোখে ভালোবাসার সুরমা। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে অজ্ঞান করা কি এক নেশায় বাড়িয়ে দেয় তখন হাত গোলাপের দিকে। আমিনা ঠাহর করতে পারে না, গোলাপের কাঁটা আঙুলে বিঁধে রক্ত ঝরায়। ঘুম ভেঙে যায় আমিনার।

আমিনার জন্ম ১৯৭২ সাল এবং বেড়ে ওঠা এই শহরের আস্তাকুড়ে। মা এক দিকে সংগম বাণিজ্য করত আর সে আরেক প্রান্তে ওঁয়া ওঁয়া করে কাঁদতে কাঁদতে বড়ো হয়েছে। সে নগ্ন মাকে দেখছে কীভাবে জংঘার উত্থানে সাহেবদের আনন্দ বিলি করছে। শীষের মতো শীৎকারের শব্দে ঘর ভরে ওঠে। অ,আ,ক,খ শেখার আগে শীৎকার ও রতি বিহার তাকে শিক্ষিত করেছে।

একাত্তরের ডিসেম্বরে স্যারেন্ডার করে পাকিস্তানি মিলিটারিরা চলে যাওয়ার পর বর্ষার রাতে তুমুল বৃষ্টিপাতের ভিতর ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে ঝুলে পড়া জরায়ুর অভ্যন্তর হতে চারদিক আলো করে পরির মতো মেয়ে একটা বেরিয়ে আসে। পুরুষের জন্য আরেকটা মেশিন দেখে সেদিন গগণবিদারী মরণ আর্তচিৎকারে টুকরা টুকরা হয়ে গিয়েছিল জন্মদাত্রী মা। কান্না শোনার জন্য কেউ ছিল না মায়ের জন্য উপস্থিত। পাকিস্তানিরা ভোগ করেছে তাকে, অস্পৃশ্য মা ছিল বড় একাÑ যোদ্ধার মতো কোনো অহংকার সে অনুভব করে নাই।

যে মেয়ের বাপ পাকিস্তানি মিলিটারি সেই মেয়ের মায়ের জন্য যুদ্ধের পর বাংলাদেশে কোন নীড় থাকা উচিৎ না।

সালিমা ঠাঁই নেয় বেশ্যালয়। এখানে বাঙালি কি মুসলমান বলে কিছু নাই। সবাই বেশ্যা। শরীর হচ্ছে সম্পদ। রূপ লাবণ্য পুঁজি। কাম-কলা-কৌশল, শয্যার খেলা অন্নদাতা, ত্রাতা, ভগবান, ইশ্বর সব কিছু এখানে। ধর্মাধর্ম নাই। এই হাটে বেচাকেনা একমাত্র হিসাব।

মাতার শরীর নগদ দামে বিক্রি করে খাবার কেনে আবার নগদ দামে। টাকার গায়ে এইসব কথা লেখা থাকে না।

টাকার

মধ্যে

লেখা

থাকে

শুধু

চাহিবা

মাত্র

ইহার

বাহককে

দিতে

বাধ্য

থাকিবেন

মায়ের রজঃশলা বন্ধ হওয়ার আগে আমিনার হঠাৎ এক বিকালে মায়ের শরীরে যখন কুহাকাপ জ্বর গর্জে উঠছে বিলাপ করছে-অবিরাম আর সে যখন মায়ের কপালে জলপট্টি দিচ্ছিলো তখন হঠাৎ নিম্নাঙ্গ দরদর করে ভেসে গিয়েছিল রক্তে। আমিনা ভয় পেয়ে জন্তুর মতো গোঙ্গানি করে উঠেছিল। এই অভিজ্ঞতা তার প্রথম।

মায়ের শাড়ির রঙিন আঁচল রক্তের আরো দাগে রক্তস্নাত হয়ে গিয়েছিল। আমিনা নতুন এক ধরনের রক্ত দেখে চমকে ওঠে। এই রকম রক্তপাত সে কখনো আর আগে দেখে নাই। তার জন্মের আগেই রক্তের হোলিখেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। আবার সে নতুন করে রক্ত চেনা শেখে। এই রক্তপাত তাকে পাল্টে দেয়; হঠাৎ করে বড়ো সে হয়ে যায়। রক্তাক্ত যাত্রার মধ্য দিয়ে সে রক্তোন্মুখ নিজেকে আবিষ্কার করে।

রক্তধারায় তার ভুবন সিক্ত হয়। এক অদ্ভুত আলোড়ন, পরিবর্তন পাল্টে দেয় তাকে। সে টের পায় আস্তে আস্তে নিজের কাছে অচেনা হয়ে যাচ্ছে সে ক্রমশ। কোনো কিছু ভালো লাগে না তা। আবার ভালোলাগার কথা বলতে পারে না। নিজের মধ্যে নিজে বসে কাঁদে। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে কাঁদে। ক্ষিধা লাগে না তার; পিপাসা লাগে না। কেবল কোথাও যেন রক্ত। ফোঁটা নিভৃতে নিঃসৃত হয় তাকে উজাড় করে। নিজের ভেতরে এই অবরাম রক্তক্ষরণ শুধু অনুভব সে করে। রক্তপাতের শব্দ শুনতে শুনতে সম্পূর্ণ ঝিমঝিম করতে উতলা করে রাখে তাকে।

আমিনা আয়নার সামনে নিজেকে চিনতে পারে না। শরীরের ভেতর হতে অসহ বিসহ আলো ত্বক ভেদ করে এক ধরনের দ্যুতি বিচ্ছুরিত করে জগৎকে যেন আলোকিত করে। স্তন যুগলের চ‚ড়া জেগে উঠছে, ছোট ছোট ঢেউ দুলিয়ে দেয় নিতম্ব। আমিনা নিজের প্রেমে নিজে আপুত হতে থাকে, দেখতে থাকে তার এই ক্রমাগত নিমজ্জন।

সে,

নিমজ্জিত

হয়,

ভেসে

ওঠে...

নিমজ্জিত;

ক্রমাগত...

ফাল্গুনের এক রাতে পাগলা বাতাস যখন বাইরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল আকাশে ছিল শুক্লপক্ষের উজ্জ্বলতম চাঁদ সমস্ত জগৎ সংসারকে আলোর মায়ায় আষ্টেপৃষ্ঠে ফেলছিলো- গ্রেপ্তার করে দূরে কোথাও রেডিও থেকে জীবনের পরাজয়ের গান ভেসে আসছিল- গাড়ির হর্ণ রিক্সার টাং টাং ভেসে আসছিল দূরে কোথাও এশার নামাজের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল শেষ পাত্র মদ গলায় ঢেলে মায়ের এক নতুন তাগড়া কাস্টমার টানে মেরে মাকে বিছানায় চিৎ করে ফেলে দুই পা দুই দিকে ভাগ করে বিপুল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন।

মাকে উন্মত্ত দানবের মতো আছাড় দিতে থাকে যে মায়ের কোমড় দুমড়ে যায়। মা আর পারে না। ফাৎড়া হয়ে গেছে সব। মা ডুকরে ওঠে। লোকটা মাকে আর ছাড়ে না। মা যত পা ধরে মাফ চায় লোকটা তবু ছাড়ে না লোকটার। মায়ের শরীরের উপর লাফালাফি করতেই থাকে। লোকটার ঘোৎ ঘোৎ করে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। এক সময় বুঝিবা মড়াৎ করে শব্দ তুলে মায়ের হাড়গোড় কোমরে ভেঙে সব টুকরা হয়ে গেল। মা একটা ভগ্ন মাংসের স্তুপের মতো থুবড়ে পড়ে রইল। মায়ের দুই ফাঁক করা পা জোড়া লাগছে না; লোকটা থুথু দিল।

লোকটা তারপর ঘোড়ার মতো লাফাতে লাফাতে মাকে ছেড়ে মেয়েকে ধরে ফেলে। লোকটা অনেক টাকা দিয়েছিল মাকে। কড়কড়ে নতুন টাকার একটা গন্ধ আছে। গন্ধে একটা নেশা আছে। নেশার মধ্যে সংগীত আছে। সংগীতের মধ্যে সুর আছে। সুরের মধ্যে চুম্বক আছে। নারী মাত্রই বেশ্যা, এই সত্য জ্ঞান করে, নিজের পেটে ধরলেও শত্রুর মেয়ে ছাড়া আর কি এই রকম ভাবনার মধ্যে ভাঙা দুই পায়ে ফাঁকে হা-করা থুথু ও রতি মাখা যোনিকে ঠেলে সামনে উঁচিয়ে তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেও হাতে পাওয়া টাকা লোফালোফি করতে করতে অনেকগুলো টাকার গন্ধ নাকে শুঁকতে শুঁকতে লোল ঝরাতে ঝরাতে লোম ঝরা কুকুরের মতো দগদগে ঘায়ের মধ্যে মাছির ভন্ভনানি অস্তিত্বের মধ্যে অন্তঃশীলা হয়েছিল। একদিন তাকেও ভীনদেশীয় কতিপয় ভোগ করেছিল। তার মতো একদিন ভোগে যেত তবে এবার চোখের সম্মুখেই উদ্বোধন হোক। আমিনা মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ততক্ষণে উপড়ে ফেলে। বিদীর্ণ করে ফেলেছে টাটকা যোনি। দুই উরুর সংযোগ থেকে রক্ত স্রোত পুনর্বার। রক্তের মধ্যে ভাসতে থাকে আমিনা। যোনির মধ্যে রক্ত ও বীর্য নতুন রং উগড়ে দিতে থাকে। রাঙা হয়ে ওঠে। নতুন এক রঙে রাঙিয়ে দেয় যোনি ও তার চারপাশ।

মা ডাইনির মতো বলে : পারবে! পারবে! অল্প বয়সে শক্তি বেশি থাকে। জোরে আরো জোরে চালিয়ে যাও। আমি যা পারবো না আমার মেয়ে তা পারবে বাবা। ও বাবা আরও কয়েকটা ১০০ টাকার নোট দাও আর যতক্ষণ খুশি ততক্ষণ করো। ইচ্ছা মতো করো। প্রাণভরে কর। আর কয়টা টাকা দাও না বাবা।

এক সময়

বন্ধ হয়

ঘোড়ার দাপানি

মাকে ভোগ

করার পর

মেয়েকে নিঃশেষ

শেষ ক্লান্ত

শ্রান্ত শিথিল

শিশ্নে শুধুমাত্র

মূত্রাবেগ

অবশিষ্ট থাকে

লোকটা একটা অদ্ভুত তৃপ্তির শব্দ করে ওঠে- আগে কখনো কেউ শোনে নাই এমন পরিতৃপ্তির ঢেকুর। কাস্টমার লোকটা টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎ ঘর ভর্তি করে মূত্র ত্যাগ করে। অনেকক্ষণ ধরে মূত্রপাত করে। লোকটার নিস্তেজ শিশ্ন হতে ক্রমাগত মূত্রপাতে সয়লাব হয়ে যায় সব। একটানা মূত্রপাতে ঘর মহল সব ডুবে যায়। মূত্রপাতের মধ্যে ছিল হালকা উষ্ণতা ও গতি। সেই মূত্র পতনের সঙ্গে একটি শব্দও হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এক ঐকতান। মা অতঃপর রক্ত-বীর্যে মাখামাখি মূত্র ও টাকার মধ্যে ভাসতে থাকা নগ্ন শরীরের মেয়েকে বুকে আগলে বসে থাকে। রক্ত-বীর্য-মূত্রের উৎকট গন্ধের মধ্যে মুঠো ভর্তি টাকা এক সময় খসে খসে পড়ে। মেয়েটা হঠাৎ ডাক ছেড়ে বায়ু ত্যাগ এবং তারপর সশব্দে মলত্যাগে-গন্ধে-সুরভিত করে চারিদিক এই অবেলায়। ডুবে যায় রক্ত-বীর্য-মূত্র-মল টাকার মধ্যে।

মা

মেয়ের

শরীর

বেচা

সংসারে

হঠাৎ

ঘুঘু

চরে

একদিন

দুঃসময়

এসে

চড়াও

হয়

চৈত্রের এক দুপুরে সহসা হাওয়ার দাপটে এলোমেলো একটা সময়ে কোথায় যেন কি হয়ে গেল ঘরপোড়া আগুন দপ করে জ্বলে ওঠে, ধাওয়া দিয়ে লকলকে জিহŸা বের করে ভেংচাতে ভেংচাতে গ্রাস করে সর্বভূকের মতো; তখন তো দারুণ দুপুর, দারুণ রৌদ্র, দারুণ বাতাস, দারুণ হল্কা- আগুন পরোয়ানা জারী করে মৃত্যুর।

ধাবমান আগুন চঞ্চল আগুন মারমুখি আগুন কমলা মুখো সিংহের মতো আগুন দিগি¦দিক জ্ঞান শূন্য করে ফেলে- জুতোচটি, অর্থ সম্পদ, তল্পিতল্পা ফেলে আর্তচিৎকার করে পালাতে দৌড়াতে দৌড়াতে টুপটাপ ঝুপঝাপ ধুড়মুড় দুই একটা জান সংবাদপত্রে প্রকাশিত সরকারী প্রেস বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক মৃত্যুবরণ করেছে এই মর্মে অবহিত করা হলেও আমিনা স্বচক্ষে দেখেছে নিজের মাকে, ছোটবেলা থেকে দেখে আসা খালাদের আলুথালু আঁচলে কীভাবে আগুন উদ্দামভাবে আলিঙ্গন করেছে। তারপর অনর্গল ধুঁয়ায় আর কিছু চোখে দেখা আর হয় না। আগুনের দাবানলে দগ্ধীভ‚ত মাকে শেষবারের মতো আর দেখা যায় না। ধুঁয়ার গমকে গমকে চারবেলা চারদিকে আচ্ছন্নতার ভেতর দিয়ে একসময় আমেনা বুঝতে পারে যে, পরমাণু অর্জন করেছে সে অথবা আরো শাস্তি তার বাকি আছে পাপের জন্য। জন্মের জন্য। জন্মকে জয় করার জন্য বটে।

নাগরিক কমিটির লোকজন দাঁড়ায় এসে রাতে যথেচ্ছ বেশ্যাগমন করত আর দিনের বেলায় মাইকে পতিতালয় উচ্ছেদের জ্বালাময়ী ভাষণ দিত বলে আমিনারা ধরে নিয়েছিল অনিবার্যভাবে বিনা পয়সায় কাজ কারবার চালানো আর চাঁদাবাজির রেট বাড়ানোর ধান্দা আর কী। নাগরিক কমিটি সভ্য সমাজের লোকসংখ্যা কম না তবুও ফ্রি শারীরিক সেবাদান বেহুদা খর্চা হিসেবে মেনে নিতে পারলেও তিন-চার ডবল মাসোহারা দেওয়ার মতো তাদের শরীরে এত সমবেত পুঁজি ছিল না। দিনরাত খাওয়া নাই দাওয়া নাই সারিবদ্ধভাবে প্রত্যেককে শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে দিলেও, তাছাড়া ফ্রি কাজ তো আছেই, এতো টাকা জুটত না খেয়ে পরে শরীর টিকিয়ে চোদার জন্য চাঁদা দিতে পারবে।

তাই পাড়ার আম বেশ্যাদের কপালে আগুন লাগে।

আগুন নিভে যাওয়ার পর বাতাসে ছাই উড়ছে। ছাইময় চারিদিক; বাতাসে ছাই-উড়ে উড়ে ঘুরছে। কোথাও বিলাপ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে একটানা। আহাজারি আর মাতমের মধ্য বাতাস ভারি।

ভোর হয়ে গেছে আগেই। লোভী চোখে কেউ কেউ ছাই মাখা এখানে এখন দৃষ্টি চকচক করতে করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে; যারে পাবো তারে খাই যদি মানুষের গন্ধÑ ঘাম ভেজা উদগ্র কামনাময় বাসনা শরীরের গন্ধ পাওয়া যায় তবে তাই হোক!

আমিনা দারুন মতো সাজে। পুড়ে যাওয়ার পর দগ্ধীভ‚ত মায়ের শরীরের ভস্ম হতে ছাই নিয়ে দুই চোখে কাজল টানে সে। কুনজর এড়াতে মা যে কাজটা করত সে তাই করে; কপালে বড় নজর ফোঁটা আঁকে যেন যে দিবে চোখ তার দিকে তৎক্ষণাৎ শলাকা দিয়ে ঐ দুষ্টমন্দ লোকের চোখ অন্ধ হয়ে যাবে! তারপর আমিনা শরীরে একটা হাওয়াই মিঠাই বাতাসী শাড়ি পেঁচিয়ে হাই হিল পায়ে গটমট করতে করতে এত দিনের বসবাসের জগৎ হতে প্রস্থান করে। পিছু পিছু চলতে থাকে তার ভস্মীভূত অতীত। সে জোরে পা চালায়। অতীতও সঙ্গে চলে।

শহরটাকে পুরো একটা পতিতালয়ের সংস্করণ রূপের হাট বলে মনে হয়। এখন আর ঘুপচি ঘরে দম বন্ধ করা পরিবেশ দেহদান নয় বরং সুপরিসর কক্ষে সুকোমল বিছানায় শরীর পাতাপাতি; বেড়রুম এখানে এটাচড্ টু দ্য বাথরুম। জানা ছিল কপাল পোড়া, বেজন্মারা কেবল শরীর বেচে খায়। ওমা, এখানে সবাই ‘ভদ্রমহিলা গো!’ আমিনার ব্যাপক বিস্ময়!

আমিনা, ভদ্রঘরের এইসব সুখী সুখী ফুটফুটে শরীরের দাগহীন এই লাইনের নারীদের সবচেয়ে বেশি হিংসা করে- প্রতিদ্ব›দ্বী বেশি ভাবে তাদের- ছলাবলা কামকলা রক্ত-বীর্য-স্বেদ খেলা, বিদ্যুৎ চমক, উত্তাপ শিহরণের জাদু

স্তনের আছাড় নিতম্বের প্রহার দেখায় তাই বেশি বেশি। এমন খোলা কাস্টমারদের দেখায় যে, ওর মোবাইল নম্বর সকলের পকেটে। কাজের মধ্যে ফোন আসে; ফোনের মধ্যে কাজ চলে।

পেট

চলে।

দিন

চলে।

রাত

চলে।

আহার-নিদ্রা-মৈথুন কী চমৎকার লেখা আছে তার জীবন খাতায়।

বৈশাখ মাস যায়; আষাঢ় মাস যায়; ভাদ্র মাস যায়; কার্তিক মাস যায়; পৌষ মাস যায়; ফাল্গুন মাস যায়।

মাস যায় চলে বৈশাখ-আষাঢ়-ভাদ্র-কার্তিক-পৌষ-ফাল্গুন; সে নিজের শরীরে ভেতর খুঁজে পায় গ্রীষ্মের খাণ্ডব দাহন, বর্ষার মেঘমলার, শরতের ঢাকের শব্দ, হেমন্তের ফসলের ঘ্রাণ, শীতের হিম কুয়াশাময় সৌন্দর্য আর বসন্তের সুসময়।

একজন আমিনার আমি-টার দিকে তাকাই এবার!

শহরে অতঃপর রাজকন্যা ও তাঁর প্রজাকুল।

এবং এই শহরে একদা অনেক ধুলা বৃষ্টিতে মাটি আর গরমের পর আকুল ব্যকুল করা বৃষ্টি নামে। তপ্ত মাটি ও ধুলা ভেজার পর অন্য রকম মাটির গন্ধ বৃষ্টির জলতরঙ্গের সঙ্গে ছড়িয়ে দিল বৃষ্টি মাখা বাতাসে। গোলাপ সুন্দরী এমত সময় প্রবল মেঘ বর্ষণ শুনিল; সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরাইয়া দেখিল যেটুকু আলো ছিল তাহাও নাই...

শহরে টিনের চাল নাই কেবল কংক্রীটের সমাহার। বৃষ্টি পতনের কোনো শব্দ চিরন্তনÑটিনের চালে টাপুর টুপুর কানে বাজে না। হারিয়ে গেছে কোথায় যেন উচ্ছসিত বারিধারা।

বৃষ্টি একটানা নিঃশব্দে উজাড় করে ঝরে পড়ে। বৃষ্টি কংক্রীটের ওপর আছড়ে পড়ে শপাশপ শব্দ উচ্চারণ করে চলে একটানা।

এবং মিলিটারি নামলো শহরে; পরণে জংলি ছাপাওয়ালা পোশাক; পায়ে বুট; হাতে সঙ্গীন; মাথায় হেলমেট। ধাবমান অশ্বের মতো ওরা কালো পিচ ঢালা পথে বুটের শব্দে পদধ্বনি তুলে দখল করে ফেলে।

শূন্যস্থান পূরণ করে বৃষ্টির শব্দের বদলে বুটের শব্দ। রাস্তায় বুটের ঘর্ষণে আলোক চমক ছটা পরিলক্ষিত হয়- তখন শরীর বিনিময়কালে এতক্ষণ যে উচ্ছৃত শিশ্নটা উন্মাতাল ছিল তৎক্ষণাৎ ম্রিয়মান ও এতোটুকু হয়ে পড়ল। বৃষ্টি মুখরতায় বুটের শব্দ হয়তো মতো এক আতংক বিস্তার করে যে, খাপখোলা লিঙ্গটা সিটিয়ে গেল আর তা ধারণ করে ক্ষুদ্রত্ব প্রাপ্তি অনুভবে আনল আমিনা। আমিনা অতঃপর নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে কক্ষটির সংলগ্ন বাথরুমে অন্তর্হিত হয় এবং টাকার বিনিময়ে শরীর সম্ভোগে উদগ্রীব খাকি শাসনের ভেতর জন্ম-বেড়ে ওঠাÑখাকি শাসন বিলোপের পর স্বাভাবিক জীবনে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার অবকাশের সাময়িক বিরতির পর খাকি শাসনের মতো কিছু একটার পুনরাবৃত্তির ছায়া আবির্ভাবের হীম শীতল সাপের স্পর্শে থরকম্পমান লোকটি শারীরিক মিলনে ব্যর্থ হয়ে অসফল কসরৎ শেষে বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলতে ফেলতে হাপাতে থাকে...

মুশলধারায় বৃষ্টির আয়োজন এবং কংক্রীটের উপর বৃষ্টির তীব্র আর্তনাদ... বুটের পদভারে কর্কশ ধ্বনির বিরামহীনতার মধ্যে নিমজ্জন... ক্রমশ ডুবে যাওয়া, তলিয়ে পড়া ঘটে।

তারপর দিন স¤প্রচারিত অধ্যাদেশ, বিধি নিষেধ, কালাকানুনÑতোরঙ্গ থেকে ঝেড়ে মুছে বের করে আনা ন্যাপথলিনের গন্ধময় সেই পুরাতন কাহিনীর আরেকবার সূচনা; আবার পেছন দিকে ফিরে যাত্রা।

অগ্নি পরিবৃত্তময় আবার একটা সময় ফিরে এল।

আমিনা নিছক এক শরীর বিক্রেতা এত শত সে বোঝে না- কেবল দেখতে থাকে কীভাবে নির্মুল হয়ে যাচ্ছে সে- রিজিক তার উঠে যাচ্ছে এই শহরে- সে প্রত্যক্ষ করে-নিশ্চল হয়ে যায়; পেটে ভাতে থাকার আর কোনো মন্ত্র- কোনো অস্ত্রথ- কোনো কৌশল অজানা তার। সে শুধু জংঘার উত্থানে আশেষে পুরুষ মানুষকে যোনির মধ্যে ঠাঁই দেয়ার কেরামতির স্বাদ দিয়ে পয়সা জোটাতে জানে।

নারী মাংশের নামিদামি ক্রেতা সন্ত্রাসী ও লুটেরাগণ সকলেই চম্পট; শরীর বেচাকেনার বিপণিতে তাই ভাটা; শরীর বিক্রয় কেন্দ্রগুলো আর নিরাপদ নয়Ñকেউ আর আসে না অতঃপর শরীরের খোঁজে, মাংশের লোভে।

খাকি শাসন এবং উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা সমাগত হয়েছিল এই জনপদে।

আমিনা তো যেমন তেমন, এমন কি, ভিখারিনির জন্য কুকুর শিয়ালের মধ্যে ফুটপাতের রাত কাটাবার ঠাঁই ছিলো- স্তন্য দান করতে পিতৃপরিচয়হীন বুকের শিশুকে- মা ও শিশু উচ্ছেদ- স্তন্যদান উচ্ছেদ- স্তন্যপান উচ্ছেদ- খাকির দাপটে-নির্বিঘে- ফুটপাতে জন চলাচল নির্বিঘ্নে করার স্বার্থে- দিকে দিকে শুধু উচ্ছেদ- উচ্ছেদের অট্টহাস্যের ভেতর মা ও শিশু কিংবা একজন আমিনার কেউ কোনো খোঁজ খবর রাখে না। সকলে উচ্ছেদ হয়ে যায়; সমূলে উৎপাটন।

লোকালয়ের সন্নিকটে শহরতলির অদূরে আলো ও পাখা আছে বৈদ্যুতিক সংযোগে- মোবাইল ফোনের নেট ওয়ার্কের ভেতরে এক অর্ধগ্রামে আমিনা আশ্রয় নেয়- গার্হস্থ্য কর্মে সংস্থান হয় আমিনার।

দিন ও রাত্রির চক্রাকারে আবর্তনের মধ্যে দিনের শেষে এক রাত্রিরবেলায় বন্ধ দরজায় কে যেন ফের কড়া নাড়ে।

নিরাভরণ আকাশে ফুটি ফুটি অজস্র তারার বুটির মধ্যে আস্ত পূর্ণিমার চাঁদ- চন্দ্রমণ্ডিত আমিনা ছিল ঘুমন্ত; সুন্দরতম এক মুহ‚র্ত তখন স্বপ্নে অথবা জাগরণে। সুবর্ণ এক রাজপুত্র রাজকীয় বেশে অসংখ্য বরকান্দাজ নিয়ে জোৎস্না বিকীর্ণ আঙিনায় উপস্থিত- উপরে চন্দ্রালোকিত আকাশ- গলে গলে পড়ছে তরল জ্যোৎস্না।

রাজপুত্র শিরোস্ত্রাণ খুলতেই সহসা উঁকি দেয় গত জন্মের কঙ্কালের মুখ ও মুখশ্রীÑআমেনার আর্তনাদে নিদ্রা-স্বপ্ন-জ্যোৎস্না সব চুরমার হয়ে যায়; আমিনার উঠান জুড়ে অজস্র কিলবিলানো সাপ ছুঁড়ে দেয়া হয়Ñউদ্যত ফনা-লকলকে জিহŸা; ছোবল পরায়ণ প্রাণ ঘাতক উদ্যতÑপ্রশ্ন চিহ্নের মতোÑসাপের মাথা ছন্দে ছন্দে দুলতে থাকে অবিরাম- শীতল, হিম এক প্রবাহ উদগীরিত, সঞ্চালিত হতে থাকে অভ্রভেদী।

তুমি না আমিনা! মান্চু আমার। তোমার দুধ দুইটা কেমন আছে? অনেক দিন দেখি না। অনেক দিন স্বাদ নেয়া হয় না। উম্ ম্ আ...

পাথর নীরবতা।

অনেকদিন শুনি না উহ্ উহ্ আহ্ আহ্ উম্ ম্-অ স্ট্রোক মারতে মারতে সেই চাপা আওয়াজ... কতো দিন শুনি না... আবার শোনা হবে না সোনামনি

স্তব্ধতার পাথর গড়িয়ে যায়।

এখনও কী শিশ্ন চালনা করলে যোনির অতলে চটচটে ভাব টের পাওয়া যায়? হাতির কানের মতো যোনির দরজা ঠিক আগের মতো শিশ্ন আঁকড়ে ধরে রাখে আর ছাড়তে চায় না, মনে হয় ভেতরে টেনে নিয়ে যাবে- এখনও কী আগের মতো তাই হয়?

পাথর সময় গড়িয়ে গড়িয়ে যায়।

এখনো কী সংগমকালে দুই উরু দিয়ে আগের মতো কোমর জাপ্টে ধরা হয়... শরীর-কান-গলা জিহ্বা দিয়ে যেমন খুশি লেহন করা মনে আছে... না মাল বেরিয়ে সব চ্যাট চ্যাটে করে দেবে... এখনও এমন জিব চালাও? মুখ মেহন চলে যতক্ষণ পর্যন্ত রেতঃপাত ঘটে... এখনও জিহ্বা তেমন উদগ্রীব...

স্তব্ধ পাথর জমাট হয়ে গেড়ে বসে থাকে।

এখনও কী কুকুর ভঙ্গিমা শিশ্ন চালনাকালে নিতম্ব হয় আগের মতো আন্দোলিতÑ যোনি স্থানচ্যূত ফাঁক হয়ে বেরিয়ে আসে...

নিরুত্তর পাথরের নিচে আর কখনো জল জমবে না।

হিন্দুদের শরীরের মতো সেই-গন্ধটা আছে? বে¬ড দিয়ে যৌনকেশ আর বগলের চুল চেচে ফেলা আছে?

এই সব প্রশ্ন উচ্চারণ হয় না তবে চোখের লোভী দৃষ্টিতে এই কথা কামজ ভাষা ফুটে ওঠে।

স্তব্ধতা। উত্তর নাই। ভূমি বিভক্ত হয়। একটি উত্থিত অঙ্গ সটান হয়।

লোকটার দুই চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে; সে কামজ্বরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে:

এইটা শহর না- যা ইচ্ছা করা যাবে না- সব ফাঁস করে দেবÑজারিজুরি সব বের হয়ে যাবে- আগে পয়সা দিয়া কাজ করেছি- এখন মিলিটারি চারদিকে- দিনকাল খারাপ, পকেট ঠনঠন চাই তবু লাগাইতে ইচ্ছা করে- ফ্রি এখন কাজ চাই- কাউকে কিছু বলা হবে না-কাক জানবে না- পক্ষী জানবে না-তুমি আর আমি শুধু... শিশ্নের গোড়ায় বীর্য উন্মুখ হয়ে আছে আত্মপ্রকাশে।

ঘোৎ ঘোৎ করে ওঠে পশু- শিশ্ন উচ্ছৃত হয়- উত্তেজনায় লালাভ বর্ণ ধারণ করে কাঁপতে কাঁপতেই প্রথম দফা স্বয়ংক্রিয় বীর্যপাত ঘটে যায় নিঃশব্দে।

আমিনাকে বাধ্য করে সেই স্খলিত বীর্যধারা অবলেহন করতে। বীর্যের ঝাঝালো গন্ধে গলগল করে বমি এবং অকস্মাৎ আরম্ভ হয় রজঃশলা। দুই ঊরু বেয়ে আজন্ম রক্তধারা গড়িয়ে গড়িয়ে ভেসে যেতে থাকে।

আমিনাকে এক তীব্র ঘূর্ণনে প্যাঁচ খুলে শাড়ির ভেতর থেকে উদোম আনা হয়।

রক্ত ও বমির উপর চিৎপাত করে ফেলে দিয়ে উরু দুইটা ফাঁক করে রক্তঝরা যোনি চিড়ে প্রসারিত অবস্থায় পুনরুত্থিত কঠোর শিশ্নদণ্ড আমূল বিদ্ধ করে যতদূর প্রবেশ সক্ষম ততোদূর ভিতরে প্রোথিত করে দেয় দণ্ডায়মান পূর্ণ শিশ্ন- আমিনা কাতরাতে থাকে- কোনো অনুভ‚তি লোপ পায়- অস্পষ্টভাবে একটা পিষ্টন অনরবত চলাচল করে-ফিনকি দেয়া বীর্যে আমিনাকে ভরিয়ে দেয় : এখন আরেক উনিশ শত একাত্তর। নারীকে লুণ্ঠন করে নিয়ে আসা হয়েছে ভোগে। চারদিকে কামনার চকাস্ চকাস্ শব্দ। মিলিটারি ক্যাম্পে খাটি পাক সেনাদের আকাশ কাঁপানো অট্টহাস্য, হাততালি, খাই খাই, চাকুম চুকুম, শীৎকার- ইয়া গাজী ইয়া গাজী ধ্বনি।

হুইশিল বেজে উঠলেই নগ্ন নারীদেহের দিকে পালাক্রমে একেকজন ধাবিত হচ্ছে- উত্থিত শিশ্নে বিঁধে ফেলছে এক ফালি যোনি, প্রবল চাপ ও প্রলয় কম্পনে কোৎ কোৎ করতে করতে বীর্যপাত করছে- সমস্ত বীর্য ঢেলে দিচ্ছে হুইসিলের শব্দে আরেকজন পালাক্রমে আসছে। সোনার বরণ মেয়েটির নাম রেখেছিল রঞ্জনা। উন্মত্ত সংগমে যোনি ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়লে পায়ুতে রতি স্খলন, পায়ুতে বিহার-পায়ুর ক্লান্তিতে মুখ ভর্তি বীর্যের উচ্ছ্বাস।

বীর্যে বীর্যে প্লাবিত হয় নারী- রঞ্জনা-আমিনা আগে ও পরে সেই উনিশ শত একাত্তর।

উন্মত্ত শীতল ধর্ষণের সময় এই রকম হয় বাংলাদেশে, গুজরাতে, বসনীয়ায়, কোরিয়ায়, ভিয়েতনামে- দিকে দিকে আবহমানকাল প্রবাহিত ভাটির দেশের পানির ধারা কুয়াতলায় দাঁড়িয়ে জলপ্রপাতের ভেতরে সে যেন জলের আদরের মধ্যে- সারা রাত্রি- যুগ যুগ ধরে বীর্যে সিক্ত আমিনারা আশ্রয় নেয় আর দিকে দিকে রটে যায় নারীর কোন স্বদেশ নাই, নারী মাতৃভ‚মিহীন।

জলের আদরে নিজেকে খুঁজে নিতে নিতে জল প্রপাতের অজস্র পানির ধারায় কুয়ার শীতল মানবিক এই পানির মূর্ছনায় বীর্যের দাগ তুলে ফেলতে ফেলতে প্রভাতের পূর্বকোণের সূর্যটা এই মধ্যাহ্নবেলায় খাড়া মাথার ওপর থেকে রৌদ্র বিতরণ করছে এবং তৎক্ষণাৎ কুয়ার জলের মধ্যে সূর্যটা স্থিরমানতা লক্ষ্য করে সেই দিকে প্রবাহিত করল নিজেকে বড় শান্ত, অসংখ্য নিরুদ্বেগ- কোনো তাড়াতাড়ি নাই তবু অত্যন্ত দ্রুত রওনা দিল আলোকন করলো স্পর্শমাত্র সূর্যটা কেঁপে উঠে জলের মধ্যে খানখান ভেঙে গেল- প্রলয় ও সূর্যের বিলয় কাক চক্ষু কুয়ার জলে প্রত্যক্ষ করল আমিনা এই আমিনার সূর্যাস্পর্শাভিলাষ এবং সূর্যস্পশা আমিনা।

জল কাচতুল্য স্বচ্ছ। নীচে জলতলস্থ দেখা যাইতেছে। স্বচ্ছ স্ফটিকমণ্ডিত হৈম প্রতিমার ন্যায় রোহিনী জলতলে শুইয়া আছে। অন্ধকার জলতলে আলো করিয়াছে।

সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ

১৯৬২ সালের ৪ অক্টোবর জন্ম। ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট। বাবা সৈয়দ হারুনার রশীদ। মা বেগম জাহান আরা রশীদ। স্ত্রী ফরিদা হাফিজ।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা : টিএন্ডটি উচ্চ বিদ্যালয়, নটরডেম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবার্ট গর্ডন ইউনিভার্সিটি, স্কটল্যান্ড। বিষয় : ওষুধ বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা। স্নাতকোত্তর।

লেখা বই : আগুনের বিপদ-আপদ, শাদা কাহিনি, লাশ নাই, ছবিলেখা ও গল্প অন্যান্য, তামাদি পাতা ও ভাষার আঙ্গিক, কুফা ভাইয়ের কুফাগিরি, জননীর জন্য গল্প ও লেখকের হত্যাকানমব,ৎ রক্তঅনুষঙ্গ, অমীমাংসিত আলো-আঁধারি/পিতৃপুরুষগণ অথবা ইতিহাসের মানুষজন, ইতি তোমার মুজিব। যৌথ সম্পাদনা স্বপ্নের সারসেরা।

1 Comments

সুমন সেনগুপ্ত

10 October, 2021

লেখাটার একটা অন্য চলন আছে, একটা দৃশ্যায়ন রচিত হয়

Post Comment