পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

একটি ধর্ষণ এবং মোমবাতি মিছিল।

  • 30 November, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 2366 view(s)
  • লিখেছেন : জাহাঙ্গীর আলম
আমাদের চারিদিকে ঘটে চলেছে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা, আর আমাদের ভুমিকা কি থাকছে? শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ডিপি পাল্টানো? নাকি আমাদের আরও কিছু করণীয় থাকে?

প্রথম যখন প্রিয়ঙ্কা রেড্ডির ধর্ষণ ও পুড়িয়ে হত্যার খবরটা পড়লাম, খুব অসহায় বোধ হচ্ছিল। কেমন অদ্ভুত একটা যন্ত্রনা। আমার তিন মেয়ে। আরো অনেক মেয়ে আমার। স্কুলের মেয়ে।ওদের সকলের মুখগুলো ভেসে আসছিলো। একধরনের অবসন্নতা, খারাপ লাগা গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল, বলে বোঝাতে পারবো না।

এ কোন দেশ। কেমন দেশের আইন?

যে মানুষ একটি 26 বছরের মেয়েকে সাহায্য করার নামে সম্মিলিত ভাবে ধর্ষণ করে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলতে পারে! একটু শাস্তির কথা ভাবে না? এ কেমন দেশের আইন? কেমন শাসন দেশের? নির্ভয়া কাণ্ডের ধর্ষকদের কথা মনে পড়ছিল। ওরা শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত দেয় নি। রড ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কতটা নৃশংস হলে মানুষ এটা করতে পারে। যেটা কোন জানোয়ারও তার নিজ গোত্রের জানোয়ারের প্রতি করে না। ওই হত্যাকারী ধর্ষকদের ভয়ঙ্কর কোন শাস্তি আজও হলো না। কামদুনির ওই হতভাগা ধর্ষিত নিহত মেয়েটির কথায় ভাবুন। কি নৃশংস ছিল সেই খুন ও ধর্ষণ।! তারপর ভাবুন উত্তর প্রদেশের উন্নাও এর সেই দুটি মেয়ের কথা যাঁরাকে ধর্ষণ করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই নিয়ে সিনেমা হয় আর অনেকেই সেই সিনেমার পরিচালক এবং অভিনেতাদের বাহবাও দেন। ভাবুন কাশ্মীরের হতভাগা ওইটুকু মেয়েটির কথা যাকে কয়েকদিন ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের সেই ধর্ষিতা মেয়েটি যার বাবাকে মেয়ের ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গিয়ে থানায় হত্যা করা হয়। কয়েকদিন আগে তামিলনাড়ুতে জঙ্গলে এক মহিলাকে অপহরণ নিয়ে যায় পাঁচজন যুবক। কে আগে ধর্ষণ করবে তাই নিয়ে ঝগড়া ও মারপিট। ধর্ষকরা নিজেদের একজনকে বেঁধে রাখা মহিলার সামনে হত্যা করে। এইরকম অসংখ্য ধর্ষিতা এবং অকালে ঝরে পড়া করুণ মুখগুলো চোখের সামনে ভেসে আসছিলো। রোজ, প্রতিদিন কত শত আমাদের মা, সন্তান মা, বোন ধর্ষিত হচ্ছে। ভারত মাতাকি জয় স্লোগান খুব শুনতে পাই। কিন্তু প্রতিদিন ভারতমাতাকে ধর্ষণ করে খুন করা ঘৃণ্য অপরাধীর ভয়ঙ্কর শাস্তি হলো, এটা শুনলাম না। বরং এই ঘৃন্যদের আমাদের করের টাকা খরচ করে প্রতিপালন করা হচ্ছে। তারিখের পর তারিখ পড়তেই থাকে। শাস্তি আর হয় না।

এই সব বিরলতম অপরাধের বিরলতম শাস্তির জন্য এত বিচারবিভাগ কেন এত সময় নেয় বুঝি না। এখানে বিচার এত ধীর যে এই সব ধর্ষকরা অপরাধ করার আগে দুবার ভাবে না। মহামান্য আইনমন্ত্রীরা কেনই বা উদ্যোগ নেন না।

তাই এই মেয়ের খবর পড়ে মনে হলো, যে নির্ভয়াকে নিয়ে, বা কামদুনি, কাঠুয়াকে এত আন্দোলন, মোমবাতি মিছিল, বিক্ষোভ হলো, তাদের হত্যাকারীদের আজও যখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলো না, তখন নতুন করে মোমবাতি মিছিল করে হবে? নীরব প্রতিবাদে কি হবে? আমি তো ভোটের একটি সংখ্যা মাত্র।

দেশ চাঁদে যাবে। জয় হিন্দ হবে। 4জি থেকে 5জি হয়ে যাবে, আম্বানি, আদানিরা, ভারতের সব কিছু কিনে নেবে কিন্তু মেয়েদের, মায়েদের রক্ষা করতে পারবে না। কঠোর আইন দ্রুত রূপায়ন হবে না। মানবাধিকার এর দোহাই দিয়ে এই ঘৃণ্য জীবগুলোকে বছরের পর পোষা হবে। যতদিন না এই ধর্ষক হত্যাকারীদের খুব দ্রুত বিচার শেষ করে জন সম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হবে, ধর্ষণ এবং ধর্ষণ করে হত্যার মতো ঘটনা বাড়তেই থাকবে। আমরা ফেসবুকে, টুইটারে ডিপি পাল্টে দেবো। বড়বড় কথা বলবো।

বোকা বোকা প্রতিবাদ করতেই থাকবো। তাই আর আমি মোমবাতি মিছিলে হাঁটবো না। আমি শুয়োপোকা হয়েই থাকবো।

0 Comments

Post Comment