পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

অথ হিড়িম্বা কথা

  • 10 March, 2020
  • 1 Comment(s)
  • 2688 view(s)
  • লিখেছেন : শতাব্দী দাশ
কলকাতায় দাদা-কালচারের মধ্যে একটি সর্বাঙ্গীন মেয়েদের থিয়েটার দল চলে, যার নাম 'সমূহ'। তাঁদেরই একটি প্রযোজনা অথ হিড়িম্বা কথা

সুসংস্কৃত এই শহরের গ্রুপ-থিয়েটার অঙ্গনের 'দাদা-কালচার' সম্পর্কে আমার বিশদে জানার কথা নয়। আমি বাইরের লোক। তবে , রাজনীতিতেই হোক বা কর্মক্ষেত্রেই হোক, দাদা-কালচার সর্বত্র। তাই খানিক আঁচ করতে পারি। আর খানিক জেনেছিলাম 'ইনসাইডার' মেয়েদের মুখে, জনৈক 'দাদা'-র যৌন-অপরাধের পর যৌন-নিগ্রহ নিয়ে ওয়ার্কশপ করাতে গিয়ে৷ তো, এই 'দাদা' শুধু একজন রক্তমাংসের ব্যক্তি নন, 'দাদা' একটা কনসেপ্ট৷ যিনি গ্রোতোস্কি-স্তানিস্লভস্কি গুলে নাকি সরবত খান প্রতি সকালে, এবং একাই খান। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্নহীন ভাবে সেই বিশ্বাসেই তাঁকে মেনে চলেন-এসব জানতে পারি।

কলকাতায় এহেন দাদা-কালচারের মধ্যে একটি সর্বাঙ্গীন মেয়েদের থিয়েটার দল চলে। 'সমূহ'।

না, শুধুমাত্র এই কারণেই তাদের জন্য কোনো 'ডিসকাউন্ট' চাইছি না। 'সমূহ'-র প্রযোজনায় যে নাটকটি সদ্য দেখলাম, সেটি সম্পর্কে বলতে চাইছি। নাটকঃ 'অথ হিড়িম্বা কথা'৷ কিন্তু মনে হয় এইটা স্বীকার করে নেওয়া খুব অপ্রাসঙ্গিক নয় যে যুগান্তকারী সব নটীদের অভিনয় বা একক অভিনয় দেখলেও সম্পূর্ণ মেয়েদের দলের নাটক দেখার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম।

এর আগেও মহাভারতের বিশেষ বিশেষ অধ্যায়কে হিড়িম্বা-হিড়িম্ব-ঘটোৎকচের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পুনরালোচনা করতে চাওয়া হয়েছে। সেখানে কিন্তু কেন্দ্রীয় চরিত্র ঘটোৎকচ । আর্য-অনার্য দ্বন্দ্ব ও কাস্টিজমের ডিস্কোর্স মূল প্রতিপাদ্য৷ ইপটার উপস্থাপনায় এরকম প্রোডাকশন যখন হয়েছে, শুনেছি, তখন ব্রাহ্মণ্যবাদের নিন্দার কারণে নাট্যকর্মীদের উপর প্রায়শই আঘাত নেমে আসত।

'অথ হিড়িম্বা কথা'-তে কিন্তু হিড়িম্বাই মূল চরিত্র। মানে এখানে বর্ণগত প্রান্তিকতা ও শ্রেণিগত প্রান্তিকতার সঙ্গে লিঙ্গগত প্রান্তিকতা ইন্টারসেক্ট করছে। শুধু অ্যান্টি কাস্টিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, 'অথ হিডিম্বা কথা' ফেমিনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও মহাভারতকে বিনির্মাণ করছে। সেকারণেই এখানে শুধু আর্য-অনার্য দ্বৈরথ আসেনি, ঠিক-ভুলের আপেক্ষিকতার ধারণা আসেনি, পরিবার ও মাতৃত্বের ধারণাগুলোকেও ডিকনস্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে৷

মাতৃত্বের ধারণাটিকে বিনির্মাণ করার ক্ষেত্রে আরেকটু মনোযোগী হলে ভাল হত। ঘটোৎকচের গায়েব হওয়া নিয়ে মাতার বিলাপ নাজিবের কথা মনে করাতে পারে। কিন্তু কুন্তীর বন্দনাকে সমালোচনা করা আর হিড়িম্বার মাতৃত্বের প্রতি সহমর্মিতার মধ্যে একটা মিসিং লিংক আছে৷ তা হল, মাতৃত্ব একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, কিন্তু মাতৃবন্দনা একটি কালচারাল কনস্ট্রাক্ট। সেইটা আরেকটু ইলাবোরেট হলে হয়ত ভালো হত, কিন্তু এটা নেহাতই ব্যক্তিগত মতামত।তাতে নাটকের গুণগত মান বিরাট কিছু কমেনি। নাটকটি মহাকাব্যকে পাঠ করে একটি নির্দিষ্ট চোখ দিয়ে, যা দিয়ে হয়ত পাঠ সম্পূর্ণ হয় না, কিন্তু যা দিয়ে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মত প্রকাশ করা হয়। এই বিনির্মাণ প্রচেষ্টা বর্তমান সময়ে মান্য এবং প্রয়োজনীয়।

চরিত্রায়ণের ব্যাপারটি উল্লেখযোগ্য। কোরাস আর মূল চরিত্র এখানে মিলেমিশে থাকে এবং কে কখন কোন চরিত্রে অভিনয় করবে সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ ফ্লুয়িডিটি থাকে। ফলে অভিনেতা নয়, নাটকই মুখ্য হয়ে ওঠে৷ ভাল লাগে এই মেয়েদের আশ্চর্য ফিজিকাল অ্যাক্টিং। এই নাটকে শরীর বাদে প্রপস নেই কিছু। একেবারেই নেই। তা থেকে বোঝাই যায় এরা শারীরাভিনয়েই জোর দেবে৷ তবে সংলাপ দিয়েও সঙ্গতের চেষ্টা আছে। ঘটোৎকচের জন্মের দৃশ্যটির ডিসাইনিং বা কোরিওগ্রাফ চমৎকৃত করল। শুধুমাত্র কতগুলো শরীর দিয়ে এরকম এক দৃশ্য পরিকল্পনা যে বা যারা করেছে, তারিফ তাদের অবশ্যপ্রাপ্য। একই রকম সুন্দর মায়ের ছেলেকে শিকার শেখানোর দৃশ্যটি।

'অথ হিড়িম্বা কথা'-র যেটুকু ফেমিনিস্ট নির্যাস, তা কিন্তু, দেখলাম, মূলধারার ফেমিনিজম থেকে চলা শুরু করে আস্তে আস্তে ইকোফেমিনিজমের দিকে এগিয়ে গেল। দেখা গেল, মহিলারাই জঙ্গলের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত, তারা নেত্রী, শিক্ষয়িত্রী। তারা বহিরাগতর হাতে জঙ্গলের অধিকার না ছাড়ার কথা বলল৷ যখন কোনো ভূমিপুত্র নয়, ভূমিকন্যা হিড়িম্বা সর্দার সে কথা উচ্চারণ করল, তখন নাটকটি সম্পূর্ণই এক ইকোফেমিনিস্ট টেক্সট হয়ে উঠল।

আমার মনে হয়, ডিসকাউন্ট দিতে নয়, ভাল নাট্য অভিজ্ঞতার জন্যই 'সমূহ'-র এই প্রচেষ্টাটি দেখা দরকার।

ছবি: স্মিতা

1 Comments

Jhuma kushari

11 May, 2023

May I get the main text of "atho hidimba kotha"?.... Please

Post Comment