পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

অসুর-ধর্ম সারনা : সিধু-কানু রক্তাক্ত, ত্রিশূল সরাও!

  • 29 September, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1288 view(s)
  • লিখেছেন : সুমিত দাস
জাতপাতের ব্রাহ্মণ্যধর্ম নয়, ছোটনাগপুরের আদিবাসীরা নিজস্ব 'সারনা ধর্ম' মানেন। আরএসএস তাঁদের হিন্দু বলে দাবি করে। জঙ্গল আঁকড়ে নিরাকারের সাধনা করা আদিবাসীদের অপমানের প্রতীক 'অসুর-বধ' তবু উৎসব হয়ে ফিরে আসে। কমতে থাকা জঙ্গলে 'অসুর-স্মরণ' বাড়ে। প্রবহমাণ এই আগ্রাসন ও প্রতিরোধ নিয়ে এই প্রতিবেদন।

এক

উৎসবের মরসুম শুরু হয়েছে। মহারাষ্ট্র থেকে ভায়া উত্তরভারত হয়ে গণেশ চতুর্থীতে যার শুভারম্ভ। যে যাত্রার হঠাৎ গন্তব্য এবার হল নতুন পার্লামেন্ট। বাংলার অসুর বধের উদযাপন দুর্গোৎসব হয়ে দশেরার রাবণবধে মাতবে হিন্দি ভারত। হবে রামযাত্রা। এ পর্বে উৎসব শেষ হবে দিওয়ালিতে। বাংলার 'দীপাবলি', আজকাল দিওয়ালি উচ্চারণে খোদ বাংলায় সংখ্যালঘু দীপাবলি।

শোনা যায়, কপিলাবস্তুর কাছাকাছি পৌঁছে বাবার রাজ্য থেকে নিমন্ত্রণ পান গৌতম বুদ্ধ। যেন একটিবার সন্ন্যাসী  ঘুরে যান আদি ঠিকানা! ফেরেন সিদ্ধার্থ। তাঁর ক্ষণিকের ফেরা উপলক্ষে হয় দীপদান উৎসব। আলোর মালায় সাজে কপিলাবস্তু। এই বৌদ্ধ গল্প অনেক পরে বদলে হল দিওয়ালি। বাংলায় দীপাবলি।  ব্রাহ্মণ্য ধর্মে হয়ে গেল, - 'রাবণ বধ করে বনবাস কাটিয়ে রামের অযোধ্যা ফেরার দিন।' সেই উপলক্ষে দীপ প্রজ্জ্বলন। আর, আগের নবমীতে রাবণ-বধ। বৌদ্ধ ইতিহাসবিদরা বলেন, দশ মাথার রাবণ  আসলে দশ মৌর্য সম্রাটের প্রতীক।  ব্রাহ্মণ্যবাদী পুষ্যমিত্র শুঙ্গ বৃহদ্রথকে হত্যা করে যে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছিলেন।  পুষ্যমিত্রের সভাকবির নাম বাল্মিকী।  নানান লোকগল্পের রাম-সীতা এরপর হলেন ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিপালক ও শম্বুকের হত্যাকারী। যে হত্যার নির্দেশ এসেছিল খোদ ব্রাহ্মণের কাছ থেকে।

সনাতন শব্দটির যাত্রাপথ স্হির হল কার হাতে? পুষ্যমিত্র শুঙ্গ, নাকি মৌর্যরাজাদের হাতে? বৌদ্ধ-মৌর্যরা জাতপাতবাদী নন। পুষ্যমিত্র শুঙ্গ হয়ে রামায়ণে জাতপাতের যাত্রা। সবটা নিয়েও 'সনাতন' হওয়া সম্ভব নয়। অতএব, নয় জাতপাতহীন বৌদ্ধমতের 'সনাতন', আর অন্যদিকে জাতপাতবাদীর 'সনাতন' এক হতে পারে না। তবে, 'সনাতন' শব্দটি দখল হতে পারে। কারণ,  বিজয়ীরা ভগবান হন। পরাজিতরা রাবণ বা অসুর।

ছোটনাগপুরের 'পবিত্র' বনভূমির আদিবাসী ধর্মবিশ্বাস সারনা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে
কুড়মি, ভূমিজ, রাজপুত, সরাক, লোহার, বাউরি, বীরহড়, বীরনিয়া, খেরওয়ার, হো, খেড়িয়া, শবর, কোড়া, মাহালি, পাহাড়িয়া, হাড়ি, বাগদি, বেদে, ঘাসি, লোধা ও বৃহৎ জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি আরণ্যক সম্প্রদায়ের ধর্মাচার  'সারনা'। যাদের পবিত্র বনভূমিতে একজন 'গ্রাম দেওতি', মানে গ্রাম দেবতার বসত। যাকে কেন্দ্র করে প্রকৃতির সঙ্গে বাঁচা। আসলে সে নিরাকার। মধ্যমণি পাহাড়, দেউতি বা গাছ উপলক্ষ্য মাত্র।

দুই

২০১৪ সালে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত 'অসুরের স্মরণসভায়' হঠাৎই আক্রমণ চালায় হিন্দুত্ববাদীরা। আয়োজক ছিলেন আদিবাসী ও দলিত শিক্ষক-ছাত্রদের একাংশ। দিনটি ছিল নবমী। পরের দিন ওই ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে মোদি-জমানার প্রথম দশেরায় প্রবাহমান রাজনীতির আঁচ পেয়েছি। শুধু বামপন্হীই না, থমথমে জেএনইউ-র দলিত-আদিবাসীদের চেতনায় আঘাত হানার কর্মসূচি ছিল সেটি। যা রূপায়ণে সফল হয়েছিল হিন্দুত্ববাদীরা।

২৫ জুলাই, ২০২২। হিন্দুত্ববাদী সরকারের জামানায় রাষ্ট্রপতি হলেন আদিবাসী মহিলা দ্রৌপদী মুর্মু। ধর্ম কী তাঁর? অবশ্য, তাঁর ভারতরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর উপজাতিরা তাদের 'সারনা' ধর্মের স্বীকৃতির দাবি জোরালো করে। বহুকাল ধরেই আদমশুমারিতে একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের দেখতে চান সারনা-মতাবলম্বীরা। এ সময় ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে উপজাতিদের সংগঠন 'আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান' ধর্ণায় বসে। ঝাড়খণ্ড, বিহার, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে সংগঠনটি নানা কর্মসূচি নেয়। সারনা ধর্মের কোডগুলি চিন্হিত করে -  সারনা ধর্মে বিশ্বাসীদের তালিকা বানানোর দাবি ওঠে।

নিজেদের স্বতন্ত্র বিশ্বাসের অনুসারী মনে করেন সারনা ধর্মাবলম্বীরা। যাঁরা আসলে প্রকৃতির উপাসক। এ বিশ্বাসের পবিত্র দান হল, - জল, জঙ্গল, জমি। সারনা ধর্মের আদিবাসীরা বনাঞ্চল বা জঙ্গল রক্ষার জন্য গাছ ও পাহাড়ের কাছে প্রার্থনা করে। আর এই বিশ্বাস ও রীতি সামনে রেখে ট্রাইব্যুনালের কাছে ধর্মীয়-কোড, একার্থে স্বীকৃতি দাবি করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান আদিবাসী নেতৃত্ব।  

প্রকৃতি-উপাসক আদিবাসীরা হিন্দু, মুসলিম বা খ্রিস্টান নন। ভারতের পঞ্চাশ-টিরও বেশি আদিবাসী সম্প্রদায় ২০১১ সালের জনগণনায় নিজেদের সারনা হিসেবেই দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন কোনও কোড ছিল না। একটি পৃথক ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের ভাষা ও ইতিহাস যাতে বলিষ্ঠ ভাবে সুরক্ষিত থাকে, তার জন্যই পৃথক কোডের দাবি। কেউকেউ মনে করেন, - কোড না থাকার জন্য, পরিচিতি সুরক্ষিত না থাকার জন্য, - সংখ্যালঘু পরিচিতি পেতে আজও অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, পুনরায় দাবিটি সামনে আসে। আশার আলো দেখেন কেউকেউ।

 

তিন

 

২০২০ সালের নভেম্বরে,  ঝাড়খণ্ড  সরকার সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য  বিধানসভায় বিশেষ  অধিবেশন ডাকে। সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে প্রস্তাব পাস হয়। দাবি করা হয়েছিল, ওই বছরের জনগণনায় কোড হিসেবে  সারনাধর্মের দাবি নিয়ে কেন্দ্র এখনও  কোনও প্রস্তাব দেয়নি, পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি। অবশ্য জনগণনাও হয়নি। তবে, ন্যাশানাল কমিশন ফর সিডিউল ট্রাইব (এনসিএসটি)  সুপারিশ করেছে, যাতে গণনায় সারনা ধর্ম স্বাধীন ও মৌলিক হিসাবে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র, কোডের স্বীকৃতি অস্বীকার করার কারণও জানায়নি। এনসিএসটি উল্লেখ করেছিল,  যে ভারতে সারনাধর্মের জনসংখ্যা বৌদ্ধদের চেয়ে বেশি, যা এখনও স্বীকৃত নয়। কেউকেউ যুক্তি দেন, - সারা বিশ্বে জঙ্গল কমছে। জঙ্গল বাঁচাতে সারনাধর্মের স্বীকৃতি জুটলে প্রকৃতির জন্য ভাল। কারণ এই ধর্মের আত্মা প্রকৃতি এবং পরিবেশ রক্ষায় নিহিত। অবশ্য, হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এই আদিবাসীদের হিন্দু বলেই দাবি করে। অবশ্য, পুরাণের গল্পগাঁথায় তাঁরা ভূত-পেত্নী বা রাক্ষস-খোক্কশ। আরএসএস বা বিজেপি যাদের বনবাসী বলে চিন্হিত করে, আদিবাসী নয়। একই সঙ্গে, জাতপাতের ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মের নাম হিন্দু হোক বা সনাতন, তার দাসত্ব চায় না আদিবাসীরা।

 

চার

 

পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন কমছে বনভূমি। ১৯৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ভারতে ৩,৮৪,০০০ হেক্টর জঙ্গল কাটা হয়। মোদি জমানায় শুধু ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৬,৬৮,৪০০ হেক্টর জঙ্গল ভ্যানিস হয়েছে। বিপরীতে যা দেখা যায়, তা 'উন্নয়ন'। এখনও ভারতের ২৪% অঞ্চল বনভূমি। ২০৫০ সালে সেটাও অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। খনিজ সম্পদ, নগরায়ন তো আছেই। সামনের এক-দশকে পাম তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে উত্তর পূর্ব ও আন্দামানের ১৬.৭ লক্ষ হেক্টর জঙ্গল কাটা পড়বে। অবশ্য, জঙ্গল কেন্দ্রিক সারনা ধর্মাবলম্বীরা থাকেন ঝাড়খণ্ড,  বিহার, আসাম, বাংলা, ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশে। সভ্যতার আর ধর্মের সংকট এখানেই। যদি জঙ্গল আর প্রকৃতিই না থাকে, তাহলে সারনাধর্মের গুরুত্বই বা কী? এখানে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আগ্রাসনও প্রকট হয়। একটি নগরকেন্দ্রিক জীবন সংস্কৃতি গিলে খায় জঙ্গল। সারা বিশ্বেই একই রীতি। প্রাতিষ্ঠানিক বড় ধর্মগুলো একই পথের পথিক।

পুরাণে, অন্তত গুপ্ত প্রেসের পঞ্জিকায় অসুরের গায়ের রং সবুজ। গো-বলয়ের বাইরে, অসুরের বাহনটি মোষ। এই অসুরকে নিয়ে সংকট ও তত্ত্বের শেষ নেই। যাবতীয় অশুভ, রোগ-বালাই, অমঙ্গলের প্রতীকটি আসলেই জঙ্গল। অসুর ও জঙ্গল, যত কমে, - মূলধারার মঙ্গল বাড়ে। বাড়ে উন্নয়ন, আয়োজন ও উৎসব। বিসর্জনের বেলায় মাটির অসুরের মুখে গুঁজে দেওয়া বাঙালি হিন্দুর সন্দেশটিও আসলে মাথায় চেপে পুনরায় উৎসবকে ডাকার মিঠানিমন্ত্রণ। তাতে, নগর ও উন্নয়নের কাছে মূল ধারা হয়ে ওঠে না জঙ্গল।

 

পাঁচ

 

২০২২-এর অক্টোবরে, আউটলুক পত্রিকায় কবি সুষমা অসুর লিখছেন, "The descendants of Mahishasura, found in the Gumla, Lohardaga, Palamu and Latehar districts of Jharkhand, do not know about Ram’s victory over Asurs"। মানে? এত বড় একটা ভূগোলে রামের অসুর বিজয়ের গল্প পৌঁছায়নি? পৌঁছায় না? তাঁরা হিন্দু নন। সারনা। তাঁরা অসুর। অসুর কবি লেখেন, -“আমার জন্ম অসুর সম্প্রদায়ে, যা মহিষাসুর থেকে আসা একটি উপজাতি। রামায়ণ জানি না। আমরা আদিবাসী। আমাদের ঈশ্বর নিরাকার। আমরা প্রকৃতি এবং পূর্বপুরুষদের বিশ্বাস করি। বহু আগে, দশেরার সময় আমরা ঘর থেকে বের হতাম না। এখন, সম্প্রদায়ের লোকেরা উৎসব দেখতে যায়। এখন সব বদলে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের বিশ্বাস বাঁচানোর চেষ্টা করছি। এইসব গল্প আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি। তারা বলেছিলেন,- মহিষাসুর একজন সাহসী যোদ্ধা। মহান রাজা। অসুরদের বিরুদ্ধে রামের জয়ের কথা আমরা জানি না। আমরা প্রাচীন ধাতুবিদ। আমাদের কাছে বিশ্বের লোহা আছে। এখন আমরা হারিয়ে যাচ্ছি।” পশ্চিমবঙ্গেও দুর্গাপূজার সময় 'অসুর সম্প্রদায়' নিয়ে এমন স্টোরি মিডিয়ায় আসে। ওটাও রীতি হয়েছে মাত্র। কিন্তু এতেই, অসুরের বুক থেকে ত্রিশূল সরে না। জঙ্গল কেটে নগর বানানোর উন্নয়নও থমকায় না।

 

ছয়

 

তিলকা মাঝির দেশ, সিধু মুর্মু,  কানু মুর্মুর দেশ। দেশ তো জঙ্গলই ছিল। অরণ্যের মালিক এখন বহিরাগত 'দিকু'। তারাই মূল ধারা। পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজার সময় সাঁওতালরা দাঁসাই নাচে। মধ্যবিত্ত হিন্দু বাঙালি 'দাঁসাই মানে মহিষাসুরের শোকযাত্রা'- তা জানে৷ জঙ্গলমহল বা রাঢ় বাংলা থেকে পুজোর কলকাতায় দাঁসাই আসে আজকাল। পাশে ভীমরাও আম্বেদকরের ছবি নিয়ে জঙ্গলমহলে আর্যদেবীর অনার্য অসুর বধের প্রতিবাদে অসুরপূজা বা অসুর-স্মরণ বাড়ছে। কেন যে কলকাতায় সাজিয়ে গুছিয়ে তেমন অনুষ্টান হয় না, কে জানে! দুর্গাপূজাও তো এই মনসা বা নানা হারিয়ে যাওয়া লোক-দেবদেবীর বাংলায় শুরু হয়েছিল একদিন! অসুরের কান্নাও আসুক কলকাতায়। আসুক বনবিবি, দক্ষিণ রায়, টুসু, ভাদু, করম!  অসুর আসলে সারনাধর্মের প্রতীক। তিলকা, সিধু, কানু - সবাই অসুর। সবাই সারনা। সবাই রাবণ।  সবাই সেই কবে থেকে বলছেন, - বুক থেকে ত্রিশূল সরাও, বড্ড লাগছে।' এরপরই আসুক উৎসব, বসুন্ধরা বনদেবীর সাজে! জঙ্গল নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। অসুরের জঙ্গল বাঁচলে, বেঁচে যাবে প্রাণ আর বৈচিত্র। বেঁচে থাকবে সবুজ ভারত। সিংহভাগ দলিত আর আদিবাসী বাদ দিয়ে সে জীবন-উৎসব সম্ভব নয়। বহুকাল পেরিয়ে গেল, যে উৎসবে শেষমেশ অপমানিত 'অরণ্য'।

0 Comments

Post Comment