বছর কয় আগেও “সে’ রামও নেই, সে’ অযোধ্যাও নেই” বলে সংঘ পরিবারকর্তাদের দীর্ঘশ্বাস বেশ লম্বাই ছিল। এখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বাসের তোড়ে রাষ্ট্র রাষ্ট্রধর্ম ভুলে ধর্মরাষ্ট্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ। আবার রাম মন্দির উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্র সরকারের মাতামাতির ব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক তুলে লাভও নেই—তুললে সেটা হাহুতাশের মতো শোনাবে। রাষ্ট্র ও ধর্মের মাখামাখি নিয়ে কথা বলার দিন ক’বছর আগেই গত। রাষ্ট্রনেতারা রাম মন্দির নিয়ে যা করছেন, তাতে গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভের সিলমোহর আছে। ফলে বামপক্ষ ও প্রগতিপন্থীরা ধর্মনিরপেক্ষতার সাংবিধানিক মর্মার্থ নিয়ে যতই হৈচৈ করুক, কেন্দ্র সরকার ও সংঘ পরিবারের এ নিয়ে মাথাব্যাথার কিছু থাকে নাকি? তা হলে রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে এই সাজো-সাজো-আয়োজন কেন?
‘মন্দির-মন্দির’ করে হিন্দু মেরুকরণ একটা ব্যাপার বটে। লোকসভা নির্বাচনের মুখে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে এই উন্মাদনা দেখে মনে হতে পারে, এটা নির্বাচনমুখী হিন্দু মেরুকরণের প্রচেষ্টা। কিন্তু অযোধ্যার বাবরি মসজিদ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিতণ্ডা ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং শেষমেশ আদালতের রায় মূলে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা— এই অতিদীর্ঘ পরিক্রমার পর মেরুকরণের আর কিছু অবশিষ্ট থাকতে পারে বলে মনে হয় না।
শীর্ষ আদালত অযোধ্যায় বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেওয়ার পর মুসলমান সম্প্রদায় নিরুত্তাপই ছিল। জামিয়াত উলেমা-এ-হিন্দ, মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন করেছিল-- ঐ পর্যন্তই। আবার সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, যার হাতে শীর্ষ আদালত অযোধ্যায় অন্যত্র বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র সরকারকে, এবং দিল্লির জামা মসজিদের শাহী ইমামের মতো ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আদালতের রায় মেনে নিয়েছিলেন। ফলে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রতিপক্ষ আর মুসলমান সম্প্রদায় নয়। মুসলিমদের দিক থেকে কোন বিরোধ যখন নেই, তখন এ নিয়ে হিংসার কোন সুযোগও নেই হিন্দুত্ব বাহিনীর হাতে। অন্যথায় রাম মন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে হিন্দুত্ব বাহিনীর দিক থেকে কোনভাবে হিংসার পরিবেশ তৈরি হলে ভক্তদের আবেগ ঘনীভূত হতে পারে, কিন্তু সাধারণ্যে তার প্রভাব তাদের পক্ষে অনুকূল হবে না। মনে হয় না তাদের ‘সেনাপতিরা’ ভুলটা করবে।
পুলওয়ামায় জঙ্গি নাশকতা ও পাল্টা পাকিস্তানের বালাকোটে সেনা অপারেশনের পর দেশে বিক্ষিপ্তভাবে কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর হামলা-হেনস্থার ঘটনা ঘটলেও সারা দেশে মুসলিমদের টার্গেট করা হয়নি। বরং ঘটনাকে সুকৌশলে দেশপ্রেম, (হিন্দু) জাতীয়তাবাদ, দেশবাসীর নিরাপত্তার জন্য ভাবনার খাতে বইয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলও মিলেছিল হাতে হাতে—পুলওয়ামায় জঙ্গি নাশকতা সম্পর্কে আগাম গোয়েন্দা-সতর্কতা সত্ত্বেও কেন্দ্র সরকারের নিস্পৃহতা নিয়ে দেশবাসীর সমালোচনা, বালাকোট নিয়ে অতিরঞ্জন প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গিয়েছিল এবং পুলওয়ামা নিয়ে কৌশলী বাগাড়ম্বর মোদি সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছিল। রাম মন্দির নিয়ে পুরনো বিতর্ক আর নেই, রক্তপাত নেই, ফলে এ নিয়ে আর রাজনৈতিক গিমিক নেই। তবে এ নিয়ে যা করার সুযোগ আছে, তা দাঙ্গা-হাঙ্গামা-মুসলমান বিদ্বেষের থেকে বেশি কিছু। পুলওয়ামার প্রাসঙ্গিকতায় আরোপিত জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমকে এখন রাম মন্দির নিয়ে আবেগে ভাসিয়ে দেওয়ায় ফায়দা অনেক। এদিক থেকে রাম মন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গ এখন সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ রণকৌশলে পরিণত হয়েছে। এতে মেরুকৃত হিন্দু জনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই রাম মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে এত ঢক্কানিনাদ।
আমরা পিছন ফিরে দেখে নিতে পারি ২০২০-র ৫ই আগষ্টে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কর্মকাণ্ডকে। প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে মন্দিরের ভূমিপূজন নিয়ে কেন্দ্র সরকার ও হিন্দুত্বপন্থী একাধিক সংগঠন মায় সরকার-পোষিত মিডিয়া সবখান থেকে সৃষ্ট ধর্মযুদ্ধ জয়ের মতো পরিবেশে তিনি একাধারে রাষ্ট্রনেতা ও হিন্দুনেতা রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি নতুন রাজনৈতিক ভাষ্য রচনা করেছিলেন— তাঁর ভাষণে রাম মন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গকে ভারতের স্বাধীনতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এখন, রাম মন্দিরের উদ্বোধনের প্রাক্কালে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সহ সভাপতি ২২ জানুয়ারি অর্থাৎ রাম মন্দিরের উদ্বোধনের দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে তুলনা করলেন।
ভারতের স্বাধীনতা অর্জন— তারজন্য প্রগাঢ় দেশপ্রেম ছিল, জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ছিল, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছিল ও অনেক আত্মত্যাগ ছিল। পক্ষান্তরে, ভারতের মতো মিশ্র সংস্কৃতির দেশে কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কখনও স্বাধীনতা বা জাতির বিষয় হতে পারে না— তারজন্য যত লড়ালড়িই থাকুক না কেন; এমনকি এতে ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকলেও নয়। কিন্তু এটা দাঁড় করাতে হবে। হিন্দু জাতীয়তাবাদকে মজবুত করতে এটা দরকার।
স্বাধীনতা এমন এক বিচারধারা, তা দেশাত্মবোধ হোক অথবা ব্যক্তিসত্তা, উভয় ক্ষেত্রেই মানুষের অস্তিত্বের উপলব্ধিকে অর্থবহ ও পরিব্যাপ্ত করে। দেশ ও জাতির সামনে আয়নার মতো থাকে স্বাধীনতার ইতিহাস। সেটা স্বাধীন দেশে জনসমষ্টির জাতি হিসাবে সংহত হওয়া ও দেশগঠনের ইতিহাস। একটা পরাধীন দেশে পরাধীনতা মোচন করার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে পরাধীন জনসমষ্টির জাতি হিসাবে উঠে দাঁড়ানো ও একটা স্বাধীন ভূখণ্ডের ‘দেশ’ হিসাবে গড়ে ওঠার ইতিহাস। একদা ‘ব্রিটিশ ভারত ভূখণ্ডের’ থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ভারত’ হয়ে ওঠার মধ্যে স্বাধীনতাই কেন্দ্রীয় ভাবধারা। সংঘ পরিবারের ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে না আছে আবেগ, না আছে অনুভূতি। সেটা সদ্য স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে বিরোধ, গান্ধীজির হত্যার প্রসঙ্গ কিংবা ইদানিং গান্ধীজির পাশাপাশি নাথুরাম গডসের প্রতিকৃতিতে সপুষ্পক শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে বোঝা যায়। এ হল ব্রিটিশ ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপরীত ভাষ্য রচনা করা থেকে ব্রিটিশরাজের প্রতি দাসসুলভ মনোভাব ব্যক্ত করার ধারাবাহিকতা। তখন থেকেই জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণার বিপরীতে তাদের হিন্দু জাতীয়তাবাদ নির্মাণ করার প্রচেষ্টা জারি ছিল। এটা আসলে ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, যার জন্য অনিবার্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায় ছিল তুরুপের তাস। তাদের হাসিল করা একাধিক মন্দির-মসজিদ বিবাদ, বহু ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা সত্ত্বেও (আসলে এটা অন্যতম কারণ) হিন্দু জাতীয়তাবাদ সেভাবে এঁটে উঠতে পরেনি। এখন তাদের হাতে অঢেল অবকাশ, যখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সাধুকুল ও সরকার-পোষিত মিডিয়া একযোগে হাত লাগাতে প্রস্তুত। তারা রাম মন্দিরকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীক রূপে দাঁড় করাতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পশ্চাৎগামী। কিন্তু ভারতবাসীর জাতীয়তাবাদের ধারণা যেহেতু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও আবেগকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, ফলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী একটা ইতিহাস ছাড়া হিন্দু জাতীয়তাবাদ দাঁড়ায় কী করে? সুতরাং রাম মন্দির নির্মাণকে দেশের স্বাধীনতার সমতুল্য বানিয়ে নেওয়া।
দেশের স্বাধীনতার পাশে আর একটা স্বাধীনতার ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া-- আসলে দেশবাসীর স্বাধীনতার বোধকে দ্বিতীয়টা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার প্রচেষ্টা। ভারতে উপনিবেশবাদ অতীত। এখন দেশগঠন এবং জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকে সংহত করাই লক্ষ্য। দেশের স্বাধীনতার বিপরীতকল্পের লক্ষ্য উল্টো—তার সামনে কোন উপনিবেশবাদই ছিল না কখনও; প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ছিল ও আজও বিদ্যমান ধর্মীয় সংখ্যালঘু, তার সমাজ ও সংস্কৃতি। সুতরাং এই ‘স্বাধীনতা’-বোধ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈরী ভাবনা। এখন রাম মন্দির নির্মাণ পর্যায়ে বাস্তবিক কারণে এটা কৌশলী। এটা আর একটা মোদি জমানার জন্য সন্তর্পণে পা ফেলার ব্যাপারও বটে।
প্রায় শত বৎসরের প্রচেষ্টায় হিন্দু জনসমষ্টির বড়জোর সিকিভাগের হিন্দু জাতীয়তাবাদে মতি হয়েছে। আবার এ মতির এমনই গতি যে, তার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাব জাগিয়ে তুলতে পুলওয়ামা-বালাকোটের মতো ‘বুস্টার ডোজ’ প্রয়োজন হয়। সুতরাং রাম মন্দির নয়, ‘রাম রাজ্য’-এর জন্য এরকম একটা পরিবেশ জরুরি। রাম মন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গকে এমন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বাগাড়ম্বড়ের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যাতে এর মধ্য দিয়ে হিন্দু অস্মিতাকে জাগিয়ে তোলা যায়। রামের জন্মভূমির পবিত্রতার কথা বলে আধ্যাত্মিক ভাবকে জাগিয়ে তোলা, রাম মন্দির ধ্বংস করে বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠার মিথকে হিন্দুদের পরাধীনতার স্মারক হিসাবে দাঁড় করানো এবং তার গ্লানি মোচনে মুসলমান বিদ্বেষ ও রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা—এ পর্যন্ত এগনো গেছে। এখন অবশিষ্ট চূড়ান্ত কাজ হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিমুখে রাম মন্দিরকে মাইলস্টোন হিসেবে খাড়া করা। এটা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে হবার নয়। আধুনিক ভারতের সংজ্ঞা ও প্রজ্ঞা, ভারতবাসীর জাতীয়তা সম্পর্কে বোধ, এটাকে প্রতিস্থাপিত করতে গেলে হিন্দুত্বের রাজনীতিকে শেষমেশ একটা প্রতর্কের (discourse) মধ্যে ঢুকতেই হবে। কিন্তু তার ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’-- ফলে রাম মন্দিরের ভূমিপূজন থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত তাদের এতকিছু আয়োজন ও সম্ভাষণ।
এখন দেশের সংবিধান, জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের জন্য নতুন করে সংকল্পের দিন উপস্থিত। এই সবকিছুর জন্য দেশের স্বাধীনতাকে নতুন করে উপলব্ধি করা চাই। শহীদ-ই-আজম ভগৎ সিংয়ের লড়াইয়ের ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে, দু’জন বেকার যুবকের সংসদ ভবনে স্মোক বোম্ব ব্লাস্ট করা এবং সংসদের ভিতরে তাদের ও বাইরে তাদের দুই সঙ্গীর মোদি জমানার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়ার ঘটনা দেশবাসীর সামনে তামাম বেকার যুবদের স্বাধীনতাহীনতার বার্তাই বয়ে আনে। তাঁদের পদ্ধতিটা ভিন্ন ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু বেকারত্বের মর্মবেদনা অভিন্ন। এটা নতুনত্ব। জল-জমি-জঙ্গল আগলে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো কোন্ লুটেরার বিরুদ্ধে স্পর্ধা দেখানো—এটা বুঝলে দেশের স্বাধীনতা নতুন অবয়ব পায়। মণিপুর সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে জাতিগত অস্থিরতা ও কেন্দ্র সরকারের কেন্দ্রীকতা স্বাধীন ভারতের স্থিতিশীলতার পক্ষে কতখানি বিপদ, সেটা নিয়ে দেশবাসীর ভাবনা ও দুর্ভাবনা এখনকার জরুরি প্রশ্ন। জাতীয়তা ও দেশের সার্বভৌমত্বে প্রান্তিক জাতিসত্তাবর্গের উপযুক্ত স্থান নির্ণয়ের সনদ লিখিত হচ্ছে মণিপুরের মানুষের রক্তাক্ষরে। আর আছে কর্ণাটকের চেন্নাকেশবের রথোৎসবের মতো মিশ্র সংস্কৃতির চালচিত্র— দেশময় ছড়ানো-ছিটানো। বোধ করি, চেন্নাকেশব মন্দিরের ঐতিহ্য সমস্ত রকম সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির সেরা জবাব— যেখানে দু’দিনের বাৎসরিক রথোৎসবের সূচনা হয় সুসজ্জিত রথের সামনে এক মৌলবীর কোরান পাঠের মধ্য দিয়ে।