পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কর্মসূচি কর্মবিরতি : দাবি অনির্দিষ্ট

  • 12 September, 2024
  • 1 Comment(s)
  • 1026 view(s)
  • লিখেছেন : মালবিকা মিত্র
"আমাদের কর্মবিরতিতে কোন রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হয়নি"। তাহলে আপনাদের সারা বছর কাজ কি? বলার সময় তো বলেন আপনারাই হাসপাতালের মেরুদন্ড। নিট পরীক্ষার কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাবার পর যথেষ্ট উপলব্ধি করতে পারছি আমাদের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ কি? গভীর কুয়াশাচ্ছন্ন। প্রবেশিকা পরীক্ষার শুরু থেকেই কোচিং সেন্টার চয়েস করা ও লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা, ঠিকঠাক প্রায় হুবহু প্রশ্নপত্রটি সাজেশন হিসেবে লাভ করা, এইগুলোও তো দুর্নীতি। তা নিয়েও কথা হোক।

রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা তার উপরে বসল রাজা --
ঠোঙাভরা বাদামভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না ৷

এমন কেন সত্যি হয় না, আহা। খাচ্ছি কিন্তু গিলছি না। অতএব খেয়ে যাও, খেয়েই যাও, পেট ভরার কোনো প্রশ্ন নেই। ভাবা যায় রেল স্টেশনে লোকের ভিড় বেড়েই চলেছে, ট্রেন নেই। কিন্তু যখন ট্রেন এলো, সবার বসার বন্দোবস্ত আছে। পরিষেবায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। কি দারুন না! শিক্ষক ক্লাসে যাবেন ১৫-২০ মিনিট পরে। কিন্তু পড়ূয়ার কোন ক্ষতি হবে না। ঠিকঠাক সিলেবাস শেষ, ক্লাস টেস্ট শেষ, ছাত্র শিক্ষক ইন্টারেকশন কমপ্লিট। ভাবা যায়! আপাতদৃষ্টিতে ভাবতে না পারলেও, কিন্তু ভাবা যায় । কারণ আমাদের দেশের লেখাপড়ার জগতে অন্যতম সেরা ছাত্র ডাক্তারবাবুরা, তারা জানিয়েছেন, কর্মবিরতি হচ্ছে কিন্তু রোগীর পরিষেবায় কোন অসুবিধা হচ্ছে না। ওটা নিরবচ্ছিন্নভাবে একদম ঠিকঠাক চলছে।

ছাত্ররা এই দাবি করলে না হয় ভাবতে পারি এদের সব দুরন্ত আশা মনে। এরা সর্পসম মত্ত আশায় ফুঁসছে ও পুষছে মনে। অতএব কি বলতে কি বলেছে। কিন্তু ছাত্র নয়, বলেছেন চিকিৎসা জগতের মহা পূণ্যবান গুণবান। যাহার কথা অমৃত সমান। যিনি বিশ্বাস করেন, এই চিকিৎসা কাঠামোয় মানুষকে যথার্থ স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া সম্ভবই নয়। যারা বিশ্বাস করতেন একটি জনস্বাস্থ্য আন্দোলন, একটি জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, যে নীতি হবে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষাকারী। সেই তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবার সামান্যতম ক্ষতি হয়নি বলে জানালেন। মৌখিক নয়, একদম লিখিত। তবে আর কি, স্বাস্থ্য পরিষেবা তো বেশ ভালোই আছে। পূণ্যদা ঠিক কি বলেছিলেন সেটা শুনুন।  হুগলি জেলার কোন্নগরের আহত যুবক আরজিকর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু মায়ের বক্তব্য তিন ঘন্টা চেষ্টা করার পরেও তিনি সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। ডাক্তারবাবুদের কর্ম বিরতির কারণে অবশেষে তার পুত্র বিক্রম মারা যায়। এই প্রসঙ্গে পুণ্যদা ডিফেন্স করে চিঠি তে লিখেছেন ".....as received at R G Kar Medical College promptly at 9:10 AM on the same day September 6, 2024.The doctors on duty immediately attended to him and continued to provide medical care at several intervals until his unfortunate demise at 12:30 PM as noted in the provisional death certificate ( PM No RG2400791300, dated 6.9.20024). The bed head tickets as well as the statement of the MSVP of RGKMCH will substantiate our claim..... ".

সাধারণত পুলিশ কেস হলে এইরকম সাজিয়ে গুজিয়ে, সার্টিফিকেটের মেমো নাম্বার উল্লেখ করে, কখন ভর্তি হলেন কখন মারা গেলেন, এসব লেখা হয়। পূণ্যদা ঠিক সেভাবেই আইন কানুন মেনে সংগঠনের লেটার হেডে গুছিয়ে উত্তর দিয়েছেন। কপি বুক ডিফেন্স। পূণ্যদার কাছে আমার একটা প্রশ্ন, একটা হাসপাতালে আমরা বলে থাকি, হাউস্টাফরা  হলো চিকিৎসার লাইফ লাইন। তারাই প্রধান কাজ পরিচালনা করে। সিনিয়র ডাক্তাররা যদি দীর্ঘ সময়, বেশি সময়, সরকারি হাসপাতালে থাকেন তাহলে বেসরকারি হাসপাতাল, চেম্বার, এসবে থাকবেন কে? আর উনি বললেন  কিনা হাউসস্টাফ দের কর্ম বিরতির মধ্যেই সিনিয়র ডাক্তাররা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে চিকিৎসা শুরু করলেন, মাঝে মাঝেই কেয়ার নিলেন, অবজারভ করলেন, ওই তিন ঘন্টা কুড়ি মিনিটে কি কি করা হয়েছিল সেটাও বললেন না কেন? তাহলে আরেকটু জুতসই লেখা হতো।

বিক্রমের মায়ের কাছে ফোনে তিনি জানালেন উনি আরজিকরের চিকিৎসক নন। তাহলে উনি উপাধ্যক্ষ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জির কাছ থেকে যা জেনেছেন সেটাই বলছেন। ডক্টর পূণ্যব্রত গুণ মাননীয়েসু, আপনি পুরো আমলা তান্ত্রিক কায়দায়, একজন পাকা আমলা যেমন প্রেস রিলিজের আগে স্বাস্থ্য ভবন থেকে হাসপাতালে ফোন করে জেনে নিয়ে জবাব দেয়, সেভাবেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর এক্স হ্যান্ডেলের উত্তর দিয়েছেন। শুনে ও জেনে খুশি হলাম, হাসপাতালের লাইফ লাইন হাউস স্টাফরা কাজ না করলেও হাসপাতালে তৎপরতার সাথে পেশেন্টের চিকিৎসা মেলে এটা জেনে। তাহলে তো তৃণমূল জমানায় চিকিৎসার স্বর্ণযুগ মানতে হবে।

"সরকারি হাসপাতাল অচল হয়ে পড়েছিল। তবে সাধারণ মানুষের অসুবিধের কথা ভেবে প্রত্যেকটি সরকারি হাসপাতালের সামনে তাঁবু খাটিয়ে বিকল্প আউটডোর চালিয়েছিলেন সেদিনের ডাক্তাররা, জানিয়েছেন ডক্টর হীরালাল কোনার। ' ওই সময়েই প্রথম আমরা বলি, সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা বিত্তবানদের জন্য নয়, আমজনতার। তাই সরকারকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে যাতে আম আদমি চিকিৎসা পরিষেবা থেকে কোনোভাবে বঞ্চিত না হয় ' হীরালাল বাবু বললেন।" (ডঃ অনিল সাহার লেখা জুনিয়ার ডাক্তার : এ কোন উত্তরসূরী)। লেখাটির উল্লেখ করতে হলো কারণ প্রতিবাদ পত্রে পূর্ণব্রত গুণের সাথেই ডঃ হীরালাল কোণার এর নাম স্থান পেয়েছে। আর আজ প্রতিদিন পত্রিকায় পড়লাম পুণ্য দা বলেছেন একটা বড় আন্দোলন হতে গেলে এমন একটা মৃত্যু খুবই ছোটো ব্যাপার। তারপরে অবশ্য একটা ভিডিও বার্তায় আপনি বলেছেন, যে আপনি ঐ ছেলেটির মৃত্যুকে ছোট বলতে চাননি, তাঁর অপমানকে ছোট ঘটনা বলতে চেয়েছেন।

পূণ্যদাকে আমার প্রশ্ন, কোন অর্থে বড় আন্দোলন? হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাব জনিত কারণে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। তাদের হাতেই ধর্ষিতা ও নিহত একজন পিজিটি। এটাই কি একটি বৃহৎ আন্দোলন? কর্মস্থলে ধর্ষণ শ্লীলতা হানি, খুন হওয়া, কি এই প্রথম? আসলে পূণ্যদা যেটা বলে ফেলেছেন, উপর্যুপরি নির্বাচনে হেরে, কোন ভাবে যখন একটা সরকারের পতন ঘটানো যাচ্ছিল না, আজ সেই সম্ভাবনা প্রায় দুয়ারে উপস্থিত। এমন একটা বৃহৎ আন্দোলন। তার সামনে বিক্রমের মৃত্যু স্বাভাবিক ও সামান্য ঘটনা। একজন বর্ষীয়ান বামপন্থী তো ১৫ তারিখেই, রাত দখলের পরের দিন, আমাকে ফোনে বলেই ফেলেছিলেন, ইস, তিন মাস আগে আরজি করের ঘটনাটা ঘটলে, এই ভোটেই  ......এর ঠ্যাং দুটো ধরে ফেড়ে ফেলা যেত। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, একটা বৃহৎ লক্ষ্যের সামনে নির্যাতিতা ও নিহত তিলোত্তমা। শুধুই একটা মৃত্যুর ঘটনা নয়। বর্ষিয়ান বামেদের চোখে মুখে তিলোত্তমার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা কি দারুন পরিতৃপ্তি এনে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত হাউস স্টাফদের উদ্দেশ্যে বলি, আপনাদের কর্ম বিরতি যদি রোগী পরিষেবায় কোন ব্যাঘাত না ঘটিয়ে থাকে, তবে তো আপনাদের কর্ম বিরতিতে  সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টিই হবে না, হচ্ছেও না, তাইতো। ভিডিও পাল্টা ভিডিও র উতর চাপানে দেখতে পেলাম, পেশেন্ট পার্টি বলছে খুব আত্মতৃপ্তি নিয়ে, সন্তানহারা বাবার বক্তব্য, বেসরকারি নার্সিংহোম এত ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না, এখন যা পাওয়া যাচ্ছে। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে তার কিছুই বলার নেই। তারা তাদের যথাসাধ্য করেছেন। তবে আর কি, ভালোই তো, চলতে থাকুক। আর সত্যিই তো, আপনারা কর্ম বিরতি না চালু রাখলে, বাইরের আন্দোলনটাই অর্থহীন হয়ে যাবে। আপনারা যদি কাজে যোগ দিয়ে ফেলেন, তাহলে বাইরের মৌ লোভীরা কি নিয়ে লড়বেন?

যেদিন এই মামলা মানে জাস্টিসের মামলা চলে গেল সিবিআই এর হাতে, বিকাশ রঞ্জনের হাত ধরে। সেদিনই বুঝেছিলাম জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এবার পালে হাওয়া পাবে না কারণ ন্যায় বিচারের বলটা এখন সিবিআই এর ঘরে। অথচ হাওয়া বলছে রাজ্য সরকার বিরোধী আওয়াজ তুলতে হবে। অগত্যা দাবিপত্র পাল্টাতেই হতো। পাঁচ দফা দাবি এখন লম্বায় বেড়ে আট দফা। প্রথমত খুন ও ধর্ষণের ন্যায় বিচার এর দাবিটা রাজ্য সরকারের হাতে নেই। দ্বিতীয়ত অপরাধীদের চিহ্নিত করা ও শনাক্ত করা এর দায়িত্ব আর রাজ্যের হাতে নেই। তৃতীয় দাবি আরজি করে অধ্যক্ষ সাসপেন্ড করা বর্তমানে তিনি সাসপেন্ড। চতুর্থত হাসপাতালে কাজের  পরিবেশ ফেরাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আয়োজন। সেটাও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিআইএসএফের হাতে আর বাকিটা রাজ্য সরকার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে , নয় হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা, প্রত্যেক কলেজে ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের বিশ্রাম কক্ষ ও মহিলা চিকিৎসকদের পৃথক বিশ্রাম কক্ষ, এসব তো মেনে নেওয়া হয়েছে এবং শীঘ্রই তা চালু হয়ে যাবে। কিন্তু তা বলে তো আন্দোলন শেষ হয়ে যেতে পারে না । এই নিভন্ত চুল্লিতে আগুনের সরবরাহ রাখতেই হবে, ধুনো দিতেই হবে। তার জন্য দফার সংখ্যা বাড়াতে হবে। এবার তাই স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য সচিব, এদের পদত্যাগ চাই দাবি যুক্ত হবে। জোরের সাথে বলতে পারি এই সব দাবি আসলে অজুহাত মাত্র। একটা আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখার জন্য নতুন নতুন করে দাবি যুক্ত করা।  বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম "আপ পুঁছিয়ে না, আপকো কেয়া পুঁছনা"। আসল কথাটা একটু ঝেড়ে কাশুন। এই সরকারটা, সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চাই। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যারা স্পষ্টভাবে এই কথাটা বলছে তাদের সাধুবাদ জানাই। স্পষ্ট দাবি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার জন্য। কিন্তু রাজনীতির আড়ালে যেটা চলছে সেটাও তো দলীয় রাজনীতির খেলা, সেটা স্পষ্ট হোক।

হাউস স্টাফ রা তাদের একটি দাবিতে উল্লেখ করেছেন প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত কর। অর্থাৎ যে কথার মধ্যে সুপ্ত আছে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা হচ্ছে। এই দোষীরা আরজি করে যে দুষ্টচক্র গড়ে তুলেছে তার সাথে তিলোত্তমা ধর্ষণ ও খুন সম্পর্কিত। সরাসরি এটা না বললেও এমন একটা ইঙ্গিত তারা দিচ্ছেন। আসলে সম্প্রতি চারদিকে শুনতে পাচ্ছি স্বাস্থ্য বিভাগের উত্তরবঙ্গ লবির কথা। সুদীপ্ত রায়, অভীক দে, বিরুপাক্ষ বিশ্বাস এদের নাম বহু চর্চিত। এই লবির অন্যতম পান্ডা আর জি করের সন্দীপ ঘোষ। এই দুষ্টচক্র টি শুধু আরজিকর নয় রাজ্যজুড়ে এমনটি রাজ্যের বাইরেও। এই চক্রটির হদিশ আমি আপনি এতদিন শুনিনি। শুনলাম পিজি ট্রেনি তিলোত্তমার নৃশংস ভয়ংকর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর। তার আগে নয়। অর্থাৎ সেই কারণেই মনে প্রশ্ন জাগছে, তিলোত্তমা ঘটনার সাথে যদি সন্দীপ ঘোষ ও কোম্পানির সামান্যতম সম্পর্ক থাকে তবে তারা তিলোত্তমার ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের অকুস্থল হিসেবে আরজিকর হাসপাতালকেই বেছে নেবে কেন? এর ফলে তো আর জি করের দুষ্টচক্রই প্রকাশ হয়ে পড়লো। এই কারণেই ছেলেবেলার গল্পের অবতারণা করতে হলো :


এই দুষ্ট চক্রকে নজরে আনতেই কি অন্য কোন লবি ঘটনার অকুস্থল হিসেবে আরজিকর কে বেছে নিল? তাহলে সেই অন্য লবিটা কে বা কারা?

এটা লেখার দরকার হতো না। কিন্তু সেদিন আরজি করের অন্যতম এক প্রতিবাদীকে প্রশ্নটা করাতে তিনি একটু বিরক্তি নিয়ে বললেন, আমি গোয়েন্দা না আমি ন্যায় বিচার চাইছি মাত্র। কিন্তু এখানে সমস্যা ন্যায় বিচার মানে কিন্তু বিচার সম্পর্কে আমি যে পূর্ব ধারণা পোষণ করি সেই মতো বিচার না হলে তা আমার চোখে ন্যায় বিচার নয়। আর পূর্ব ধারনা তৈরি হয় বিভিন্ন সমাজমাধ্যম গণমাধ্যম কানাঘুষো ফিসফাস গুজব এসবের সম্মিলিত একটা ফল হিসেবে। ঘটনার প্রথম দিন সোমা মুখোপাধ্যায়ের ভাইরাল হওয়া অডিও যে ঘটনার পরম্পরা সম্পর্কে একটা ধারণা নির্মাণে সাহায্য করেছিল এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই। অতএব যতই বলি না কেন "আমি গোয়েন্দা নই" -- গোয়েন্দাগিরি তো প্রথমেই হয়ে গেছে। এবার তো পাল্টা গোয়েন্দাগিরিও করতে হচ্ছে। নানান প্রশ্ন মনে জাগছে ও তার শেয়ার করছি।

কেমন ভাবের ঘরে চুরি করা ভাবুন, "আমাদের কর্মবিরতিতে কোন রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হয়নি"। তাহলে আপনাদের সারা বছর কাজ কি?  বলার সময় তো বলেন আপনারাই হাসপাতালের মেরুদন্ড। নিট পরীক্ষার কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাবার পর যথেষ্ট উপলব্ধি করতে পারছি আমাদের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ কি? গভীর কুয়াশাচ্ছন্ন। প্রবেশিকা পরীক্ষার শুরু থেকেই কোচিং সেন্টার চয়েস করা ও লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা, ঠিকঠাক প্রায় হুবহু প্রশ্নপত্রটি সাজেশন হিসেবে লাভ করা, ট্যাঁকের জোর থাকলে উপযুক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র ভেন্য চয়েজ করা, এমনকি ফাঁকা ওএমআর শিট দাখিল করে পরে সেই ওএমআর শিট পূরণ করিয়ে নেওয়া, প্রবেশিকা পরীক্ষায় উপরের দিকে নাম থাকলে তবেই তো নামিদামি সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব। অতএব আপনাদের পক্ষেই তো ব্রেনের রেপ্লিকা নিয়ে, স্পাইনের রেপ্লিকা নিয়ে লোককে বিদ্রুপ করা শোভা পায়। কারণ যেটা আপনাদের অনেকের আদৌ ছিল না। ব্রেন স্পাইন এগুলো ওএমআর শিটের মুখস্ত করা কিছু কালো কালো বিন্দু নয়। ওগুলো চিকিৎসার অপেক্ষায় আউটডোরে অসহায় ভাবে শুয়ে আছে। আর আপনারা লালবাজারে স্বাস্থ্য ভবনে ব্রেন স্পাইন প্রদর্শন করছেন।

আমার বাইপাস সার্জারির পর (সিএবিজি) তৃতীয় দিন যখন আই টি ইউ তে শয্যাশায়ী, রাতে ডিউটি রত এক ডাক্তারবাবু যার চোখ আমার দিকে বা আমার পেছনে অসংখ্য মনিটরের দিকে নয়, mcq র একটি বইয়ের দিকে নিবদ্ধ। আমি সেই ডাক্তারকে বললাম, আমার একটা আনরেস্ট ফিল হচ্ছে। শরীরের ভেতরে যেন একটা মৃদু কাপুনি অনুভব করছি। ডাক্তার বাবুর জবাব, খুব বেশি হচ্ছে? কাল সকালে স্যার এলে তাকে জিজ্ঞেস করে নিলে হবে না? এখনই কিছু চাই? আমি বুঝলাম চাইলেও একে ভরসা নেই। একটু পরে একজন সিস্টার (পাশ না করা জিএনএম) যাচ্ছিলেন, আমায় বলল তোমার কি হয়েছে? কষ্ট হচ্ছে? আমি সবটা বললাম। ও আমার পালস টা ধরে দেখলো। সাথে সাথে গ্লুকোমিটার দিয়ে সুগার টা দেখলো। দেখার পরেই দৌড়ে রেস্টরুমে ঢুকে, কিছুটা মিষ্টির রস আর আধখানা রসগোল্লা এনে আমায় খাইয়ে দিল। মুহূর্তে আমি সুস্থ হয়ে গেলাম। কার যেস্পাইন কোথায়, কারমগজ কোথায় আছে, সেটা বেশ বুঝতে পারছি। শেষ করব আশির দশকে বাম জমা নয় জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের এক নেতার বক্তব্য দিয়ে :

আমরা হাউসস্টাফরা  কর্মবিরতি করলে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায় কেন? আসলে যারা সিনিয়র ডাক্তার ছিলেন তারা মেজর অপারেশন ছাড়া অন্য কিছু করতেন না। তাও করে দিয়েই বেরিয়ে যেতেন। আউটডোরে কেবল আমাদের রেফার করা রোগীদের তারা দেখতেন। সমস্ত এমার্জেন্সি ডিউটি আমরাই করতাম। পোস্ট অপারেটিভ advice আমরাই দিতাম। গোটা ইনডোর আমরাই সামলাতাম, আর নামের বেলায় আমরা ছাত্র, হাউসস্টাফ, ৪০০/৫০০ টাকার স্টাইপেন্ড। .... আজকাল ইন্টার্নশিপের পরেই ছেলেমেয়েরা (হাউস স্টাফশিপ না করে) পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার জন্য এবং তারপর সুপার স্পেশালাইজেশনের জন্য মাল্টিপল চয়েজ প্রশ্নের সমাধান করতে বসে। ...... এক নতুন প্রজন্মের সৃষ্টি, যাদের নাম পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি, সংক্ষেপে পিজিটি। এদের ভাগ্য এদের বসদের হাতে নির্ভরশীল। মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় এরা দিবরাত্র কাজ করে যায়। ..... মানুষও এখন এমবিবিএস ডাক্তারদের ডাক্তার বলে ভাবে না। পোস্টগ্রেজুয়েশন করেও রেহাই নেই। সুপার স্পেশালাইজেশন করলে তবেই ডাক্তার। এরপর আরো কি রকম ডাক্তারি ব্যবস্থা হবে তা ভবিষ্যৎই বলবে । আমরা শুধু দেখতে পাচ্ছি একজন ইউরোলজিস্ট নিজের ছেলের পেট খারাপ সারাতে পারেনা। চোখের ডাক্তার টাইফয়েডের চিকিৎসা জানেন না। বেশিরভাগ ডাক্তার নিজের লেখা ওষুধ কিভাবে কাজ করে জানেনা। এমআর রা এখন আমাদের শিক্ষক। তারা যে ওষুধ লিখতে বলে যান, আমরা তাই লিখি। আগে লিখতাম উপহারের বিনিময়ে, এখন লিখি নগদ টাকার বিনিময়ে। ১৯৮২ থেকে ৮৭, সেই জমানায় এই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন বেশ কিছু মানবিক ডাক্তারের জন্ম দিয়েছিল। যাদের অধিকাংশ এখনো কমিশন না নিয়ে ডাক্তারি করেন। কিছুটা হলেও রোগীদের জন্য ভাবেন, কোন কোন ক্ষেত্রে এখনো সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রিয়াক্ট করেন। তাই আমার ছাত্র জীবনে একটা শ্রেষ্ঠ উপযোগ ছিল এই জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলন। (জুনিয়র ডাক্তার : এ কোন উত্তরসূরী। ডাঃ নবারুণ ঘোষাল)। আজকের জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এইরকম আত্মতৃপ্তি নিয়ে আন্দোলনকে বিশ্লেষণ করতে পারবেন তো?

1 Comments

জনৈক

12 September, 2024

মালবিকা ভালো করে প্রুফ দেখবেন। অনেক ভুল আছে। আন্দোলন সহজে মিটবে না। দিনের আলোয় অগ্নিমিত্রা কে গো ব্যাক বলছে। আর রাতে তাদের হাতেই তামাক সেবন চলছে। শুভেন্দু অধিকারী তো খোলা মেলা বলেছেন " ওসব নিরামিষ অবস্থান আন্দোলন করে কিছু হবেনা " আরো অনেক খেলা দেখা ব্যাক। অবশ্যই সরকার যদি ধৈর্য্য দেখাতে পারে।

Post Comment