বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করছেন রাষ্ট্রীয় দমন পীড়ন ও বিরোধী গণতান্ত্রিক স্বরের মানুষদের গুম করে দেওয়ার নিরিখে ভারতের ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও তিনি হার মানাতে পারেন। অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি তার রক্ষাকর্তা। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট আচরণের নিরিখেও তার গুরু নরেন্দ্র মোদিই। তা সত্ত্বেও এখন তিনি এইসবের নিরিখে নরেন্দ্র মোদিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন । কোটা সংস্কার ইস্যুতে বাংলাদেশে যে উত্তাল ছাত্র আন্দোলন এবং তাকে দমন করতে রাষ্ট্র ও আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী যে উদাহরণ স্থাপন করছে উপমহাদেশে তা বিরল। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ যেন কার্যত একটা জেলখানা ও কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। ছাত্ররা বৃহস্পতিবার গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ধর্মঘট পালন করেছে, যেটাকে বলা হচ্ছে 'বাংলা ব্লকেড'। বিভিন্ন সূত্রে খবর বৃহস্পতিবার কার্যত বাংলাদেশে একটা গাড়ির চাকাও নড়েনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের কার্যত লাঠি পেটা করে বের করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে হেলমেট পড়ে এই গুন্ডাগিরিতে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা।বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন কার্যত ফাঁকা। আর ছাত্ররা দখল নিয়ে নিয়েছে রাস্তার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও জেলায় জেলায় এখন ছাত্রদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের এক বন্ধু একটা ভিডিও পাঠিয়েছে সেটা দেখে যে কোন মানুষের গা শিউরে উঠবে। উত্তরা আজমপুর ঢাকা ময়মনসিংহ রোডে মুহুর্মুহু গুলি চলছে। যেন মনে হচ্ছে একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র। গোটা বাংলাদেশ আজ কাদের কিনারায়, মানুষ সন্ত্রস্ত ও বিভ্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তৈরি দেশের এই পরিস্থিতির জন্য আর কেউ নন, একমাত্র দায়ী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের যে উত্তাল ছাত্র আন্দোলন এবং সেটার ওপর রাষ্ট্রীয় শক্তির যে দমন পীড়ন তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। পশ্চিমবঙ্গের মানুষরাও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে একটা আওয়ামী লীগ পন্থী ন্যারেটিভ তৈরি আছে। পশ্চিমবঙ্গের একশ্রেণীর মানুষ মনে করেন বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের এই অংশের মানুষের ধারণা ভুল। বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট হয়নি। তর্ক সাপেক্ষে ধরে নিয়ে বলছি যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিছুটাও নষ্ট হয়ে থাকে তার জন্য ১০০ শতাংশ দায়ী হাসিনা পরিচালিত লুম্পেন আওয়ামী লীগ সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের বাম ও প্রগতিশীল মানুষদের কয়েকজনকে দেখছি ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে আওয়ামী লীগের একটা প্রোপাগান্ড ক্যাম্পেন এখানেও চালাচ্ছেন। তা হল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একসময় আওয়াজ তুলেছিল 'তুমি কে? আমি কে? বাঙালি বাঙালি।' সেই ছাত্ররা এখন বলছে তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার' । এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার। যেসব ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে সম্প্রতি তাদের রাজাকার বলেছেন হাসিনা। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা স্লোগান দিয়েছে ' তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার। বলছে কে? বলছে কে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার। এর দ্বিতীয় অংশটাকে কেটে দিয়ে প্রথম অংশটা কে প্রচার করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে যারা এই মিথ্যা প্রচার করছেন তারা আসলে মূর্খ , নির্বোধ, এবং বহুদিন ধরেই তারা রাজনৈতিক মতাদর্শগতভাবে দুর্নীতি পরায়ণ। আমাদের দেশে যে মৌলবাদী শক্তি মাথা ছাড়া দিয়েছে তার একটা কারণ হলো এই ভন্ড কমরেডগনের মূর্খতা, অজ্ঞতা , মতাদর্শিক দুর্নীতিপরায়ণতা ও উদ্ধত্য ও অহংকারী আচরণ। তবে তবে যতদিন যাচ্ছে, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সমর্থন বাড়ছে।
বাংলাদেশে যে কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলছে সে সম্পর্কেও বহু পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বচ্ছ ধারণা নেই। অনেকেই ভাবছেন সমস্ত কোটাই তুলে দেওয়ার পক্ষে আন্দোলন করছে ছাত্ররা। ব্যাপারটা কিন্তু আদৌ তা না। ছাত্ররা কোটা সংস্কারের কথা বলছেন। এবং যে কোটা সংস্কারের কথা বলছেন তা হল মুক্তিযোদ্ধার পরিবারদের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা আছে সেটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছে ছাত্ররা। বাংলাদেশে সরকারি চাকরি এবং বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য এখন মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তার মধ্যে ৩০% মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য। ১০ শতাংশ আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জেলার মানুষদের জন্য, ১০ শতাংশ মহিলাদের জন্য, ৫ শতাংশ আদিবাসীদের জন্য ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য। অর্থাৎ ২৬ শতাংশ কোটা আছে আত্মসামাজিকভাবে ও শারীরিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য। এটা একটা 'affirmative action'। আমাদের দেশেও এই সংরক্ষণ চলছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর এই সংরক্ষণের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন। এই সংরক্ষণ যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশে এই সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন চলছে না। ছাত্ররা শুধু যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সংরক্ষণ সেটার তুলে দেওয়ার পক্ষে আন্দোলন করছে। অর্থাৎ যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের ছেলে মেয়ে নাতি-নাতনি বংশ-পরম্পরায় এই সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছে। যারা এখন এই সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার পক্ষে আন্দোলন করছে তাদের যুক্তি কেন এই পরিবারের লোকরা বছর বছর যুগ যুগ ধরে এই সংরক্ষণ পাবে? মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সংরক্ষণের সংস্কারের আন্দোলন ২০১৮ সালেই শুরু করেছিল ছাত্ররা। তখন ছাত্রদের পাল্টা চাপে ফেলতে বাস্তব বিবেচনা ছাড়াই পুরো ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণই তুলে দিয়েছিল হাসিনা সরকার। ছাত্ররা চেয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য যে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ আছে তার সংস্কার। আর হাসিনা সরকার এর সঙ্গে পিছিয়ে পড়া বর্গের মানুষদের যে ২৬ শতাংশ সংরক্ষণ সেটাও পুরোপুরি তুলে দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলে পুনরায় ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ ফিরে আসে। ছাত্ররা এখনও সেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছেন মাত্র। ছাত্রদের এই আন্দোলনকে এবং এই দাবিকে আমি যুক্তিপূর্ণ বলে মনে করি। ধরুন আমাদের দেশে একটা সংরক্ষণ চালু হলো। সেটা হলো যারা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন গান্ধীজী, নেতাজি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, জহরলাল নেহেরু………. তাদের বংশধরেরা সংরক্ষণ সুবিধা পাবেন। সেটা কি মেনে নেওয়া যায়? বাংলাদেশে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা কি এই কারণেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন যে তাদের বংশধরেরা পরবর্তীকালে সংরক্ষণের সুবিধা পাবে? এখনোও তাদের নামে তাদের বংশধরদের সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া তো তাদের পরোক্ষে অপমানই করা হয়। তাছাড়া এই সংরক্ষণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা দীর্ঘ রাজনৈতিক স্বার্থ আছে। নিজের কাছের পেটুয়া লোকদের এই সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হয় বছরের পর বছর ধরে। বহু মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আছে তারাও এখন এই সংরক্ষণের বিরোধিতা করছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের এক মহিলা নাট্যকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনিও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের লোক। তিনিও মনে করেন এখন আর এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সংরক্ষণ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। একটা জেনারেশন পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু জেনারেশনের পর জেনারেশন মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের লোক এই সংরক্ষণ পাবে, এটা অত্যন্ত অযৌক্তিক। তাছাড়া এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাদের পরিবারকে এই তালিকায় যুক্ত করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার যাদের কাছের লোক বলে মনে করেছে তাদেরই এই তালিকায় যুক্ত করেছে। এই ধরনের সংরক্ষণের আর কোন প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশের এই কোটা সংস্কারের আন্দোলনের প্রভাব ভারতের সংরক্ষণ প্রথার উপরও পড়তে পারে যে কোন সময়। কেননা ভারতের একটা শ্রেণীর মধ্যবিত্ত মানুষ সংরক্ষণ প্রথা তুলে দিতে চায় দীর্ঘদিন ধরেই। মনুবাদি দল বিজেপিও মনেপ্রাণে চায় সংরক্ষণ প্রথা তুলে দিতে। ভোট রাজনীতির কথা ভেবে এখনো তারা সেই পথে যাইনি বটে। কিন্তু বাংলাদেশের এই ঘটনার প্রভাব যে কোনো মুহূর্তে ভারতেও পড়তে পারে। গোটা উপমহাদেশ জুড়ে যেইভাবে বেকারত্ব বেড়েছে, যেইভাবে মানুষের কোনও চাকরি নেই, তাতে মানুষ বিভ্রান্ত। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত মানুষ চায় একটা সরকারি চাকরি। দলিত আদিবাসীদের সংরক্ষণের বিরুদ্ধে মধ্যবিত্তের একটা শ্রেণীর ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরেই। যদিও বাংলাদেশের যে কোটা সংস্করণ আন্দোলন সেটা ভারতের ক্ষেত্রে এক নয়, তবুও বাংলাদেশের এই কোটা বিরোধী আন্দোলন যেকোনো মুহূর্তে ভারতেও আছড়ে পড়তে পারে। যেখানে এখনো ভারতে একটা মনুবাদি দল সরকারে আছে সেখানে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের সম্ভাবনা একটা থেকেই যায়।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনের কেউ বিরোধিতা করতেই পারেন। বিরোধী মত থাকবে এটাই তো গণতন্ত্রের চরিত্র। কিন্তু কেউ কোন আন্দোলন করতে পারবে না এটা কোন ধরনের স্বৈরাচারী আচরণ? বাংলাদেশের বন্ধুদের সূত্রে খবর, এখনো পর্যন্ত সাঈদ, আসিফ, রাফি ওয়াসিম, ও আদনান সহ মোট ৭ জন ছাত্র ইতিমধ্যেই শহীদ হয়েছেন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র পরিচালিত গুন্ডাদের হাতে। হাজারেরও বেশি ছাত্র বিভিন্নভাবে আক্রান্ত। বাংলাদেশী ছাত্র আন্দোলনের একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে উত্তাল আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনের পরিণতি কি হবে আমাদের তা জানা নেই। তবে এই বিশ্বাস আছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের রক্ত যেমন ব্যর্থ হয়নি, আসিফ ওয়াসিমদের রক্তও ব্যর্থ হবে না। কেউ কেউ বলছেন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান আসন্ন। যেহেতু এখন বাংলাদেশে কোন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক, প্রগ্রেসিভ বিরোধী দল নেই। আছে জামাতের মত মৌলবাদী দল। মুক্তিযোদ্ধার চেতনার মানুষরা জামাতের মত মৌলবাদী দলকে কোনভাবেই চান না। হাসিনা সরকারের স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্ট আচরণকেই তারা মেনে নিতে পারছে না। এই অবস্থায় তারা অত্যন্ত বিভ্রান্ত। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে হাসিনা সরকার। হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের বিপরীতে জামাত এবং রাজাকারকে দাঁড় করিয়ে একটা ন্যারেটিভ খাড়া করেছে। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেই প্রত্যেককেই তিনি দাগিয়ে দিচ্ছেন জামাত কিংবা রাজাকার বলে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সরকার গণহত্যা চালানোর জন্য একটা বাহিনী তৈরি করেছিলেন যাদের রাজাকার বলা হত। বর্তমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা কামি, মুক্তিকামি, গণতান্ত্রিক চেতনার ছাত্র আন্দোলনকে যেভাবে হাসিনা রাজাকারদের সঙ্গে এক করে দেখাচ্ছেন সেটা অত্যন্ত ভয়ংকর এবং নোংরা রাজনীতির অংশ। ঠিক একই কায়দায় ভারতে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলেই তাদের পাকিস্তানি বা খানিস্তানি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়।
এই ছাত্র আন্দোলনে একটা গুরুত্বপূর্ণ চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ছাত্রীরা পথে নেমে পড়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে আওয়াজ উঠছে ' রক্ত দিয়া কেনা দেশ। কারুর বাপের সম্পত্তি নয়"। হ্যাঁ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা মনে করে দেশটা তাদের বাপের সম্পত্তি। তাই তারা যা কিছু তাই করতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে সামনে রেখে বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক ব্যবসা কায়েম করছে আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তৈরি মানুষকে ভোট দিতে দেয় না এই স্বৈরাচারী সরকার। নির্বাচনের আগের দিন রাতেই তারা ভোট করিয়ে নেয়। সরকারের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা শত শত মানুষকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের এখন বিন্দুমাত্র গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। যখন বিএনপি সরকার ছিল সেই সরকারকে নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত করে বাংলাদেশের মানুষ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছিল। সেই মানুষদের এখন আর ভোট দিতে দেয় না হাসিনা। এইভাবে পরোক্ষে মৌলবাদীদের হাত শক্ত করেছে হাসিনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনিই সব ছিলেন, আর কারোর কোন ভূমিকা ছিল না। এইরকম একটা ন্যারেটিভ সচেতনভাবেই তৈরি করেছে হাসিনা সরকার। সেই ন্যারেটিভ এর প্রতিফলন দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গেও। মাওলানা ভাসানী , সিরাজুল আলম খান দের মত ব্যক্তিত্বদের ভূমিকার কথা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে? আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গের কত শতাংশ মানুষ মাওলানা ভাসানী, ও সিরাজুল আলম খানদের নাম জানেন? ৩ শতাংশও হবে না। আসলে পশ্চিমবঙ্গে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিক নারেটিভ টাই চলে। পশ্চিমবঙ্গের বাম ও প্রগতিশীলদের এই আওয়ামী লীগ ফ্যান্টাসি এবং ইলিউশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। যদি বাংলাদেশের ভালো চান যদি মনে করেন বাংলাদেশের ভালো হলে তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গেও পড়বে তাহলে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট আচরণের কোন শর্ত ছাড়াই সরাসরি বিরোধিতা করা উচিত । বাংলাদেশের ছাত্র ও মানুষদের আন্দোলনের পাশে থাকতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই ভাবছেন যে ছাত্র আন্দোলন তো হচ্ছে কিন্তু এর পরিণতি কি হবে? জামাতের মত কোন মৌলবাদী শক্তি এর সুবিধা নিয়ে নেবে না তো? সেটার যে সম্ভাবনা একদম নেই তা কিন্তু নয়। কিন্তু সেই সম্ভাবনার কথা ভেবে যদি বছরের পর বছর ধরে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সমর্থন করা হয় তাতে কিন্তু মৌলবাদীদের হাত আরোও বেশি শক্ত হবে।এটাও মাথায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে ছাত্র আন্দোলন চলছে সেটা একান্ত ভাবেই 'pro-people'. কোন দলীয় ফ্ল্যাগ নিয়ে এই আন্দোলনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের এক বন্ধু জানালো, "এ আন্দোলনটাই এখন আন্দোলনের ফেস '। তবে এই আন্দোলনে নেতৃত্বে অনেক বাম মনোভাবাপন্ন ছাত্র আছেন। বাংলাদেশে আন্দোলনরত ছাত্ররা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সমর্থন চান। হাসিনার জামানায় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটা প্রবল ভারত রাষ্ট্র বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারা ভারতের জনগণের বিরোধী নয়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে তারা তো আত্মীয় বলেই মনে করেন। এই বিপদের দিনে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সমর্থন তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে মূল শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যম কোনোভাবেই বাংলাদেশের ঘটনাকে খুব বড় করে দেখাচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই যা খবর পাওয়ার সেটা পাওয়া যাচ্ছে। অন্তত সামাজিক মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সমর্থন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকে নৈতিক বল যোগাবে। যে কোনও ধরনের দোদুল্যমানতা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উচিত এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো।